আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৮২- কুরআন ও সুন্নাহকে দৃঢ়ভাবে গ্রহণ ও অনুসরণের বর্ণনা

হাদীস নং: ৬৭৯৬
আন্তর্জাতিক নং: ৭২৯৪
৩০৭৭. অধিক প্রশ্ন করা এবং অনর্থক কষ্ট করা নিন্দনীয়। এবং আল্লাহ তাআলার বাণীঃ তোমরা সেসব বিষয়ে প্রশ্ন করো না, যা প্রকাশিত হলে তোমরা দুঃখিত হবে (৫ঃ ১০১)।
৬৭৯৬। আবুল ইয়ামান (রাহঃ) ও মাহমুদ ইবনে গায়লান (রাহঃ) ......... আনাস ইবনে মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। দ্বিপ্রহরের পর নবী (ﷺ) বেরিয়ে আসলেন এবং যুহরের নামায আদায় করলেন। সালাম ফিরানোর পর তিনি মিম্বরে উঠে দাঁড়ালেন এবং কিয়ামত সম্পর্কে আলোচনা করলেন। তিনি উল্লেখ করলেন যে, কিয়ামতের পূর্বে অনেক বড় বড় ঘটনা সংঘটিত হবে। তারপর তিনি বললেনঃ কেউ যদি আমাকে কোন বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতে ভাল মনে করে, তাহলে সে তা করতে পারবে। আল্লাহর শপথ! আমি এখানে অবস্থান করা পর্যন্ত তোমরা আমাকে যে বিষয়েই জিজ্ঞাসা করবে, আমি তা তোমাদের অবহিত করব।
আনাস (রাযিঃ) বলেন, এতে লোকেরা খুব কাঁদতে থাকল। আর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) খুব বলতে থাকলেন। তোমরা আমার কাছে প্রশ্ন কর। আনাস (রাযিঃ) বলেন, তখন এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার আশ্রয়স্থল কোথায়? তিনি বললেনঃ জাহান্নাম। তারপর আব্দুল্লাহ ইবনে হুযাফা (রাযিঃ) দাঁড়িয়ে বললেনঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার পিতা কে? তিনি বললেনঃ তোমার পিতা হুযাফা। আনাস (রাযিঃ) বলেনঃ তারপর তিনি বার বার বলতে থাকলেনঃ তোমরা আমার কাছে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা কর। তোমরা আমার কাছে প্রশ্ন কর। এতে উমর (রাযিঃ) হাঁটু গেড়ে বসে পড়লেন এবং বললেন, আমরা আল্লাহকে রব হিসাবে মেনে, ইসলামকে দ্বীন হিসাবে গ্রহণ করে এবং মুহাম্মাদ (ﷺ) কে রাসুল হিসাবে বিশ্বাস করে সন্তুষ্ট আছি।
আনাস (রাযিঃ) বলেন, উমর (রাযিঃ) যখন এ কথা বললেন তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নীরব হয়ে গেলেন। তারপর নবী (ﷺ) বললেনঃ উত্তম! যে সত্তার হাতে আমার প্রাণ তাঁর কসম করে বলছি, এইমাত্র আমি যখন নামাযে ছিলাম তখন এই দেওয়ালের প্রস্থে জান্নাত ও জাহান্নাম আমার সন্মুখে পেশ করা হয়েছিল। আজকের ন্যায় এমন কল্যাণ ও অকল্যাণ আমি আর দেখিনি।
بَابُ مَا يُكْرَهُ مِنْ كَثْرَةِ السُّؤَالِ وَتَكَلُّفِ مَا لاَ يَعْنِيهِ وَقَوْلُهُ تَعَالَى: {لاَ تَسْأَلُوا عَنْ أَشْيَاءَ إِنْ تُبْدَ لَكُمْ تَسُؤْكُمْ} [المائدة: 101]
7294 - حَدَّثَنَا أَبُو اليَمَانِ، أَخْبَرَنَا شُعَيْبٌ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، ح وحَدَّثَنِي مَحْمُودٌ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ، أَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، أَخْبَرَنِي أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ [ص:96] خَرَجَ حِينَ زَاغَتِ الشَّمْسُ فَصَلَّى الظُّهْرَ، فَلَمَّا سَلَّمَ قَامَ عَلَى المِنْبَرِ، فَذَكَرَ السَّاعَةَ، وَذَكَرَ أَنَّ بَيْنَ يَدَيْهَا أُمُورًا عِظَامًا، ثُمَّ قَالَ: «مَنْ أَحَبَّ أَنْ يَسْأَلَ عَنْ شَيْءٍ فَلْيَسْأَلْ عَنْهُ، فَوَاللَّهِ لاَ تَسْأَلُونِي عَنْ شَيْءٍ إِلَّا أَخْبَرْتُكُمْ بِهِ مَا دُمْتُ فِي مَقَامِي هَذَا» ، قَالَ أَنَسٌ: فَأَكْثَرَ النَّاسُ البُكَاءَ، وَأَكْثَرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يَقُولَ: «سَلُونِي» ، فَقَالَ أَنَسٌ: فَقَامَ إِلَيْهِ رَجُلٌ فَقَالَ: أَيْنَ مَدْخَلِي يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: «النَّارُ» ، فَقَامَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ حُذَافَةَ فَقَالَ: مَنْ أَبِي يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: «أَبُوكَ حُذَافَةُ» ، قَالَ: ثُمَّ أَكْثَرَ أَنْ يَقُولَ: «سَلُونِي سَلُونِي» ، فَبَرَكَ عُمَرُ عَلَى رُكْبَتَيْهِ فَقَالَ: رَضِينَا بِاللَّهِ رَبًّا، وَبِالإِسْلاَمِ دِينًا، وَبِمُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَسُولًا، قَالَ: فَسَكَتَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِينَ قَالَ عُمَرُ ذَلِكَ، ثُمَّ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَقَدْ عُرِضَتْ عَلَيَّ الجَنَّةُ وَالنَّارُ آنِفًا، فِي عُرْضِ هَذَا الحَائِطِ، وَأَنَا أُصَلِّي، فَلَمْ أَرَ كَاليَوْمِ فِي الخَيْرِ وَالشَّرِّ»

