আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ
১- ঈমানের অধ্যায়
হাদীস নং: ৬৪
আন্তর্জাতিক নং: ৩৭-২
১২. ঈমানের শাখা-প্রশাখার সংখ্যা, তার সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন শাখার বর্ণনা, লজ্জাশীলতার ফযীলাত এবং তা ঈমানের অঙ্গ হওয়ার বর্ণনা
৬৪। ইয়াহয়া ইবনে হাবীব আল হারিসী (রাহঃ) ......... আবু কাতাদা (রাহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আমাদের একদল ইমরান ইবনে হুসাইন (রাহঃ)-এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। আমাদের মাঝে বুশায়র ইবনে কাবও ছিলেন। তখন ইমরান (রাযিঃ) আমাদের কাছে হাদীস রিওয়ায়েত প্রসঙ্গে বললেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, লজ্জা সবটাই মঙ্গলজনক। রাবী বলেন যে, কিংবা রাসুল (ﷺ) বলেছেনঃ লজ্জা সবটাই মঙ্গলজনক। বুশায়র ইবনে কাব (রাহঃ) বলেন, কোন কোন কিতাবে বা হিকমতের গ্রন্থে আমরা পেয়েছি যে, লজ্জা থেকেই প্রশান্তি ও আল্লাহর জন্য গাম্ভীর্য এবং তা থেকে দুর্বলতারও উৎপত্তি।
রাবী বলেন, একথা শুনে ইমরান (রাযিঃ) রাগান্বিত হলেন, এমন কি তার দু চোখ লাল হয়ে গেল। ইমরান (রাযিঃ) বলেনঃ এরূপ নয় কি যে, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে হাদীস বর্ণনা করছি, আর তুমি তার মুকাবিলায় পূঁথির কথা পেশ করছ। এরপর ইমরান (রাযিঃ) পুনরুক্তি করলেন। আর বুশায়রও তার কথার পূনরাবৃত্তি করলেন। এতে ইমরান (রাযিঃ) খুবই রাগান্বিত হলেন। রাবী বলেন যে, আমরা বলতে লাগলাম, হে আবু নূজায়দ! (ইমরানের উপনাম) সে আমাদেরই লোক। তার মধ্যে ক্রটি নেই।*
*অর্থাৎ, তাঁর আকীদার ক্ষেত্রে ত্রুটি নেই।
রাবী বলেন, একথা শুনে ইমরান (রাযিঃ) রাগান্বিত হলেন, এমন কি তার দু চোখ লাল হয়ে গেল। ইমরান (রাযিঃ) বলেনঃ এরূপ নয় কি যে, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে হাদীস বর্ণনা করছি, আর তুমি তার মুকাবিলায় পূঁথির কথা পেশ করছ। এরপর ইমরান (রাযিঃ) পুনরুক্তি করলেন। আর বুশায়রও তার কথার পূনরাবৃত্তি করলেন। এতে ইমরান (রাযিঃ) খুবই রাগান্বিত হলেন। রাবী বলেন যে, আমরা বলতে লাগলাম, হে আবু নূজায়দ! (ইমরানের উপনাম) সে আমাদেরই লোক। তার মধ্যে ক্রটি নেই।*
*অর্থাৎ, তাঁর আকীদার ক্ষেত্রে ত্রুটি নেই।
باب بَيَانِ عَدَدِ شُعَبِ الْإِيمَانِ وَأَفْضَلِهَا وَأَدْنَاهَا وَفَضِيلَةِ الْحَيَاءِ وَكَوْنِهِ مِنْ الْإِيمَانِ
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ حَبِيبٍ الْحَارِثِيُّ، حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ زَيْدٍ، عَنْ إِسْحَاقَ، - وَهُوَ ابْنُ سُوَيْدٍ - أَنَّ أَبَا قَتَادَةَ، حَدَّثَ قَالَ كُنَّا عِنْدَ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ فِي رَهْطٍ مِنَّا وَفِينَا بُشَيْرُ بْنُ كَعْبٍ فَحَدَّثَنَا عِمْرَانُ، يَوْمَئِذٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " الْحَيَاءُ خَيْرٌ كُلُّهُ " . قَالَ أَوْ قَالَ " الْحَيَاءُ كُلُّهُ خَيْرٌ " . فَقَالَ بُشَيْرُ بْنُ كَعْبٍ إِنَّا لَنَجِدُ فِي بَعْضِ الْكُتُبِ أَوِ الْحِكْمَةِ أَنَّ مِنْهُ سَكِينَةً وَوَقَارًا لِلَّهِ وَمِنْهُ ضَعْفٌ . قَالَ فَغَضِبَ عِمْرَانُ حَتَّى احْمَرَّتَا عَيْنَاهُ وَقَالَ أَلاَ أُرَانِي أُحَدِّثُكَ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَتُعَارِضُ فِيهِ . قَالَ فَأَعَادَ عِمْرَانُ الْحَدِيثَ قَالَ فَأَعَادَ بُشَيْرٌ فَغَضِبَ عِمْرَانُ قَالَ فَمَا زِلْنَا نَقُولُ فِيهِ إِنَّهُ مِنَّا يَا أَبَا نُجَيْدٍ إِنَّهُ لاَ بَأْسَ بِهِ .
