আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ

৪- নামাযের অধ্যায়

হাদীস নং: ৮২৬
আন্তর্জাতিক নং: ৪১৮ -
২১. ইমাম কর্তৃক রোগ, সফর ইত্যাদি ওযরের কারণে নামায আদায়ে স্বীয় প্রতিনিধি নিযুক্তকরণ; ইমাম যদি কোন ওযরে বসে নামায আদায় করেন এবং মুক্তাদী দাঁড়াতে সক্ষম হয়, তবে দাঁড়িয়ে নামায আদায় করবে; কেননা দণ্ডায়মানাক্ষম মুক্তাদীর বসে নামায আদায় করার হুকুম রহিত হয়ে গেছে
৮২৬। আবু বকর ইবনে আবি শাঈবা (রাহঃ) ও ইয়াহয়া ইবনে ইয়াহয়া (রাহঃ) ......... আয়েশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর অসুস্থ অবস্থায় বিলাল (রাযিঃ) তাঁকে নামাযের ইমামতের জন্য ডাকতে আসলেন। তিনি বললেন, যাও, আবু বকরকে ইমামতি করতে বল। আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! তিনি নিতান্ত নরম মানুষ। তিনি আপনার স্থানে দাড়িয়ে লোকদেরকে কুরআন পাঠ করে শোনাতে পারবেন না। আপনি উমরকে আদেশ করলে উত্তম হবে। কিন্তু তিনি তবুও বললেন, যাও, আবু বকরকে ইমামতি করতে বল।

এরপর আমি হাফসাকে বললাম, তুমি তাঁকে বল যে, আবু বকর অতি নরম লোক। তিনি আপনার স্থানে দাঁড়িয়ে মানুষকে কুরআন শোনাতে পারবেন না! আপনি উমরকে আদেশ করলে ভাল হবে। হাফসা তাঁকে তাই বললেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন যে, তোমরা অবশ্যই ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) এর সঙ্গিনীদের ন্যায়। যাও, আবু বকরকে ইমামত করতে বল। শেষ পর্যন্ত লোকেরা আবু বকর (রাযিঃ) -কে নির্দেশ শোনালেন এবং তিনি লোকদের ইমামত করলেন।

