আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ

১- ঈমানের অধ্যায়

হাদীস নং: ৩১২
আন্তর্জাতিক নং: ১৬৩
৭৩. রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর মি’রাজ এবং নামায ফরয হওয়া
৩১২। হারামালা ইবনে ইয়াহয়া আত তুজিবী (রাহঃ) ......... আবু যর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুল(ﷺ) ইরশাদ করেনঃ আমি মক্কাতে ছিলাম। আমার ঘরের ছাদ ফাঁক করা হলো। তখন জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) অবতরণ করলেন। তিনি আমার বক্ষ বিদীর্ণ করলেন। এরপর তা যমযমের পানি দিয়ে ধৌত করলেন। তারপর হিকমত ও ঈমানে পরিপূর্ণ একটি পাত্র আনা হলো এবং তা আমার বুকে ঢেলে বক্ষ বন্ধ করে দিলেন। এরপর আমার হাত ধরলেন এবং উর্ধ্বাকাশে যাত্রা করলেন। আমরা যখন প্রথম আসমানে গিয়ে পৌছলাম, তখন জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) এ আসমানের দ্বাররক্ষীকে বললেন, দরজা খুলুন! তিনি বললেন, কে? বললেন, জিবরাঈল। দ্বাররক্ষী বললেন, আপনার সাথে কি অন্য কেউ আছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমার সাথে মুহাম্মাদ আছেন। দ্বাররক্ষী বললেন, তাঁর কাছে আপনাকে পাঠান হয়েছিল কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। এরপর দরজা খুলে দেওয়া হলো।

আমরা প্রবেশ করে দেখি, এক ব্যক্তি, তাঁর ডানে একদল মানুষ এবং বায়ে একদল মানুষ। যখন তিনি ডান দিকে তাকান তখন হাসেন, আর যখন বাঁ দিকে তাকান তখন কাঁদেন। তিনি আমাকে বললেন মারহাবা হে সুযোগ্য সন্তান। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেনঃ আমি জিবরাঈলকে বললাম, ইনি কে? তিনি বললেন, ইনি আদম (আলাইহিস সালাম) আর ডানে ও বাঁয়ের এ লোকগুলো তার বংশধর। ডান পার্শ্বস্থরা হচ্ছে জান্নাতবাসী আর বাম পার্শ্বস্থরা হচ্ছে জাহান্নামবাসী। আর এ কারণেই তিনি ডান দিকে তাকালে হাসেন এবং বাঁ দিকে তাকালে কাদেন।

তারপর জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) আমাকে নিয়ে উর্ধ্বারোহণ করলেন এবং দ্বিতীয় আসমানে পৌছলেন এবং এর দ্বাররক্ষীকে বললেন, দরজা খুলুন। তিনি প্রথম আসমানের দ্বাররক্ষীর মত প্রশ্নোত্তর করে দরজা খূলে দিলেন। আনাস (রাযিঃ) বলেন, এরপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন যে, তিনি আসমানসমূহে আদম, ইদরীস, মুসা ও ইবরাহীম (আলাইহিমুস সালাম) এর সাথে সাক্ষাত লাভ করেছেন। আদম (আলাইহিস সালাম) প্রথম আসমানে এবং ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) ষষ্ঠ আসমানে। এছাড়া অন্যান্য নবীর অবস্থান সম্পর্কে এ রেওয়ায়েতে কিছু উল্লেখ নেই।

আনাস (রাযিঃ) বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) ইদরীস (আলাইহিস সালাম) এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি বলেছিলেন, মারহাবা, হে সুযোগ্য নবী! সুযোগ্য ভ্রাতা। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেনঃ আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইনি কে? জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) উত্তর দিলেন; ইনি ইদরীস (আলাইহিস সালাম) তারপর আমরা মুসা (আলাইহিস সালাম)-এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম। তিনিও বললেন, মারহাবা হে সুযোগ্য নবী, সুযোগ্য ভ্রাতা। জিজ্ঞাসা করলাম, ইনি কে? তিনি জবাব দিলেন, ইনি মুসা (আলাইহিস সালাম)।

