আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৮৩- তাওহীদ অধ্যায় ও জাহমিয়্যাসহ ভ্রান্ত দলগুলোর অপনোদন

হাদীস নং: ৭০০৯
আন্তর্জাতিক নং: ৭৫১৭
৩১৩৯. মহান আল্লাহর বাণীঃ এবং মুসা (আলাইহিস সালাম) এর সাথে আল্লাহ বাক্যালাপ করেছিলেন (৪ঃ ১৬৪)।
৭০০৯। আব্দুল আযীয ইবনে আব্দুল্লাহ (রাহঃ) ......... আনাস ইবনে মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে এক রাতে কাবার মসজিদ থেকে সফর করানো হল। বিবরণটি হচ্ছে, নবী (ﷺ) এর কাছে এ বিষয়ে ওহী প্রেরণের পূর্বে তার কাছে তিনজন ফিরিশতার একটি জামাআত আসল। অথচ তখন তিনি মসজিদুল হারামে ঘুমন্ত ছিলেন। এদের প্রথমজন বলল, তিনি কে? মাঝেরজন বলল, তিনি এদের উত্তম ব্যক্তি। সর্বশেষজন বলল, তা হলে তাদের উত্তম ব্যক্তিকেই নিয়ে চল। সে রাতটির ঘটনা এটুকুই। এজন্য তিনি আর তাদেরকে দেখেননি। অবশেষে তারা অন্য এক রাতে আগমন করলেন, যা তিনি অন্তর দ্বারা দেখছিলেন। তার চোখ ঘুমন্ত থাকলেও অন্তর ঘুমায় না। অনুরূপ অন্য নবীগণেরও চোখ ঘুমিয়ে থাকে, অন্তর ঘুমায় না।
এ রাতে তারা তার সাথে কোন কথা না বলে তাকে উঠিয়ে নিয়ে যমযম কূপের কাছে রাখলেন। জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) তার সাথীদের থেকে নবী (ﷺ) এর দায়িত্ব গ্রহণ করলেন। জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) তার গলার নিচ হতে বক্ষস্থল পর্যন্ত ছেদন করলেন এবং তার বক্ষ ও পেট থেকে সবকিছু নেড়েচেড়ে যমযমের পানি দ্বারা নিজ হাতে ধৌত করলেন। সেগুলোকে পরিচ্ছন্ন করলেন, তারপর সেখানে একটি তশতরী আনা হয় এবং তাতে ছিল একটি সোনার পাত্র যা পরিপূর্ণ ছিল ঈমান ও হিকমতে। তাঁর বক্ষ ও গলার রগগুলি এর দ্বারা পূর্ণ করলেন। তারপর সেগুলো যথাস্থানে স্থাপন করে বন্ধ করে দিলেন। তারপর তাঁকে নিয়ে ফিরে আসমানের দিকে আরোহণ করলেন। আসমানের দরজাগুলো হতে একটি দরজাতে নাড়া দিলেন। ফলে আসমানবাসিগণ তাকে ডাক দিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, এ কে? তিনি উত্তরে বললেনঃ জিবরাঈল। তারা আবার জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার সঙ্গে ইনি কে? তিনি বললেনঃ আমার সঙ্গে ইনি মুহাম্মাদ (ﷺ)। জিজ্ঞাসা করলেন, তার কাছে কি দূত পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। তখন তারা বললেনঃ মারহাবান ওয়া আহলান (আপনাকে ধন্যবাদ, আপনি আপনজনের মধ্যে এসেছেন), তাঁর শুভাগমনে আসমানবাসীরা খুবই আনন্দিত। বস্তুত আল্লাহ তা'আলা যমীনে কি করতে চাচ্ছেন তা আসমানবাসীদেরকে না জানানো পর্যন্ত তারা জানতে পারে না।