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লজ্জাশীলতা যে কত উৎকৃষ্ট গুণ, সেদিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন যে, তা কেবল কল্যাণই বয়ে আনে। হাদীসে আরো আছে, এর পুরোটাই কল্যাণ। বস্তুত লজ্জাশীলতা এমনই এক গুণ, যা মানুষের দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জগতের কল্যাণ বয়ে আনে। কেননা যার মধ্যে এ গুণ থাকে, সে যদি একজন দুনিয়াদার ব্যক্তিও হয়, তবুও সহজে মন্দকাজে লিপ্ত হয় না। লোকলজ্জার ভয়ে সে তা থেকে বিরত থাকে। সে ভাবে, লোকে যদি জানতে পারে আমি এই এই কাজ করি, তবে তারা কী মনে করবে! লোকলজ্জার ভয়ও যখন মানুষের মন্দকাজ থেকে বিরত থাকার কারণ হয়, তখন আল্লাহর প্রতি যার লজ্জাবোধ থাকে, সে কীভাবে মন্দকাজে লিপ্ত হতে পারে? নিশ্চয়ই এরূপ ব্যক্তি আল্লাহর কোনও আদেশ অমান্য করবে না এবং তিনি যা-কিছু নিষেধ করেছেন তাতেও কখনও লিপ্ত হবে না।
ইবনে আরাবী রহ. বলেন, হায়া তো এই যে, মানুষ এমন কাজ করা হতে বিরত থাকবে, যা সে করেছে বলে লোকে জানতে পারলে তাদের মধ্যে তাকে লজ্জিত ও অপদস্থ হতে হবে। মুমিন ব্যক্তি জানে যে, সে যা-কিছুই করে তা আল্লাহ দেখেন। এ কথা জানে, তখন তো আল্লাহকে তার অনেক বেশি লজ্জা করা উচিত। কেননা কিয়ামতের দিন তিনি যখন লোকসম্মুখে তাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন, তখন তাকে চরমভাবে লজ্জিত হতে হবে। সে লজ্জার ভয়ে এখনই তার কর্তব্য যাবতীয় লজ্জাজনক কাজ অর্থাৎ শরী'আতবিরোধী কাজ থেকে বিরত থাকা। এটাই প্রকৃত হায়া। এজন্যই বলা হয়েছে, লজ্জা কেবল কল্যাণই বয়ে আনে। বিজ্ঞজনেরা বলেন, যে ব্যক্তি লজ্জার পোশাক পরিধান করে, লোকে তার মধ্যে কখনও কোনও দোষ দেখতে পাবে না।
প্রশ্ন হতে পারে, অনেক সময় মানুষ লজ্জার কারণে সত্য কথা বলতে পারে না, এমনিভাবে ন্যায়ের আদেশ করা ও অন্যায়ে বাধা দেওয়ার ক্ষেত্রেও অনেক সময় লজ্জা প্রতিবন্ধক হয়ে থাকে, তো এরূপ ক্ষেত্রে লজ্জা কল্যাণ বয়ে আনল কই; বরং তা তো কল্যাণের জন্য বাধা হয়ে গেল?
