আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ

৪- নামাযের অধ্যায়

হাদীস নং: ৮৫৮
আন্তর্জাতিক নং: ৪৩২ -
২৮. কাতার সোজা করা ও মিশে দাঁড়ানো, ক্রমানুসারে প্রথম কাতারের ফযীলত, প্রথম কাতারে দাঁড়াবার জন্য প্রতিযোগিতা করা এবং জ্ঞানী ব্যক্তিদের পক্ষে ইমামের নিকট ও সামনের কাতারে দাঁড়াবার বিধান
৮৫৮। ইয়াহয়া ইবনে হাবীব আল-হারিসী ও সালিহ ইবনে হাতিম ইবনে ওয়ারদান (রাহঃ) ......... আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যারা অধিকজ্ঞানী ও বুদ্ধিমান তারা আমার নিকট দাঁড়াবে। অতঃপর যারা তাদের কাছাকাছি তারা, অতঃপর যারা তাদের কাছাকাছি তারা, অতঃপর যারা তাদের কাছাকাছি তারা দাঁড়াবে। আর তোমরা বাজারী হট্টগোল হতে দূরে থাকবে।
باب تَسْوِيَةِ الصُّفُوفِ وَإِقَامَتِهَا وَفَضْلِ الأَوَّلِ فَالأَوَّلِ مِنْهَا وَالاِزْدِحَامِ عَلَى الصَّفِّ الأَوَّلِ وَالْمُسَابَقَةِ إِلَيْهَا وَتَقْدِيمِ أُولِي الْفَضْلِ وَتَقْرِيبِهِمْ مِنَ الإِمَامِ
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ حَبِيبٍ الْحَارِثِيُّ، وَصَالِحُ بْنُ حَاتِمِ بْنِ وَرْدَانَ، قَالاَ حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ زُرَيْعٍ، حَدَّثَنِي خَالِدٌ الْحَذَّاءُ، عَنْ أَبِي مَعْشَرٍ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ، عَنْ عَلْقَمَةَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " لِيَلِنِي مِنْكُمْ أُولُو الأَحْلاَمِ وَالنُّهَى ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ - ثَلاَثًا - وَإِيَّاكُمْ وَهَيْشَاتِ الأَسْوَاقِ " .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে বলা হয়েছে- لِيَلِني مِنكُمْ أُولوا الأَحْلامِ والنُّهَى (তোমাদের মধ্যে যারা প্রাপ্তবয়স্ক ও জ্ঞানবুদ্ধির অধিকারী, তারা যেন আমার কাছাকাছি দাঁড়ায়)। أَحْلامِ শব্দটি حلم এর বহুবচন। এর অর্থ বুদ্ধি, ধীরস্থিরতা, অবিচলতা। أُولوا الأَحْلامِ অর্থ সাবালক, স্থিতপ্রজ্ঞ, বিচক্ষণ ও জ্ঞানী লোক। نهَى অর্থ স্থিরতা, আবদ্ধতা। বুদ্ধিকেও نهَى বলে, যেহেতু বুদ্ধি মানুষকে ভালো কাজের সীমানার মধ্যে আবদ্ধ রাখে ও মন্দ কাজে লিপ্ত হওয়া থেকে আটকে রাখে। শব্দটি نهية এর বহুবচন।

এখানে, أُولوا الأَحْلامِ والنُّهَى বলে প্রাপ্তবয়স্ক ও জ্ঞান-বুদ্ধিসম্পন্ন লোকদের বোঝানো উদ্দেশ্য। এ স্তরের লোকদেরকে প্রথম কাতারে দাঁড়াতে বলা হয়েছে। অনেক সময় ইমামের বিশেষ কারণবশত নামাযের মাঝখানে কাউকে খলীফা (নিজের স্থলাভিষিক্ত) বানানোর দরকার পড়ে, যাতে সে মুসল্লীদের নিয়ে অবশিষ্ট নামায সমাপ্ত করে। প্রথম কাতারে প্রাপ্তবয়স্ক ও জ্ঞানসম্পন্ন লোক দাঁড়ালে খলীফা বানানো সহজ হয়। তাছাড়া যাদের বয়স বেশি এবং জ্ঞানবুদ্ধিতেও অগ্রগামী, অন্যদের তুলনায় তাদের মর্যাদাও বেশি। তাই প্রথম কাতারে দাঁড়ানোর অগ্রাধিকারও তাদেরই। তারপর বয়স ও জ্ঞানের পর্যায়ক্রম অনুযায়ী এক কাতারের পর আরেক কাতার দাঁড়াতে থাকবে।

