আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৮৩- তাওহীদ অধ্যায় ও জাহমিয়্যাসহ ভ্রান্ত দলগুলোর অপনোদন

হাদীস নং: ৭০৪৪
আন্তর্জাতিক নং: ৭৫৫৩ - ৭৫৫৪
৩১৫৭. আল্লাহর বাণীঃ বস্তুত এটি সম্মানিত কুরআন, যা সংরক্ষিত ফলকে লিপিবদ্ধ (৮৫ঃ ২১, ২২)।
শপথ তূর পর্বতের। শপথ কিতাবের, যা লিখিত আছে (৫২ঃ ১, ২)।
কাতাদা (রাহঃ) বলেন, مَسْطُورٍ অর্থ লিপিবদ্ধ, يَسْطُرُونَ অর্থ তারা লিখছে, أُمِّ الْكِتَابِ অর্থাৎ কিতাবের স্তর ও মূল, مَا يَلْفِظُ অর্থ যা কিছু বলা হয়, তা লিপিবদ্ধ হয়। এর ব্যাখ্যায় ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) বলেন, ভালমন্দ সব লিপিবদ্ধ করা হয়। يُحَرِّفُونَ এর অর্থ পরিবর্তন করা। এমন কেউ নেই, যে আল্লাহর কোন কিতাবের শব্দ পরিবর্তন করতে পারে। তবে তারা তাহরীফ তথা অপব্যাখ্যা করতে পারে। دِرَاسَتُهُمْ অর্থ তাদের তিলাওয়াত, وَاعِيَةٌ অর্থ সংরক্ষণকারী, تَعِيَهَا অর্থ তা সংরক্ষণ করে।
এবং এই কুরআন আমার নিকট প্রেরিত হয়েছে, যেন তোমাদেরকে এর দ্বারা আমি সতর্ক করি (৬ঃ ১৯)। অর্থাৎ মক্কাবাসী। এবং যাদের কাছে এ কুরআন প্রচারিত হবে, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) তাদের জন্য সতর্ককারী।
৭০৪৪। আমার কাছে খলীফা (রাহঃ) বলেছেন, মু'তামির (রাহঃ) ..... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেছেনঃ আল্লাহ্ যখন তাঁর মাখলুকাত সৃষ্টি করলেন, তাঁর কাছে একটি কিতাবে লিপিবদ্ধ রাখলেন, "আমার গযবের উপর আমার রহমত অগ্রগামী হয়েছে" এটি তাঁর কাছে আরশের ওপর সংরক্ষিত রয়েছে।
মুহাম্মাদ ইবনে আবু গালিব (রাহঃ) ......... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তাআলা সমস্ত সৃষ্টিকে সৃষ্টি করার পূর্বে একটি লিখা লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। তা হলো, ″আমার ক্রোধের উপর আমার রহমত অগ্রগামী রয়েছে″ এটি তাঁরই নিকটে আরশের ওপর লিপিবদ্ধ আছে।
باب قَوْلِ اللَّهِ تَعَالَى {بَلْ هُوَ قُرْآنٌ مَجِيدٌ * فِي لَوْحٍ مَحْفُوظٍ} {وَالطُّورِ وَكِتَابٍ مَسْطُورٍ}. قَالَ قَتَادَةُ مَكْتُوبٌ، يَسْطُرُونَ يَخُطُّونَ فِي {أُمِّ الْكِتَابِ} جُمْلَةِ الْكِتَابِ وَأَصْلِهِ: {مَا يَلْفِظُ} مَا يَتَكَلَّمُ مِنْ شَيْءٍ إِلاَّ كُتِبَ عَلَيْهِ. وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ يُكْتَبُ الْخَيْرُ وَالشَّرُّ، {يُحَرِّفُونَ} يُزِيلُونَ، وَلَيْسَ أَحَدٌ يُزِيلُ لَفْظَ كِتَابٍ مِنْ كُتُبِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ، وَلَكِنَّهُمْ يُحَرِّفُونَهُ يَتَأَوَّلُونَهُ عَلَى غَيْرِ تَأْوِيلِهِ، دِرَاسَتُهُمْ تِلاَوَتُهُمْ، {وَاعِيَةٌ} حَافِظَةٌ {وَتَعِيَهَا} تَحْفَظُهَا. {وَأُوحِيَ إِلَيَّ هَذَا الْقُرْآنُ لأُنْذِرَكُمْ بِهِ} يَعْنِي أَهْلَ مَكَّةَ وَمَنْ بَلَغَ هَذَا الْقُرْآنُ فَهْوَ لَهُ نَذِيرٌ
وَقَالَ لِي خَلِيفَةُ بْنُ خَيَّاطٍ: حَدَّثَنَا مُعْتَمِرٌ، سَمِعْتُ أَبِي، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ أَبِي رَافِعٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: " لَمَّا قَضَى اللَّهُ الخَلْقَ، كَتَبَ كِتَابًا عِنْدَهُ: غَلَبَتْ، أَوْ قَالَ سَبَقَتْ رَحْمَتِي غَضَبِي، فَهُوَ عِنْدَهُ فَوْقَ العَرْشِ
حَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ أَبِي غَالِبٍ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ، حَدَّثَنَا مُعْتَمِرٌ، سَمِعْتُ أَبِي يَقُولُ، حَدَّثَنَا قَتَادَةُ، أَنَّ أَبَا رَافِعٍ، حَدَّثَهُ أَنَّهُ، سَمِعَ أَبَا هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ يَقُولُ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " إِنَّ اللَّهَ كَتَبَ كِتَابًا قَبْلَ أَنْ يَخْلُقَ الْخَلْقَ إِنَّ رَحْمَتِي سَبَقَتْ غَضَبِي. فَهْوَ مَكْتُوبٌ عِنْدَهُ فَوْقَ الْعَرْشِ ".

