আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৭৯- আহকাম (রাষ্ট্রনীতি) অধ্যায়

হাদীস নং: ৬৬৮২
আন্তর্জাতিক নং: ৭১৭০
৩০২৫. বিচারক নিজে বিবাদের সাক্ষী হলে, চাই তা বিচারকের পদে সমাসীন থাকাকালেই হোক কিংবা তার পূর্বে।
বিচারক শুরায়হকে এক ব্যক্তি তার পক্ষে সাক্ষ্য দেওয়ার আবেদন করলে তিনি বললেন, তুমি শাসকের কাছে যাও, সেখানে আমি তোমার পক্ষে সাক্ষ্য দিব।
ইকরিমা (রাহঃ) বলেন যে, উমর (রাযিঃ) আব্দুর রহমান ইবনে আওফ (রাযিঃ) কে বললেন, যদি তুমি শাসক হও, আর তুমি নিজে কোন ব্যক্তিকে হদের কাজ তথা যিনা বা চুরিতে লিপ্ত দেখ (তাহলে তুমি কি করবে?) উত্তরে তিনি বললেন, (আপনি শাসক হওয়া সত্ত্বেও) আপনার সাক্ষ্য একজন সাধারণ মুসলমানের সাক্ষ্যের মতই। তিনি [উমর (রাযিঃ)] বললেন, তুমি ঠিকই বলেছ। উমর (রাযিঃ) বলেন, যদি মানুষ এরূপ বলবে বলে আশঙ্কা না হত যে, উমর আল্লাহর কিতাবে নিজের পক্ষ থেকে বৃদ্ধি করেছে, তাহলে আমি নিজ হাতে রজমের আয়াত লিখে দিতাম।
মায়েয রাসূলূল্লাহ (ﷺ) এর কাছে চারবার যিনার কথা স্বীকার করেছিলেন, তখন তিনি তাকে রজম করার নির্দেশ দেন। আর এরূপ বর্ণনা পাওয়া যায়না যে, রাসূলূল্লাহ (ﷺ) উপস্থিত ব্যক্তিদের থেকে সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন।
হাম্মাদ (রাহঃ) বলেন, বিচারকের নিকট কেউ একবার স্বীকার করলে তাকে রজম করা হবে। আর হাকাম (রাহঃ) বলেন, চারবার স্বীকার করতে হবে।
৬৬৮২। কুতায়বা (রাহঃ) ......... আবু কাতাদা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুনায়নের দিন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, শক্রপক্ষের কোন নিহত ব্যক্তিকে হত্যা করার ব্যাপারে যার সাক্ষী আছে, সেই তার পরিত্যক্ত সম্পদ পাবে। (রাবী বলেন) আমি আমার কর্তৃক নিহত ব্যক্তির সাক্ষী তালাশ করতে লাগলাম। কিন্তু আমার ব্যাপারে সাক্ষ্য দিবে এমন কাউকে দেখতে পেলাম না, সুতরাং আমি বসে গেলাম। তারপর আমার খেয়াল হল, আমি তার হত্যার বিষয়টিকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে উল্লেখ করলাম। তখন তাঁর নিকট উপবিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে একজন বলল, যে নিহত ব্যক্তির আলোচনা হচ্ছে তার হাতিয়ার আমার কাছে রয়েছে। অতএব আপনি তাকে আমার পক্ষ হয়ে সন্তুষ্ট করে দিন। আবু বকর (রাযিঃ) বললেন, কখনো না। আপনি এই পাংশু কুরাইশকে কখনো দিবেন না। আল্লাহ ও রাসুলের পক্ষে যে আল্লাহর সিংহ যুদ্ধ করছে, তাকে আপনি বঞ্চিত করবেন। রাবী বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বিষয়টি অনুধাবন করলেন এবং তা (হাতিয়ার ইত্যাদি) আমাকে প্রদান করলেন। আমি তা দিয়ে একটি বাগান খরিদ করলাম। এটাই ছিল আমার প্রথম সম্পদ, যা আমি মূলধন হিসাবে সংরক্ষণ করেছিলাম।
