আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৭৯- আহকাম (রাষ্ট্রনীতি) অধ্যায়

হাদীস নং: ৬৭২৪
আন্তর্জাতিক নং: ৭২১৭
৩০৫৫. খলীফা বানানো।
৬৭২৪। ইয়াহয়া ইবনে ইয়াহয়া (রাহঃ) ......... কাসিম ইবনে মুহাম্মাদ (রাহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আয়েশা (রাযিঃ) একদিন বললেন, হায়! আমার মাথা। (এ কথা শুনে) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ আমার জীবদ্দশায় যদি তা ঘটে, তাহলে আমি তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করব এবং তোমার জন্য দোয়া করব। আয়েশা (রাযিঃ) বললেনঃ হায় সর্বনাশ! আল্লাহর শপথ! আমার মনে হয় আপনি আমার মৃত্যু পছন্দ করছেন। আর যদি এমনটি হয়, তাহলে আপনি সেদিনের শেষে অপর কোন স্ত্রীর সাথে বাসর যাপন করবেন। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ আমি বলছি আক্ষেপ আমার মাথা ব্যথা। অথচ আমি সংকল্প করেছি কিংবা রাবী বলেছেন, ইচ্ছা করেছি যে, আবু বকর ও তার পুত্রের কাছে লোক পাঠাব এবং (তার খিলাফতের) অসিয়্যাত করে যাব, যাতে এ ব্যাপারে কেউ কিছু বলতে না পারে। কিংবা কোন প্রত্যাশী এ ব্যাপারে কোনরূপ প্রত্যাশা করতে না পারে। কিন্তু (ভেবে চিন্তে) পরে বললাম, (আবু বকরের পরিবর্তে অন্য কারো খলীফা হওয়ার বিষয়টি) আল্লাহ তা অস্বীকার করবেন এবং মুমিনরাও তা প্রত্যাখ্যান করবে কিংবা বলেছিলেন, আল্লাহ প্রত্যাখ্যান করবেন এবং মু’মিনরা তা অস্বীকার করবে।
باب الاِسْتِخْلاَفِ
7217 - حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ يَحْيَى، أَخْبَرَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ بِلاَلٍ، عَنْ يَحْيَى بْنِ سَعِيدٍ، سَمِعْتُ القَاسِمَ بْنَ مُحَمَّدٍ، قَالَ: قَالَتْ عَائِشَةُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا: وَارَأْسَاهْ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «ذَاكِ لَوْ كَانَ وَأَنَا حَيٌّ فَأَسْتَغْفِرُ لَكِ وَأَدْعُو لَكِ» ، فَقَالَتْ عَائِشَةُ: وَا ثُكْلِيَاهْ، وَاللَّهِ إِنِّي لَأَظُنُّكَ تُحِبُّ مَوْتِي، وَلَوْ كَانَ ذَاكَ، لَظَلَلْتَ آخِرَ يَوْمِكَ مُعَرِّسًا بِبَعْضِ أَزْوَاجِكَ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " بَلْ أَنَا وَارَأْسَاهْ، لَقَدْ هَمَمْتُ - أَوْ أَرَدْتُ - أَنْ أُرْسِلَ إِلَى أَبِي بَكْرٍ وَابْنِهِ فَأَعْهَدَ، أَنْ يَقُولَ: القَائِلُونَ أَوْ يَتَمَنَّى المُتَمَنُّونَ [ص:81]، ثُمَّ قُلْتُ: يَأْبَى اللَّهُ وَيَدْفَعُ المُؤْمِنُونَ، - أَوْ يَدْفَعُ اللَّهُ وَيَأْبَى المُؤْمِنُونَ - "

হাদীসের ব্যাখ্যা:

কাসিম ইবন মুহাম্মাদ রহ. এ হাদীছটি তাঁর ফুফু উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি. থেকে বর্ণনা করেছেন। কাসিম হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাযি.-এর নাতি। তাঁর পিতার নাম মুহাম্মাদ ইবন আবূ বকর। মুহাম্মাদ হিজরী ১০ম সনে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি হযরত আলী রাযি.-এর পক্ষ থেকে মিশরের গভর্নর ছিলেন। হিজরী ৩৮ সনে মিশরেই নিহত হন। তখন তাঁর পুত্র কাসিম একজন শিশু। ফুফু আয়েশা সিদ্দীকা রাযি. তাঁকে লালন-পালন করেন। তিনি ফুফুর নিকট থেকে কুরআন-সুন্নাহর বিপুল জ্ঞান অর্জন করেন। আরও বহু সাহাবী থেকে তিনি শিক্ষাগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ছিলেন যুগের শ্রেষ্ঠ ফকীহ।

