আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ

১- ঈমানের অধ্যায়

হাদীস নং: ৩৭৪
আন্তর্জাতিক নং: ১৯৩-৪
- ঈমানের অধ্যায়
৮০. সর্বনিম্ন মর্যাদার জান্নাতবাসী
৩৭৪। মুহাম্মাদ ইবনে মিনহাল আয যারীর, আবু গাসসান আল মিসমাঈ ও মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না (রাহঃ) ......... আনাস ইবনে মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী (ﷺ) ইরশাদ করেনঃ ঐ ব্যক্তিকেও জাহান্নাম থেকে উদ্ধার করে আনা হবে, যে বলেছে “আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং তার অন্তরে একটি যবের পরিমাণ ঈমান অবশিষ্ট আছে। এরপর তাকেও জাহান্নাম থেকে বের করে আনা হবে, যে বলেছে, “আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং তার অন্তরে সামান্য একটি গমের পরিমাণ ঈমান অবশিষ্ট আছে। এরপর তাকেও জাহান্নাম থেকে বের করে আনা হবে, যে বলেছে “আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই” আর তার অন্তরে অণু পরিমাণ ঈমান অবশিষ্ট আছে।

ইবনে মিনহাল তাঁর বর্ণনায় উল্লেখ করেন যে, ইয়াযীদ (রাহঃ) বলেছেন, এরপর আমি শু’বার সাথে সাক্ষাত করে তাঁকে এ হাদীস শোনলাম। তখন তিনি বললেন, আমাদেরকে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন কাতাদা (রাহঃ), আনাস ইবনে মালিক (রাযিঃ) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সূত্রে। তবে শু’বা الذَّرَّةِ (অণু) শব্দের স্থলে ذُرَةً (ভুট্টা) বর্ণনা করেছেন। ইয়াযীদ (রাহঃ) বলেন, আবু বিসতাম এতে তাসহীফ (এক শব্দ স্থলে অন্য শব্দ ব্যবহার) করেছেন।
كتاب الإيمان
باب أَدْنَى أَهْلِ الْجَنَّةِ مَنْزِلَةً فِيهَا
وَحَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ مِنْهَالٍ الضَّرِيرُ، حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ زُرَيْعٍ، حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ أَبِي عَرُوبَةَ، وَهِشَامٌ، صَاحِبُ الدَّسْتَوَائِيِّ عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ح وَحَدَّثَنِي أَبُو غَسَّانَ الْمِسْمَعِيُّ، وَمُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى، قَالاَ حَدَّثَنَا مُعَاذٌ، - وَهُوَ ابْنُ هِشَامٍ - قَالَ حَدَّثَنِي أَبِي، عَنْ قَتَادَةَ، حَدَّثَنَا أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " يَخْرُجُ مِنَ النَّارِ مَنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَكَانَ فِي قَلْبِهِ مِنَ الْخَيْرِ مَا يَزِنُ شَعِيرَةً ثُمَّ يَخْرُجُ مِنَ النَّارِ مَنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَكَانَ فِي قَلْبِهِ مِنَ الْخَيْرِ مَا يَزِنُ بُرَّةً ثُمَّ يَخْرُجُ مِنَ النَّارِ مَنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَكَانَ فِي قَلْبِهِ مِنَ الْخَيْرِ مَا يَزِنُ ذَرَّةً " . زَادَ ابْنُ مِنْهَالٍ فِي رِوَايَتِهِ قَالَ يَزِيدُ فَلَقِيتُ شُعْبَةَ فَحَدَّثْتُهُ بِالْحَدِيثِ فَقَالَ شُعْبَةُ حَدَّثَنَا بِهِ قَتَادَةُ عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم بِالْحَدِيثِ . إِلاَّ أَنَّ شُعْبَةَ جَعَلَ مَكَانَ الذَّرَّةِ ذُرَةً قَالَ يَزِيدُ صَحَّفَ فِيهَا أَبُو بِسْطَامٍ .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীসে উল্লেখিত "خبر" শব্দের তরজমা করা হয়েছে 'ভাল'। এর অর্থ হল ঈমানের জ্যোতি। হযরত আনাস (রা)-এর এই হাদীসটির অন্য বর্ণনায় (যা ইমাম বুখারী (র)ও উল্লেখ করেছেন। " خير " এর পরিবর্তে "ایمان" শব্দ উল্লেখ আছে। এ হাদীস থেকে দু'টি জিনিস স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
(এক) আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই -- কলেমা পড়া সত্ত্বেও অসং কর্মের জন্য আল্লাহর বান্দাদের দোযখে নিক্ষেপ করা হবে। তাই যারা রাসূল (ﷺ)--এর বেহেশতের সুসংবাদ সম্পর্কিত হাদীস পাঠ করে মনে করেন যে, কলেমা পাঠকারী বান্দাকে দোযখে নিক্ষেপ করা হবে না তারা ভুল করেন।)
(দুই) বিশ্বাসী ব্যক্তির ঈমান যত অল্পই হোক না কেন, এবং তার আমল যতই অল্প হোক না কেন তার আখিরাতের জিন্দিগীতে এমন এক সময় আসবে যখন আল্লাহ তা'আলা দয়াপরবশ হয়ে তাকে দোযখ থেকে উদ্ধার করে বেহেশতে স্থান দিবেন।

