আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৮২- কুরআন ও সুন্নাহকে দৃঢ়ভাবে গ্রহণ ও অনুসরণের বর্ণনা

হাদীস নং: ৬৮৬৬
আন্তর্জাতিক নং: ৭৩৬৯
৩১০২. মহান আল্লাহর বাণীঃ তারা নিজেদের মধ্যে পরামর্শের মাধ্যমে নিজেদের কর্ম সম্পাদন করে (৪০ঃ ৩৮)। এবং পরামর্শ করো তাঁদের সাথে (দ্বীনী) কর্মের ব্যাপারে।
পরামর্শ হলো স্থির সিদ্ধান্ত ও লক্ষ্য নির্ধারণের পূর্বে। যেমন, মহান আল্লাহর বাণীঃ এরপর যখন তুমি দৃঢ়সংকল্প হও, তখন আল্লাহর উপর ভরসা কর।
রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) যখন কোন বিষয়ে দৃঢ়সংকল্প হন, তখন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের মতের পরিপন্থী অগ্রসর হওয়ার ব্যাপারে কারো কোন অধিকার থাকে না। উহুদের যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) তাঁর সাহাবীদের সাথে এ পরামর্শ করেন যে, যুদ্ধ কি মদীনায় অবস্থান করেই চালাবেন, না বাইরে গিয়ে? সাহাবাগণ মদীনার বাইরে গিয়ে যুদ্ধ করাকে রায় দিলেন। রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) যুদ্ধের পোশাক পরিধান করলেন এবং যখন যুদ্ধের জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হলেন, তখন সাহাবাগণ আরয করলেন, মদীনায়ই অবস্থান করুন। কিন্তু তিনি দৃঢ়সংকল্প হওয়ার পর তাঁদের এই মতামতের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করলেন না। তিনি মন্তব্য করলেনঃ কোন নবীর সামরিক পোশাক পরিধান করার পর আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত তা খুলে ফেলা সমীচীন নয়।
তিনি আলী (রাযিঃ) ও উসামা (রাযিঃ) এর সাথে আয়িশার উপর যিনার মিথ্যা অপবাদ লাগানোর ব্যাপারে পরামর্শ করেন। তাদের কথা তিনি শোনেন। এরপর কুরআনের আয়াত অবতীর্ণ হয়। মিথ্যা অপবাদকারীদেরকে তিনি বেত্রাঘাত করেন। তাঁদের পরস্পর মতান্তরের দিকে লক্ষ্য না করে আল্লাহর নির্দেশানুসারেই সিদ্ধান্ত নেন।
রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) এর পরে ইমামগণ মুবাহ্ বিষয়াদিতে বিশ্বস্ত আলেমদের কাছে পরামর্শ চাইতেন, যেন তুলনামূলক সহজ পথ তারা গ্রহণ করতে পারেন। হ্যাঁ, যদি কিতাব কিংবা সুন্নাহে আলোচ্যবিষয়ে কোন পরিষ্কার ব্যাখ্যা পাওয়া যেত, তখন তারা রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) এর কথারই অনুসরণ করতেন, অন্য কারো কথার প্রতি ভ্রক্ষেপ করতেন না।
(নবী (ﷺ) এর অনুসরণেই) যাকাত যারা বন্ধ করে দিয়েছিল, আবু বকর (রাযিঃ) তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন। উমর (রাযিঃ) তখন বললেন, আপনি কিভাবে লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন, অথচ রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেনঃ আমি ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আদিষ্ট হয়েছি, যতক্ষণ না তারা বলবে ’লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’। তারা যখন ’লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ বলবে তখন তারা আমার কাছ থেকে তাদের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা লাভ করবে। তবে ইসলামের হকের ব্যাপার ভিন্নতর। আর সে ব্যাপারে তাদের হিসাব-নিকাশ আল্লাহর উপর। আবু বকর (রাযিঃ) বললেন, আল্লাহর কসম! আমি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ অবশ্যই করব, যারা রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) এর সুসংহত বিষয়ের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করে। পরিশেষে