আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ
২- ইলমের অধ্যায়
হাদীস নং: ৭০
আন্তর্জাতিক নং: ৭০
৫৪. ইলম শিক্ষার্থীদের জন্য দিন নির্দিষ্ট করা
৭০। উসমান ইবনে আবু শায়বা (রাহঃ) ......... আবু ওয়াইল (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ ইবনে মাসউদ (রাযিঃ) প্রতি বৃহস্পতিবার লোকদের ওয়ায-নসীহত করতেন। তাঁকে একজন বলল, হে আবু আব্দুর রহমান! আমার মন চায় যেন আপনি প্রতিদিন আমাদের নসীহত করেন। তিনি বললেনঃ এ কাজ থেকে আমাকে যা বিরত রাখে তা হল, আমি তোমাদের ক্লান্ত করতে পছন্দ করি না। আর আমি নসীহত করার ব্যাপারে তোমাদের (অবস্থার) প্রতি লক্ষ্য রাখি, যেমন রাসূল (ﷺ) আমাদের প্রতি লক্ষ্য রাখতেন আমাদের ক্লান্তির আশঙ্কায়।
باب مَنْ جَعَلَ لأَهْلِ الْعِلْمِ أَيَّامًا مَعْلُومَةً
حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، قَالَ حَدَّثَنَا جَرِيرٌ، عَنْ مَنْصُورٍ، عَنْ أَبِي وَائِلٍ، قَالَ كَانَ عَبْدُ اللَّهِ يُذَكِّرُ النَّاسَ فِي كُلِّ خَمِيسٍ، فَقَالَ لَهُ رَجُلٌ يَا أَبَا عَبْدِ الرَّحْمَنِ لَوَدِدْتُ أَنَّكَ ذَكَّرْتَنَا كُلَّ يَوْمٍ. قَالَ أَمَا إِنَّهُ يَمْنَعُنِي مِنْ ذَلِكَ أَنِّي أَكْرَهُ أَنْ أُمِلَّكُمْ، وَإِنِّي أَتَخَوَّلُكُمْ بِالْمَوْعِظَةِ كَمَا كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَتَخَوَّلُنَا بِهَا، مَخَافَةَ السَّآمَةِ عَلَيْنَا.
হাদীসের ব্যাখ্যা:
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মাস‘উদ রাযি. একজন শীর্ষস্থানীয় সাহাবী এবং তাঁদের মধ্যে যারা বিশিষ্ট আলেম ও ফকীহ ছিলেন তাদের একজন। তিনি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন। ছিলেন তাঁর খাস খাদেম। জীবনভর তাঁর কাছ থেকে দীনের শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। তাঁর ওফাতের পর তিনি অকৃপণভাবে সে শিক্ষার বিতরণে মশগুল থেকেছেন। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মতো তিনিও ছিলেন একজন মহান শিক্ষক। গভীর আন্তরিকতা ও যত্নের সঙ্গে শিষ্যবর্গকে শিক্ষাদান করতেন। তিনি শিক্ষাদানের ক্ষেত্রেও নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ ও নীতি অনুসরণ করতেন। তার একটা পরিচয় এ হাদীছ দ্বারাও পাওয়া যায়। তাঁর খুব কাছের ছাত্রদের একজন হলেন আবু ওয়াইল শাকীক ইবন সালামা। তিনি জানাচ্ছেন, হযরত ইবনে মাসউদ রাযি. তাদেরকে সপ্তাহে একদিন নসীহত করতেন। প্রতি বৃহস্পতিবার।
প্রকাশ থাকে যে, হযরত ইবনে মাস‘উদ রাযি.-এর সে নসীহত প্রচলিত অর্থের বয়ান-বক্তব্য হতো না। বরং তা ছিল যথারীতি কুরআন-হাদীছের শিক্ষাদান। তিনি ছিলেন শিক্ষক এবং শ্রোতাবর্গ শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীগণ তাঁর গভীর পাণ্ডিত্য ও আন্তরিকতার কারণে প্রতিদিনই তাঁর কাছে শিক্ষাগ্রহণ করতে চাইতেন। একদিন তারা তাঁর কাছে নিজেদের মনের সে আগ্রহের কথা প্রকাশই করে ফেললেন। এর উত্তরে তিনি বললেন-
