আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ

১- ঈমানের অধ্যায়

হাদীস নং: ২২
আন্তর্জাতিক নং: ১৬ -
৫. ইসলামের রুকনসমূহ ও এর গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভসমুহ
২২। ইবনে নুমাইর (রাহঃ) ......... তাউস (রাহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, এক ব্যক্তি আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাযিঃ)-কে প্রশ্ন করলেন, আপনি কেন যুদ্ধে অংশ-গ্রহণ করছেন না? ইবনে উমর (রাযিঃ) বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) -কে বলতে শুনেছি, ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি বিষয়ের উপর প্রতিষ্ঠিত, আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই সাক্ষ্য দেয়া, নামায কায়েম করা, যাকাত দেওয়া, রমাযানের রোযা পালন করা ও বায়তুল্লাহর হজ্জ করা।
وَحَدَّثَنِي ابْنُ نُمَيْرٍ، حَدَّثَنَا أَبِي، حَدَّثَنَا حَنْظَلَةُ، قَالَ سَمِعْتُ عِكْرِمَةَ بْنَ خَالِدٍ، يُحَدِّثُ طَاوُسًا أَنَّ رَجُلاً، قَالَ لِعَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ أَلاَ تَغْزُو فَقَالَ إِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " إِنَّ الإِسْلاَمَ بُنِيَ عَلَى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَإِقَامِ الصَّلاَةِ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ وَصِيَامِ رَمَضَانَ وَحَجِّ الْبَيْتِ " .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

ইসলামের আসল অর্থ হচ্ছে নিজেকে কারো কাছে সমর্পণ করে দেওয়া এবং সম্পূর্ণ তারই নির্দেশের অধীন হয়ে যাওয়া। আর মহান আল্লাহর প্রেরিত ও তাঁর রাসূলগণ কর্তৃক আনীত দ্বীনের নাম 'ইসলাম' এজন্যই রাখা হয়েছে যে, এখানে বান্দা নিজেকে সম্পূর্ণভাবে আল্লাহর কাছে সমর্পণ করে দেয় এবং তাঁর সার্বিক আনুগত্যকে নিজের জীবন সাধনার কেন্দ্রবিন্দু বানিয়ে নেয়।
বস্তুতঃ এটাই হচ্ছে ইসলামের হাকীকত ও তাৎপর্য এবং আমাদের কাছে এরই দাবী করা হয়েছে। আল্লাহ তা'আলা বলেন তোমাদের আল্লাহ্ তো একক আল্লাহ, সুতরাং তোমরা মুসলিম অর্থাৎ তাঁরই আজ্ঞাধীন হয়ে যাও। (সূরা হজ্জঃ আয়াত 08)

এই ইসলাম সম্পর্কেই বলা হয়েছে। তার চেয়ে উত্তম মানুষ আর কে হতে পারে, যে
নিজেকে আল্লাহর কাছে সমর্পণ করে দিয়েছে এবং সে এভাবে মুসলিম বান্দা হয়ে গিয়েছে।
(সূরা নিসা : আয়াত ১২৫)

এই ইসলাম সম্পর্কে ঘোষণা করা হয়েছে যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন অবলম্বন করতে চায়, তার পক্ষ থেকে তা কখনো গ্রহণ করা হবে না এবং সে হবে আখেরাতে চরম ক্ষতিগ্রস্ত। (সূরা আলে ইমরান : আয়াত ৮৫)

মোটকথা, ইসলামের মূল প্রাণশক্তি ও এর হাকীকত এটাই যে, বান্দা নিজেকে সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর কাছে সমর্পণ করে দেবে এবং সর্বক্ষেত্রে তাঁরই আজ্ঞাবহ হয়ে থাকবে।।