হাদীসের ব্যাখ্যা:

তাঁর এবং জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝখান থেকে সমস্ত অন্তরাল সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ফলে জান্নাতের নিআমতরাশি ও জাহান্নামের শাস্তিসমূহ সরাসরি দেখতে পাচ্ছিলেন, যেমনটা মি'রাজের ঘটনার পর তাঁর সম্মুখ থেকে সব আড়াল সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল, যদ্দরুন তিনি সরাসরি বায়তুল মাকদিস দেখতে পেয়েছিলেন এবং তা দেখে দেখে সকলের সামনে তার বিবরণ দিয়েছিলেন।

তিনি একাধিকবার এভাবে জান্নাত ও জাহান্নামের দৃশ্য দেখতে পেয়েছেন। বিভিন্ন হাদীছে তা বর্ণিত আছে। যাহোক তিনি জান্নাত ও জাহান্নামের দৃশ্য দেখে সাহাবায়ে কেরামের সামনে অভিব্যক্তি পেশ করলেন فلم أر كاليوم في الخير والشر (এদিনের মত ভালো ও মন্দ কখনও দেখিনি)। অর্থাৎ জান্নাতের যে নি'আমতরাজি আজ আমি দেখতে পেয়েছি, এমন ভালো কিছু আমি আর কখনও দেখিনি। এমনিভাবে জাহান্নামে যেসব শাস্তির ব্যবস্থা দেখেছি, সেরকম মন্দ কিছুও আর কখনও দেখিনি।

এখানে হাদীসটি সংক্ষিপ্ত আকারে আনা হয়েছে। অন্যান্য বর্ণনায় আরো আছে, তারপর তিনি এই বলে তাদের উপদেশ দিলেন ولو تعلمون ما أعلم ، لضحكتم قليلا ، ولبكيتم كثيرا (তোমরা যদি জানতে যা আমি জানি, তবে অবশ্যই তোমরা কম হাসতে এবং বেশি কাঁদতে)। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা পাপীদের জন্য কী কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা রেখেছেন, কী কঠিন কিয়ামতের বিভীষিকা এবং কত কঠিন হাশরের ময়ানের পরিস্থিতি, তা আমি যেমনটা জানি তেমনি তোমরাও যদি জানতে, তবে অবশ্যই কম হাসতে এবং বেশি কাঁদতে। এক বর্ণনায় এরপর আছে ولما ساغ لكم الطعام ولا الشراب، ولما نمتم على الفرش، ولهجرتم النساء ولخرجتم إلى الصعدات تجأرون ‘তোমাদের কাছে পানাহার ভালো লাগত না। তোমরা বিছানায় ঘুমাতে পারতে না। তোমরা নারীদের থেকে দূরে থাকতে। তোমরা চিৎকার করতে করতে রাস্তাঘাটে বের হয়ে পড়তে।

আরো আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদের উপর এরচে' কঠিন কোনও দিন আর আসেনি। তারা তাদের মাথা ঢেকে ফেলেন এবং ডুকরে কাঁদতে থাকেন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. ওয়াজ-নসীহতে হাসানো নয়; বরং কাদানোই প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তরিকা।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন
সহীহ বুখারী - হাদীস নং ৬৭৯৬ | মুসলিম বাংলা