আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ
৮৩- তাওহীদ অধ্যায় ও জাহমিয়্যাসহ ভ্রান্ত দলগুলোর অপনোদন
হাদীস নং: ৬৯৩১
আন্তর্জাতিক নং: ৭৪৩৭ - ৭৪৩৮
৩১২৬. মহান আল্লাহর বাণীঃ সেদিন কোন কোন মুখমণ্ডল উজ্জ্বল হবে; তারা তাদের প্রতিপালকের দিকে তাকিয়ে থাকবে (কিয়ামাহঃ ২৩)।
৬৯৩১। আব্দুল আযীয ইবনে আব্দুল্লাহ (রাহঃ) ......... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, লোকেরা (সাহাবাগণ) জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! কিয়ামতের দিন আমরা কি আমাদের প্রতিপালককে দেখতে পাব? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ তোমরা কি পূর্ণিমার রাতে চাঁদ দেখতে বাধাপ্রাপ্ত হও? সবাই বলে উঠলেন, না, ইয়া রাসুলাল্লাহ। তিনি আবার বললেনঃ মেঘমুক্ত আকাশে সূর্য দেখতে কি তোমরা বাধাপ্রাপ্ত হও? সবাই বলে উঠলেন, না, ইয়া রাসুলাল্লাহ। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ তোমরা অনুরূপ আল্লাহকে দেখতে পাবে।
কিয়ামতের দিন আল্লাহ লোকদেরকে সমবেত করে বলবেন, যে যার ইবাদত করছিলে সে যেন তার অনুসরণ করে। তারপর যারা সূর্যের ইবাদত করত, সূর্যের অনুসরণ করবে। যারা চাঁদের ইবাদত করত, তারা চাঁদের অনুসরণ করবে। আর যারা তাগুতের পূজা করত, তারা তাদের অনুসরণ করবে। অবশিষ্ট থাকবে এই উম্মত। এদের মধ্যে এদের সুপারিশকারীরাও থাকবে অথবা রাবী বলেছেন, মুনাফিকরাও থাকবে। এখানে বর্ণনাকারী ইবরাহীম (রাহঃ) সন্দেহ পোষণ করেছেন।
তরপর মহান আল্লাহ তাদের কাছে এসে বলবেনঃ আমিই তোমাদের রব। তখন তারা বলবে, যতক্ষণ আমাদের রব আমাদের কাছে না আসবেন, ততক্ষণ আমরা এ স্থানেই অবস্থান করব। আমাদের রব যখন আসবেন, তখন আমরা তাকে চিনতে পারব। তারপর আল্লাহ এমন এক আকৃতিতে তাদের কাছে আসবেন, যে সুরতে তারা তাঁকে চিনবে। তখন তিনি বলবেন, তোমাদের রব আমিই। তারাও বলে উঠবে হ্যাঁ, আপনিই আমাদের রব। তারপর তারা তাঁর অনুসরণ করবে।
এরপর দোযখের উপর পুল কায়েম করা হবে। যারা পুল অতিক্রম করবে, আমি এবং আমার উম্মত তাদের মধ্যে প্রথম থাকব। সেদিন একমাত্র রাসুলগণ ছাড়া আর কেউই কথা বলতে পারবে না। আর রাসুলগণেরও আবেদন হবে শুধু আল্লাহুম্মা সাল্লিম, সাল্লিম (আয় আল্লাহ! নিরাপদে রাখুন, নিরাপদে রাখুন) এবং জাহান্নামে সাদান এর কাটার মত আকড়া থাকবে। তোমরা দেখেছ কি সাদান এর কাটা? সাহাবাগণ বললেন, জ্বী, হ্যাঁ, ইয়া রাসুলাল্লাহ। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ জাহান্নামের কাটাগুলো এ সাদান এর কাঁটার মত। হ্যাঁ, তবে সেগুলো যে কত বড় হবে তা একমাত্র আল্লাহই জানেন। ওসব কাটা মানুষকে তাদের কর্ম অনুপাতে বিদ্ধ করবে। কতিপয় মানুষ থাকবে ঈমানদার, তারা তাদের আমলের কারণে নিরাপদ থাকবে। আর কেউ কেউ তার আমলের কারণে ধ্বংস হবে। কাউকে নিক্ষেপ করা হবে আর কাউকে প্রতিদান দেওয়া হবে, কিংবা অনুরূপকিছু রাবী