তিনি নামায আরম্ভ করার এক পর্যায়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কিঞ্চিৎ সুস্থবোধ করলেন। তিনি দুই জন লোকের কাঁধে ভর দিয়ে পা হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে মসজিদে প্রবেশ করলে তাঁর আগমন শব্দ পেয়ে আবু বকর (রাযিঃ) পিছনে সরে আসার উপক্রম করলেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইঙ্গিতে তাকে তাঁর স্থানে দণ্ডায়মান থাকতে বললেন এবং নিজে এসে আবু বকর (রাযিঃ) এর বামপাশে বসে পড়লেন। রাসূল (ﷺ) বসে বসে নামাযের ইমামত করছিলেন এবং আবু বকর (রাযিঃ) দন্দায়মান অবস্থায় নবী (ﷺ) এর অনুসরণ করছিলেন। আর অন্য মুসল্লীগণ আবু বকর (রাযিঃ) এর নামাযের অনুসরণ করছিল।
باب اسْتِخْلاَفِ الإِمَامِ إِذَا عَرَضَ لَهُ عُذْرٌ مِنْ مَرَضٍ وَسَفَرٍ وَغَيْرِهِمَا مَنْ يُصَلِّي بِالنَّاسِ وَأَنَّ مَنْ صَلَّى خَلْفَ إِمَامٍ جَالِسٍ لِعَجْزِهِ عَنِ الْقِيَامِ لَزِمَهُ الْقِيَامُ إِذَا قَدَرَ عَلَيْهِ وَنَسْخِ الْقُعُودِ خَلْفَ الْقَاعِدِ فِي حَقِّ مَنْ قَدَرَ عَلَى الْقِيَامِ
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا أَبُو مُعَاوِيَةَ، وَوَكِيعٌ، ح وَحَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ يَحْيَى، - وَاللَّفْظُ لَهُ - قَالَ أَخْبَرَنَا أَبُو مُعَاوِيَةَ، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ، عَنِ الأَسْوَدِ، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ لَمَّا ثَقُلَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم جَاءَ بِلاَلٌ يُؤْذِنُهُ بِالصَّلاَةِ فَقَالَ " مُرُوا أَبَا بَكْرٍ فَلْيُصَلِّ بِالنَّاسِ " . قَالَتْ فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ أَبَا بَكْرٍ رَجُلٌ أَسِيفٌ إِنَّهُ مَتَى يَقُمْ مَقَامَكَ لاَ يُسْمِعِ النَّاسَ فَلَوْ أَمَرْتَ عُمَرَ . فَقَالَ " مُرُوا أَبَا بَكْرٍ فَلْيُصَلِّ بِالنَّاسِ " . قَالَتْ فَقُلْتُ لِحَفْصَةَ قُولِي لَهُ إِنَّ أَبَا بَكْرٍ رَجُلٌ أَسِيفٌ وَإِنَّهُ مَتَى يَقُمْ مَقَامَكَ لاَ يُسْمِعِ النَّاسَ فَلَوْ أَمَرْتَ عُمَرَ . فَقَالَتْ لَهُ . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " إِنَّكُنَّ لأَنْتُنَّ صَوَاحِبُ يُوسُفَ . مُرُوا أَبَا بَكْرٍ فَلْيُصَلِّ بِالنَّاسِ " . قَالَتْ فَأَمَرُوا أَبَا بَكْرٍ يُصَلِّي بِالنَّاسِ - قَالَتْ - فَلَمَّا دَخَلَ فِي الصَّلاَةِ وَجَدَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مِنْ نَفْسِهِ خِفَّةً فَقَامَ يُهَادَى بَيْنَ رَجُلَيْنِ وَرِجْلاَهُ تَخُطَّانِ فِي الأَرْضِ - قَالَتْ - فَلَمَّا دَخَلَ الْمَسْجِدَ سَمِعَ أَبُو بَكْرٍ حِسَّهُ ذَهَبَ يَتَأَخَّرُ فَأَوْمَأَ إِلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قُمْ مَكَانَكَ . فَجَاءَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم حَتَّى جَلَسَ عَنْ يَسَارِ أَبِي بَكْرٍ - قَالَتْ - فَكَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُصَلِّي بِالنَّاسِ جَالِسًا وَأَبُو بَكْرٍ قَائِمًا يَقْتَدِي أَبُو بَكْرٍ بِصَلاَةِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَيَقْتَدِي النَّاسُ بِصَلاَةِ أَبِي بَكْرٍ .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় অসুস্থতার কারণে ইমাম বসে নামায পড়ালেও পেছনের সুস্থ মুক্তাদীগণ দাঁড়িয়ে ইক্তিদা করবে। এটাই হানাফী মাযহাবের মত। (শামী: ১/৫৮৮)
এর বিপরীতে বুখারী-মুসলিমের বেশ কিছু হাদীসে বর্ণিত আছে যে, وَإِذَا صَلَّى قَائِمًا فَصَلُّوا قِيَامًا وَإِذَا صَلَّى قَاعِدًا فَصَلُّوا قُعُودًا أَجْمَعُونَ ইমাম দাঁড়িয়ে নামায পড়লে তোমরাও দাঁড়িয়ে নামায পড়বে। আর ইমাম বসে নামায পড়লে তোমরাও সকলে বসে নামায পড়বে। (বুখারী-৬৫৫, মুসলিম-৮০৬) ইমাম বুখারী রহ. হযরত আনাস রা. থেকে এ হাদীসটি বর্ণনা করার পরে বলেন, قَالَ الْحُمَيْدِيُّ قَوْلُهُ إِذَا صَلَّى جَالِسًا فَصَلُّوا جُلُوسًا هُوَ فِي مَرَضِهِ الْقَدِيمِ ثُمَّ صَلَّى بَعْدَ ذَلِكَ النَّبِيُّ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَالِسًا وَالنَّاسُ خَلْفَهُ قِيَامًا لَمْ يَأْمُرْهُمْ بِالْقُعُودِ وَإِنَّمَا يُؤْخَذُ بِالْآخِرِ فَالْآخِرِ مِنْ فِعْلِ النَّبِيِّ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ‘আল্লামা হুমাইদী বলেন, ইমাম বসে নামায পড়লে তোমরাও বসে নামায পড়বে’ এটা নবী কারীম স.-এর পূর্বেকার অসুস্থতার সময়ের কথা। পরবর্তীতে নবী কারীম স. নামায পড়েছেন বসে আর তাঁর পেছনের মুক্তাদীগণ পড়েছেন দাঁড়িয়ে। রসূল স. তাদেরকে বসতে বলেননি। আর রাসূল সা. এর সর্বশেষ আমলই গ্রহণীয়। (বুখারী-৬৫৫) এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, ইমাম বসে নামায পড়ালে তাঁর পেছনের সুস্থ মুক্তাদীগণ দাঁড়িয়ে ইক্তিদা করবে। এ আমলটি রসূল স.-এর শেষ আমল এবং এটাই বহাল। আর বসে ইক্তিদা করার আমলটি পূর্বের যা রহিত হয়ে গেছে।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন