আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ
১- ঈমানের অধ্যায়
হাদীস নং: ১৫
আন্তর্জাতিক নং: ১৪
৪. যে ঈমানের দ্বারা জান্নাতে প্রবেশ করা যায় এবং যে ব্যক্তি তাঁর উপর আদিষ্ট বিষয়গুলি আঁকড়ে ধরবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
১৫। আবু বকর ইবনে ইসহাক (রাহঃ) ......... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, এক বেদূঈন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে এসে আরয করল, হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে এমন একটি আমল বাতলে দিন, যা করলে আমি জান্নাতে যেতে পারব। তিনি বললেন, তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে, তার সঙ্গে কোন কিছু শরীক করবে না, ফরয নামায কায়েম করবে, নির্ধারিত যাকাত দিবে এবং রমযানের রোযা পালন করবে। তারপর সে বলল, যার হাতে আমার প্রান তাঁর কসম, আমি এর উপর কখনো কিছু বাড়াব না এবং তা থেকে কমও করব না। লোকটি চলে গেলে নবী (ﷺ) বললেন, কেউ কোন জান্নাতী লোক দেখে খুশি হতে চাইলে একে দেখুক।
باب بيان الإيمان الذي يدخل به الجنة، وأن من تمسك بما أمر به دخل الجنة
وَحَدَّثَنِي أَبُو بَكْرِ بْنُ إِسْحَاقَ، حَدَّثَنَا عَفَّانُ، حَدَّثَنَا وُهَيْبٌ، حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ، عَنْ أَبِي زُرْعَةَ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ أَعْرَابِيًّا، جَاءَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ دُلَّنِي عَلَى عَمَلٍ إِذَا عَمِلْتُهُ دَخَلْتُ الْجَنَّةَ . قَالَ " تَعْبُدُ اللَّهَ لاَ تُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا وَتُقِيمُ الصَّلاَةَ الْمَكْتُوبَةَ وَتُؤَدِّي الزَّكَاةَ الْمَفْرُوضَةَ وَتَصُومُ رَمَضَانَ " . قَالَ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لاَ أَزِيدُ عَلَى هَذَا شَيْئًا أَبَدًا وَلاَ أَنْقُصُ مِنْهُ . فَلَمَّا وَلَّى قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " مَنْ سَرَّهُ أَنْ يَنْظُرَ إِلَى رَجُلٍ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ فَلْيَنْظُرْ إِلَى هَذَا " .
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ কথা স্পষ্ট যে, প্রশ্নকর্তার অন্তরে জান্নাতলাভের অদম্য প্রেরণা ছিল। তাই যে আমল করলে জান্নাত পাওয়া যাবে, তা করতে তিনি সংকল্পবদ্ধ ছিলেন। সে কারণেই তার জিজ্ঞাসা। এটা আমাদের মত গাফেলদের জন্য একটি অনুপ্রেরণা, যাতে আমরাও জান্নাতলাভের আশায় তার জন্য প্রয়োজনীয় আমলসমূহ জেনে নিই এবং তা পালন করতেও সচেষ্ট থাকি।
প্রশ্নকর্তা যখন জানতে চাইলেন কোন্ আমল দ্বারা জান্নাতে যাওয়া যাবে, তখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে চারটি আমলের কথা বললেন। সর্বপ্রথম বললেন (তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে, তাঁর সঙ্গে কাউকে শরীক করবে না)। এ দু'টি কথা পরস্পর অবিচ্ছেদ্য। কেননা ইবাদত গ্রহণযোগ্য হয় কেবল তখনই, যখন তাতে আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরীক করা না হয়। কেউ আল্লাহ তাআলার ইবাদত করল আবার মূর্তিপূজাও করল, তার ইবাদতের কোনও মূল্য নেই। মুশরিক হওয়ার কারণে সে স্থায়ীভাবে জাহান্নামে থাকবে। এমনিভাবে ইবাদত রিয়া থেকে মুক্ত হওয়া জরুরি। রিয়া অর্থ মানুষকে দেখানোর ইচ্ছা। এটা গুপ্ত শিরক। যে ইবাদত রিয়ার সঙ্গে করা হয় তাও আল্লাহ তাআলার কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না। তাই আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন فَمَنْ كَانَ يَرْجُو لِقَاءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا ‘সুতরাং যে-কেউ নিজ মালিকের সাথে মিলিত হওয়ার আশা রাখে, সে যেন সৎকর্ম করে এবং নিজ মালিকের ইবাদতে অন্য কাউকে শরীক না করে।১১০