উমর (রাযিঃ) তাঁর সিদ্ধান্তই মেনে নিলেন। আবু বকর (রাযিঃ) এ ব্যাপারে (কারো সাথে) পরামর্শ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেননি। কেননা, যারা নামায ও যাকাতের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করে এবং ইসলামের নির্দেশাবলী পরিবর্তন ও বিকৃতি সাধনের অপচেষ্টা করে, তাদের বিরুদ্ধে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর সিদ্ধান্ত তাঁর সামনে বিদ্যমান ছিল। কেননা, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি নিজের দ্বীনকে পরিবর্তন করে তাকে হত্যা কর।
উমর (রাযিঃ) এর পরামর্শ পরিষদের সদস্যগণ কুরআন বিশেষজ্ঞ ছিলেন। চাই তারা বয়োবৃদ্ধ হোক কিংবা যুবক। আল্লাহর কিতাবের (সিদ্ধান্তের) প্রতি উমর (রাযিঃ) ছিলেন অধিক অবহিত।
৬৮৬৬। আল উওয়ায়সী (রাহঃ) ......... আয়েশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। যখন মিথ্যা অপবাদকারীরা তাঁর (আয়েশার) বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন (যিনার) অপবাদ রটিয়েছিল। তিনি বলেন, ওহী আসতে বিলম্ব হচ্ছিল, তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আলী ইবনে আবু তালিব ও উসামা ইবনে যায়দের কাছে কিছু পরামর্শ করার জন্য তাদেরকে ডাকলেন এবং তার সহধর্মিণী আয়েশা (রাযিঃ) কে পৃথক করে দেওয়া সম্পর্কে পরামর্শ চাইলেন। উসামা (রাযিঃ) নবী (ﷺ) এর পরিবারের পবিত্রতা সম্পর্কে তার যা জানা ছিল তা উল্লেখ করলেন। আর আলী (রাযিঃ) বললেন, আল্লাহ আপনার জন্য তো কোন সীমাবদ্ধতা আরোপ করেননি। মহিলা তো তিনি ব্যতীত আরও অনেক আছেন। আপনি বাদীটির কাছে জিজ্ঞাসা করুন, সে আপনাকে সত্য যা, তাই বলবে। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বারীরাকে ডাকলেন। তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি সন্দেহের কিছু অবলোকন করেছ? তিনি বললেন, আমি এ ছাড়া আর অধিক কিছুই জানিনা যে, আয়েশা (রাযিঃ) হচ্ছে অল্পবয়স্কা মেয়ে। তিনি নিজের ঘরের আটা পিষে ঘুমিয়ে পড়েন, এমতাবস্থায় বকরী এসে তা খেয়ে ফেলে। এরপর নবী (ﷺ) মিম্বরে দাঁড়িয়ে বললেনঃ হে মুসলিমগণ! যে ব্যক্তি আমার পরিবারের অপবাদ রটিয়ে আমাকে কষ্ট দিয়েছে তার প্রতিকার করতে আমাকে সাহায্য করার মত কেউ আছ কি? আল্লাহর কসম! আমি আমার পরিবার সম্পর্কে ভালো ছাড়া মন্দ কিছুই জানিনা এবং তিনি আয়েশা (রাযিঃ) এর পবিত্রতার কথা বর্ণনা করলেন।
بَابُ قَوْلِ اللَّهِ تَعَالَى: {وَأَمْرُهُمْ شُورَى بَيْنَهُمْ} [الشورى: 38] ، {وَشَاوِرْهُمْ فِي الأَمْرِ} [آل عمران: 159] «وَأَنَّ المُشَاوَرَةَ قَبْلَ العَزْمِ وَالتَّبَيُّنِ لِقَوْلِهِ» : {فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ} [آل عمران: 159] «فَإِذَا عَزَمَ الرَّسُولُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمْ يَكُنْ لِبَشَرٍ التَّقَدُّمُ عَلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ»وَشَاوَرَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَصْحَابَهُ يَوْمَ أُحُدٍ فِي المُقَامِ وَالخُرُوجِ، فَرَأَوْا لَهُ الخُرُوجَ، فَلَمَّا لَبِسَ لَأْمَتَهُ وَعَزَمَ قَالُوا: أَقِمْ، فَلَمْ يَمِلْ إِلَيْهِمْ بَعْدَ العَزْمِ، وَقَالَ: «لاَ يَنْبَغِي لِنَبِيٍّ يَلْبَسُ لَأْمَتَهُ فَيَضَعُهَا حَتَّى يَحْكُمَ اللَّهُ» وَشَاوَرَ عَلِيًّا، وَأُسَامَةَ فِيمَا رَمَى بِهِ أَهْلُ الإِفْكِ عَائِشَةَ فَسَمِعَ مِنْهُمَا حَتَّى [ص:113] نَزَلَ القُرْآنُ، فَجَلَدَ الرَّامِينَ، وَلَمْ يَلْتَفِتْ إِلَى تَنَازُعِهِمْ، وَلَكِنْ حَكَمَ بِمَا أَمَرَهُ اللَّهُ وَكَانَتِ الأَئِمَّةُ بَعْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَسْتَشِيرُونَ الأُمَنَاءَ مِنْ أَهْلِ العِلْمِ فِي الأُمُورِ المُبَاحَةِ لِيَأْخُذُوا بِأَسْهَلِهَا، فَإِذَا وَضَحَ الكِتَابُ أَوِ السُّنَّةُ لَمْ يَتَعَدَّوْهُ إِلَى غَيْرِهِ، اقْتِدَاءً بِالنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَرَأَى أَبُو بَكْرٍ قِتَالَ مَنْ مَنَعَ الزَّكَاةَ، فَقَالَ عُمَرُ: كَيْفَ تُقَاتِلُ النَّاسَ وَقَدْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " أُمِرْتُ أَنْ أُقَاتِلَ النَّاسَ حَتَّى يَقُولُوا لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، فَإِذَا قَالُوا: لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ عَصَمُوا مِنِّي دِمَاءَهُمْ وَأَمْوَالَهُمْ إِلَّا بِحَقِّهَا وَحِسَابُهُمْ عَلَى اللَّهِ " فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ: وَاللَّهِ لَأُقَاتِلَنَّ مَنْ فَرَّقَ بَيْنَ مَا جَمَعَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «ثُمَّ تَابَعَهُ بَعْدُ عُمَرُ فَلَمْ يَلْتَفِتْ أَبُو بَكْرٍ إِلَى مَشُورَةٍ إِذْ كَانَ عِنْدَهُ حُكْمُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الَّذِينَ فَرَّقُوا بَيْنَ الصَّلاَةِ وَالزَّكَاةِ وَأَرَادُوا تَبْدِيلَ الدِّينِ وَأَحْكَامِهِ» وَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ بَدَّلَ دِينَهُ فَاقْتُلُوهُ» وَكَانَ القُرَّاءُ أَصْحَابَ مَشُورَةِ عُمَرَ كُهُولًا كَانُوا أَوْ شُبَّانًا، وَكَانَ وَقَّافًا عِنْدَ كِتَابِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ
7369 - حَدَّثَنَا الأُوَيْسِيُّ عَبْدُ العَزِيزِ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ سَعْدٍ، عَنْ صَالِحٍ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، حَدَّثَنِي عُرْوَةُ، وَابْنُ المُسَيِّبِ، وَعَلْقَمَةُ بْنُ وَقَّاصٍ، وَعُبَيْدُ اللَّهِ، عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، حِينَ قَالَ لَهَا أَهْلُ الإِفْكِ مَا قَالُوا، قَالَتْ: وَدَعَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلِيَّ بْنَ أَبِي طَالِبٍ، وَأُسَامَةَ بْنَ زَيْدٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ، حِينَ اسْتَلْبَثَ الوَحْيُ، يَسْأَلُهُمَا وَهُوَ يَسْتَشِيرُهُمَا فِي فِرَاقِ أَهْلِهِ، فَأَمَّا أُسَامَةُ: فَأَشَارَ بِالَّذِي يَعْلَمُ مِنْ بَرَاءَةِ أَهْلِهِ، وَأَمَّا عَلِيٌّ فَقَالَ: لَمْ يُضَيِّقِ اللَّهُ عَلَيْكَ، وَالنِّسَاءُ سِوَاهَا كَثِيرٌ، وَسَلِ الجَارِيَةَ تَصْدُقْكَ. فَقَالَ: «هَلْ رَأَيْتِ مِنْ شَيْءٍ يَرِيبُكِ؟» ، قَالَتْ: مَا رَأَيْتُ أَمْرًا أَكْثَرَ مِنْ أَنَّهَا جَارِيَةٌ حَدِيثَةُ السِّنِّ، تَنَامُ عَنْ عَجِينِ أَهْلِهَا، فَتَأْتِي الدَّاجِنُ فَتَأْكُلُهُ، فَقَامَ عَلَى المِنْبَرِ فَقَالَ: «يَا مَعْشَرَ المُسْلِمِينَ، مَنْ يَعْذِرُنِي مِنْ رَجُلٍ بَلَغَنِي أَذَاهُ فِي أَهْلِي، وَاللَّهِ مَا عَلِمْتُ عَلَى أَهْلِي إِلَّا خَيْرًا» فَذَكَرَ بَرَاءَةَ عَائِشَةَ،
وَقَالَ أَبُو أُسَامَةَ، عَنْ هِشَامٍ
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)
সহীহ বুখারী - হাদীস নং ৬৮৬৬ | মুসলিম বাংলা