أما إنَّه يَمْنَعُنِي مِن ذلكَ أنِّي أكْرَهُ أنْ أُمِلَّكُمْ (শোনো হে! তাতে আমার বাধা এটাই যে, আমি তোমাদেরকে বিরক্ত করতে অপসন্দ করি)। অর্থাৎ আমি চাই না প্রতিদিন এ শিক্ষা মজলিসে হাজির হতে হতে তোমরা ক্লান্ত হয়ে পড় আর এক পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে আসা ছেড়েই দাও। দীনের শিক্ষা আল্লাহ তা'আলার অনেক বড় নি'আমত। এ নি'আমতের গ্রহণ অব্যাহত রাখাই কাম্য। কোনও অবস্থায়ই ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়। আর এ নি'আমত গ্রহণও করা উচিত আগ্রহের সঙ্গে। বিরক্তির সঙ্গে নয়। বিরক্ত হওয়াটা এ শিক্ষার সঙ্গে এক রকম বেয়াদবি। তাই শিক্ষকেরই লক্ষ রাখা উচিত যাতে তার শিক্ষার্থী শিক্ষাগ্রহণের প্রতি কোনওক্রমেই বিরক্ত ও নিরুৎসাহ না হয়ে পড়ে।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মাস'উদ রাযি. পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে, শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে মাঝে মাঝে বিরতি দেওয়ার এই যে নিয়ম তিনি অবলম্বন করেন, এটা তাঁর মনগড়া নয়। বরং এটা তিনি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ থেকেই পেয়েছেন এবং তিনি এ ক্ষেত্রে তাঁরই অনুসরণ করছেন। সুতরাং তিনি বলেন-
وَإِنِّي أَتَخَوَّلُكُمْ بِالْمَوْعِظَةِ، كَمَا كَانَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ يَتَخَوَّلُنَا بِهَا مَخَافَةَ السَّامَةِ عَلَيْنَا
(আমি তোমাদেরকে নসীহত করার জন্য উপযুক্ত সময়ের সন্ধান করি, যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নসীহত করার জন্য উপযুক্ত সময়ের সন্ধান করতেন- আমাদের বিরক্ত হয়ে পড়ার আশঙ্কায়)। يَتَخَوَّلُنَا শব্দটিকে তিনভাবে পড়া হয়েছে। এক তো خ এর সঙ্গে, এখানে যেমনটা আছে। দ্বিতীয় হল خ এর পরিবর্তে ح এর সঙ্গে يَتَحَوَّلُنَا । আর তৃতীয় হল خ এর সঙ্গেই, তবে শেষে ل এর স্থানে ن অর্থাৎ ا يَتَخَوَّنُنَا
يَتَحَوَّلُ এর মাসদার হল التَّحَوُّلُ। এর অর্থ تَفَقّدُ الْأَحْوَالِ । অর্থাৎ তিনি তাদের অবস্থা খতিয়ে দেখতেন। যখন তাদের মধ্যে উপদেশ শোনার আগ্রহ-উদ্দীপনা থাকত, তখন উপদেশ দিতেন। তবে তারা যাতে বিরক্ত হয়ে না পড়ে, সেজন্য খুব লম্বা-চওড়া নসীহত করতেন না।