তারপর আমরা ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম, তিনিও বললেন, মারহাবা হে সুযোগ্য নবী, সুযোগ্য ভ্রাতা! জিজ্ঞাসা করলাম ইনি কে? তিনি বললেন, ইনি ঈসা (আলাইহিস সালাম)। তারপর আমরা ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম)-এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম, তিনিও বললেন, মারহাবা হে সুযোগ্য নবী, সুযোগ্য সন্তান! জিজ্ঞাসা করলাম, ইনি কে? তিনি বললেন, ইনি ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম)।

ইবনে শিহাব, ইবনে হাযম, ইবনে আব্বাস ও আবু হাব্বা আনসারী থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ তারপর জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) আমাকে নিয়ে আরো উর্ধ্বে চললেন। আমরা এমন এক স্তরে পৌঁছলাম যে, তথায় আমি কলম-এর খশমশ (লেখার) শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম। ইবনে হাযম ও আনাস ইবনে মালিক বর্ণনা করেনঃ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেনঃ তখন আল্লাহ তাআলা আমার ওপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামায ফরয করেন। আমি এ নিয়ে প্রত্যাবর্তন করার পথে মুসা (আলাইহিস সালাম) এর সাথে সাক্ষাত হয়। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার প্রতিপালক আপনার উম্মতের ওপর কি ফরয করেছেন? আমি উত্তরে বললাম, তাদের উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামায ফরয করা হয়েছে।

মুসা (আলাইহিস সালাম) আমাকে বললেন, আপনি আপনার রবের কাছে ফিরে যান, কেননা আপনার উম্মত তা আদায় করতে সক্ষম হবে না। তাই আমি আল্লাহর নিকটে ফিরে গেলাম। তখন আল্লাহ এর অর্ধেক কমিয়ে দিলেন। আমি আবার ফিরে এসে মুসা (আলাইহিস ওয়াসাল্লাম) কে জানালে তিনি বললেন, না, আপনি পুনরায় ফিরে যান, কেননা আপনার উম্মত এতেও সক্ষম হবে না। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেনঃ তারপর আমি আল্লাহর নিকটে ফিরে গেলে তিনি বললেন, এ নির্দেশ পাঁচ, আর পাঁচই পঞ্চাশের সমান করে দিলাম, আমার কথার কোন রদবদল নেই।