আব্দুল্লাহ (রাহঃ) লাইছ (রাহঃ) সূত্রে হাদীসটির বর্ণনায় فعلم رسول الله صلى الله عليه وسلم (রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বিযয়টি অনুধাবন করলেন) এর স্থলে فَقَامَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم (নবী (ﷺ) দাঁড়িয়ে গেলেন) বর্ণনা করেছেন।
হিজাযের আলেমরা বলেন, শাসক তার জ্ঞানানুসারে বিচার করবে না, চাই তা দায়িত্বকালে প্রত্যক্ষ করে থাকুক, কিংবা তার পূর্বেই। তাদের কারো কারো মতে, যদি বাদী বিবাদীর কোন এক পক্ষ অপর পক্ষের হক সম্পর্কে বিচার চলাকালে তার সস্মুখেও স্বীকার করে, তবুও তার ভিত্তিতে ফয়সালা করা যাবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত দু’জন সাক্ষী ডেকে সে ব্যক্তির স্বীকারোক্তির সময় তাদের উপস্থিত না রাখবেন।
কোন কোন ইরাকী আলেম বলেন, বিচার চলাকালে যা কিছু শুনবে বা দেখবে সে অনুযায়ী ফায়সালা করবে। তবে অন্যস্থানে যা কিছু শুনবে বা দেখবে, দু’জন সাক্ষী ছাড়া ফায়সালা করতে পারবে না। তাদের অন্যরা বলেন, বরং সে ভিত্তিতে ফায়সালা করতে পারবে। কেননা সে তো বিশ্বস্ত। আর সাক্ষ্য গ্রহণের উদ্দেশ্য তো প্রকৃত সত্যকে অনুধাবন করা। সুতরাং তার জানা (সাক্ষীর) সাক্ষ্যের চেয়ে অধিক নির্ভরযোগ্য। তাদের অন্য কেউ বলেন যে, মাল সংক্রান্ত বিষয়ে বিচারক তার নিজের জানার ভিত্তিতে ফায়সালা করবে। তবে অন্য ব্যাপারে নয়।
কাসেম (রাহঃ) বলেন যে, অন্যের সাক্ষ্যগ্রহণ ছাড়া শাসকের নিজের জ্ঞানানুসারে ফয়সালা করা উচিত নয়, যদিও তার জানা অন্যের সাক্ষ্যের চেয়ে অধিক নির্ভরযোগ্য তবুও। এতে মুসলিম জনসাধারণের কাছে নিজেকে অপবাদের সন্মুখীন হতে হয় এবং তাদেরকে (মিথ্যা) সন্দেহে ফেলা হয়। কেননা নবী (ﷺ) সন্দেহ করাকে পছন্দ করতেন না। এজন্যই তিনি পথচারীকে ডেকে বলে দিয়েছেনঃ এ হচ্ছে (আমার স্ত্রী) সাফিয়্যা।
بَابُ الشَّهَادَةِ تَكُونُ عِنْدَ الحَاكِمِ، فِي وِلاَيَتِهِ القَضَاءَ أَوْ قَبْلَ ذَلِكَ، لِلْخَصْمِ وَقَالَ شُرَيْحٌ القَاضِي، وَسَأَلَهُ إِنْسَانٌ الشَّهَادَةَ، فَقَالَ: «ائْتِ الأَمِيرَ حَتَّى أَشْهَدَ لَكَ» وَقَالَ عِكْرِمَةُ: قَالَ عُمَرُ لِعَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَوْفٍ: لَوْ رَأَيْتَ رَجُلًا عَلَى حَدٍّ، زِنًا أَوْ سَرِقَةٍ، وَأَنْتَ أَمِيرٌ؟ فَقَالَ: شَهَادَتُكَ شَهَادَةُ رَجُلٍ مِنَ المُسْلِمِينَ، قَالَ: صَدَقْتَ قَالَ عُمَرُ: «لَوْلاَ أَنْ يَقُولَ النَّاسُ زَادَ عُمَرُ فِي كِتَابِ اللَّهِ، لَكَتَبْتُ آيَةَ الرَّجْمِ بِيَدِي» وَأَقَرَّ مَاعِزٌ عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالزِّنَا أَرْبَعًا، فَأَمَرَ بِرَجْمِهِ، وَلَمْ يُذْكَرْ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَشْهَدَ مَنْ حَضَرَهُ وَقَالَ حَمَّادٌ: «إِذَا أَقَرَّ مَرَّةً عِنْدَ الحَاكِمِ رُجِمَ» وَقَالَ الحَكَمُ «أَرْبَعًا»
