আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ

১- ঈমানের অধ্যায়

হাদীস নং: ২৩৫
আন্তর্জাতিক নং: ১২৮-২
৫৮. বান্দার সুচিন্তাগুলো লিখা হয় কিন্তু কুচিন্তাগুলো লিখা হয় না
২৩৫। ইয়াহয়া ইবনে আইয়ুব, কুতায়বা ও ইবনে হুজর (রাহঃ) ......... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেনঃ আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ আমার বান্দা যখন কোন সৎকর্মের সংকল্প গ্রহণ করে অথচ এখনও তা সম্পাদন করে নি তখন আমি তার জন্য একটি সাওয়াব লিখি; আর যদি কার্যত সম্পাদন করে তবে দশ থেকে সাতশ গুণ পর্যন্ত সাওয়াব লিখি। পক্ষান্তরে যদি অসৎ কর্মের ইচ্ছা করে অথচ এখনো সম্পাদন করে নি তবে এর জন্য কিছুই লিখি না। আর তা কার্যে পরিণত করলে একটি মাত্র পাপ লিখি।
باب إِذَا هَمَّ الْعَبْدُ بِحَسَنَةٍ كُتِبَتْ وَإِذَا هَمَّ بِسَيِّئَةٍ لَمْ تُكْتَبْ
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ أَيُّوبَ، وَقُتَيْبَةُ، وَابْنُ، حُجْرٍ قَالُوا حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ، - وَهُوَ ابْنُ جَعْفَرٍ - عَنِ الْعَلاَءِ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ إِذَا هَمَّ عَبْدِي بِحَسَنَةٍ وَلَمْ يَعْمَلْهَا كَتَبْتُهَا لَهُ حَسَنَةً فَإِنْ عَمِلَهَا كَتَبْتُهَا عَشْرَ حَسَنَاتٍ إِلَى سَبْعِمِائَةِ ضِعْفٍ وَإِذَا هَمَّ بِسَيِّئَةٍ وَلَمْ يَعْمَلْهَا لَمْ أَكْتُبْهَا عَلَيْهِ فَإِنْ عَمِلَهَا كَتَبْتُهَا سَيِّئَةً وَاحِدَةً " .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এটি একটি হাদীছে কুদসী। হাদীছে কুদসী বলে এমন হাদীছকে, যা নবী সাল্লাল্লাহ 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তা'আলার বরাতে বর্ণনা করেছেন। সাধারণ হাদীছ থেকে এর পার্থক্য হল, সাধারণ হাদীছ সাহাবীগণ নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এভাবে বর্ণনা করেন যে, তিনি এই বলেছেন বা এই করেছেন। কিন্তু হাদীছে কুদসী বর্ণনা করতে গিয়ে সাহাবীগণ নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর আল্লাহ তা'আলারও উল্লেখ করেন এবং বলেন যে, তিনি আল্লাহ তা'আলা থেকে এই এই বর্ণনা করেছেন। এই উভয় প্রকার হাদীছও ওহীই বটে, যেমন কুরআন মাজীদও ওহী। তবে কুরআন মাজীদের ভাব ও ভাষা উভয় আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ, আর হাদীছের ভাব আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে কিন্তু ভাষা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিজের। কুরআনকে ওহীয়ে মাতলু এবং হাদীছকে ওহীয়ে গায়রে মাতলু বলে।

এ হাদীছে বলা হয়েছে যে, কেউ যদি কোনও নেক কাজের নিয়ত করে কিন্তু কাজটি করা না হয়, তবে কেবল নিয়তের কারণেও সেই কাজ করার ছওয়াব পাবে। এটা আল্লাহ তা'আলার মেহেরবানী যে, তিনি নেক কাজের নিয়তকেও একটি স্বতন্ত্র নেক কাজের মর্যাদা দিয়ে দেন। যেমন কেউ নিয়ত করল সে দু' রাক'আত নামায পড়বে, কিন্তু কোনও কারণে তার তা পড়া হল না। কিংবা নিয়ত করল, অমুক দীনী কাজে সে এত টাকা দান করবে, কিন্তু টাকাটা তার দান করা হল না। এ অবস্থায় তার ওই নিয়ত বৃথা যায় না। কাজটি করা হল না বলে তার নিয়ত বাতিল গণ্য হয় না; বরং আল্লাহ তা'আলা নিজ দয়ায় ওই নিয়তকেও একটি পূর্ণাঙ্গ কাজের মর্যাদা দিয়ে দেন এবং তার আমলনামায় সেই নিয়তকে একটি পূর্ণাঙ্গ নেক কাজরূপে লিখে দেন। তিনি লেখেন মানে ফিরিশতাদেরকে লেখার হুকুম করেন এবং তারা তা পালন করেন।