হাদীসের ব্যাখ্যা:

উলামায়ে কেরাম বলেন, বান্দার প্রতি আল্লাহ তা'আলার দয়া ও ক্রোধ দ্বারা মূলত সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তাঁর ইচ্ছাকে বোঝানো হয়ে থাকে। সুতরাং বাধ্য ও অনুগত বান্দাকে ছাওয়াব ও প্রতিদান দেওয়া হচ্ছে তাঁর রহমত এবং অবাধ্যকে শাস্তিদান ও লাঞ্ছিত করা হচ্ছে তাঁর ক্রোধ।

এ হাদীছ দ্বারা আল্লাহ তা'আলার রহমতের ব্যাপকতা বোঝানো উদ্দেশ্য। অর্থাৎ বান্দা অপরাধ করলে আল্লাহ তা'আলা যত না দ্রুত শাস্তিদান করেন, তারচে' সৎকর্ম করলে অনেক বেশি দ্রুত পুরস্কৃত করেন। বরং আল্লাহ তা'আলা শাস্তিদানের ক্ষেত্রে তাড়াহুড়া আদৌ করেন না। বান্দা পাপ করলে তিনি ফিরিশতাকে অপেক্ষা করতে বলেন যাতে তাড়াহুড়া করে তা লেখা না হয়; বরং তাকে তাওবার সুযোগ দেওয়া হয়। তারপর আবার একটি অপরাধের ক্ষেত্রে একটি পাপই লেখা হয়। অপরদিকে সৎকর্মের ক্ষেত্রে লেখা হয় দশগুণ নেকী। আবার পার্থিব নি'আমতরাশিতে সাধারণভাবে তিনি কে বাধ্য কে অবাধ্য সে পার্থক্যও করেন না। এখানে তাঁর রহমত ও দয়া সকলের জন্য অবারিত। তিনি তাঁর আলো-বাতাস, মাটি-পানি, খাদ্যসামগ্রী প্রভৃতি কাফের-মুশরিককেও ভোগ করতে দিচ্ছেন। এই অবারিত রহমতের প্রতি ইঙ্গিত করে আল্লাহ তা আলা সূরা আ'রাফে ইরশাদ করেন
وَرَحْمَتِي وَسِعَتْ كُلَّ شَيْءٍ
আর আমার দয়া, সে তো প্রত্যেক বস্তুতে ব্যাপ্ত।

তবে তাঁর খাস রহমত অর্থাৎ আখিরাতের নাজাত ও জান্নাতের অফুরন্ত নি'আমতরাজি কেবল মু'মিন-মুত্তাকীর জন্যই নির্ধারিত। সূরা আ'রাফের এ আয়াতেই এর পরে ইরশাদ হয়েছে-
فَسَأَكْتُبُهَا لِلَّذِينَ يَتَّقُونَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَالَّذِينَ هُمْ بِآيَاتِنَا يُؤْمِنُونَ
‘সুতরাং আমি এ রহমত (পরিপূর্ণভাবে) সেইসব লোকের জন্য লিখব, যারা তাকওয়া অবলম্বন করে, যাকাত দেয় এবং যারা আমার আয়াতসমূহে ঈমান রাখে।'

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

এ হাদীছ দ্বারা আমরা আল্লাহ তা'আলার রহমতের ব্যাপকতা সম্পর্কে ধারণা পাই । কাজেই কোনও অবস্থায়ই তাঁর রহমত থেকে হতাশ হতে নেই।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)