দুনিয়ার আসমানে তিনি আদম (আলাইহিস সালাম) কে পেলেন। জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) তাঁকে দেখিয়ে বললেন, তিনি আপনার পিতা, তাকে সালাম দিন। নবী (ﷺ) তাকে সালাম দিলেন। আদম (আলাইহিস সালাম) তার সালামের উত্তর দিলেন। এবং বললেনঃ মারহাবান ওয়া আহলান, হে আমার পুত্র! তুমি আমার কতইনা উত্তম পুত্র। নবী (ﷺ) দু’টি প্রবহমান নহর দুনিয়ার আসমানে অবলোকন করলেন। জিজ্ঞাসা করলেন, এ নহরদুটি কোন নহর হে জিবরাঈল! জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) বললেন, এ দুটি হলো নীল ও ফুরাতের মূল। এরপর জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) নবী (ﷺ) কে সঙ্গে নিয়ে এ আসমানে ঘুরে বেড়ালেন। তিনি আরো একটি নহর অবলোকন করলেন। এর ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল মোতি ও যাবারজাদের তৈরী একটি প্রাসাদ। নবী (ﷺ) নহরে হাত মারলেন। তা ছিল অতি উন্নতমানের মিসক। তিনি বললেনঃ হে জিবরাঈল! এটি কি? জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) বললেনঃ হাউযে কাউসার। যা আপনার প্রতিপালক আপনার জন্য সংরক্ষিত করে রেখেছেন।
তারপর তিনি নবী (ﷺ) কে সঙ্গে করে দ্বিতীয় আসমানে গমন করলেন। প্রথম আসমানে অবস্থানরত ফিরিশতাগণ তাকে যা বলেছিলেন এখানেও তা বললেনঃ তারা জানতে চাইলেন, তিনি কে? তিনি বললেনঃ জিবরাঈল। তারা বললেনঃ আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেনঃ মুহাম্মাদ (ﷺ)। তারা বললেনঃ তার কাছে কি দূত পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। তাঁরা বললেন, মারহাবান ওয়া আহলান।
তারপর নবী (ﷺ) কে সঙ্গে করে তিনি তৃতীয় আসমানের দিকে গমন করলেন। প্রথম ও দ্বিতীয় আসমানে অবস্থানরত ফিরিশতারা যা বলেছিলেন তৃতীয় আসমানের ফিরিশতাগণও তাই বললেন। তারপর তাকে সঙ্গে করে তিনি চতুর্থ আসমানের দিকে গমন করলেন। তারাও তাঁকে পূর্বের ন্যায়ই বললেন। তারপর তাঁকে নিয়ে তিনি পঞ্চম আসমানে গমন করলেন। তাঁরাও পূর্বের মতো বললেন। এরপর তিনি তাঁকে নিয়ে ষষ্ঠ আসমানের দিকে গমন করলেন। সেখানেও ফিরিশতারা পূর্বের মতই বললেন। সর্বশেষে তিনি নবী (ﷺ) কে নিয়ে সপ্তম আসমানে গমন করলে সেখানেও ফিরিশতারা তাকে পূর্বের ফিরিশতাদের মতো বললেন। প্রত্যেক আসমানেই নবীগণ রয়েছেন। নবী (ﷺ) তাদের নাম উল্লেখ করেছেন।
তন্মধ্যে আমি সংরক্ষণ করেছি যে, দ্বিতীয় আসমানে ইদরীস (আলাইহিস সালাম), চতূর্থ আসমানে হারুন (আলাইহিস সালাম), পঞ্চম আসমানে অন্য একজন নবী যায় নাম আমি স্মরণ রাখতে পারিনি। ষষ্ঠ আসমানে রয়েছেন ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) এবং আল্লাহর সাথে বাক্যালাপের মর্যাদার কারণে মুসা (আলাইহিস সালাম) আছেন সপ্তম আসমানে।