বুখারী ও মুসলিমে এ সম্পর্কে হযরত আনাস (ﷺ) ছাড়াও হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা), হযরত জারিব (রা) ও হযরত আবূ হুরায়রা (রা)-এর সূত্রে আরো হাদীস বর্ণিত আছে। হাদীসের অন্যান্য কিতাবেও উপরোক্ত সাহাবীগণ ছাড়াও হযরত আবু বকর (রা), হযরত আবূ মূসা (রা) সহ বিভিন্ন সাহাবীর সূত্রে একই বিষয় সম্পর্কিত হাদীস বর্ণিত আছে। সহীহাইনে আবু সাঈদ খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত, যে হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে, তাতেও এ সম্পর্কে আরও আলোকপাত করা হয়েছে। দোযখে নিক্ষিপ্ত গুনাহগার মুসলমানদের মুক্তির জন্য বেহেশতবাসীগণ খুব কাকুতি মিনতি করে আল্লাহর কাছে দু‘আ করতে থাকবেন। আল্লাহ্ তা'আলা তাদের দরখাস্ত মঞ্জুর করবেন এবং দিনার পরিমাণ 'ভাল' যার মধ্যে রয়েছে তাদেরকে দোযখ থেকে বের করার অনুমতি দিবেন। এভাবে বহুলোককে দোযখ থেকে বের করা হবে। অতঃপর অর্ধদিনার পরিমাণ 'ভাল' যার মধ্যে রয়েছে তাকে দোযখ থেকে বের করার অনুমতি দেয়া হবে। তাতে আরো বিরাট সংখ্যক লোককে বের করা হবে। অতঃপর বলা হবে, সামান্য পরিমাণ 'ভাল' যাদের মধ্যে রয়েছে তাদেরকেও দোযখ থেকে বের কর। তাতে আরো বিরাট সংখ্যক লোককে দোযখ থেকে বের করা হবে। অতঃপর সুপারিশকারী মু'মিনগণ বলবেন, হে আল্লাহ! সামান্যতম ভালও যাদের মধ্যে রয়েছে তাদেরকেও আমরা ছেড়ে আসিনি। আল্লাহ্ তা'আলা বলবেন, ফিরিশতাদের সুপারিশ ককূল করা হয়েছে, নবীদের সুপারিশ কবুল করা হয়েছে, মু'মিনদের সুপারিশও কবুল করা হয়েছে। এখন বাকী রইল শুধু রাহমানুর রাহীমের পালা। অতঃপর আল্লাহ তা'আলা তাঁর রহমত ও মাগফিরাতের হাত দ্বারা এমন লোককেও বের করবেন যারা কখনও কোন নেক আমল করেনি। অতঃপর হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা) হাদীসের শেষাংশে সে সব লোক সম্পর্কে বলেন যে, "তারাই আল্লাহর উদ্ধারকৃত বান্দা যাদেরকে আল্লাহ্ তা'আলা কোন আমল ছাড়া বা পূর্বে পাঠানো কোন কল্যাণ ছাড়াই বেহেশতে দাখিল করবেন।

বস্তুতঃ তারা দুর্বল এবং হালকা ঈমানের অধিকারী বান্দা, তাই আল্লাহ্ তার রহমত করমের দ্বারা তাদেরকে নাজাত দিবেন।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)