বলেছেন। তারপর (মহান আল্লাহ) প্রকাশমান হবেন। তিনি বান্দাদের বিচারকার্য সমাপন করে যখন আপন রহমতে কিছু সংখ্যক দোযখবাসীকে বের করতে চাবেন, তখন তিনি তাদের মধ্যকার শিরক-মুক্তদেরকে দোযখ থেকে বের করে দেয়ার জন্য ফিরিশতাদেরকে নির্দেশ দিবেন। তারাই হচ্ছে ওসব বান্দা যাদের উপর আল্লাহ রহমত করবেন, যারা সাক্ষ্য দিয়েছে যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। সিজদার চিহ্ন দ্বারা তাদের ফিরিশতাগণ চিনতে পারবেন। সিজদার চিহ্ন ছাড়া সেসব আদম সন্তানের সারাদেহ জাহান্নামের আগুন ভষ্মীভূত করে দেবে। সিজদার চিহ্নসমূহ জ্বালিয়ে দেওয়া আল্লাহ জাহান্নামের উপর হারাম করে দিয়েছেন। অতঃপর তাদেরকে আগুনে বিদগ্ধ অবস্থায় জাহান্নাম থেকে বের করা হবে। তাদের ওপর ঢালা হবে সঞ্জীবনীর পানি। এর ফলে নিম্নদেশ থেকে তারা এমনভাবে সজীব হয়ে ওঠবে, প্লাবনে ভাসমান বীজ মাটি থেকে যেভাবে গজিয়ে ওঠে। এরপর আল্লাহ তাআলা বান্দাদের বিচার ফায়সালা সমাপন করবেন।
এদের মধ্য থেকে একজন অবশ্যই রয়ে যাবে, যে জাহান্নামের দিকে মুখ করে থাকবে। জাহান্নামীদের মধ্যে এই হচ্ছে সর্বশেষ জান্নাতে প্রবেশকারী। তখন সে বলবে, হে আমার রব! আমার চেহারাটা জাহান্নাম থেকে ফিরিয়ে দাও। কেননা, জাহান্নামের (দুর্গন্ধময়) হাওয়া আমাকে অস্থির করে তুলছে এবং এর শিখা আমাকে জ্বালাচ্ছে। তখন সে আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী তার কাছে প্রার্থনা করবে। তারপর আল্লাহ তাআলা বলবেন, তোমার প্রার্থনার জিনিস যদি তোমাকে প্রদান করা হয়, তবে অন্য কিছু চাবে না তো? তখন সে বলবে, না, তোমার ইজ্জতের কসম করে বলছি, তা ছাড়া আমি আর কিছু চাব না। তখন সে আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে বহু অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি দেবে। ফলে আল্লাহ তার চেহারা জাহান্নাম থেকে ফিরিয়ে দিবেন। যখন সে জান্নাতের দিকে মুখ ফিরাবে এবং জান্নাতকে দেখবে, সে আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী যতক্ষণ চুপ থাকার চুপ থেকে বলবে, হে আমার রব! আমাকে জান্নাতের দ্বার পর্যন্ত এগিয়ে দাও। আল্লাহ তখন তাকে বলবেন, তুমি কি বহু প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার দাওনি যে, তোমাকে যা দেওয়া হবে, তা ছাড়া আর কিছু তুমি কখনো চাবে না। সর্বনাশ তোমার, হে আদম সন্তান! কতই না প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী তুমি। তখন সে বলবে, হে আমার রব! (আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে থাকবে), আল্লাহ তখন তাকে বলবেন, আচ্ছা, এটি যদি তোমাকে দেওয়া হয়, আর কিছু তো চাবে না? সে বলবে, তোমার ইজ্জতের কসম! সেটি ছাড়া আমি আর কিছুই চাব না। তারপর আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার দেবে আর আল্লাহ তাকে জান্নাতের দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দেবেন। যখন