সে সময় মুসা বললেনঃ হে আমার প্রতিপালক। আমি তো ধারণা করিনি, আমার ওপর কাউকে উচ্চমর্যাদা দান করা হবে। তারপর নবী (ﷺ) কে এত উর্ধ্বে আরোহণ করানো হল, যা সম্পর্কে আল্লাহ ছাড়া আর কেউই জানে না। অবশেষে তিনি সিদরাতুল মুনতাহায় আগমন করলেন। এখানে প্রবল পরাক্রমশালী আল্লাহ তাঁর নিকটবর্তী হলেন। অতি নিকটবর্তীর ফলে তাঁদের মধ্যে দু’ধনুকের ব্যবধান রইল অথবা তারও কম। তখন আল্লাহ তার প্রতি ওহী পাঠালেন। অর্থাৎ তাঁর উম্মতের উপর রাত ও দিনে পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামায আদায়ের কথা ওহী যোগে পাঠানো হল।
তারপর নবী (ﷺ) অবতরণ করেন। আর মুসার কাছে পৌছলে মুসা (আলাইহিস সালাম) তাঁকে আটকিয়ে বললেন, হে মুহাম্মাদ! আপনার প্রতিপালক আপনাকে কি নির্দেশ দিলেন? নবী (ﷺ) বললেনঃ রাত ও দিনে পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামায আদায়ের। তখন মুসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, আপনার উম্মত তা আদায়ে সক্ষম হবে না। সুতরাং আপনি ফিরে যান তাহলে আপনার প্রতিপালক আপনার এবং আপনার উম্মতের থেকে এ আদেশটি সহজ করে দিবেন। তখন নবী (ﷺ) জিবরাঈলের দিকে এমনভাবে লক্ষ্য করলেন, যেন তিনি এ বিষয়ে তার থেকে পরামর্শ চাচ্ছিলেন। জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) তাঁকে ইঙ্গিত করে বললেনঃ হ্যাঁ। আপনি চাইলে তা হতে পারে। তাই তিনি নবী (ﷺ) কে নিয়ে প্রথমে আল্লাহর কাছে গেলেন।
তারপর নবী (ﷺ) যথাস্থানে থেকে বললেনঃ হে আমার প্রতিপালক! আমার উম্মত এটি আদায়ে সক্ষম হবে না। তখন আল্লাহ দশ ওয়াক্ত নামায কমিয়ে দিলেন। এরপর মুসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে ফিরে আসলে তিনি তাঁকে থামালেন। এভাবেই মুসা (আলাইহিস সালাম) তাঁকে তাঁর প্রতিপালকের কাছে পাঠাতে থাকলেন। পরিশেষে পাঁচ ওয়াক্ত অবশিষ্ট থাকল। পাঁচ সংখ্যায়ও মুসা (আলাইহিস সালাম) তাঁকে থামিয়ে বললেন, হে মুহাম্মাদ! আমি আমার বনী ইসরাঈল কওমের কাছে এর চেয়েও সামান্য কিছু পেতে চেয়েছি। তদুপরি তারা দুর্বল হয়েছে এবং পরিত্যাগ করেছে, অথচ আপনার উম্মত দৈহিক, মানসিক, শারীরিক সৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণক্ষমতা সব দিকে আরো দুর্বল।
সুতরাং আপনি আবার যান এবং আপনার প্রতিপালক থেকে নির্দেশটি আরো সহজ করে আনুন। প্রতিবারই নবী (ﷺ) পরামর্শের জন্য জিবরাঈলের দিকে তাকাতেন। পঞ্চমবারেও জিবরাঈল তাঁকে নিয়ে গমন করলেন। নবী (ﷺ) বললেনঃ হে আমার প্রতিপালক। আমার উম্মতের শরীর, মন, শ্রবণশক্তি ও দেহ নিতান্তই দুর্বল। তাই নির্দেশটি আমাদের থেকে আরো সহজ করে দিন। এরপর পরাক্রমশালী আল্লাহ বললেনঃ মুহাম্মাদ! নবী (ﷺ) বললেনঃ আমি আপনার নিকটে হাযির, বারবার হাযির।