يَتَخَوَّنُ এর মাসদার হল اَلتَّخَوُّنُ। এর অর্থও اَلتَّعَهدُ। ইমাম আসমা‘ঈ রহ, শব্দটিকে এভাবেই পড়তেন। মাজমা'উল গারাইব গ্রন্থে আছে, ইমাম আসমা'ঈ রহ. বলেন, আমার ধারণা শব্দটি হবে يَتَخَوَّلُ) يَتَخَوَّنُ নয়)। একবার ইমাম আ‘মাশ রহ. এ হাদীছটি يَتَخَوَّلُ এর সঙ্গে বর্ণনা করলে আবূ আমর ইবনুল ‘আলা রহ. আপত্তি করেন এবং বলেন, শব্দটি হবে يَتَخَوَّنُ। কিন্তু হাদীছটি তিনি তাঁর উস্তাযবর্গের নিকট যেহেতু এভাবেই শুনেছেন, তাই তিনি সে আপত্তি গ্রহণ করেননি। প্রকৃতপক্ষে উভয় শব্দই সহীহ। তবে সাধারণভাবে এটি يَتَخَوَّلُ রূপেই বেশি বর্ণিত।
يَتَخَوَّلُ এর মাসদার (ক্রিয়ামূল) হল اَلتَّخَوُّلُ। এর অর্থ اَلتَّعَهدُ (লক্ষ রাখা, যত্ন নেওয়া, পরিচর্যা করা, তদারকি করা, পরিচালনা করা, সম্পাদন করা)। বলা হয়, خَالَ المَالَ 'সে তার সম্পদের পরিচর্যা করল এবং তার উত্তম বন্দোবস্ত করল'। সুতরাং শব্দটি দ্বারা এ হাদীছে বোঝানো হচ্ছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামের প্রতি লক্ষ রাখতেন। তাদের দীনী জীবন গঠনের প্রতি বিশেষ যত্ন নিতেন। তিনি তাদের উত্তম পরিচালনা করতেন। সে হিসেবে শিক্ষাদান ও উপদেশ দেওয়ার ক্ষেত্রেও তিনি লক্ষ রাখতেন যাতে তা দ্বারা তাদেরকে উত্তমরূপে গঠন করা যায়। আর সে লক্ষ্যে তিনি প্রতিদিন শিক্ষাদান করতেন না এবং উপর্যুপরি উপদেশও দিতেন না। বরং সময়-সুযোগ ও পরিবেশ-পরিস্থিতির প্রতি লক্ষ রাখতেন এবং যখন যা শিক্ষা দেওয়ার বা যখন যে উপদেশ দেওয়ার তা দিতেন।
এটা প্রতিদিন করলে এ আশঙ্কা ছিল যে, তারা বিরক্ত হয়ে পড়বেন। ফলে আগ্রহের সঙ্গে তা গ্রহণ করবেন না। আর এতে করে তাদেরকে উত্তমরূপে গড়ে তোলার যে উদ্দেশ্য ছিল তাও সফল হবে না। উল্টো শুধু শুধুই তাদেরকে কষ্ট দেওয়া হবে। একজন মহান শিক্ষকরূপে তিনি তা পসন্দ করতেন না। কুরআন মাজীদে তাঁর চরিত্র সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে-
عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُمْ بِالْمُؤْمِنِينَ رَءُوفٌ رَحِيمٌ
‘তোমাদের যে-কোনও কষ্ট তার জন্য অতি পীড়াদায়ক। সে সতত তোমাদের কল্যাণকামী, মুমিনদের প্রতি অত্যন্ত সদয়, পরম দয়ালু।’ (সূরা তাওবা (৯), আয়াত ১২৮)
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. শিক্ষার্থী যাতে শিক্ষাগ্রহণে উৎসাহ না হারায়, সেদিকে লক্ষ রাখাও একজন শিক্ষকের দায়িত্ব। সুতরাং যে আচরণ ও কর্মপন্থা তাদের উৎসাহ ক্ষুণ্ণ করতে পারে, শিক্ষককে অবশ্যই তা থেকে বিরত থাকতে হবে।
খ. শ্রোতা যতটুকু বুঝতে ও মনে রাখতে সক্ষম হবে, সেদিকে লক্ষ রেখেই ওয়াজ-নসীহত করা উচিত।
গ. শিক্ষক ও ওয়াজ-নসীহতকারীর বিচক্ষণতা ও দুরদর্শীতারও পরিচয় দেওয়া উচিত। কাজেই আপাতদৃষ্টিতে ভালো মনে হয় বলেই শিক্ষার্থীর যে-কোনও আবেদন গ্রহণ করে নেওয়া ঠিক নয়। কেননা আখেরে তা ক্ষতিকরও হতে পারে।
