আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ
১- ঈমানের অধ্যায়
হাদীস নং: ১৯৭
আন্তর্জাতিক নং: ১০৭
৪৬. কাপড় টাখনুর নীচে নামিয়ে পরা, দান করে খোঁটা দেওয়া ও শপথের মাধ্যমে মালামাল বেচাকেনা করা হারাম এবং সে তিন ব্যক্তির বর্ণনা যাদের সাথে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা কথা বলবেন না, রহমতের নযরে তাকাবেন না এবং তাদের পবিত্র করবেন না। আর তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি
১৯৭। আবু বকর ইবনে আবি শাঈবা (রাহঃ) ......... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ তিন ব্যক্তির সাথে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা কথা বলবেন না, তাদের (গুনাহ থেকে) পবিত্র করবেন না। রাবী আবু মূআবিয়া বলেন, তাদের প্রতি তাকাবেনও না। আর তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। (এরা হল) যিনাকারী বৃদ্ধ, মিথ্যাবাদী বাদশাহ ও অহংকারী দরিদ্র ব্যক্তি।
باب بَيَانِ غِلَظِ تَحْرِيمِ إِسْبَالِ الإِزَارِ وَالْمَنِّ بِالْعَطِيَّةِ وَتَنْفِيقِ السِّلْعَةِ بِالْحَلِفِ وَبَيَانِ الثَّلاَثَةِ الَّذِينَ لاَ يُكَلِّمُهُمُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلاَ يَنْظُرُ إِلَيْهِمْ وَلاَ يُزَكِّيهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
وَحَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، وَأَبُو مُعَاوِيَةَ عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ أَبِي حَازِمٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " ثَلاَثَةٌ لاَ يُكَلِّمُهُمُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلاَ يُزَكِّيهِمْ - قَالَ أَبُو مُعَاوِيَةَ وَلاَ يَنْظُرُ إِلَيْهِمْ - وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ شَيْخٌ زَانٍ وَمَلِكٌ كَذَّابٌ وَعَائِلٌ مُسْتَكْبِرٌ " .
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছে তিন ব্যক্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে- لَا يُكَلِّمُهُمُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ (কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাদের সঙ্গে কথা বলবেন না)। কথা না বলার কারণ তিনি তাদের প্রতি নারাজ ও ক্রুদ্ধ থাকবেন। অথবা এর অর্থ তিনি তাদের সঙ্গে এমন কথা বলবেন না, যাতে তারা আনন্দবোধ করবে। এরকম অর্থও হতে পারে যে, তিনি নেককারদের সঙ্গে যেভাবে কথা বলবেন, যা দ্বারা তাদের প্রতি তাঁর সন্তুষ্টি প্রকাশ পাবে, ঠিক সেরকম কথা তিনি তাদের সঙ্গে বলবেন না। বরং তাদের সঙ্গে কথা বলবেন ক্রুদ্ধভাবে, যেমনটা বলবেন তাঁর গযবের উপযুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে।
وَلَا يُزَكِّيهِمْ (তাদেরকে পরিশুদ্ধ করবেন না)। অর্থাৎ তাদেরকে পাপ-পঙ্কিলতা থেকে পবিত্র করবেন না। অথবা এর অর্থ তিনি তাদের আমল কবুল করবেন না এবং তাদের প্রশংসা করবেন না।
وَلَا يَنْظُرُ إِلَيْهِمْ (এবং তাদের দিকে তাকাবেন না)। অর্থাৎ তাদের দিকে রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না; বরং ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকাবেন এবং তাদেরকে উপেক্ষা করবেন।
وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيْمٌ (আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাময় শাস্তি)। অর্থাৎ তাদের অপরাধ গুরুতর হওয়ায় শাস্তিও হবে অপরাপর শাস্তিপ্রাপ্তদের তুলনায় বেশি কঠোর ও কঠিন। সে তিনজন হল-
شَيخٌ زَانٍ (বৃদ্ধ ব্যভিচারী)। ব্যভিচার এমনিই মহাপাপ। যে-কেউ তা করুক, সে মহাপাপী। তবে যে ব্যক্তি বৃদ্ধ হয়ে যায়, ফলে শক্তি হ্রাস পায়, চাহিদা দুর্বল হয়ে যায়, সে কেন ব্যভিচার করবে? বিশেষত বৃদ্ধ হওয়ায় তার জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা যুবকদের তুলনায় অনেক বেশি। তার তো বোঝার কথা এটা কী কঠিন পাপ এবং দুনিয়া ও আখিরাতে এটা কত ক্ষতিকর, কত লাঞ্ছনাকর! সে জানে এ কদাকার কাজ সমাজকে কত কলুষিত করে। আরও জানে এর দ্বারা আক্রান্ত নারী ও তার পরিবারের ইজ্জত-সম্মান কতটা ভূলুণ্ঠিত হয়। এতকিছু সত্ত্বেও যদি সে ব্যভিচার করে, তবে বোঝা যায় তার স্বভাবটাই কদর্য। সে আপাদমস্তক সেই কদর্যতায় নিমজ্জিত। এমনিভাবে আল্লাহ তা'আলার ভয়-ডরও তার মধ্যে বলতে গেলে নেই-ই। থাকলেও তা নিতান্তই নিস্তেজ। আখিরাতের ব্যাপারেও সে চরম গাফেল। ইন্দ্রিয় ও বদচাহিদার কাছে সে সম্পূর্ণরূপে সমর্পিত। সে আত্মসম্মানবোধ সম্পূর্ণরূপেই খুইয়ে বসেছে। তাই নির্লজ্জভাবে সে এই ভয়ানক পাপটি করতে পারছে। সুতরাং তার পক্ষে এ পাপ অন্যদের তুলনায় বেশি সঙ্গিন তো হবেই!