এরপর আমি মুসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে ফিরে আসি। তিনি তখনো বললেন, আপনি ফিরে যান আল্লাহর নিকটে। আমি বললাম আমার লজ্জা অনুভূত হচ্ছে। তারপর জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) আমাকে নিয়ে চললেন, আমরা সিদরাতুল মুনতাহায় পৌছলাম। তা এত বিচিত্র রংে আবৃত যে, আমি বুঝতে পারছি না যে, আসলে তা কী। তারপর আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করান হল। সেখানে ছিল মুক্তার গম্বুজ আর তার মাটি ছিল মিশকের।
باب الإِسْرَاءِ بِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِلَى السَّمَوَاتِ وَفَرْضِ الصَّلَوَاتِ
وَحَدَّثَنِي حَرْمَلَةُ بْنُ يَحْيَى التُّجِيبِيُّ، أَخْبَرَنَا ابْنُ وَهْبٍ، قَالَ أَخْبَرَنِي يُونُسُ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ كَانَ أَبُو ذَرٍّ يُحَدِّثُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " فُرِجَ سَقْفُ بَيْتِي وَأَنَا بِمَكَّةَ فَنَزَلَ جِبْرِيلُ صلى الله عليه وسلم فَفَرَجَ صَدْرِي ثُمَّ غَسَلَهُ مِنْ مَاءِ زَمْزَمَ ثُمَّ جَاءَ بِطَسْتٍ مِنْ ذَهَبٍ مُمْتَلِئٍ حِكْمَةً وَإِيمَانًا فَأَفْرَغَهَا فِي صَدْرِي ثُمَّ أَطْبَقَهُ ثُمَّ أَخَذَ بِيَدِي فَعَرَجَ بِي إِلَى السَّمَاءِ فَلَمَّا جِئْنَا السَّمَاءَ الدُّنْيَا قَالَ جِبْرِيلُ - عَلَيْهِ السَّلاَمُ - لِخَازِنِ السَّمَاءِ الدُّنْيَا افْتَحْ . قَالَ مَنْ هَذَا قَالَ هَذَا جِبْرِيلُ . قَالَ هَلْ مَعَكَ أَحَدٌ قَالَ نَعَمْ مَعِيَ مُحَمَّدٌ صلى الله عليه وسلم . قَالَ فَأُرْسِلَ إِلَيْهِ قَالَ نَعَمْ فَفَتَحَ - قَالَ - فَلَمَّا عَلَوْنَا السَّمَاءَ الدُّنْيَا فَإِذَا رَجُلٌ عَنْ يَمِينِهِ أَسْوِدَةٌ وَعَنْ يَسَارِهِ أَسْوِدَةٌ - قَالَ - فَإِذَا نَظَرَ قِبَلَ يَمِينِهِ ضَحِكَ وَإِذَا نَظَرَ قِبَلَ شِمَالِهِ بَكَى - قَالَ - فَقَالَ مَرْحَبًا بِالنَّبِيِّ الصَّالِحِ وَالاِبْنِ الصَّالِحِ - قَالَ - قُلْتُ يَا جِبْرِيلُ مَنْ هَذَا قَالَ هَذَا آدَمُ صلى الله عليه وسلم وَهَذِهِ الأَسْوِدَةُ عَنْ يَمِينِهِ وَعَنْ شِمَالِهِ نَسَمُ بَنِيهِ فَأَهْلُ الْيَمِينِ أَهْلُ الْجَنَّةِ وَالأَسْوِدَةُ الَّتِي عَنْ شِمَالِهِ أَهْلُ النَّارِ فَإِذَا نَظَرَ قِبَلَ يَمِينِهِ ضَحِكَ وَإِذَا نَظَرَ قِبَلَ شِمَالِهِ بَكَى - قَالَ - ثُمَّ عَرَجَ بِي جِبْرِيلُ حَتَّى أَتَى السَّمَاءَ الثَّانِيَةَ . فَقَالَ لِخَازِنِهَا افْتَحْ - قَالَ - فَقَالَ لَهُ خَازِنُهَا مِثْلَ مَا قَالَ خَازِنُ السَّمَاءِ الدُّنْيَا فَفَتَحَ " . فَقَالَ أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ فَذَكَرَ أَنَّهُ وَجَدَ فِي السَّمَوَاتِ آدَمَ وَإِدْرِيسَ وَعِيسَى وَمُوسَى وَإِبْرَاهِيمَ - صَلَوَاتُ اللَّهِ عَلَيْهِمْ أَجْمَعِينَ - وَلَمْ يُثْبِتْ كَيْفَ مَنَازِلُهُمْ غَيْرَ أَنَّهُ ذَكَرَ أَنَّهُ قَدْ وَجَدَ آدَمَ - عَلَيْهِ السَّلاَمُ - فِي السَّمَاءِ الدُّنْيَا وَإِبْرَاهِيمَ فِي السَّمَاءِ السَّادِسَةِ . قَالَ " فَلَمَّا مَرَّ جِبْرِيلُ وَرَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِإِدْرِيسَ - صَلَوَاتُ اللَّهِ عَلَيْهِ - قَالَ مَرْحَبًا بِالنَّبِيِّ الصَّالِحِ وَالأَخِ الصَّالِحِ - قَالَ - ثُمَّ مَرَّ فَقُلْتُ مَنْ هَذَا فَقَالَ هَذَا إِدْرِيسُ - قَالَ - ثُمَّ مَرَرْتُ بِمُوسَى - عَلَيْهِ السَّلاَمُ - فَقَالَ مَرْحَبًا بِالنَّبِيِّ الصَّالِحِ وَالأَخِ الصَّالِحِ - قَالَ - قُلْتُ مَنْ هَذَا قَالَ هَذَا مُوسَى - قَالَ - ثُمَّ مَرَرْتُ بِعِيسَى فَقَالَ مَرْحَبًا بِالنَّبِيِّ الصَّالِحِ وَالأَخِ الصَّالِحِ . قُلْتُ مَنْ هَذَا قَالَ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ - قَالَ - ثُمَّ مَرَرْتُ بِإِبْرَاهِيمَ - عَلَيْهِ السَّلاَمُ - فَقَالَ مَرْحَبًا بِالنَّبِيِّ الصَّالِحِ وَالاِبْنِ الصَّالِحِ - قَالَ - قُلْتُ مَنْ هَذَا قَالَ هَذَا إِبْرَاهِيمُ " . قَالَ ابْنُ شِهَابٍ وَأَخْبَرَنِي ابْنُ حَزْمٍ أَنَّ ابْنَ عَبَّاسٍ وَأَبَا حَبَّةَ الأَنْصَارِيَّ كَانَا يَقُولاَنِ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " ثُمَّ عَرَجَ بِي حَتَّى ظَهَرْتُ لِمُسْتَوًى أَسْمَعُ فِيهِ صَرِيفَ الأَقْلاَمِ " . قَالَ ابْنُ حَزْمٍ وَ أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " فَفَرَضَ اللَّهُ عَلَى أُمَّتِي خَمْسِينَ صَلاَةً - قَالَ - فَرَجَعْتُ بِذَلِكَ حَتَّى أَمُرَّ بِمُوسَى فَقَالَ مُوسَى عَلَيْهِ السَّلاَمُ مَاذَا فَرَضَ رَبُّكَ عَلَى أُمَّتِكَ - قَالَ - قُلْتُ فَرَضَ عَلَيْهِمْ خَمْسِينَ صَلاَةً . قَالَ لِي مُوسَى عَلَيْهِ السَّلاَمُ فَرَاجِعْ رَبَّكَ فَإِنَّ أُمَّتَكَ لاَ تُطِيقُ ذَلِكَ - قَالَ - فَرَاجَعْتُ رَبِّي فَوَضَعَ شَطْرَهَا - قَالَ - فَرَجَعْتُ إِلَى مُوسَى - عَلَيْهِ السَّلاَمُ - فَأَخْبَرْتُهُ قَالَ رَاجِعْ رَبَّكَ فَإِنَّ أُمَّتَكَ لاَ تُطِيقُ ذَلِكَ - قَالَ - فَرَاجَعْتُ رَبِّي فَقَالَ هِيَ خَمْسٌ وَهْىَ خَمْسُونَ لاَ يُبَدَّلُ الْقَوْلُ لَدَىَّ - قَالَ - فَرَجَعْتُ إِلَى مُوسَى فَقَالَ رَاجِعْ رَبَّكَ . فَقُلْتُ قَدِ اسْتَحْيَيْتُ مِنْ رَبِّي - قَالَ - ثُمَّ انْطَلَقَ بِي جِبْرِيلُ حَتَّى نَأْتِيَ سِدْرَةَ الْمُنْتَهَى فَغَشِيَهَا أَلْوَانٌ لاَ أَدْرِي مَا هِيَ - قَالَ - ثُمَّ أُدْخِلْتُ الْجَنَّةَ فَإِذَا فِيهَا جَنَابِذُ اللُّؤْلُؤِ وَإِذَا تُرَابُهَا الْمِسْكُ " .
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)
সহীহ মুসলিম - হাদীস নং ৩১২ | মুসলিম বাংলা