অর্থাৎ তাঁর যেহেতু কোনও শরীক নেই, তাই ইবাদত করতে হবে ইখলাসের সাথে। তাতে স্থুল তো নয়ই, সূক্ষ্ম শিরকও পরিত্যাজ্য। অর্থাৎ নিয়ত থাকবে কেবল আল্লাহ তাআলাকে খুশি করা। রিয়া বা মানুষকে দেখানোর জন্য ইবাদত করলে তাও এর ধরনের শিরক, তাতে ইবাদতের ভেতর সূক্ষ্মভাবে মানুষকে শরীক করা হয়। আর যে ইবাদতে অন্যকে শরীক করা হয়, তা ইবাদতকারীর মুখের উপর ছুঁড়ে মারা হয়।
হাদীছটিতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসাকারীকে প্রথমে সাধারণভাবে আল্লাহ তাআলার ইবাদত করতে বলেছেন। তারপর বিশেষ ইবাদতের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ইরশাদ করেন (নামায কায়েম করবে, যাকাত দেবে)। নামায কায়েম করার অর্থ এর যাবতীয় শর্ত, রুকন ও সুন্নাত-মুস্তাহাবের প্রতি লক্ষ রেখে খুশূ-খুযূর সঙ্গে আদায় করতে সচেষ্ট থাকা। শারীরিক ইবাদতসমূহের মধ্যে নামায সর্বাপেক্ষা বেশি গুরুত্বপূর্ণ আর আর্থিক ইবাদতসমূহের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বেশি গুরুত্বপূর্ণ যাকাত। তাই হাদীছটিতে বিশেষভাবে এর উল্লেখ করা হয়েছে। নয়তো জান্নাতে যাওয়ার জন্য সর্বপ্রকার ইবাদত-বন্দেগী আদায় করাই জরুরি। নিয়মিত রোযা রাখতে হবে। যার সামর্থ্য আছে তার হজ্জও করতে হবে। এমনিভাবে সদাকায়ে ফিতর, মানত, কাফ্ফারা, কুরবানী ইত্যাদিতেও অবহেলা করার সুযোগ নেই।
আল্লাহ তাআলার ইবাদত-বন্দেগী দুই প্রকার- ক. প্রত্যক্ষ ও সরাসরি ইবাদত, যেমন নামায, রোযা, হজ্জ ও যাকাত। এগুলোকে 'হাক্কুল্লাহ'ও বলে। খ. পরোক্ষ ইবাদত, যেমন আত্মীয়তা রক্ষা, প্রতিবেশীর হক আদায়, অতিথির সেবা, ইয়াতীম-মিসকীনের প্রতি সদ্ব্যবহার ইত্যাদি। এগুলোকে 'হাক্কুল ইবাদ' বলা হয়। হাক্কুল ইবাদ দ্বারা সরাসরি বান্দার অধিকার আদায় করা হয়। তবে তা আদায় করা যেহেতু আল্লাহ তাআলার হুকুম। তাই পরোক্ষভাবে এটা আল্লাহ তাআলার ইবাদতও। সুতরাং 'আল্লাহ তাআলার ইবাদত কর' এ আদেশের মধ্যে হাক্কুল ইবাদ আদায় করার বিষয়টিও রয়েছে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. জান্নাতলাভের জন্য আল্লাহ তাআলার ইবাদত করা এবং তাঁর সঙ্গে কাউকে শরীক না করা সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
খ. জান্নাতলাভের আশাবাদীকে অবশ্যই পাঁচ ওয়াক্ত নামায যথাযথভাবে আদায় করতে হবে এবং সঠিকভাবে হিসাব করে মালের যাকাত দিতে হবে।
গ. প্রত্যেক মুমিনের অন্তরে জান্নাতলাভের তীব্র আশা থাকা চাই এবং তা লাভের জন্য যেসমস্ত আমল করা জরুরি, পূর্ণ উদ্দীপনার সঙ্গে তা করতেও সচেষ্ট থাকা চাই।
১১০. সূরা কাহফ (১৮), আয়াত ১১০
প্রশ্নকর্তা যখন জানতে চাইলেন কোন্ আমল দ্বারা জান্নাতে যাওয়া যাবে, তখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে চারটি আমলের কথা বললেন। সর্বপ্রথম বললেন (তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে, তাঁর সঙ্গে কাউকে শরীক করবে না)। এ দু'টি কথা পরস্পর অবিচ্ছেদ্য। কেননা ইবাদত গ্রহণযোগ্য হয় কেবল তখনই, যখন তাতে আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরীক করা না হয়। কেউ আল্লাহ তাআলার ইবাদত করল আবার মূর্তিপূজাও করল, তার ইবাদতের কোনও মূল্য নেই। মুশরিক হওয়ার কারণে সে স্থায়ীভাবে জাহান্নামে থাকবে। এমনিভাবে ইবাদত রিয়া থেকে মুক্ত হওয়া জরুরি। রিয়া অর্থ মানুষকে দেখানোর ইচ্ছা। এটা গুপ্ত শিরক। যে ইবাদত রিয়ার সঙ্গে করা হয় তাও আল্লাহ তাআলার কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না। তাই আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন فَمَنْ كَانَ يَرْجُو لِقَاءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا ‘সুতরাং যে-কেউ নিজ মালিকের সাথে মিলিত হওয়ার আশা রাখে, সে যেন সৎকর্ম করে এবং নিজ মালিকের ইবাদতে অন্য কাউকে শরীক না করে।১১০
অর্থাৎ তাঁর যেহেতু কোনও শরীক নেই, তাই ইবাদত করতে হবে ইখলাসের সাথে। তাতে স্থুল তো নয়ই, সূক্ষ্ম শিরকও পরিত্যাজ্য। অর্থাৎ নিয়ত থাকবে কেবল আল্লাহ তাআলাকে খুশি করা। রিয়া বা মানুষকে দেখানোর জন্য ইবাদত করলে তাও এর ধরনের শিরক, তাতে ইবাদতের ভেতর সূক্ষ্মভাবে মানুষকে শরীক করা হয়। আর যে ইবাদতে অন্যকে শরীক করা হয়, তা ইবাদতকারীর মুখের উপর ছুঁড়ে মারা হয়।
হাদীছটিতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসাকারীকে প্রথমে সাধারণভাবে আল্লাহ তাআলার ইবাদত করতে বলেছেন। তারপর বিশেষ ইবাদতের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ইরশাদ করেন (নামায কায়েম করবে, যাকাত দেবে)। নামায কায়েম করার অর্থ এর যাবতীয় শর্ত, রুকন ও সুন্নাত-মুস্তাহাবের প্রতি লক্ষ রেখে খুশূ-খুযূর সঙ্গে আদায় করতে সচেষ্ট থাকা। শারীরিক ইবাদতসমূহের মধ্যে নামায সর্বাপেক্ষা বেশি গুরুত্বপূর্ণ আর আর্থিক ইবাদতসমূহের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বেশি গুরুত্বপূর্ণ যাকাত। তাই হাদীছটিতে বিশেষভাবে এর উল্লেখ করা হয়েছে। নয়তো জান্নাতে যাওয়ার জন্য সর্বপ্রকার ইবাদত-বন্দেগী আদায় করাই জরুরি। নিয়মিত রোযা রাখতে হবে। যার সামর্থ্য আছে তার হজ্জও করতে হবে। এমনিভাবে সদাকায়ে ফিতর, মানত, কাফ্ফারা, কুরবানী ইত্যাদিতেও অবহেলা করার সুযোগ নেই।
আল্লাহ তাআলার ইবাদত-বন্দেগী দুই প্রকার- ক. প্রত্যক্ষ ও সরাসরি ইবাদত, যেমন নামায, রোযা, হজ্জ ও যাকাত। এগুলোকে 'হাক্কুল্লাহ'ও বলে। খ. পরোক্ষ ইবাদত, যেমন আত্মীয়তা রক্ষা, প্রতিবেশীর হক আদায়, অতিথির সেবা, ইয়াতীম-মিসকীনের প্রতি সদ্ব্যবহার ইত্যাদি। এগুলোকে 'হাক্কুল ইবাদ' বলা হয়। হাক্কুল ইবাদ দ্বারা সরাসরি বান্দার অধিকার আদায় করা হয়। তবে তা আদায় করা যেহেতু আল্লাহ তাআলার হুকুম। তাই পরোক্ষভাবে এটা আল্লাহ তাআলার ইবাদতও। সুতরাং 'আল্লাহ তাআলার ইবাদত কর' এ আদেশের মধ্যে হাক্কুল ইবাদ আদায় করার বিষয়টিও রয়েছে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. জান্নাতলাভের জন্য আল্লাহ তাআলার ইবাদত করা এবং তাঁর সঙ্গে কাউকে শরীক না করা সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
খ. জান্নাতলাভের আশাবাদীকে অবশ্যই পাঁচ ওয়াক্ত নামায যথাযথভাবে আদায় করতে হবে এবং সঠিকভাবে হিসাব করে মালের যাকাত দিতে হবে।
গ. প্রত্যেক মুমিনের অন্তরে জান্নাতলাভের তীব্র আশা থাকা চাই এবং তা লাভের জন্য যেসমস্ত আমল করা জরুরি, পূর্ণ উদ্দীপনার সঙ্গে তা করতেও সচেষ্ট থাকা চাই।
১১০. সূরা কাহফ (১৮), আয়াত ১১০
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
