আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ
৮৩- তাওহীদ অধ্যায় ও জাহমিয়্যাসহ ভ্রান্ত দলগুলোর অপনোদন
হাদীস নং: ৭০০৬
আন্তর্জাতিক নং: ৭৫১৪
৩১৩৮. কিয়ামত দিবসে নবীগন ও অন্যান্যদের সাথে মহান আল্লাহর কথাবার্তা।
৭০০৬। মুসাদ্দাদ (রাহঃ) ......... সাফওয়ান ইবনে মুহরিয (রাহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি ইবনে উমর (রাযিঃ) কে জিজ্ঞাসা করল, আল্লাহর সাথে বান্দার গোপন আলাপ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে আপনি কি বলতে শুনেছেন? তিনি বললেনঃ আমাদের কেউ তার প্রতিপালকের নিকটস্থ হলে তিনি তাঁর ওপর রহমতের আবরণ বিস্তার করে জিজ্ঞাসা করবেন, তুমি কি এই কাজ করেছ? সে বলবে, হ্যাঁ। আল্লাহ আবারো জিজ্ঞাসা করবেন, তুমি কি এই কাজ করেছ? সে তখনো বলবে, হ্যাঁ। আল্লাহ এভাবে তার স্বীকারোক্তি নেবেন। তারপর আল্লাহ বলবেন, আমি দুনিয়ায় তোমার ওসব কাজ গোপন রেখেছিলাম। আমি আজকেও তোমার জন্য তা মাফ করে দিলাম।
আদম (রাহঃ) ......... ইবনে উমর (রাযিঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী (ﷺ) থেকে শুনেছি।
আদম (রাহঃ) ......... ইবনে উমর (রাযিঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী (ﷺ) থেকে শুনেছি।
باب كَلاَمِ الرَّبِّ عَزَّ وَجَلَّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَعَ الأَنْبِيَاءِ وَغَيْرِهِمْ
7514 - حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا أَبُو عَوَانَةَ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ صَفْوَانَ بْنِ مُحْرِزٍ، أَنَّ رَجُلًا سَأَلَ ابْنَ عُمَرَ، كَيْفَ سَمِعْتَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ فِي النَّجْوَى؟ قَالَ: " يَدْنُو أَحَدُكُمْ مِنْ رَبِّهِ حَتَّى يَضَعَ كَنَفَهُ عَلَيْهِ، فَيَقُولُ: أَعَمِلْتَ كَذَا وَكَذَا؟ فَيَقُولُ: نَعَمْ، وَيَقُولُ: عَمِلْتَ كَذَا وَكَذَا؟ فَيَقُولُ: نَعَمْ، فَيُقَرِّرُهُ، ثُمَّ يَقُولُ: إِنِّي سَتَرْتُ عَلَيْكَ فِي الدُّنْيَا، وَأَنَا أَغْفِرُهَا لَكَ اليَوْمَ " وَقَالَ آدَمُ، حَدَّثَنَا شَيْبَانُ، حَدَّثَنَا قَتَادَةُ، حَدَّثَنَا صَفْوَانُ، عَنْ ابْنِ عُمَرَ، سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছটিতে মুমিনদের প্রতি আল্লাহ তা'আলার খাস রহমতের কথা বর্ণিত হয়েছে। কিয়ামতের দিন তিনি মুমিনদেরকে কাছে ডেকে পর্দা ফেলে দেবেন। অর্থাৎ সকলের থেকে আড়ালে নিয়ে যাবেন। তারপর এক এক করে তার ওইসকল গুনাহ তার সামনে উল্লেখ করবেন, যা সে গোপনে করেছিল, কোনও মানুষ তা জানত না। প্রত্যেকটি সম্পর্কে সে স্বীকার করবে যে, সে তা করেছিল। আল্লাহ তা'আলা তার সামনে আমলনামাও খুলে দেবেন। তাতেও সে তার গোপন গুনাহসমূহ দেখতে পাবে। কোনও কোনও বর্ণনায় আছে, এ অবস্থায় সে ডানে-বামে তাকাবে। সে তাকানোটা হবে চরম ভয় ও আতঙ্কের কারণে। সে ধরেই নেবে আজ তার মুক্তির কোনও উপায় নেই। কিন্তু পরম দয়ালু আল্লাহ তাকে নির্ভয় দেবেন। বলবেন, দুনিয়ায় তোমার এসব গুনাহ আমি গোপন রেখেছিলাম, আজ আমি ক্ষমা করে দিলাম। এক বর্ণনায় আছে, আল্লাহ বলবেন, তোমার কোনও ভয় নেই। তুমি আমার পর্দার ভেতর রয়েছ। আমি ছাড়া তোমার গুনাহ সম্পর্কে কেউ জানতে পারবে না।