সুতরাং বয়স্ক ও আলেমগণ দাঁড়াবে প্রথম কাতারে। তারপর যারা বয়স্ক কিন্তু আলেম নয়, তারা তাদের পেছনে। তারপর দাঁড়াবে যুবকগণ। তাদের পেছনে শিশুরা। জামাতে মহিলাগণ শামিল হলে তারা শিশুদের পেছনে দাঁড়াবে। এটা নামাযের পবিত্রতা ও শুচিশুদ্ধতা রক্ষার উদ্দেশ্যে। অন্যথায় শয়তান ও নফসের সুযোগ নেওয়ার আশঙ্কা থাকে।

উল্লেখ্য, বয়স্ক ও জ্ঞানীজনদেরকে সম্মুখে স্থান দেওয়ার এ নীতি নামাযের জন্যই নির্দিষ্ট নয়; বরং নামাযের বাইরেও যে-কোনও মজলিস ও লোকসমাবেশে তাদেরকে সামনে স্থান দেওয়া চাই।

هَيْشَاتِ শব্দটি هَيْشَة এর বহুবচন। এর অর্থ ছত্রভঙ্গ অবস্থা, হট্টগোল, উচ্চ আওয়াজ, তর্ক-বিতর্ক। এ হাদীছে মসজিদে বাজারের মত অবস্থা সৃষ্টি করতে নিষেধ করা হয়েছে। বাজারে আসা লোকজনের মধ্যে কোনও শৃঙ্খলা থাকে না। আপন আপন প্রয়োজন অনুযায়ী যার যেখানে সুবিধা সে সেখানে থাকে। বড়-ছোট, নবীন-প্রবীণ, আলেম-বেআলেম প্রভৃতির কোনও ভেদাভেদ বাজারে থাকে না। তা থাকা সম্ভবও নয়। এমনিভাবে বাজারে মানুষের কথাবার্তার আওয়াজেরও কোনও মাত্রা থাকে না। সকলেই কথা বলে এবং যাকে উদ্দেশ্য করে বলে সে যাতে শুনতে পায় সেজন্য উচ্চ আওয়াজে বলে। ফলে সমগ্র বাজারে হইচই, হট্টগোল লেগে থাকে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে এরূপ করতে নিষেধ করেছেন। মসজিদে যতক্ষণ থাকবে সুশৃঙ্খলভাবে থাকবে। অহেতুক কথা বলবে না। যা বলার প্রয়োজন হবে, সংযত আওয়াজে বলবে।
যখন নামাযে দাঁড়াবে, কাতার সোজা করে দাঁড়াবে। কাতারবন্দী হওয়ার ক্ষেত্রে বয়স ও জ্ঞানবুদ্ধির পর্যায়ক্রম রক্ষা করবে। ইমাম কিরাআত পড়বে, বাকিরা নীরব থাকবে ও মনোযোগ সহকারে শুনবে।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. নামাযের কাতারবন্দীতে বয়স ও ইলমের পর্যায়ক্রম রক্ষা করা চাই।

খ. যে-কোনও মজলিসে বয়স্কদেরকে সামনে স্থান দেওয়া বাঞ্ছনীয়।

গ. মসজিদে অবস্থানকালে মসজিদের পূর্ণ আদব রক্ষা করা চাই।

ঘ. কাতার সোজা করার বিষয়টি ছাড়াও মসজিদে অবস্থানকালে শৃঙ্খলা রক্ষায় যত্নবান থাকা বাঞ্ছনীয় ।

ঙ. মসজিদকে শোরগোলের স্থানে পরিণত করা উচিত নয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন
সহীহ মুসলিম - হাদীস নং ৮৫৮ | মুসলিম বাংলা