7170 - حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ، حَدَّثَنَا اللَّيْثُ بْنُ سَعْدٍ، عَنْ يَحْيَى، عَنْ عُمَرَ بْنِ كَثِيرٍ، عَنْ أَبِي مُحَمَّدٍ، مَوْلَى أَبِي قَتَادَةَ، أَنَّ أَبَا قَتَادَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَوْمَ حُنَيْنٍ: «مَنْ لَهُ بَيِّنَةٌ عَلَى قَتِيلٍ قَتَلَهُ فَلَهُ سَلَبُهُ» ، فَقُمْتُ لِأَلْتَمِسَ بَيِّنَةً عَلَى قَتِيلِي، فَلَمْ أَرَ أَحَدًا يَشْهَدُ لِي، فَجَلَسْتُ، ثُمَّ بَدَا لِي، فَذَكَرْتُ أَمْرَهُ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ رَجُلٌ مِنْ جُلَسَائِهِ: سِلاَحُ هَذَا القَتِيلِ الَّذِي يَذْكُرُ عِنْدِي، قَالَ: فَأَرْضِهِ مِنْهُ، فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ: كَلَّا، لاَ يُعْطِيهِ أُصَيْبِغَ مِنْ قُرَيْشٍ وَيَدَعَ أَسَدًا مِنْ أُسْدِ اللَّهِ، يُقَاتِلُ عَنِ اللَّهِ وَرَسُولِهِ، قَالَ: فَأَمَرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَأَدَّاهُ إِلَيَّ، فَاشْتَرَيْتُ مِنْهُ خِرَافًا، فَكَانَ أَوَّلَ مَالٍ تَأَثَّلْتُهُ، قَالَ لِي عَبْدُ اللَّهِ عَنِ اللَّيْثِ: فَقَامَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَدَّاهُ إِلَيَّ، " وَقَالَ أَهْلُ الحِجَازِ: الحَاكِمُ لاَ يَقْضِي بِعِلْمِهِ شَهِدَ بِذَلِكَ فِي وِلاَيَتِهِ أَوْ قَبْلَهَا، وَلَوْ أَقَرَّ خَصْمٌ عِنْدَهُ لِآخَرَ بِحَقٍّ فِي مَجْلِسِ [ص:70] القَضَاءِ، فَإِنَّهُ لاَ يَقْضِي عَلَيْهِ فِي قَوْلِ بَعْضِهِمْ حَتَّى يَدْعُوَ بِشَاهِدَيْنِ فَيُحْضِرَهُمَا إِقْرَارَهُ «،» وَقَالَ بَعْضُ أَهْلِ العِرَاقِ: مَا سَمِعَ أَوْ رَآهُ فِي مَجْلِسِ القَضَاءِ قَضَى بِهِ، وَمَا كَانَ فِي غَيْرِهِ لَمْ يَقْضِ إِلَّا بِشَاهِدَيْنِ «،» وَقَالَ آخَرُونَ مِنْهُمْ: بَلْ يَقْضِي بِهِ، لِأَنَّهُ مُؤْتَمَنٌ، وَإِنَّمَا يُرَادُ مِنَ الشَّهَادَةِ مَعْرِفَةُ الحَقِّ، فَعِلْمُهُ أَكْثَرُ مِنَ الشَّهَادَةِ، وَقَالَ بَعْضُهُمْ: يَقْضِي بِعِلْمِهِ فِي الأَمْوَالِ، وَلاَ يَقْضِي فِي غَيْرِهَا "، وَقَالَ القَاسِمُ: «لاَ يَنْبَغِي لِلْحَاكِمِ أَنْ يُمْضِيَ قَضَاءً بِعِلْمِهِ دُونَ عِلْمِ غَيْرِهِ، مَعَ أَنَّ عِلْمَهُ أَكْثَرُ مِنْ شَهَادَةِ غَيْرِهِ، وَلَكِنَّ فِيهِ تَعَرُّضًا لِتُهَمَةِ نَفْسِهِ عِنْدَ المُسْلِمِينَ، وَإِيقَاعًا لَهُمْ فِي الظُّنُونِ» وَقَدْ كَرِهَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الظَّنَّ فَقَالَ: «إِنَّمَا هَذِهِ صَفِيَّةُ»
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)