প্রকাশ থাকে যে, এটা হবে হাক্কুল্লাহ সম্পর্কিত গুনাহের ক্ষেত্রে। পক্ষান্তরে কেউ যদি গোপনে কোনও বান্দার হক নষ্ট করে, তবে তা এভাবে ক্ষমা করা হবে না; বরং বান্দার পক্ষ থেকেও তাকে ক্ষমা পেতে হবে। এমনিভাবে মানুষ যেসব গুনাহ প্রকাশ্যে করে, সে ক্ষেত্রেও এরকম খাস রহমত করা হবে না। প্রকাশ্যে কৃত গুনাহ সম্পর্কে হাদীছে ইরশাদ হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
كل أمتي معافى إلا المجاهرين، وإن من المجاهرة أن يعمل الرجل بالليل عملا، ثم يصبح وقد ستره الله عليه، فيقول: يا فلان، عملت البارحة كذا وكذا، وقد بات يستره ربه، ويصبح يكشف ستر الله عنه، متفق عليه
আমার উম্মতের প্রত্যেকেই ক্ষমাপ্রাপ্ত হবে, কিন্তু প্রকাশ্যে গুনাহকারীগণ নয়। এটাও প্রকাশ্য গুনাহের অন্তর্ভুক্ত যে, কোনও ব্যক্তি রাতের বেলা কোনও (পাপের) কাজ করে তারপর এ অবস্থায় তার ভোর হয় যে, আল্লাহ তা'আলা তার কাজটি গোপন রাখেন, কিন্তু সে নিজেই বলে, হে অমুক! (শোন) আমি গতরাতে এই এই কাজ করেছি। অথচ সে রাত যাপন করেছিল এ অবস্থায় যে, তার প্রতিপালক তার দোষ আড়ালে রেখেছিলেন। আর সে সকালবেলা আল্লাহর আড়াল উন্মোচন করে দেয়।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছটি দ্বারা মুমিনদের প্রতি আল্লাহ তা'আলার বিশেষ দয়ার পরিচয় পাওয়া যায়।
খ. আরও জানা যায়, আল্লাহ তা'আলা যাকে চান নিজ দয়ায় ক্ষমা করবেন।
গ. যেসকল গুনাহ গোপনে হয়ে যায়, সে ব্যাপারে ক্ষমালাভের বেশি আশা থাকে।
ঘ. কোনও গুনাহ গোপনে হয়ে গেলে নিজের পক্ষ থেকে তা কারও কাছে প্রকাশ করতে নেই।
প্রকাশ থাকে যে, এটা হবে হাক্কুল্লাহ সম্পর্কিত গুনাহের ক্ষেত্রে। পক্ষান্তরে কেউ যদি গোপনে কোনও বান্দার হক নষ্ট করে, তবে তা এভাবে ক্ষমা করা হবে না; বরং বান্দার পক্ষ থেকেও তাকে ক্ষমা পেতে হবে। এমনিভাবে মানুষ যেসব গুনাহ প্রকাশ্যে করে, সে ক্ষেত্রেও এরকম খাস রহমত করা হবে না। প্রকাশ্যে কৃত গুনাহ সম্পর্কে হাদীছে ইরশাদ হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
كل أمتي معافى إلا المجاهرين، وإن من المجاهرة أن يعمل الرجل بالليل عملا، ثم يصبح وقد ستره الله عليه، فيقول: يا فلان، عملت البارحة كذا وكذا، وقد بات يستره ربه، ويصبح يكشف ستر الله عنه، متفق عليه
আমার উম্মতের প্রত্যেকেই ক্ষমাপ্রাপ্ত হবে, কিন্তু প্রকাশ্যে গুনাহকারীগণ নয়। এটাও প্রকাশ্য গুনাহের অন্তর্ভুক্ত যে, কোনও ব্যক্তি রাতের বেলা কোনও (পাপের) কাজ করে তারপর এ অবস্থায় তার ভোর হয় যে, আল্লাহ তা'আলা তার কাজটি গোপন রাখেন, কিন্তু সে নিজেই বলে, হে অমুক! (শোন) আমি গতরাতে এই এই কাজ করেছি। অথচ সে রাত যাপন করেছিল এ অবস্থায় যে, তার প্রতিপালক তার দোষ আড়ালে রেখেছিলেন। আর সে সকালবেলা আল্লাহর আড়াল উন্মোচন করে দেয়।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছটি দ্বারা মুমিনদের প্রতি আল্লাহ তা'আলার বিশেষ দয়ার পরিচয় পাওয়া যায়।
খ. আরও জানা যায়, আল্লাহ তা'আলা যাকে চান নিজ দয়ায় ক্ষমা করবেন।
গ. যেসকল গুনাহ গোপনে হয়ে যায়, সে ব্যাপারে ক্ষমালাভের বেশি আশা থাকে।
ঘ. কোনও গুনাহ গোপনে হয়ে গেলে নিজের পক্ষ থেকে তা কারও কাছে প্রকাশ করতে নেই।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
