আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৮৩- তাওহীদ অধ্যায় ও জাহমিয়্যাসহ ভ্রান্ত দলগুলোর অপনোদন

হাদীস নং: ৬৯৮৪
আন্তর্জাতিক নং: ৭৪৯২
৩১৩৭. আল্লাহ তাআলার বাণীঃ তারা আল্লাহর প্রতিশ্রুতি পরিবর্তন করতে চায় (৪৮ঃ ১৫)।
৬৯৮৪। আবু নুআঈম (রাহঃ) ......... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেছেনঃ আল্লাহ ঘোষণা করেন যে, রোযা আমার জন্যই, আর আমিই এর প্রতিদান দেব। যেহেতু সে আমারই সন্তুষ্টি লাভের উদেশ্যে তার প্রবৃত্তি, পান ও আহার ত্যাগ করেছে। আর রোযা হচ্ছে, ঢাল। রোযা পালনকারীর জন্য রয়েছে দু’টি আনন্দ। এক আনন্দ হল যখন সে ইফতার করে, আর এক আনন্দ হল, যখন সে তার প্রতিপালকের সাথে মিলিত হবে। আল্লাহর কাছে রোযা পালনকারীর মুখের গন্ধ মিসকের সুগন্ধির চেয়েও উত্তম।
بَابُ قَوْلِ اللَّهِ تَعَالَى: {يُرِيدُونَ أَنْ يُبَدِّلُوا كَلاَمَ اللَّهِ} [الفتح: 15]
7492 - حَدَّثَنَا أَبُو نُعَيْمٍ، حَدَّثَنَا الأَعْمَشُ، عَنْ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: " يَقُولُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ: الصَّوْمُ لِي وَأَنَا أَجْزِي بِهِ، يَدَعُ شَهْوَتَهُ وَأَكْلَهُ وَشُرْبَهُ مِنْ أَجْلِي، وَالصَّوْمُ جُنَّةٌ، وَلِلصَّائِمِ فَرْحَتَانِ: فَرْحَةٌ حِينَ يُفْطِرُ، وَفَرْحَةٌ حِينَ يَلْقَى رَبَّهُ، وَلَخُلُوفُ فَمِ الصَّائِمِ أَطْيَبُ عِنْدَ اللَّهِ مِنْ رِيحِ المِسْكِ "

হাদীসের ব্যাখ্যা:

রোযা জাহান্নাম থেকে রক্ষাকারী ঢাল ও দুর্গঃ

হযরত জাবির রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

‘আমাদের মহান রব ইরশাদ করেছেন– রোযা হল ঢাল। বান্দা এর দ্বারা নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করবে। রোযা আমার জন্য আর আমিই এর পুরস্কার দিব। মুসনাদে আহমদ, হাদীস ১৪৬৬৯; শুয়াবুল ঈমান বাইহাকী, হাদীস ৩৫৭০

হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম ইরশাদ করেছেন–

الصِّيَامُ جُنّةٌ، وَحِصْنٌ حَصِينٌ مِنَ النّارِ.

রোযা হল (জাহান্নাম থেকে পরিত্রান লাভের) ঢাল এবং সুরক্ষিত দুর্গ। মুসনাদে আহমাদ, হাদীস–৯২২৫; শুয়াবুল ঈমান, বাইহাকী, হাদীস ৩৫৭১

রোযাদারের মুখের গন্ধ মিশকের চেয়েও সুঘ্রাণযুক্তঃ

রোযার কারণে মুখে যে দুর্গন্ধ হয় আল্লাহ তাআলা তারও মূল্যায়ন করেছেন কল্পনাতীতভাবে। অনাহারের কারণে সৃষ্ট দুর্গন্ধ তাঁর কাছে মিশকের চেয়েও অধিক সুঘ্রাণ বলে জানিয়েছেন আর ধন্য করেছেন তাঁর প্রেমে মত্ত রোযাদারদের।