প্রকাশ থাকে যে, হযরত ইবনে মাস‘উদ রাযি.-এর সে নসীহত প্রচলিত অর্থের বয়ান-বক্তব্য হতো না। বরং তা ছিল যথারীতি কুরআন-হাদীছের শিক্ষাদান। তিনি ছিলেন শিক্ষক এবং শ্রোতাবর্গ শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীগণ তাঁর গভীর পাণ্ডিত্য ও আন্তরিকতার কারণে প্রতিদিনই তাঁর কাছে শিক্ষাগ্রহণ করতে চাইতেন। একদিন তারা তাঁর কাছে নিজেদের মনের সে আগ্রহের কথা প্রকাশই করে ফেললেন। এর উত্তরে তিনি বললেন-
أما إنَّه يَمْنَعُنِي مِن ذلكَ أنِّي أكْرَهُ أنْ أُمِلَّكُمْ (শোনো হে! তাতে আমার বাধা এটাই যে, আমি তোমাদেরকে বিরক্ত করতে অপসন্দ করি)। অর্থাৎ আমি চাই না প্রতিদিন এ শিক্ষা মজলিসে হাজির হতে হতে তোমরা ক্লান্ত হয়ে পড় আর এক পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে আসা ছেড়েই দাও। দীনের শিক্ষা আল্লাহ তা'আলার অনেক বড় নি'আমত। এ নি'আমতের গ্রহণ অব্যাহত রাখাই কাম্য। কোনও অবস্থায়ই ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়। আর এ নি'আমত গ্রহণও করা উচিত আগ্রহের সঙ্গে। বিরক্তির সঙ্গে নয়। বিরক্ত হওয়াটা এ শিক্ষার সঙ্গে এক রকম বেয়াদবি। তাই শিক্ষকেরই লক্ষ রাখা উচিত যাতে তার শিক্ষার্থী শিক্ষাগ্রহণের প্রতি কোনওক্রমেই বিরক্ত ও নিরুৎসাহ না হয়ে পড়ে।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মাস'উদ রাযি. পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে, শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে মাঝে মাঝে বিরতি দেওয়ার এই যে নিয়ম তিনি অবলম্বন করেন, এটা তাঁর মনগড়া নয়। বরং এটা তিনি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ থেকেই পেয়েছেন এবং তিনি এ ক্ষেত্রে তাঁরই অনুসরণ করছেন। সুতরাং তিনি বলেন-
وَإِنِّي أَتَخَوَّلُكُمْ بِالْمَوْعِظَةِ، كَمَا كَانَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ يَتَخَوَّلُنَا بِهَا مَخَافَةَ السَّامَةِ عَلَيْنَا
(আমি তোমাদেরকে নসীহত করার জন্য উপযুক্ত সময়ের সন্ধান করি, যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নসীহত করার জন্য উপযুক্ত সময়ের সন্ধান করতেন- আমাদের বিরক্ত হয়ে পড়ার আশঙ্কায়)। يَتَخَوَّلُنَا শব্দটিকে তিনভাবে পড়া হয়েছে। এক তো خ এর সঙ্গে, এখানে যেমনটা আছে। দ্বিতীয় হল خ এর পরিবর্তে ح এর সঙ্গে يَتَحَوَّلُنَا । আর তৃতীয় হল خ এর সঙ্গেই, তবে শেষে ل এর স্থানে ن অর্থাৎ ا يَتَخَوَّنُنَا
يَتَحَوَّلُ এর মাসদার হল التَّحَوُّلُ। এর অর্থ تَفَقّدُ الْأَحْوَالِ । অর্থাৎ তিনি তাদের অবস্থা খতিয়ে দেখতেন। যখন তাদের মধ্যে উপদেশ শোনার আগ্রহ-উদ্দীপনা থাকত, তখন উপদেশ দিতেন। তবে তারা যাতে বিরক্ত হয়ে না পড়ে, সেজন্য খুব লম্বা-চওড়া নসীহত করতেন না।