আল্লাহ বললেনঃ আমার বান্দাদের কোন প্রকার পরিবর্তন পরিবর্ধন হয় না। আমি তোমাদের উপর যা ফরয করেছি তা উম্মুল কিতাব তথা লাওহে মাহফুযে সংরক্ষিত আছে। প্রতিটি নেক আমলের দশটি নেকী রয়েছে। উম্মুল কিতাবে নামায পঞ্চাশ ওয়াক্তই লিপিবদ্ধ আছে। তবে আপনার ও আপনার উম্মতের জন্য তা পাঁচ ওয়াক্ত করা হলো। এরপর নবী (ﷺ) মুসার কাছে প্রত্যাবর্তন করলে মুসা (আলাইহিস সালাম) তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কী ব্যবস্থা নিয়ে এসেছেন? নবী (ﷺ) বললেনঃ আল্লাহ আমাদের জন্য সহজ করে দিয়েছেন। তিনি আমাদেরকে প্রতিটি নেক আমলের বিনিময়ে দশটি সাওয়াব নির্ধারণ করেছেন। তখন মুসা (আলাইহিস সালাম) বললেনঃ আল্লাহর কসম! আমি বনী ইসরাঈলের কাছ থেকে এর চাইতেও সামান্য জিনিসের প্রত্যাশা করেছি। কিন্তু তারা তাও আদায় করেনি। আপনার প্রতিপালকের কাছে আপনি আবার ফিরে যান, যেন আরো একটু কমিয়ে দেন।
এবার নবী (ﷺ) বললেনঃ হে মুসা, আল্লাহর কসম! আমি আমার প্রতিপালকের কাছে বারবার গিয়েছি। আবার যেতে লজ্জাবোধ করছি, যেন তার সাথে মতান্তর করছি। এরপর মুসা (আলাইহিস সালাম) বললেনঃ অবতরণ করতে পারেন আল্লাহর নামে। এ সময় নবী (ﷺ) জাগ্রত হয়ে দেখলেন, তিনি মসজিদে হারামে আছেন।
باب قَوْلِهِ {وَكَلَّمَ اللَّهُ مُوسَى تَكْلِيمًا}
7517 - حَدَّثَنَا عَبْدُ العَزِيزِ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، حَدَّثَنِي سُلَيْمَانُ، عَنْ شَرِيكِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، أَنَّهُ قَالَ: سَمِعْتُ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ، يَقُولُ: " لَيْلَةَ أُسْرِيَ بِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ مَسْجِدِ الكَعْبَةِ، أَنَّهُ جَاءَهُ ثَلاَثَةُ نَفَرٍ قَبْلَ أَنْ يُوحَى إِلَيْهِ وَهُوَ نَائِمٌ فِي المَسْجِدِ الحَرَامِ، فَقَالَ أَوَّلُهُمْ: أَيُّهُمْ هُوَ؟ فَقَالَ أَوْسَطُهُمْ: هُوَ خَيْرُهُمْ، فَقَالَ آخِرُهُمْ: خُذُوا خَيْرَهُمْ، فَكَانَتْ تِلْكَ اللَّيْلَةَ، فَلَمْ يَرَهُمْ حَتَّى أَتَوْهُ لَيْلَةً أُخْرَى، فِيمَا يَرَى قَلْبُهُ، وَتَنَامُ عَيْنُهُ وَلاَ يَنَامُ قَلْبُهُ، وَكَذَلِكَ الأَنْبِيَاءُ تَنَامُ أَعْيُنُهُمْ وَلاَ تَنَامُ قُلُوبُهُمْ، فَلَمْ يُكَلِّمُوهُ حَتَّى احْتَمَلُوهُ، فَوَضَعُوهُ عِنْدَ بِئْرِ زَمْزَمَ، فَتَوَلَّاهُ مِنْهُمْ جِبْرِيلُ، فَشَقَّ جِبْرِيلُ مَا بَيْنَ نَحْرِهِ إِلَى لَبَّتِهِ حَتَّى فَرَغَ مِنْ صَدْرِهِ وَجَوْفِهِ، فَغَسَلَهُ مِنْ مَاءِ زَمْزَمَ بِيَدِهِ، حَتَّى أَنْقَى جَوْفَهُ، ثُمَّ أُتِيَ بِطَسْتٍ مِنْ ذَهَبٍ فِيهِ تَوْرٌ مِنْ ذَهَبٍ، مَحْشُوًّا إِيمَانًا وَحِكْمَةً، فَحَشَا بِهِ صَدْرَهُ وَلَغَادِيدَهُ - يَعْنِي عُرُوقَ حَلْقِهِ - ثُمَّ أَطْبَقَهُ ثُمَّ عَرَجَ بِهِ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا، فَضَرَبَ بَابًا مِنْ أَبْوَابِهَا فَنَادَاهُ أَهْلُ السَّمَاءِ مَنْ هَذَا؟ فَقَالَ جِبْرِيلُ: قَالُوا: وَمَنْ مَعَكَ؟ قَالَ: مَعِيَ مُحَمَّدٌ، قَالَ: وَقَدْ بُعِثَ؟ قَالَ: نَعَمْ، قَالُوا: فَمَرْحَبًا بِهِ وَأَهْلًا، فَيَسْتَبْشِرُ بِهِ أَهْلُ السَّمَاءِ، لاَ يَعْلَمُ أَهْلُ السَّمَاءِ بِمَا يُرِيدُ اللَّهُ بِهِ فِي الأَرْضِ حَتَّى يُعْلِمَهُمْ، فَوَجَدَ فِي السَّمَاءِ الدُّنْيَا آدَمَ، فَقَالَ لَهُ جِبْرِيلُ: هَذَا أَبُوكَ آدَمُ فَسَلِّمْ عَلَيْهِ، فَسَلَّمَ عَلَيْهِ وَرَدَّ عَلَيْهِ آدَمُ، وَقَالَ: مَرْحَبًا وَأَهْلًا بِابْنِي، نِعْمَ الِابْنُ أَنْتَ، فَإِذَا هُوَ فِي السَّمَاءِ الدُّنْيَا بِنَهَرَيْنِ يَطَّرِدَانِ، فَقَالَ: مَا هَذَانِ النَّهَرَانِ يَا جِبْرِيلُ؟ قَالَ: هَذَا النِّيلُ وَالفُرَاتُ عُنْصُرُهُمَا، ثُمَّ مَضَى بِهِ فِي السَّمَاءِ، فَإِذَا هُوَ بِنَهَرٍ آخَرَ عَلَيْهِ قَصْرٌ مِنْ لُؤْلُؤٍ وَزَبَرْجَدٍ، فَضَرَبَ يَدَهُ فَإِذَا هُوَ مِسْكٌ أَذْفَرُ، قَالَ: مَا هَذَا يَا جِبْرِيلُ؟، قَالَ: هَذَا الكَوْثَرُ الَّذِي خَبَأَ لَكَ رَبُّكَ، ثُمَّ عَرَجَ بِهِ إِلَى السَّمَاءِ الثَّانِيَةِ، فَقَالَتِ المَلاَئِكَةُ لَهُ مِثْلَ [ص:150] مَا قَالَتْ لَهُ الأُولَى مَنْ هَذَا، قَالَ جِبْرِيلُ: قَالُوا: وَمَنْ مَعَكَ؟ قَالَ: مُحَمَّدٌ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالُوا: وَقَدْ بُعِثَ إِلَيْهِ؟ قَالَ: نَعَمْ، قَالُوا: مَرْحَبًا بِهِ وَأَهْلًا، ثُمَّ عَرَجَ بِهِ إِلَى السَّمَاءِ الثَّالِثَةِ، وَقَالُوا لَهُ مِثْلَ مَا قَالَتِ الأُولَى وَالثَّانِيَةُ، ثُمَّ عَرَجَ بِهِ إِلَى الرَّابِعَةِ، فَقَالُوا لَهُ مِثْلَ ذَلِكَ، ثُمَّ عَرَجَ بِهِ إِلَى السَّمَاءِ الخَامِسَةِ، فَقَالُوا مِثْلَ ذَلِكَ، ثُمَّ عَرَجَ بِهِ إِلَى السَّمَاءِ السَّادِسَةِ، فَقَالُوا لَهُ مِثْلَ ذَلِكَ، ثُمَّ عَرَجَ بِهِ إِلَى السَّمَاءِ السَّابِعَةِ، فَقَالُوا لَهُ مِثْلَ ذَلِكَ، كُلُّ سَمَاءٍ فِيهَا أَنْبِيَاءُ قَدْ سَمَّاهُمْ، فَأَوْعَيْتُ مِنْهُمْ إِدْرِيسَ فِي الثَّانِيَةِ، وَهَارُونَ فِي الرَّابِعَةِ، وَآخَرَ فِي الخَامِسَةِ لَمْ أَحْفَظِ اسْمَهُ، وَإِبْرَاهِيمَ فِي السَّادِسَةِ، وَمُوسَى فِي السَّابِعَةِ بِتَفْضِيلِ كَلاَمِ اللَّهِ، فَقَالَ مُوسَى: رَبِّ لَمْ أَظُنَّ أَنْ يُرْفَعَ عَلَيَّ أَحَدٌ، ثُمَّ عَلاَ بِهِ فَوْقَ ذَلِكَ بِمَا لاَ يَعْلَمُهُ إِلَّا اللَّهُ، حَتَّى جَاءَ سِدْرَةَ المُنْتَهَى، وَدَنَا لِلْجَبَّارِ رَبِّ العِزَّةِ، فَتَدَلَّى حَتَّى كَانَ مِنْهُ قَابَ قَوْسَيْنِ أَوْ أَدْنَى، فَأَوْحَى اللَّهُ فِيمَا أَوْحَى إِلَيْهِ: خَمْسِينَ صَلاَةً عَلَى أُمَّتِكَ كُلَّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ، ثُمَّ هَبَطَ حَتَّى بَلَغَ مُوسَى، فَاحْتَبَسَهُ مُوسَى، فَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ، مَاذَا عَهِدَ إِلَيْكَ رَبُّكَ؟ قَالَ: عَهِدَ إِلَيَّ خَمْسِينَ صَلاَةً كُلَّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ، قَالَ: إِنَّ أُمَّتَكَ لاَ تَسْتَطِيعُ ذَلِكَ، فَارْجِعْ فَلْيُخَفِّفْ عَنْكَ رَبُّكَ وَعَنْهُمْ، فَالْتَفَتَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى جِبْرِيلَ كَأَنَّهُ يَسْتَشِيرُهُ فِي ذَلِكَ، فَأَشَارَ إِلَيْهِ جِبْرِيلُ: أَنْ نَعَمْ إِنْ شِئْتَ، فَعَلاَ بِهِ إِلَى الجَبَّارِ، فَقَالَ وَهُوَ مَكَانَهُ: يَا رَبِّ خَفِّفْ عَنَّا فَإِنَّ أُمَّتِي لاَ تَسْتَطِيعُ هَذَا، فَوَضَعَ عَنْهُ عَشْرَ صَلَوَاتٍ ثُمَّ رَجَعَ إِلَى مُوسَى، فَاحْتَبَسَهُ فَلَمْ يَزَلْ يُرَدِّدُهُ مُوسَى إِلَى رَبِّهِ حَتَّى صَارَتْ إِلَى خَمْسِ صَلَوَاتٍ، ثُمَّ احْتَبَسَهُ مُوسَى عِنْدَ الخَمْسِ، فَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ وَاللَّهِ لَقَدْ رَاوَدْتُ بَنِي إِسْرَائِيلَ قَوْمِي عَلَى أَدْنَى مِنْ هَذَا فَضَعُفُوا فَتَرَكُوهُ، فَأُمَّتُكَ أَضْعَفُ أَجْسَادًا وَقُلُوبًا وَأَبْدَانًا وَأَبْصَارًا وَأَسْمَاعًا فَارْجِعْ فَلْيُخَفِّفْ عَنْكَ رَبُّكَ، كُلَّ ذَلِكَ يَلْتَفِتُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى جِبْرِيلَ لِيُشِيرَ عَلَيْهِ، وَلاَ يَكْرَهُ ذَلِكَ جِبْرِيلُ، فَرَفَعَهُ عِنْدَ الخَامِسَةِ، فَقَالَ: يَا رَبِّ إِنَّ أُمَّتِي ضُعَفَاءُ أَجْسَادُهُمْ وَقُلُوبُهُمْ وَأَسْمَاعُهُمْ وَأَبْصَارُهُمْ وَأَبْدَانُهُمْ فَخَفِّفْ عَنَّا، فَقَالَ الجَبَّارُ: يَا مُحَمَّدُ، قَالَ: لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ، قَالَ: إِنَّهُ لاَ يُبَدَّلُ القَوْلُ لَدَيَّ، كَمَا فَرَضْتُهُ عَلَيْكَ فِي أُمِّ الكِتَابِ، قَالَ: فَكُلُّ حَسَنَةٍ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا، فَهِيَ خَمْسُونَ فِي أُمِّ الكِتَابِ، وَهِيَ خَمْسٌ عَلَيْكَ، فَرَجَعَ إِلَى مُوسَى، فَقَالَ: كَيْفَ فَعَلْتَ؟ فَقَالَ: خَفَّفَ عَنَّا، أَعْطَانَا بِكُلِّ حَسَنَةٍ عَشْرَ أَمْثَالِهَا، قَالَ مُوسَى: قَدْ [ص:151] وَاللَّهِ رَاوَدْتُ بَنِي إِسْرَائِيلَ عَلَى أَدْنَى مِنْ ذَلِكَ فَتَرَكُوهُ، ارْجِعْ إِلَى رَبِّكَ فَلْيُخَفِّفْ عَنْكَ أَيْضًا، قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَا مُوسَى، قَدْ وَاللَّهِ اسْتَحْيَيْتُ مِنْ رَبِّي مِمَّا اخْتَلَفْتُ إِلَيْهِ، قَالَ: فَاهْبِطْ بِاسْمِ اللَّهِ قَالَ: وَاسْتَيْقَظَ وَهُوَ فِي مَسْجِدِ الحَرَامِ "

হাদীসের ব্যাখ্যা:

ইসরা ও মি'রাজের সফরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে বায়তুল মাকদিসে গমন করেন। সেখানে নবীগণকে নিয়ে নামায পড়েন। তারপর হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তাঁকে নিয়ে এক এক করে সাত আসমান পাড়ি দেন। প্রত্যেক আসমানে পৌঁছলে সে আসমানের দ্বাররক্ষী জিজ্ঞেস করে, কে? হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম নিজের পরিচয় দিয়ে বলেন, আমি জিবরীল। তারপর জিজ্ঞেস করে, আপনার সঙ্গে কে? তিনি উত্তর দেন, মুহাম্মাদ। এভাবে প্রত্যেকবার তিনি পরিচয় দিতে গিয়ে নিজের নাম বলেছেন। বলেননি যে, আমি। নাম বলতে গিয়েও নিজের সুপরিচিত নাম 'জিবরীল' বলেছেন। অন্য কোনও নাম নয়। তাঁর এছাড়া আরও নাম আছে, যেমন আর-রূহুল আমীন, রূহুল কুদ্‌স। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিচয় দিতে গিয়েও তিনি তাঁর সুপরিচিত নাম 'মুহাম্মাদ' উল্লেখ করেছেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামেরও আরও বহু নাম আছে, যেমন আহমাদ, আল-মাহী, আল-হাশির, আল-আকিব ইত্যাদি। তাঁর কুনয়াত বা উপনাম হল আবুল কাসিম। তিনি খাতামুন নাবিয়্যীন। তিনি সায়্যিদুল বাশার। হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম এসবের কোনওটিই না বলে উভয় প্রসিদ্ধ ও পরিচিত নামই বলেছেন। এর দ্বারা বোঝা গেল ঘরের ভেতর থেকে আগন্তুকের পরিচয় জানতে চাওয়া হলে তাকে যে নামে সবাই চেনে সেই নাম বলেই পরিচয় দিতে হবে। 'আমি' বলা কিংবা এমন কোনও নাম বা উপাধি বলাও ঠিক নয়, যা বললে জিজ্ঞাসাকারী তাকে ভালোভাবে চিনতে পারবে না। পরিচয় জিজ্ঞেস করার উদ্দেশ্যই তো চিনতে পারা। যা বললে সে চিনতে পারবে না, তা বলার ফায়দা কী? তাতে বরং ঝামেলাই বাড়ে। কথা বেশি বলতে হয়, সময়ও নষ্ট হয়।

অনেক সময় বাক্তি বড় হলে নিজ নাম বলতে আত্মসম্মানে বাধে। হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম ও নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেয়ে বড় মাখলূক আর কে আছে? তাঁদেরই যখন পরিচয় দিতে গিয়ে নিজ নাম বলতে কুণ্ঠাবোধ হয়নি, তখন অন্যদের কেন এতে আপত্তি লাগবে? অকপটে নিজ নাম উচ্চারণ করার দ্বারা কেবল পরিচয়দানই সহজ হয় না; এটা বিনয়েরও পরিচায়ক।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইসরা ও মি'রাজের ঘটনা সত্য। এতে বিশ্বাস রাখা জরুরি।

খ. আকাশ সাতটি। এতেও বিশ্বাস রাখতে হবে।

গ. প্রত্যেক আকাশে উপরে ওঠার দরজা আছে। আছে দরজার প্রহরীও। একেক ফিরিশতাকে আল্লাহ তা'আলা একেক দরজার দায়িত্বে নিযুক্ত করেছেন।

ঘ. দ্বাররক্ষী ফিরিশতাগণ সদা সতর্ক ও সচেতন। দায়িত্বপালনে তাদের দ্বারা কখনও কোনও ত্রুটি হয় না।

ঙ. কারও দরজায় পৌঁছলে নিজের নাম-পরিচয় দেওয়া কর্তব্য।

চ. পরিচয় দিতে গিয়ে সবাই যে নামে চেনে সেটাই বলা উচিত।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)