কোনও কোনও বর্ণনায় আছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তির জানাযা ও দাফন-কাফন শেষ করার পর আল-বাকী' কবরস্থান থেকে ঘরে ফিরে আসেন। তখন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি.-এর প্রচণ্ড মাথাব্যথা করছিল। তিনি وَا رَأْسَاه (মাথাটা গেল) বলে যন্ত্রণার কথা প্রকাশ করছিলেন। তিনি এভাবে কেন মাথাব্যথার কথা প্রকাশ করছেন, সেজন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে নিষেধ বা তিরস্কার করেননি; উল্টো রসিকতা করেছেন যে, আমার আগে তুমি মারা গেলে তো ভালোই। কারণ তখন আমি তোমার জন্য আল্লাহর কাছে ইস্তিগফার করব ও দু'আ করব। এমনকি তিনি নিজ মাথাব্যথার কথাও প্রকাশ করেছেন। এর দ্বারা বোঝা যায়, অসুখ-বিসুখের কষ্টে উহ্-আহ্ করা বা অন্য কোনও ভাষায় সে কষ্টের কথা ব্যক্ত করা দূষণীয় নয়। এটা মানুষের স্বভাব যে, মাথা ব্যথা হলে বলে- উহ্, মাথাটা গেল বা মাথাব্যথায় মরে গেলাম। এমনিভাবে যে-কোনও অঙ্গে কঠিন ব্যথা-বেদনা হলে স্বভাবগতভাবেই মুখ দিয়ে তা প্রকাশ হয়ে যায়। এটা শরী'আতবিরোধী নয়। শরী'আতবিরোধী হয় তখনই, যখন সে কষ্টের কারণে আল্লাহ সম্পর্কে বা তাকদীরের ফয়সালা সম্পর্কে অনুচিত কোনও কথা বলা হয়। এমনিভাবে ব্যথা-বেদনায় অস্থিরতার প্রকাশে যদি সীমালঙ্ঘন হয় বা নিজ অস্থিরতা দ্বারা অন্যকেও অস্থির করে ফেলা হয়, তবে তাও সমীচীন নয়।

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্ভবত ওহী দ্বারা জানতে পেরেছিলেন যে, হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি.-এর এ মাথাব্যথা সাময়িক। এটা ভালো হয়ে যাবে। বরং তিনি নিজেই আগে ইন্তিকাল করবেন। তাই তিনি হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি. -এর রসিকতায় হেসে দেন এবং বলে ওঠেন-
!بل أنا، وا رَأْساه (বরং আমি বলছি, হায়রে আমার মাথাব্যথা)! অর্থাৎ তুমি নিজ মাথাব্যথার কথা ছেড়ে দাও। তুমি আমার দিকে লক্ষ করো। আমারও প্রচণ্ড মাথাব্যথা। আর আমার এ মাথাব্যথা ভালো হওয়ার নয়। এটা আমার অন্তিম রোগের সূচনা। উল্লেখ্য, এর পরেই তাঁর জ্বর শুরু হয়ে যায়। তাঁর অসুস্থতা বাড়তেই থাকে। পরিশেষে এ অসুস্থতার ভেতরই তাঁর ইন্তিকাল হয়ে যায়।

হাদীছটিতে হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি.-এর খেলাফতের প্রতিও ইঙ্গিত আছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সরাসরিভাবে তাঁকে খলীফা বানিয়ে যাননি বটে, কিন্তু এটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, আল্লাহ তা'আলার ফয়সালা সেটাই এবং মুমিনগণও আবু বকর সিদ্দীক রাযি. ছাড়া আর কাউকে খলীফা মানবে না। বাস্তবে তাই হয়েছিল।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

রোগ-ব্যাধিতে উহ-আহ্ করা ও কষ্টের কথা প্রকাশ করা দোষের নয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)
সহীহ বুখারী - হাদীস নং ৬৭২৪ | মুসলিম বাংলা