সে জান্নাতের দরজার কাছে দাঁড়াবে, তখন তার জন্য জান্নাত উন্মুক্ত হয়ে যাবে, তখন সে এর মধ্যকার আরাম-আয়েশ ও ভোগ বিলাসের প্রাচুর্য দেখতে পাবে। তখন সে আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী কিছুক্ষণ নীরব থেকে পরে বলবে, হে আমার রব! আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দিন। আল্লাহ বলবেনঃ তুমি কি আমাকে এই প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার দাওনি যে, তোমাকে যা দেওয়া হবে, তা ছাড়া আর কিছু প্রার্থনা করবে না? সর্বনাশ তোমার! হে বনী আদম! কতই না প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী তুমি। তখন সে বলবে, হে আমার রব! আমি তোমার সৃষ্টিরাজির মধ্যে নিকৃষ্টতর হতে চাই না। তখন সে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে থাকবে। অবশেষে আল্লাহ এতে হেসে দিবেন। আল্লাহ তার অবস্থার প্রেক্ষিতে হেসে তাকে নির্দেশ দিবেন, তুমি জান্নাতে প্রবেশ কর। সে জান্নাতে প্রবেশ করলে আল্লাহ তাকে সম্বোধন করে বলবেন, এবার তুমি কী চাও? সে তখন রবের কাছে যাচনা করবে এবং আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করবে। পরিশেষে আল্লাহ স্বয়ং তাকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলবেন, এটা চাও, ওটা চাও। এতে তার আরয-আকাঙ্ক্ষা সমাপ্ত হলে আল্লাহ বলবেনঃ তোমাকে ওগুলো দেয়া হল, সাথে সাথে সে পরিমাণ আরো দেয়া হল।
আতা ইবনে ইয়াযীদ (রাহঃ) বলেনঃ আবু হুরায়রা (রাযিঃ) যখন হাদীসটির বর্ণনা দিচ্ছিলেন, তখন আবু সাঈদ খুদরী (রাযিঃ)ও তার সাথে ছিলেন। তিনি আবু হুরায়রা (রাযিঃ) এর এই বর্ণিত হাদীসের কোথাও দ্বিমত করলেন না।
বর্ণনার শেষাংশে এসে আবু হুরায়রা (রাযিঃ) যখন বর্ণনা করলেন, আল্লাহ তাআলা তাকে বললেনঃ ওসব তোমাকে দেওয়া হলো এবং আরো তার সমপরিমাণ তার সাথে দেওয়া হল, তখন আবু সাঈদ খুদরী (রাযিঃ) দ্বিমত করে বললেনঃ হে আবু হুরায়রা (রাযিঃ), রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তো বলেছেনঃ তার সাথে আরো দশগুণ। তখন আবু হুরায়রা (রাযিঃ) বলেনঃ আমি সংরক্ষণ করেছি এভাবে- ওসব তোমাকে দেওয়া হল, আর এর সাথে আরো একগুণ দেওয়া হল। আবু সাঈদ (রাযিঃ) বললেনঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছ থেকে এভাবে সংরক্ষণ করেছি- ওসবই তোমাকে দেওয়া হল এবং এর সাথে তোমাকে দেওয়া হল আরো দশগুণ। আবু হুরায়রা (রাযিঃ) বলেনঃ এই হচ্ছে জান্নাতে প্রবেশকারীদের মধ্যে সর্বশেষ ব্যক্তি।
কিয়ামতের দিন আল্লাহ লোকদেরকে সমবেত করে বলবেন, যে যার ইবাদত করছিলে সে যেন তার অনুসরণ করে। তারপর যারা সূর্যের ইবাদত করত, সূর্যের অনুসরণ করবে। যারা চাঁদের ইবাদত করত, তারা চাঁদের অনুসরণ করবে। আর যারা তাগুতের পূজা করত, তারা তাদের অনুসরণ করবে। অবশিষ্ট থাকবে এই উম্মত। এদের মধ্যে এদের সুপারিশকারীরাও থাকবে অথবা রাবী বলেছেন, মুনাফিকরাও থাকবে। এখানে বর্ণনাকারী ইবরাহীম (রাহঃ) সন্দেহ পোষণ করেছেন।