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন– ‘নিশ্চয় রোযাদারে মুখের (পানাহার বর্জনজনিত) গন্ধ আল্লাহর কাছে মিশকের সুগন্ধি অপেক্ষা উত্তম।’ –সহীহ বুখারী হাদীস, ১৯০৪

এখানে উল্লেখ্য যে, বর্ণিত হাদীসে দুর্গন্ধ দ্বারা ঐ গন্ধকেই বুঝানো হয়েছে যা পানাহার বর্জনের কারণে পেটের ভিতর থেকে উত্থিত হয়। দাত ও মুখ অপরিষ্কার রাখার কারণে যে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয় তা এখানে উদ্দেশ্য নয়। তাই রোযাদার ব্যক্তি অবশ্যই তার দাত ও মুখ পরিষ্কার রাখার ব্যাপারে সচেতন থাকবে।


রোযার প্রতিদান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নিজেই দিবেন এবং বে–হিসাব দিবেনঃ

প্রত্যেক নেক আমলের নির্ধারিত সওয়াব ও প্রতিদান রয়েছে, যার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা আমলকারীকে পুরস্কৃত করবেন। কিন্তু রোযার বিষয়টি সম্পূর্ণ আলাদা। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

كُل عَمَلِ ابْنِ آدَمَ يُضَاعَفُ، الْحَسَنَةُ عَشْرُ أَمْثَالِهَا إِلَى سَبْعمِائَة ضِعْفٍ، قَالَ اللهُ عَز وَجَل: إِلَّا الصَّوْمَ، فَإِنَّه لِي وَأَنَا أَجْزِي بِهِ، يَدَعُ شَهْوَتَهُ وَطَعَامَهُ مِنْ أَجْلِي.

মানুষের প্রত্যেক আমলের প্রতিদান বৃদ্ধি করা হয়। একটি নেকীর সওয়াব দশ গুণ থেকে সাতাশ গুণ পর্যন্ত। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, কিন্তু রোযা আলাদা। কেননা তা একমাত্র আমার জন্য এবং আমি নিজেই এর বিনিময় প্রদান করব। বান্দা একমাত্র আমার জন্য নিজের প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করেছে এবং পানাহার পরিত্যাগ করেছে। সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৫১ (১৬৪); মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৯৭১৪; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৮৯৮৭; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৬৩৮

রোযাদারের জন্য দুটি আনন্দঃ
হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে– রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘রোযাদারের জন্য দুটি আনন্দ। একটি ইফতারের সময়, অন্যটি তার মালিক আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ লাভের সময়।’

রোযাদারের ইফতারের সময় আনন্দ হলো সারাদিন উপবাসের পর সূর্য অস্তের প্রাক্কালে ইফতার সামনে নিয়ে বসে থাকেন। যখন তার সামনে বিভিন্ন প্রকারের খাবার থাকে। তখন তার মনটা আনন্দ পায়। কারণ সারাদিন অনাহারে থাকার দরুন ক্ষুধার তীব্রতা দেখা দেয়। রোযাদার ব্যক্তি সারাদিন ক্ষুধার জ্বালা–যন্ত্রণা নিয়ে ইফতারের পূর্ব মুহূর্তে বিভিন্ন রকমের ফল ও খাদ্য নিয়ে বসে আছে। কিন্তু সে খায় না। কেন আমরা এ কাজ করি? এর কারণ হলো মহান রাব্বুল আলামিনের ভয় আমাদের অন্তরে আছে বলেই নিবৃত্ত থাকি। এ নিবৃত্ত থাকা তাক্বওয়ার কারণেই।

রোযাদার ব্যক্তির দ্বিতীয় আনন্দ হলো কিয়ামতের দিন রোযাদাররা মহান রাব্বুল আলামিনকে দেখবে। এ দেখার মধ্যে দিয়ে বান্দার যে কত দিন, মাস, বছর, শতাব্দী চলে যাবে সেটা বান্দা টের পাবে না।
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)
সহীহ বুখারী - হাদীস নং ৬৯৮৪ | মুসলিম বাংলা