নবী-রাসূলদের আনীত শরীঅতসমূহে এই ইসলামের জন্য বিশেষ কিছু মৌলিক বিধি বিধানও থাকে, যেগুলোর অবস্থান এই মূল ইসলামের অবয়ব তুল্য। আর এই মূলের ক্রমবৃদ্ধি ও এর সজীবতা এ সকল বিধি-বিধানের দ্বারাই হয়ে থাকে। এই বিষয়গুলি সম্পূর্ণ অনুসৃত বিষয় হয়ে থাকে এবং এই বিষয়গুলো দ্বারাই বাহ্যত তাদের মধ্যে পার্থক্য করা হয়, যারা ইসলামকে নিজেদের জীবনবিধান বানিয়ে নিয়েছে আর যারা তা করেনি।

শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে ইসলামের যে সর্বশেষ ও পরিপূর্ণ জীবনবিধান আমাদের কাছে এসেছে, এর মধ্যে আল্লাহর একত্বতার বিশ্বাস, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রেসালতের সাক্ষ্য প্রদান, নামায, যাকাত, রোযা ও বায়তুল্লাহ শরীফের হজ্জকে ইসলামের স্তম্ভ ও মৌলিক বিষয় সাব্যস্ত করা হয়েছে। ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি জিনিসের উপর স্থাপিত।

যা হোক, ইসলামের পরিচয় সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে এই হাদীসে হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে পাঁচটি জিনিসকে উল্লেখ করেছেন, এগুলোই হচ্ছে ইসলামের বুনিয়াদ। আর এগুলোই মূল ইসলামের দৃষ্ট অবয়ব। এই জন্যই ইসলামের পরিচয় দিতে গিয়ে এই বিষয়গুলোর উল্লেখ করা হয়েছে।

এ হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রূপকভাষায় ইসলামকে এমন একটি ইমারতের সাথে তুলনা করেছেন, যা কয়েকটি স্তরের উপর দাঁড়ানো থাকে। তিনি এখানে বলে দিয়েছেন যে, ইসলামের এই ইমারত ও সৌধ এ পাঁচটি জিনিসের উপরই প্রতিষ্ঠিত। তাই কোন মুসলমানের জন্য এ অবকাশ নেই যে, সে এইসব বিধি-বিধান পালনে কোন প্রকার শৈথিল্য প্রদর্শন করবে। কেননা, এগুলো হচ্ছে ইসলামের মূল খুঁটি।
মনে রাখতে হবে যে, ইসলামের অবশ্য পালনীয় বিষয়সমূহ এ পাঁচটি বিধানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর বাইরেও অনেক জরুরী বিধি-বিধান রয়েছে, যেমন আল্লাহর পথে জেহাদ করা, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করা ইত্যাদি। কিন্তু এ পাঁচটি বিষয়ের যে গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে, এ বৈশিষ্ট্য যেহেতু অন্য বিধানাবলীতে নেই, তাই ইসলামের ভিত্তিমূল কেবল এ পাঁচটি জিনিসকেই সাব্যস্ত করা হয়েছে।
আর ঐ সকল বৈশিষ্ট্য এবং গুরুত্ব উহাই, যা পূর্ববর্তী পৃষ্ঠাগুলোতে 'হাদীসে জিব্রাঈল' এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে লিখা হয়েছে। যার সারবস্তু এই যে, এই পঞ্চ রোকন ইসলামের জন্য দৃষ্ট অবয়বের মত। তাছাড়া এগুলোই আল্লাহর দাসত্বসুলভ এমন বিষয়, যা সত্তাগতভাবে কাম্য ও উদ্দেশ্য এবং এগুলোর অপরিহার্যতা কোন সাময়িক বিষয় ও কোন বিশেষ অবস্থার সাথে সম্পৃক্ত নয়; বরং এগুলো হচ্ছে মৌলিক ও স্থায়ী বিধি-বিধান । পক্ষান্তরে জেহাদ ও সৎ কাজের আদেশের বিষয়টি এমন নয়। কেননা, সেটা বিশেষ অবস্থা ও বিশেষ পরিস্থিতিতে ফরয হয়ে থাকে।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন
সহীহ মুসলিম - হাদীস নং ২২ | মুসলিম বাংলা