এর উত্তর হল, যে লজ্জা সত্য বলা বা ন্যায়ের আদেশ করা ও অন্যায়ে বাধা দেওয়ার পক্ষে প্রতিবন্ধক হয়, তা আদৌ লজ্জা নয়; বরং তা এক রকম মানসিক অক্ষমতা ও ঈমানী দুর্বলতা। যে লজ্জা ঈমানের অঙ্গ, তার তো দাবি হল সত্যে প্রতিষ্ঠিত থাকা ও সত্য বলতে অদম্য থাকা। এটা ভিন্ন কথা যে, সত্য বলতে স্থান-কাল-পাত্র বিবেচনায় রাখা জরুরি। সে হিসেবে সত্য বলার ধরন-ধারণ যেখানে যেমন হওয়া উচিত সেখানে তেমনই পন্থা অবলম্বন করা বাঞ্ছনীয়। সঠিক ও যৌক্তিক পন্থায় এ দায়িত্ব পালন করতেই হবে। লজ্জার অজুহাতে তা থেকে বিরত থাকার সুযোগ নেই। আসল কর্তব্য হল লজ্জাশীলতাকে ঈমান ও শরী'আতের ছাঁচে ঢালাই করে নেওয়া। তা করা হলে লজ্জা কখনও কোনও কল্যাণকর কাজে প্রতিবন্ধক হবে না; বরং তা সম্পন্ন করার পক্ষেই প্রেরণাদায়ী হবে।
সুতরাং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মজলিসে একবার লজ্জাশীলতা সম্পর্কে আলোচনা হলে সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করেছিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! লজ্জাশীলতা কি দীনের অঙ্গ? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন-
بَلْ هُوَ الدِّيْنُ كُلُّهُ
‘বরং দীনের সবটাই তো লজ্জাশীলতা'। (তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর ৬৩; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ২০৮০৮)
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. লজ্জাশীলতা যেহেতু কল্যাণই বয়ে আনে, তাই সকল ক্ষেত্রে এ গুণের চর্চা করা চাই।
খ. লজ্জার কারণে যদি কেউ এমন কোনও কাজ করে, যা শরী'আত অনুমোদন করে না, তবে বুঝতে হবে সে লজ্জা আদৌ লজ্জা নয়।
ইবনে আরাবী রহ. বলেন, হায়া তো এই যে, মানুষ এমন কাজ করা হতে বিরত থাকবে, যা সে করেছে বলে লোকে জানতে পারলে তাদের মধ্যে তাকে লজ্জিত ও অপদস্থ হতে হবে। মুমিন ব্যক্তি জানে যে, সে যা-কিছুই করে তা আল্লাহ দেখেন। এ কথা জানে, তখন তো আল্লাহকে তার অনেক বেশি লজ্জা করা উচিত। কেননা কিয়ামতের দিন তিনি যখন লোকসম্মুখে তাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন, তখন তাকে চরমভাবে লজ্জিত হতে হবে। সে লজ্জার ভয়ে এখনই তার কর্তব্য যাবতীয় লজ্জাজনক কাজ অর্থাৎ শরী'আতবিরোধী কাজ থেকে বিরত থাকা। এটাই প্রকৃত হায়া। এজন্যই বলা হয়েছে, লজ্জা কেবল কল্যাণই বয়ে আনে। বিজ্ঞজনেরা বলেন, যে ব্যক্তি লজ্জার পোশাক পরিধান করে, লোকে তার মধ্যে কখনও কোনও দোষ দেখতে পাবে না।
প্রশ্ন হতে পারে, অনেক সময় মানুষ লজ্জার কারণে সত্য কথা বলতে পারে না, এমনিভাবে ন্যায়ের আদেশ করা ও অন্যায়ে বাধা দেওয়ার ক্ষেত্রেও অনেক সময় লজ্জা প্রতিবন্ধক হয়ে থাকে, তো এরূপ ক্ষেত্রে লজ্জা কল্যাণ বয়ে আনল কই; বরং তা তো কল্যাণের জন্য বাধা হয়ে গেল?
এর উত্তর হল, যে লজ্জা সত্য বলা বা ন্যায়ের আদেশ করা ও অন্যায়ে বাধা দেওয়ার পক্ষে প্রতিবন্ধক হয়, তা আদৌ লজ্জা নয়; বরং তা এক রকম মানসিক অক্ষমতা ও ঈমানী দুর্বলতা। যে লজ্জা ঈমানের অঙ্গ, তার তো দাবি হল সত্যে প্রতিষ্ঠিত থাকা ও সত্য বলতে অদম্য থাকা। এটা ভিন্ন কথা যে, সত্য বলতে স্থান-কাল-পাত্র বিবেচনায় রাখা জরুরি। সে হিসেবে সত্য বলার ধরন-ধারণ যেখানে যেমন হওয়া উচিত সেখানে তেমনই পন্থা অবলম্বন করা বাঞ্ছনীয়। সঠিক ও যৌক্তিক পন্থায় এ দায়িত্ব পালন করতেই হবে। লজ্জার অজুহাতে তা থেকে বিরত থাকার সুযোগ নেই। আসল কর্তব্য হল লজ্জাশীলতাকে ঈমান ও শরী'আতের ছাঁচে ঢালাই করে নেওয়া। তা করা হলে লজ্জা কখনও কোনও কল্যাণকর কাজে প্রতিবন্ধক হবে না; বরং তা সম্পন্ন করার পক্ষেই প্রেরণাদায়ী হবে।
সুতরাং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মজলিসে একবার লজ্জাশীলতা সম্পর্কে আলোচনা হলে সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করেছিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! লজ্জাশীলতা কি দীনের অঙ্গ? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন-
بَلْ هُوَ الدِّيْنُ كُلُّهُ
‘বরং দীনের সবটাই তো লজ্জাশীলতা'। (তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর ৬৩; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ২০৮০৮)
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. লজ্জাশীলতা যেহেতু কল্যাণই বয়ে আনে, তাই সকল ক্ষেত্রে এ গুণের চর্চা করা চাই।
খ. লজ্জার কারণে যদি কেউ এমন কোনও কাজ করে, যা শরী'আত অনুমোদন করে না, তবে বুঝতে হবে সে লজ্জা আদৌ লজ্জা নয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