مَلِك كَذَّابٌ (মিথ্যুক বাদশা)। মিথ্যা বলা এমনিই মহাপাপ। যে-কেউ মিথ্যা বলে, সে একজন মহাপাপী। কিন্তু কোনও বাদশা যদি মিথ্যা বলে, তবে তা আরও গুরুতর হয়ে যায়। কেননা তার তো মিথ্যা বলার কোনও প্রয়োজন নেই। তার ভয় কিসের? সে সত্য বললে কে কী করতে পারবে? প্রকাশ্যে সত্য বললেও তার কোনওকিছুর তোয়াক্কা করার দরকার হয় না। তা সত্ত্বেও যদি সে মিথ্যা বলে, তবে বোঝা যাবে মিথ্যা বলাটা তার কোনও প্রয়োজনে নয়; বরং এটা তার অভ্যাস। অভ্যাসে পরিণত হয়ে যাওয়ায় তার জন্য এ পাপ অন্যদের তুলনায় বেশি কঠিন বলে বিবেচিত হবে।
عَائِلٌ مُسْتَكْبَرٌ (অহংকারী গরীব)। এমনিভাবে অহংকারও যে-কারও জন্যই মন্দ। কিন্তু ফকীর ও গরীব ব্যক্তি যদি অহংকার করে, সেটা অধিকতর মন্দ। কেননা অহংকার করাটা তার অবস্থার সঙ্গে যায় না। গরীব হওয়ায় তার তো এমনিই নরম থাকার কথা। তা সত্ত্বেও যখন অহংকার করে, তখন বোঝা যায় অহংকার করাটা তার এক বদখাসলাত। আর সে কারণেই তার জন্য এটাকে কঠিনরূপে দেখা হয়।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. যুবকবয়স থেকেই ব্যভিচার পরিহার করে চলতে হবে, যাতে এটা বদঅভ্যাসে পরিণত না হয়ে যায়, ফলে বৃদ্ধবয়সেও সে বদঅভ্যাসের প্রকাশ ঘটে যায়।
খ. মিথ্যা বলা মহাপাপ। পূর্ণ সচেতনতার সঙ্গে এ পাপ এড়িয়ে চলতে হবে।
গ. অহংকার নেহাৎ মন্দ চরিত্র। এর থেকে নিজেকে মুক্ত করা জরুরি, পাছে গরীব অবস্থায়ও এ রোগ থেকে যায়।
ঘ. আল্লাহর কাছে মাগফিরাত পাওয়া বান্দার পরম প্রাপ্তি। এ প্রাপ্তিতে যা-কিছু বাধা, তা থেকে দূরে থাকা অবশ্যকর্তব্য।
ঙ. কিয়ামতে যাতে আল্লাহর রহমতের দৃষ্টি পাই ও তাঁর মায়ার সম্ভাষণ শুনতে পাই, সে আশায় আমরা বুক বেঁধে রাখব ও করণীয় কাজ করব। আল্লাহ তা'আলা তাওফীক দান করুন।
وَلَا يُزَكِّيهِمْ (তাদেরকে পরিশুদ্ধ করবেন না)। অর্থাৎ তাদেরকে পাপ-পঙ্কিলতা থেকে পবিত্র করবেন না। অথবা এর অর্থ তিনি তাদের আমল কবুল করবেন না এবং তাদের প্রশংসা করবেন না।
وَلَا يَنْظُرُ إِلَيْهِمْ (এবং তাদের দিকে তাকাবেন না)। অর্থাৎ তাদের দিকে রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না; বরং ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকাবেন এবং তাদেরকে উপেক্ষা করবেন।
وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيْمٌ (আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাময় শাস্তি)। অর্থাৎ তাদের অপরাধ গুরুতর হওয়ায় শাস্তিও হবে অপরাপর শাস্তিপ্রাপ্তদের তুলনায় বেশি কঠোর ও কঠিন। সে তিনজন হল-