তরপর মহান আল্লাহ তাদের কাছে এসে বলবেনঃ আমিই তোমাদের রব। তখন তারা বলবে, যতক্ষণ আমাদের রব আমাদের কাছে না আসবেন, ততক্ষণ আমরা এ স্থানেই অবস্থান করব। আমাদের রব যখন আসবেন, তখন আমরা তাকে চিনতে পারব। তারপর আল্লাহ এমন এক আকৃতিতে তাদের কাছে আসবেন, যে সুরতে তারা তাঁকে চিনবে। তখন তিনি বলবেন, তোমাদের রব আমিই। তারাও বলে উঠবে হ্যাঁ, আপনিই আমাদের রব। তারপর তারা তাঁর অনুসরণ করবে।
এরপর দোযখের উপর পুল কায়েম করা হবে। যারা পুল অতিক্রম করবে, আমি এবং আমার উম্মত তাদের মধ্যে প্রথম থাকব। সেদিন একমাত্র রাসুলগণ ছাড়া আর কেউই কথা বলতে পারবে না। আর রাসুলগণেরও আবেদন হবে শুধু আল্লাহুম্মা সাল্লিম, সাল্লিম (আয় আল্লাহ! নিরাপদে রাখুন, নিরাপদে রাখুন) এবং জাহান্নামে সাদান এর কাটার মত আকড়া থাকবে। তোমরা দেখেছ কি সাদান এর কাটা? সাহাবাগণ বললেন, জ্বী, হ্যাঁ, ইয়া রাসুলাল্লাহ। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ জাহান্নামের কাটাগুলো এ সাদান এর কাঁটার মত। হ্যাঁ, তবে সেগুলো যে কত বড় হবে তা একমাত্র আল্লাহই জানেন। ওসব কাটা মানুষকে তাদের কর্ম অনুপাতে বিদ্ধ করবে। কতিপয় মানুষ থাকবে ঈমানদার, তারা তাদের আমলের কারণে নিরাপদ থাকবে। আর কেউ কেউ তার আমলের কারণে ধ্বংস হবে। কাউকে নিক্ষেপ করা হবে আর কাউকে প্রতিদান দেওয়া হবে, কিংবা অনুরূপকিছু রাবী বলেছেন। তারপর (মহান আল্লাহ) প্রকাশমান হবেন। তিনি বান্দাদের বিচারকার্য সমাপন করে যখন আপন রহমতে কিছু সংখ্যক দোযখবাসীকে বের করতে চাবেন, তখন তিনি তাদের মধ্যকার শিরক-মুক্তদেরকে দোযখ থেকে বের করে দেয়ার জন্য ফিরিশতাদেরকে নির্দেশ দিবেন। তারাই হচ্ছে ওসব বান্দা যাদের উপর আল্লাহ রহমত করবেন, যারা সাক্ষ্য দিয়েছে যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। সিজদার চিহ্ন দ্বারা তাদের ফিরিশতাগণ চিনতে পারবেন। সিজদার চিহ্ন ছাড়া সেসব আদম সন্তানের সারাদেহ জাহান্নামের আগুন ভষ্মীভূত করে দেবে। সিজদার চিহ্নসমূহ জ্বালিয়ে দেওয়া আল্লাহ জাহান্নামের উপর হারাম করে দিয়েছেন। অতঃপর তাদেরকে আগুনে বিদগ্ধ অবস্থায় জাহান্নাম থেকে বের করা হবে। তাদের ওপর ঢালা হবে সঞ্জীবনীর পানি। এর ফলে নিম্নদেশ থেকে তারা এমনভাবে সজীব হয়ে ওঠবে, প্লাবনে ভাসমান বীজ মাটি থেকে যেভাবে গজিয়ে ওঠে। এরপর আল্লাহ তাআলা বান্দাদের বিচার ফায়সালা সমাপন করবেন।
