আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ
৯- আযান-ইকামতের অধ্যায়
হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ৭০৭
৪৫৭. শিশুর কান্নাকাটির কারণে নামায সংক্ষেপ করা।
৬৭২। ইবরাহীম ইবনে মুসা (রাহঃ) ......... আবু কাতাদা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেন, আমি অনেক সময় দীর্ঘ করে নামায আদায়ের ইচ্ছা নিয়ে দাঁড়াই। পরে শিশুর কান্নাকাটি শুনে নামায সংক্ষেপ করি। কারণ আমি পছন্দ করি না যে, শিশুর মাকে কষ্টে ফেলি।
বিশর ইবনে বকর, বাকিয়্যা ও ইবনে মোবারক আওযায়ী (রাহঃ) থেকে হাদীস বর্ণনায় ওয়ালীদ ইবনে মুসলিম (রাহঃ) এর অনুসরণ করেছেন।
বিশর ইবনে বকর, বাকিয়্যা ও ইবনে মোবারক আওযায়ী (রাহঃ) থেকে হাদীস বর্ণনায় ওয়ালীদ ইবনে মুসলিম (রাহঃ) এর অনুসরণ করেছেন।
হাদীসের ব্যাখ্যা:
আপন উম্মতের প্রতি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরদ ও মমতা ছিল অপরীসীম। কুরআন মাজীদেও তাঁর সে মায়া-মমতার কথা জানানো হয়েছে। যেমন ইরশাদ-
لَقَدْ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مِنْ أَنْفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُمْ بِالْمُؤْمِنِينَ رَءُوفٌ رَحِيمٌ
‘(হে মানুষ!) তোমাদের নিজেদের মধ্য থেকেই তোমাদের কাছে এক রাসূল এসেছে। তোমাদের যে-কোনও কষ্ট তার জন্য অতি পীড়াদায়ক। সে সতত তোমাদের কল্যাণকামী, মুমিনদের প্রতি অত্যন্ত সদয়, পরম দয়ালু। সূরা তাওবা (৯), আয়াত ১২৮
আলোচ্য হাদীছেও তাঁর সে মায়া-মমতার ছবি ফুটে উঠেছে। নামায ছিল তাঁর সর্বাপেক্ষা প্রিয় ইবাদত। এক হাদীছে ইরশাদ হয়েছে-
جُعِلَتْ قُرةُ عَيْنِي فِي الصَّلاة
‘নামাযের ভেতর রাখা হয়েছে আমার নয়নপ্রীতি।[১]
অর্থাৎ নামাযে আমি মনে শান্তি পাই। এ শান্তিদায়ী নামায তিনি সাধারণত একটা পরিমাপ অনুযায়ী লম্বা করতেন। এতদ্সত্ত্বেও তিনি নামাযের ভেতর শিশুর কান্না শুনলে নামায সেরকম লম্বা করতেন না; বরং সংক্ষেপ করে ফেলতেন। কেননা সচরাচর যেভাবে পড়ে থাকেন সেরকম লম্বা করলে শিশুটির মা পেরেশান হবে এবং অস্থির হয়ে যাবে। ফলে সে মনোযোগ দিয়ে নামায পড়তে পারবে না। আর এভাবে শিশুর মাকে কষ্ট দেওয়া তাঁর পসন্দ ছিল না।
এর দ্বারা আমরা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আরও একটি দিক জানতে পারি। তা হচ্ছে শিশুদের প্রতি তাঁর স্নেহ-বাৎসল্য, মাতৃত্বের মর্যাদাবোধ এবং শিশুর প্রতি মাতৃমমতার মূল্যায়ন। জামাতের নামাযে তো আরও কত মুসল্লী থাকে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পেছনে যে সময়টুকু নামাযে কাটানো হয়, প্রত্যেক সাহাবীর কাছে তা ছিল জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। তাঁর সঙ্গে তাদের নামায আদায়ের আগ্রহ-উদ্দীপনা সম্পর্কে তিনি সম্পূর্ণ সচেতন ছিলেন। তা সত্ত্বেও তিনি একা এক মায়ের আবেগ-অনুভূতির প্রতি সম্মান দেখিয়ে সকলের সম্মিলিত নামায় সংক্ষেপ করে ফেলতেন। সাহাবীগণকেও তিনি এ মানসিকতার উপর গড়ে তুলেছিলেন, যে কারণে তাঁর নামায সংক্ষেপ করাতে কারও কোনও আপত্তি হয়নি। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পাশাপাশি তাঁরাও আবেগের কুরবানী দিয়েছেন। নিঃসন্দেহে সংক্ষিপ্ত নামাযে সন্তুষ্ট থাকাটা তাঁদের পক্ষ থেকে আবেগের কুরবানীই বটে এবং এটা কান্নারত শিশু ও তার উদ্বিগ্ন মায়ের প্রতি একপ্রকার সহমর্মিতা প্রকাশও বৈকি। অবশ্য এটা ভালোভাবে বুঝতে হলে ইবাদত-বন্দেগীর হাকীকত, নামাযের মর্যাদা এবং নামায ও অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগীতে সাহাবায়ে কেরামের আগ্রহ ও আন্তরিকতার গভীরতা সম্পর্কে ধারণা থাকা জরুরি। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সে ধারণা লাভের তাওফীক দান করুন ।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা শিশুদের প্রতি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্নেহ- বাৎসল্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
খ. এর দ্বারা আমরা মাতৃমমতার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের শিক্ষা পাই।
গ. এর দ্বারা আরও জানা যায় যে, মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামাতে শামিল হওয়া জায়েয আছে, যদিও তাদের জন্য ঘরেই নামায পড়া উত্তম।
ঘ. এ হাদীছ দ্বারা বোঝা যায় প্রয়োজনে নামাযের ভেতর লম্বা ও সংক্ষেপের নিয়ত পরিবর্তন করা যেতে পারে।
