আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ
৯- আযান-ইকামতের অধ্যায়
হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ৬৯৫
৪৪৮. ফিতনাবাজ ও বিদআতীর ইমামতি।
হাসান (রাহঃ) বলেন, তাঁর পিছনেও নামায আদায় করে নেবে। তবে বিদআতের পরিণাম তার উপরই বর্তাবে।
আবু আব্দুল্লাহ (ইমাম বুখারী (রাহঃ) বলেন, আমাকে মুহাম্মাদ ইবনে ইউসুফ (রাহঃ)............ উবাইদুল্লাহ ইবনে আদী ইবনে খিয়ার (রাহঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি উসমান ইবনে আফফান (রাযিঃ) অবরুদ্ধ থাকাকালে তাঁর নিকট গিয়ে বললেন, প্রকৃতপক্ষে আপনিই জনগণের ইমাম। আর আপনার বিপদ তো নিজেই বুঝতে পারছেন। আর আমাদের ইমামতি করছে কখনো বিদ্রোহীদের ইমাম। ফলে আমরা গুনাহগার হওয়ার আশঙ্কা করছি। তিনি বললেন, মানুষের আমলের মধ্যে নামাযই সর্বোত্তম। কাজেই লোকেরা যখন উত্তম কাজ করে, তখন তুমিও তাদের সাথে উত্তম কাজে শরীক হবে, আর যখন তারা মন্দ কাজে লিপ্ত হয়, তখন তাঁদের অপকর্ম থেকে বেঁচে থাকবে।
যুবাইদী (রঃ) বর্ণনা করেন যে, যুহরী (রাহঃ) বলেছেন, যারা স্বেচ্ছায় নপুংসক সাজে, তাদের পেছনে একান্ত প্রয়োজন ছাড়া নামায আদায় করা সঙ্গত বলে মনে করি না।
হাসান (রাহঃ) বলেন, তাঁর পিছনেও নামায আদায় করে নেবে। তবে বিদআতের পরিণাম তার উপরই বর্তাবে।
আবু আব্দুল্লাহ (ইমাম বুখারী (রাহঃ) বলেন, আমাকে মুহাম্মাদ ইবনে ইউসুফ (রাহঃ)............ উবাইদুল্লাহ ইবনে আদী ইবনে খিয়ার (রাহঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি উসমান ইবনে আফফান (রাযিঃ) অবরুদ্ধ থাকাকালে তাঁর নিকট গিয়ে বললেন, প্রকৃতপক্ষে আপনিই জনগণের ইমাম। আর আপনার বিপদ তো নিজেই বুঝতে পারছেন। আর আমাদের ইমামতি করছে কখনো বিদ্রোহীদের ইমাম। ফলে আমরা গুনাহগার হওয়ার আশঙ্কা করছি। তিনি বললেন, মানুষের আমলের মধ্যে নামাযই সর্বোত্তম। কাজেই লোকেরা যখন উত্তম কাজ করে, তখন তুমিও তাদের সাথে উত্তম কাজে শরীক হবে, আর যখন তারা মন্দ কাজে লিপ্ত হয়, তখন তাঁদের অপকর্ম থেকে বেঁচে থাকবে।
যুবাইদী (রঃ) বর্ণনা করেন যে, যুহরী (রাহঃ) বলেছেন, যারা স্বেচ্ছায় নপুংসক সাজে, তাদের পেছনে একান্ত প্রয়োজন ছাড়া নামায আদায় করা সঙ্গত বলে মনে করি না।
৬৬২। মুহাম্মাদ ইবনে আবান (রাহঃ) ......... আনাস ইবনে মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (ﷺ) আবু যর (রাযিঃ) কে বলেন, শোন এবং আনুগত্য কর, যদিও কোন হাবশী আমীর হয় —যার মাথা কিসমিসের মতো।
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছে আমীর ও নেতার আনুগত্য করার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে- وَإِنِ اسْتُعْمِلَ عَلَيْكُمْ عَبْدٌ حَبَشِي، كَأَنَّ رَأْسَهُ زَبِيبةٌ (যদিও তোমাদের শাসক নিয়োগ করা হয় এমন হাবশী গোলামকে, যার মাথা একটা কিশমিশের মতো)। অর্থাৎ কিশমিশের মতো ছোট এবং চুলগুলো কালো, অত্যন্ত কোঁকড়া। এর দ্বারা বোঝানো উদ্দেশ্য, দেখতে সে যতই কদাকার হোক না কেন। একে সে গোলাম, তার উপর কালো কুৎসিৎ। এ অবস্থায় অন্তরে হয়তো তার প্রতি শ্রদ্ধাভক্তি জন্মাবে না। তা যতই না জন্মাক, শাসনক্ষমতালাভের পর তার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতেই হবে।
প্রশ্ন হচ্ছে, এর দ্বারা কোন স্তরের আমীর ও নেতার কথা বোঝানো হয়েছে? কেউ বলেন, সর্বোচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন শাসককে বোঝানো উদ্দেশ্য। এর উপর প্রশ্ন উঠতে পারে যে, সর্বোচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন শাসক বা খলীফা হওয়ার জন্য তো কুরায়শ বংশীয় হওয়া শর্ত। হাদীছে ইরশাদ হয়েছে-
الْأَئِمَّةُ مِنْ قُرَيْشٍ
ইমাম (খলীফা) হবে কুরায়শ বংশ থেকে। (মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা ৩২৩৮৮; মুসনাদে আবু দাউদ তয়ালিসী: ৯৬৮; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ৭২৫; মুসনাদুল বাযযার ৬১৮১; নাসাঈ, আস সুনানুল কুবরা: ৫৯০৯; মুসনাদে আবু ইয়া'লা ৩৬৪৪; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ৫২৯৮; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ১০২)
কাজেই হাবশী গোলামের খলীফা হওয়ার অবকাশ কোথায় যে, তার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে হবে?