এদের মধ্য থেকে একজন অবশ্যই রয়ে যাবে, যে জাহান্নামের দিকে মুখ করে থাকবে। জাহান্নামীদের মধ্যে এই হচ্ছে সর্বশেষ জান্নাতে প্রবেশকারী। তখন সে বলবে, হে আমার রব! আমার চেহারাটা জাহান্নাম থেকে ফিরিয়ে দাও। কেননা, জাহান্নামের (দুর্গন্ধময়) হাওয়া আমাকে অস্থির করে তুলছে এবং এর শিখা আমাকে জ্বালাচ্ছে। তখন সে আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী তার কাছে প্রার্থনা করবে। তারপর আল্লাহ তাআলা বলবেন, তোমার প্রার্থনার জিনিস যদি তোমাকে প্রদান করা হয়, তবে অন্য কিছু চাবে না তো? তখন সে বলবে, না, তোমার ইজ্জতের কসম করে বলছি, তা ছাড়া আমি আর কিছু চাব না। তখন সে আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে বহু অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি দেবে। ফলে আল্লাহ তার চেহারা জাহান্নাম থেকে ফিরিয়ে দিবেন। যখন সে জান্নাতের দিকে মুখ ফিরাবে এবং জান্নাতকে দেখবে, সে আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী যতক্ষণ চুপ থাকার চুপ থেকে বলবে, হে আমার রব! আমাকে জান্নাতের দ্বার পর্যন্ত এগিয়ে দাও। আল্লাহ তখন তাকে বলবেন, তুমি কি বহু প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার দাওনি যে, তোমাকে যা দেওয়া হবে, তা ছাড়া আর কিছু তুমি কখনো চাবে না। সর্বনাশ তোমার, হে আদম সন্তান! কতই না প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী তুমি। তখন সে বলবে, হে আমার রব! (আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে থাকবে), আল্লাহ তখন তাকে বলবেন, আচ্ছা, এটি যদি তোমাকে দেওয়া হয়, আর কিছু তো চাবে না? সে বলবে, তোমার ইজ্জতের কসম! সেটি ছাড়া আমি আর কিছুই চাব না। তারপর আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার দেবে আর আল্লাহ তাকে জান্নাতের দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দেবেন। যখন সে জান্নাতের দরজার কাছে দাঁড়াবে, তখন তার জন্য জান্নাত উন্মুক্ত হয়ে যাবে, তখন সে এর মধ্যকার আরাম-আয়েশ ও ভোগ বিলাসের প্রাচুর্য দেখতে পাবে। তখন সে আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী কিছুক্ষণ নীরব থেকে পরে বলবে, হে আমার রব! আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দিন। আল্লাহ বলবেনঃ তুমি কি আমাকে এই প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার দাওনি যে, তোমাকে যা দেওয়া হবে, তা ছাড়া আর কিছু প্রার্থনা করবে না? সর্বনাশ তোমার! হে বনী আদম! কতই না প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী তুমি। তখন সে বলবে, হে আমার রব! আমি তোমার সৃষ্টিরাজির মধ্যে নিকৃষ্টতর হতে চাই না। তখন সে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে থাকবে। অবশেষে আল্লাহ এতে হেসে দিবেন। আল্লাহ তার অবস্থার প্রেক্ষিতে হেসে তাকে নির্দেশ দিবেন, তুমি জান্নাতে প্রবেশ কর। সে জান্নাতে প্রবেশ করলে আল্লাহ তাকে সম্বোধন করে বলবেন, এবার তুমি কী চাও? সে তখন রবের কাছে যাচনা করবে এবং আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করবে। পরিশেষে আল্লাহ স্বয়ং তাকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলবেন, এটা চাও, ওটা চাও। এতে তার আরয-আকাঙ্ক্ষা সমাপ্ত হলে আল্লাহ বলবেনঃ তোমাকে ওগুলো দেয়া হল, সাথে সাথে সে পরিমাণ আরো দেয়া হল।