يَتَخَوَّنُ এর মাসদার হল اَلتَّخَوُّنُ। এর অর্থও اَلتَّعَهدُ। ইমাম আসমা‘ঈ রহ, শব্দটিকে এভাবেই পড়তেন। মাজমা'উল গারাইব গ্রন্থে আছে, ইমাম আসমা'ঈ রহ. বলেন, আমার ধারণা শব্দটি হবে يَتَخَوَّلُ) يَتَخَوَّنُ নয়)। একবার ইমাম আ‘মাশ রহ. এ হাদীছটি يَتَخَوَّلُ এর সঙ্গে বর্ণনা করলে আবূ আমর ইবনুল ‘আলা রহ. আপত্তি করেন এবং বলেন, শব্দটি হবে يَتَخَوَّنُ। কিন্তু হাদীছটি তিনি তাঁর উস্তাযবর্গের নিকট যেহেতু এভাবেই শুনেছেন, তাই তিনি সে আপত্তি গ্রহণ করেননি। প্রকৃতপক্ষে উভয় শব্দই সহীহ। তবে সাধারণভাবে এটি يَتَخَوَّلُ রূপেই বেশি বর্ণিত।
يَتَخَوَّلُ এর মাসদার (ক্রিয়ামূল) হল اَلتَّخَوُّلُ। এর অর্থ اَلتَّعَهدُ (লক্ষ রাখা, যত্ন নেওয়া, পরিচর্যা করা, তদারকি করা, পরিচালনা করা, সম্পাদন করা)। বলা হয়, خَالَ المَالَ 'সে তার সম্পদের পরিচর্যা করল এবং তার উত্তম বন্দোবস্ত করল'। সুতরাং শব্দটি দ্বারা এ হাদীছে বোঝানো হচ্ছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামের প্রতি লক্ষ রাখতেন। তাদের দীনী জীবন গঠনের প্রতি বিশেষ যত্ন নিতেন। তিনি তাদের উত্তম পরিচালনা করতেন। সে হিসেবে শিক্ষাদান ও উপদেশ দেওয়ার ক্ষেত্রেও তিনি লক্ষ রাখতেন যাতে তা দ্বারা তাদেরকে উত্তমরূপে গঠন করা যায়। আর সে লক্ষ্যে তিনি প্রতিদিন শিক্ষাদান করতেন না এবং উপর্যুপরি উপদেশও দিতেন না। বরং সময়-সুযোগ ও পরিবেশ-পরিস্থিতির প্রতি লক্ষ রাখতেন এবং যখন যা শিক্ষা দেওয়ার বা যখন যে উপদেশ দেওয়ার তা দিতেন।
এটা প্রতিদিন করলে এ আশঙ্কা ছিল যে, তারা বিরক্ত হয়ে পড়বেন। ফলে আগ্রহের সঙ্গে তা গ্রহণ করবেন না। আর এতে করে তাদেরকে উত্তমরূপে গড়ে তোলার যে উদ্দেশ্য ছিল তাও সফল হবে না। উল্টো শুধু শুধুই তাদেরকে কষ্ট দেওয়া হবে। একজন মহান শিক্ষকরূপে তিনি তা পসন্দ করতেন না। কুরআন মাজীদে তাঁর চরিত্র সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে-
عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُمْ بِالْمُؤْمِنِينَ رَءُوفٌ رَحِيمٌ
‘তোমাদের যে-কোনও কষ্ট তার জন্য অতি পীড়াদায়ক। সে সতত তোমাদের কল্যাণকামী, মুমিনদের প্রতি অত্যন্ত সদয়, পরম দয়ালু।’ (সূরা তাওবা (৯), আয়াত ১২৮)
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. শিক্ষার্থী যাতে শিক্ষাগ্রহণে উৎসাহ না হারায়, সেদিকে লক্ষ রাখাও একজন শিক্ষকের দায়িত্ব। সুতরাং যে আচরণ ও কর্মপন্থা তাদের উৎসাহ ক্ষুণ্ণ করতে পারে, শিক্ষককে অবশ্যই তা থেকে বিরত থাকতে হবে।
খ. শ্রোতা যতটুকু বুঝতে ও মনে রাখতে সক্ষম হবে, সেদিকে লক্ষ রেখেই ওয়াজ-নসীহত করা উচিত।
গ. শিক্ষক ও ওয়াজ-নসীহতকারীর বিচক্ষণতা ও দুরদর্শীতারও পরিচয় দেওয়া উচিত। কাজেই আপাতদৃষ্টিতে ভালো মনে হয় বলেই শিক্ষার্থীর যে-কোনও আবেদন গ্রহণ করে নেওয়া ঠিক নয়। কেননা আখেরে তা ক্ষতিকরও হতে পারে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