شَيخٌ زَانٍ (বৃদ্ধ ব্যভিচারী)। ব্যভিচার এমনিই মহাপাপ। যে-কেউ তা করুক, সে মহাপাপী। তবে যে ব্যক্তি বৃদ্ধ হয়ে যায়, ফলে শক্তি হ্রাস পায়, চাহিদা দুর্বল হয়ে যায়, সে কেন ব্যভিচার করবে? বিশেষত বৃদ্ধ হওয়ায় তার জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা যুবকদের তুলনায় অনেক বেশি। তার তো বোঝার কথা এটা কী কঠিন পাপ এবং দুনিয়া ও আখিরাতে এটা কত ক্ষতিকর, কত লাঞ্ছনাকর! সে জানে এ কদাকার কাজ সমাজকে কত কলুষিত করে। আরও জানে এর দ্বারা আক্রান্ত নারী ও তার পরিবারের ইজ্জত-সম্মান কতটা ভূলুণ্ঠিত হয়। এতকিছু সত্ত্বেও যদি সে ব্যভিচার করে, তবে বোঝা যায় তার স্বভাবটাই কদর্য। সে আপাদমস্তক সেই কদর্যতায় নিমজ্জিত। এমনিভাবে আল্লাহ তা'আলার ভয়-ডরও তার মধ্যে বলতে গেলে নেই-ই। থাকলেও তা নিতান্তই নিস্তেজ। আখিরাতের ব্যাপারেও সে চরম গাফেল। ইন্দ্রিয় ও বদচাহিদার কাছে সে সম্পূর্ণরূপে সমর্পিত। সে আত্মসম্মানবোধ সম্পূর্ণরূপেই খুইয়ে বসেছে। তাই নির্লজ্জভাবে সে এই ভয়ানক পাপটি করতে পারছে। সুতরাং তার পক্ষে এ পাপ অন্যদের তুলনায় বেশি সঙ্গিন তো হবেই!
مَلِك كَذَّابٌ (মিথ্যুক বাদশা)। মিথ্যা বলা এমনিই মহাপাপ। যে-কেউ মিথ্যা বলে, সে একজন মহাপাপী। কিন্তু কোনও বাদশা যদি মিথ্যা বলে, তবে তা আরও গুরুতর হয়ে যায়। কেননা তার তো মিথ্যা বলার কোনও প্রয়োজন নেই। তার ভয় কিসের? সে সত্য বললে কে কী করতে পারবে? প্রকাশ্যে সত্য বললেও তার কোনওকিছুর তোয়াক্কা করার দরকার হয় না। তা সত্ত্বেও যদি সে মিথ্যা বলে, তবে বোঝা যাবে মিথ্যা বলাটা তার কোনও প্রয়োজনে নয়; বরং এটা তার অভ্যাস। অভ্যাসে পরিণত হয়ে যাওয়ায় তার জন্য এ পাপ অন্যদের তুলনায় বেশি কঠিন বলে বিবেচিত হবে।
عَائِلٌ مُسْتَكْبَرٌ (অহংকারী গরীব)। এমনিভাবে অহংকারও যে-কারও জন্যই মন্দ। কিন্তু ফকীর ও গরীব ব্যক্তি যদি অহংকার করে, সেটা অধিকতর মন্দ। কেননা অহংকার করাটা তার অবস্থার সঙ্গে যায় না। গরীব হওয়ায় তার তো এমনিই নরম থাকার কথা। তা সত্ত্বেও যখন অহংকার করে, তখন বোঝা যায় অহংকার করাটা তার এক বদখাসলাত। আর সে কারণেই তার জন্য এটাকে কঠিনরূপে দেখা হয়।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. যুবকবয়স থেকেই ব্যভিচার পরিহার করে চলতে হবে, যাতে এটা বদঅভ্যাসে পরিণত না হয়ে যায়, ফলে বৃদ্ধবয়সেও সে বদঅভ্যাসের প্রকাশ ঘটে যায়।
খ. মিথ্যা বলা মহাপাপ। পূর্ণ সচেতনতার সঙ্গে এ পাপ এড়িয়ে চলতে হবে।
গ. অহংকার নেহাৎ মন্দ চরিত্র। এর থেকে নিজেকে মুক্ত করা জরুরি, পাছে গরীব অবস্থায়ও এ রোগ থেকে যায়।
ঘ. আল্লাহর কাছে মাগফিরাত পাওয়া বান্দার পরম প্রাপ্তি। এ প্রাপ্তিতে যা-কিছু বাধা, তা থেকে দূরে থাকা অবশ্যকর্তব্য।
ঙ. কিয়ামতে যাতে আল্লাহর রহমতের দৃষ্টি পাই ও তাঁর মায়ার সম্ভাষণ শুনতে পাই, সে আশায় আমরা বুক বেঁধে রাখব ও করণীয় কাজ করব। আল্লাহ তা'আলা তাওফীক দান করুন।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