আতা ইবনে ইয়াযীদ (রাহঃ) বলেনঃ আবু হুরায়রা (রাযিঃ) যখন হাদীসটির বর্ণনা দিচ্ছিলেন, তখন আবু সাঈদ খুদরী (রাযিঃ)ও তার সাথে ছিলেন। তিনি আবু হুরায়রা (রাযিঃ) এর এই বর্ণিত হাদীসের কোথাও দ্বিমত করলেন না।
বর্ণনার শেষাংশে এসে আবু হুরায়রা (রাযিঃ) যখন বর্ণনা করলেন, আল্লাহ তাআলা তাকে বললেনঃ ওসব তোমাকে দেওয়া হলো এবং আরো তার সমপরিমাণ তার সাথে দেওয়া হল, তখন আবু সাঈদ খুদরী (রাযিঃ) দ্বিমত করে বললেনঃ হে আবু হুরায়রা (রাযিঃ), রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তো বলেছেনঃ তার সাথে আরো দশগুণ। তখন আবু হুরায়রা (রাযিঃ) বলেনঃ আমি সংরক্ষণ করেছি এভাবে- ওসব তোমাকে দেওয়া হল, আর এর সাথে আরো একগুণ দেওয়া হল। আবু সাঈদ (রাযিঃ) বললেনঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছ থেকে এভাবে সংরক্ষণ করেছি- ওসবই তোমাকে দেওয়া হল এবং এর সাথে তোমাকে দেওয়া হল আরো দশগুণ। আবু হুরায়রা (রাযিঃ) বলেনঃ এই হচ্ছে জান্নাতে প্রবেশকারীদের মধ্যে সর্বশেষ ব্যক্তি।
بَابُ قَوْلِ اللَّهِ تَعَالَى: {وُجُوهٌ يَوْمَئِذٍ نَاضِرَةٌ إِلَى رَبِّهَا نَاظِرَةٌ} [القيامة: 23]
7437 - حَدَّثَنَا عَبْدُ العَزِيزِ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ سَعْدٍ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ عَطَاءِ بْنِ يَزِيدَ اللَّيْثِيِّ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ: أَنَّ النَّاسَ قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، هَلْ نَرَى رَبَّنَا يَوْمَ القِيَامَةِ؟ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «هَلْ تُضَارُّونَ فِي القَمَرِ لَيْلَةَ البَدْرِ؟» ، قَالُوا: لاَ يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ: «فَهَلْ تُضَارُّونَ فِي الشَّمْسِ، لَيْسَ دُونَهَا سَحَابٌ؟» ، قَالُوا: لاَ يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ: «فَإِنَّكُمْ تَرَوْنَهُ كَذَلِكَ» ، يَجْمَعُ اللَّهُ النَّاسَ يَوْمَ القِيَامَةِ، فَيَقُولُ: مَنْ كَانَ يَعْبُدُ شَيْئًا فَلْيَتْبَعْهُ، فَيَتْبَعُ مَنْ كَانَ يَعْبُدُ الشَّمْسَ الشَّمْسَ، وَيَتْبَعُ مَنْ كَانَ يَعْبُدُ القَمَرَ القَمَرَ، وَيَتْبَعُ مَنْ كَانَ يَعْبُدُ الطَّوَاغِيتَ الطَّوَاغِيتَ، وَتَبْقَى هَذِهِ الأُمَّةُ فِيهَا شَافِعُوهَا أَوْ مُنَافِقُوهَا - شَكَّ إِبْرَاهِيمُ -، فَيَأْتِيهِمُ اللَّهُ فَيَقُولُ: أَنَا رَبُّكُمْ، فَيَقُولُونَ: هَذَا مَكَانُنَا حَتَّى يَأْتِيَنَا رَبُّنَا، فَإِذَا جَاءَنَا رَبُّنَا عَرَفْنَاهُ، فَيَأْتِيهِمُ اللَّهُ فِي صُورَتِهِ الَّتِي يَعْرِفُونَ، فَيَقُولُ: أَنَا رَبُّكُمْ، فَيَقُولُونَ: أَنْتَ رَبُّنَا فَيَتْبَعُونَهُ، وَيُضْرَبُ الصِّرَاطُ بَيْنَ ظَهْرَيْ جَهَنَّمَ، فَأَكُونُ أَنَا وَأُمَّتِي أَوَّلَ مَنْ يُجِيزُهَا، وَلاَ يَتَكَلَّمُ يَوْمَئِذٍ إِلَّا الرُّسُلُ، وَدَعْوَى الرُّسُلِ يَوْمَئِذٍ: اللَّهُمَّ سَلِّمْ سَلِّمْ، وَفِي جَهَنَّمَ كَلاَلِيبُ مِثْلُ شَوْكِ السَّعْدَانِ، هَلْ رَأَيْتُمِ السَّعْدَانَ؟ "، قَالُوا: نَعَمْ يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ: " فَإِنَّهَا مِثْلُ شَوْكِ السَّعْدَانِ، غَيْرَ أَنَّهُ لاَ يَعْلَمُ مَا قَدْرُ عِظَمِهَا إِلَّا اللَّهُ، تَخْطَفُ النَّاسَ بِأَعْمَالِهِمْ، فَمِنْهُمُ المُوبَقُ بَقِيَ بِعَمَلِهِ - أَوِ المُوثَقُ بِعَمَلِهِ -، وَمِنْهُمُ المُخَرْدَلُ، أَوِ المُجَازَى، أَوْ نَحْوُهُ، ثُمَّ يَتَجَلَّى، حَتَّى إِذَا فَرَغَ اللَّهُ مِنَ القَضَاءِ بَيْنَ العِبَادِ، وَأَرَادَ أَنْ يُخْرِجَ بِرَحْمَتِهِ مَنْ أَرَادَ مِنْ أَهْلِ النَّارِ، أَمَرَ المَلاَئِكَةَ أَنْ يُخْرِجُوا مِنَ النَّارِ، مَنْ كَانَ لاَ يُشْرِكُ بِاللَّهِ شَيْئًا، مِمَّنْ أَرَادَ اللَّهُ أَنْ يَرْحَمَهُ، مِمَّنْ يَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، فَيَعْرِفُونَهُمْ فِي النَّارِ بِأَثَرِ السُّجُودِ، تَأْكُلُ النَّارُ ابْنَ آدَمَ إِلَّا أَثَرَ السُّجُودِ، حَرَّمَ اللَّهُ عَلَى النَّارِ أَنْ تَأْكُلَ أَثَرَ السُّجُودِ، فَيَخْرُجُونَ مِنَ النَّارِ، قَدْ امْتُحِشُوا، فَيُصَبُّ عَلَيْهِمْ مَاءُ الحَيَاةِ، فَيَنْبُتُونَ تَحْتَهُ كَمَا تَنْبُتُ الحِبَّةُ فِي حَمِيلِ السَّيْلِ، ثُمَّ يَفْرُغُ اللَّهُ مِنَ القَضَاءِ بَيْنَ العِبَادِ، وَيَبْقَى رَجُلٌ مِنْهُمْ مُقْبِلٌ بِوَجْهِهِ عَلَى النَّارِ، هُوَ آخِرُ أَهْلِ النَّارِ دُخُولًا الجَنَّةَ، فَيَقُولُ: أَيْ رَبِّ اصْرِفْ وَجْهِي عَنِ النَّارِ، فَإِنَّهُ قَدْ قَشَبَنِي رِيحُهَا، وَأَحْرَقَنِي ذَكَاؤُهَا، فَيَدْعُو اللَّهَ بِمَا شَاءَ أَنْ يَدْعُوَهُ، ثُمَّ يَقُولُ اللَّهُ: هَلْ عَسَيْتَ إِنْ أَعْطَيْتُكَ ذَلِكَ أَنْ تَسْأَلَنِي غَيْرَهُ؟ [ص:129]، فَيَقُولُ: لاَ، وَعِزَّتِكَ لاَ أَسْأَلُكَ غَيْرَهُ، وَيُعْطِي رَبَّهُ مِنْ عُهُودٍ وَمَوَاثِيقَ مَا شَاءَ، فَيَصْرِفُ اللَّهُ وَجْهَهُ عَنِ النَّارِ، فَإِذَا أَقْبَلَ عَلَى الجَنَّةِ وَرَآهَا سَكَتَ مَا شَاءَ اللَّهُ أَنْ يَسْكُتَ، ثُمَّ يَقُولُ: أَيْ رَبِّ، قَدِّمْنِي إِلَى بَابِ الجَنَّةِ، فَيَقُولُ اللَّهُ لَهُ: أَلَسْتَ قَدْ أَعْطَيْتَ عُهُودَكَ وَمَوَاثِيقَكَ أَنْ لاَ تَسْأَلَنِي غَيْرَ الَّذِي أُعْطِيتَ أَبَدًا؟ وَيْلَكَ يَا ابْنَ آدَمَ مَا أَغْدَرَكَ، فَيَقُولُ: أَيْ رَبِّ، وَيَدْعُو اللَّهَ، حَتَّى يَقُولَ: هَلْ عَسَيْتَ إِنْ أُعْطِيتَ ذَلِكَ أَنْ تَسْأَلَ غَيْرَهُ؟ فَيَقُولُ: لاَ وَعِزَّتِكَ، لاَ أَسْأَلُكَ غَيْرَهُ، وَيُعْطِي مَا شَاءَ مِنْ عُهُودٍ وَمَوَاثِيقَ، فَيُقَدِّمُهُ إِلَى بَابِ الجَنَّةِ، فَإِذَا قَامَ إِلَى بَابِ الجَنَّةِ، انْفَهَقَتْ لَهُ الجَنَّةُ، فَرَأَى مَا فِيهَا مِنَ الحَبْرَةِ وَالسُّرُورِ، فَيَسْكُتُ مَا شَاءَ اللَّهُ أَنْ يَسْكُتَ، ثُمَّ يَقُولُ: أَيْ رَبِّ، أَدْخِلْنِي الجَنَّةَ، فَيَقُولُ اللَّهُ: أَلَسْتَ قَدْ أَعْطَيْتَ عُهُودَكَ وَمَوَاثِيقَكَ أَنْ لاَ تَسْأَلَ غَيْرَ مَا أُعْطِيتَ؟ فَيَقُولُ: وَيْلَكَ يَا ابْنَ آدَمَ مَا أَغْدَرَكَ، فَيَقُولُ: أَيْ رَبِّ، لاَ أَكُونَنَّ أَشْقَى خَلْقِكَ فَلاَ يَزَالُ يَدْعُو حَتَّى يَضْحَكَ اللَّهُ مِنْهُ، فَإِذَا ضَحِكَ مِنْهُ، قَالَ لَهُ: ادْخُلِ الجَنَّةَ، فَإِذَا دَخَلَهَا قَالَ اللَّهُ لَهُ: تَمَنَّهْ، فَسَأَلَ رَبَّهُ وَتَمَنَّى، حَتَّى إِنَّ اللَّهَ لَيُذَكِّرُهُ، يَقُولُ كَذَا وَكَذَا، حَتَّى انْقَطَعَتْ بِهِ الأَمَانِيُّ، قَالَ: اللَّهُ ذَلِكَ لَكَ، وَمِثْلُهُ مَعَهُ "،
7438 - قَالَ عَطَاءُ بْنُ يَزِيدَ، وَأَبُو سَعِيدٍ الخُدْرِيُّ، مَعَ أَبِي هُرَيْرَةَ لاَ يَرُدُّ عَلَيْهِ مِنْ حَدِيثِهِ شَيْئًا حَتَّى إِذَا حَدَّثَ أَبُو هُرَيْرَةَ أَنَّ اللَّهَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى قَالَ: «ذَلِكَ لَكَ وَمِثْلُهُ مَعَهُ» ، قَالَ أَبُو سَعِيدٍ الخُدْرِيُّ: «وَعَشَرَةُ أَمْثَالِهِ مَعَهُ» ، يَا أَبَا هُرَيْرَةَ، قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ مَا حَفِظْتُ إِلَّا قَوْلَهُ: «ذَلِكَ لَكَ وَمِثْلُهُ مَعَهُ» ، قَالَ أَبُو سَعِيدٍ الخُدْرِيُّ أَشْهَدُ أَنِّي حَفِظْتُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَوْلَهُ: «ذَلِكَ لَكَ وَعَشَرَةُ أَمْثَالِهِ» قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ فَذَلِكَ: الرَّجُلُ آخِرُ أَهْلِ الجَنَّةِ دُخُولًا الجَنَّةَ
7438 - قَالَ عَطَاءُ بْنُ يَزِيدَ، وَأَبُو سَعِيدٍ الخُدْرِيُّ، مَعَ أَبِي هُرَيْرَةَ لاَ يَرُدُّ عَلَيْهِ مِنْ حَدِيثِهِ شَيْئًا حَتَّى إِذَا حَدَّثَ أَبُو هُرَيْرَةَ أَنَّ اللَّهَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى قَالَ: «ذَلِكَ لَكَ وَمِثْلُهُ مَعَهُ» ، قَالَ أَبُو سَعِيدٍ الخُدْرِيُّ: «وَعَشَرَةُ أَمْثَالِهِ مَعَهُ» ، يَا أَبَا هُرَيْرَةَ، قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ مَا حَفِظْتُ إِلَّا قَوْلَهُ: «ذَلِكَ لَكَ وَمِثْلُهُ مَعَهُ» ، قَالَ أَبُو سَعِيدٍ الخُدْرِيُّ أَشْهَدُ أَنِّي حَفِظْتُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَوْلَهُ: «ذَلِكَ لَكَ وَعَشَرَةُ أَمْثَالِهِ» قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ فَذَلِكَ: الرَّجُلُ آخِرُ أَهْلِ الجَنَّةِ دُخُولًا الجَنَّةَ