নেক কাজের নিয়ত করার পর বান্দা যদি তা পালন করতে সক্ষম হয়, তবে আল্লাহ তা'আলা তাকে দশ থেকে সাতশ' গুণ পর্যন্ত বরং তারও বেশি নেক কাজের মর্যাদা দিয়ে দেন। দশগুণ থেকে সাতশ' বা তারও বেশি হয় ইখলাসের তারতম্য ও আমলের সৌন্দর্যগত পার্থক্যের কারণে। অর্থাৎ যার ইখলাস যতবেশি হবে এবং আমল যতবেশি সুন্নতসম্মত ও সুচারু হবে, ছওয়াবও ততবেশি হবে। আমল একটা হওয়া সত্ত্বেও ছওয়াব বহুগুণ বেশি দেওয়াটা কেবলই আল্লাহ তা'আলার মেহেরবানী ও তাঁর দয়া।

এটাও আল্লাহ তা'আলার মেহেরবানী যে, অসৎ কাজের ক্ষেত্রে নেক কাজের মত বৃদ্ধি তিনি ঘটান না। একটা মন্দ কাজকে একটা মন্দ কাজই লেখা হয়। আবার মন্দ কাজের নিয়তকে স্বতন্ত্র কাজরূপে ধরা হয় না যে, সেজন্যও পাপ লেখা হবে। বরং উল্টো পাপের পরিবর্তে ছওয়াব লেখা হয়। অর্থাৎ যদি পাপ কাজের ইচ্ছা করার পর সেই পাপ কাজটি করা না হয়, তবে সে যে পাপ কাজটি করল না, সে তার ইচ্ছা বাস্তবায়ন থেকে বিরত থাকল, এজন্যে তার আমলনামায় একটি নেক কাজের ছওয়াব লিখে দেওয়া হয়। সুবহানাল্লাহ! এই মেহেরবানীরও কি কোনও সীমা আছে! এর জন্য আমাদের কতই না শোকর আদায় করা উচিত!

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. নেক কাজের নিয়তও যেহেতু ছওয়াবের কারণ, সেহেতু যখনই কোনও নেক কাজের অবকাশ আসে, অবিলম্বে তার নিয়ত করে ফেলা উচিত। এমনও হতে পারে যে, অবকাশ আসা সত্ত্বেও কোনও ওযরের কারণে কাজটি করা হল না। কিন্তু যেহেতু করার নিয়ত করা হয়েছিল, তাই সে কাজটি না করা সত্ত্বেও তার ছওয়াব থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত থাকতে হবে না; বরং নিয়তের কারণে একটা ছওয়াব অবশ্যই লেখা হবে। কিন্তু নিয়ত যদি না করা হত, তবে তো সম্পূর্ণই বঞ্চিত থাকতে হত। কাজটি করতে না পারার কারণে করার ছওয়াব তো পাওয়াই গেল না, আবার যেহেতু নিয়ত করা হয়নি তাই নিয়তেরও ছওয়াব থেকে মাহরূম থাকতে হল।

খ. শয়তান বা নফসের প্ররোচনায় কোনও পাপকর্মের ইচ্ছা জাগলে বান্দার কর্তব্য তা পরিহারের সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো, যেহেতু পরিহার করতে পারলে একটি নেককাজ করার ছওয়াব পাওয়া যায়।

গ. এ হাদীছ বান্দার প্রতি আল্লাহর অশেষ রহমত ও দয়ার দৃষ্টান্ত তুলে ধরে। সুতরাং এর জন্যও আল্লাহর শোকর আদায় করা অবশ্যকর্তব্য।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)