ঙ. এ হাদীছের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হচ্ছে নারী-পুরুষ ও শিশু-বয়স্ক নির্বিশেষে কাউকেই কোনওভাবে কষ্ট দেওয়া উচিত নয়।
[১] মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১২২৯৩; সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ৩৯৩৯; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৩৪৫৪; মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীছ নং ৭৯৩৯ তাবারানী, আল-মু'জামুল কাবীর, হাদীছ নং ১০১২; আল-মু'জামুস সগীর, হাদীছ নং ৭৪১
لَقَدْ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مِنْ أَنْفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُمْ بِالْمُؤْمِنِينَ رَءُوفٌ رَحِيمٌ
‘(হে মানুষ!) তোমাদের নিজেদের মধ্য থেকেই তোমাদের কাছে এক রাসূল এসেছে। তোমাদের যে-কোনও কষ্ট তার জন্য অতি পীড়াদায়ক। সে সতত তোমাদের কল্যাণকামী, মুমিনদের প্রতি অত্যন্ত সদয়, পরম দয়ালু। সূরা তাওবা (৯), আয়াত ১২৮
আলোচ্য হাদীছেও তাঁর সে মায়া-মমতার ছবি ফুটে উঠেছে। নামায ছিল তাঁর সর্বাপেক্ষা প্রিয় ইবাদত। এক হাদীছে ইরশাদ হয়েছে-
جُعِلَتْ قُرةُ عَيْنِي فِي الصَّلاة
‘নামাযের ভেতর রাখা হয়েছে আমার নয়নপ্রীতি।[১]
অর্থাৎ নামাযে আমি মনে শান্তি পাই। এ শান্তিদায়ী নামায তিনি সাধারণত একটা পরিমাপ অনুযায়ী লম্বা করতেন। এতদ্সত্ত্বেও তিনি নামাযের ভেতর শিশুর কান্না শুনলে নামায সেরকম লম্বা করতেন না; বরং সংক্ষেপ করে ফেলতেন। কেননা সচরাচর যেভাবে পড়ে থাকেন সেরকম লম্বা করলে শিশুটির মা পেরেশান হবে এবং অস্থির হয়ে যাবে। ফলে সে মনোযোগ দিয়ে নামায পড়তে পারবে না। আর এভাবে শিশুর মাকে কষ্ট দেওয়া তাঁর পসন্দ ছিল না।
এর দ্বারা আমরা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আরও একটি দিক জানতে পারি। তা হচ্ছে শিশুদের প্রতি তাঁর স্নেহ-বাৎসল্য, মাতৃত্বের মর্যাদাবোধ এবং শিশুর প্রতি মাতৃমমতার মূল্যায়ন। জামাতের নামাযে তো আরও কত মুসল্লী থাকে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পেছনে যে সময়টুকু নামাযে কাটানো হয়, প্রত্যেক সাহাবীর কাছে তা ছিল জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। তাঁর সঙ্গে তাদের নামায আদায়ের আগ্রহ-উদ্দীপনা সম্পর্কে তিনি সম্পূর্ণ সচেতন ছিলেন। তা সত্ত্বেও তিনি একা এক মায়ের আবেগ-অনুভূতির প্রতি সম্মান দেখিয়ে সকলের সম্মিলিত নামায় সংক্ষেপ করে ফেলতেন। সাহাবীগণকেও তিনি এ মানসিকতার উপর গড়ে তুলেছিলেন, যে কারণে তাঁর নামায সংক্ষেপ করাতে কারও কোনও আপত্তি হয়নি। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পাশাপাশি তাঁরাও আবেগের কুরবানী দিয়েছেন। নিঃসন্দেহে সংক্ষিপ্ত নামাযে সন্তুষ্ট থাকাটা তাঁদের পক্ষ থেকে আবেগের কুরবানীই বটে এবং এটা কান্নারত শিশু ও তার উদ্বিগ্ন মায়ের প্রতি একপ্রকার সহমর্মিতা প্রকাশও বৈকি। অবশ্য এটা ভালোভাবে বুঝতে হলে ইবাদত-বন্দেগীর হাকীকত, নামাযের মর্যাদা এবং নামায ও অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগীতে সাহাবায়ে কেরামের আগ্রহ ও আন্তরিকতার গভীরতা সম্পর্কে ধারণা থাকা জরুরি। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সে ধারণা লাভের তাওফীক দান করুন ।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা শিশুদের প্রতি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্নেহ- বাৎসল্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
খ. এর দ্বারা আমরা মাতৃমমতার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের শিক্ষা পাই।
গ. এর দ্বারা আরও জানা যায় যে, মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামাতে শামিল হওয়া জায়েয আছে, যদিও তাদের জন্য ঘরেই নামায পড়া উত্তম।
ঘ. এ হাদীছ দ্বারা বোঝা যায় প্রয়োজনে নামাযের ভেতর লম্বা ও সংক্ষেপের নিয়ত পরিবর্তন করা যেতে পারে।
ঙ. এ হাদীছের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হচ্ছে নারী-পুরুষ ও শিশু-বয়স্ক নির্বিশেষে কাউকেই কোনওভাবে কষ্ট দেওয়া উচিত নয়।
[১] মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১২২৯৩; সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ৩৯৩৯; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৩৪৫৪; মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীছ নং ৭৯৩৯ তাবারানী, আল-মু'জামুল কাবীর, হাদীছ নং ১০১২; আল-মু'জামুস সগীর, হাদীছ নং ৭৪১