এর উত্তর হল, কুরায়শ বংশীয় হওয়ার শর্ত নিয়মতান্ত্রিক খলীফা নিয়োগের বেলায় প্রযোজ্য। কাউকে যখন খলীফা মনোনীত করা হবে, তখন শর্ত হল কুরায়শ বংশের উপযুক্ত কোনও ব্যক্তিকেই মনোনীত করতে হবে। কিন্তু কেউ যদি গায়ের জোরে ক্ষমতা দখল করে বসে, তার ক্ষেত্রে শর্তের কী প্রশ্ন? এরূপ ব্যক্তি যদি ক্ষমতা সুসংহত করতে সক্ষম হয়, তবে বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য এড়ানোর লক্ষ্যে তার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করাও জরুরি।
কারও মতে আলোচ্য হাদীছে হাবশী গোলামের আমীর ও শাসক হওয়ার অর্থ আঞ্চলিক ও প্রাদেশিক শাসক হওয়া বা কোনও বাহিনীর সেনাপতি হওয়ার কথা বোঝানো হয়েছে। সর্বোচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন শাসক বা খলীফা বোঝানো উদ্দেশ্য নয়। اسْتُعْمِل শব্দটি দ্বারাও এদিকে ইঙ্গিত পাওয়া যায়। কেননা এর উৎপত্তি عمل থেকে, যা দ্বারা অনেক সময় শাসনকর্তার কাজ বা খলীফার পক্ষ থেকে পদত্ত বিশেষ দায়িত্বপালন বোঝানো হয়। সুতরাং প্রাদেশিক শাসনকর্তা ও যাকাত উসূলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বোঝানোর জন্য عامل শব্দটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সুতরাং হাদীছটি দ্বারা বোঝানো উদ্দেশ্য, খলীফা যদি কোনও হাবশী গোলাম বা এরূপ অতি সাধারণ পর্যায়ের কোনও ব্যক্তিকে প্রাদেশিক শাসনকর্তা বা কোনও বাহিনীর সেনাপতি নিযুক্ত করেন, তবে তার নেতৃত্ব মেনে চলা অবশ্যকর্তব্য। কেন আরও উত্তম ব্যক্তি বর্তমান থাকা সত্ত্বেও এরূপ অতি সাধারণ ব্যক্তিকে ক্ষমতা দেওয়া হল, এরূপ প্রশ্ন তোলা যাবে না। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুতার যুদ্ধে একসময়কার গোলাম হযরত যায়দ ইবন হারিছা রাযি.-কে সেনাপতি নিযুক্ত করেছিলেন। তাঁর পুত্র হযরত উসামা রাযি.- কেও প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ ওফাতের আগে প্রেরিত এক বাহিনীর সেনাপতি বানিয়েছিলেন। উভয় বাহিনীতে শীর্ষস্থানীয় সাহাবীগণ অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং পিতা-পুত্র উভয়কে সেনাপতিরূপে মেনে নিয়েছিলেন। এরূপ উদারতা ও সাম্যের শিক্ষা কেবল ইসলামেই আছে।
অনেকে এ হাদীছ দ্বারা প্রমাণ দিয়েছেন যে, গোলাম যদি নামাযের ইমামত করে, তবে তা জায়েয হবে এবং তার ইকতিদায় নামায পড়তে হবে। হযরত আবূ যার রাযি. একবার জামাতে হাজির হলে দেখতে পান এক গোলাম ইমামতের জন্য দাঁড়িয়েছে। তাঁকে দেখে লোকজন বলল, এই যে আবূ যার এসে গেছেন। এ কথা শুনতেই সে গোলাম পিছিয়ে এসে আবূ যার রাযি.-কে ইমাম বানাতে চাইলেন। কিন্তু তিনি তাতে রাজি হলেন না। তিনি বললেন, আমার বন্ধু (নবী কারীম) সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে উপদেশ দিয়েছেন, যদি হাত-পা কাটা হাবশী গোলামও হয়, তবুও তার আনুগত্য করবে। অগত্যা সে গোলামই নামাযের ইমামত করলেন এবং হযরত আবু যার রাযি. তার ইকতিদায় নামায আদায় করলেন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
শাসক ও প্রশাসক যে বংশের, যে বর্ণের ও যে অঞ্চলের লোকই হোক না কেন, তার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা অবশ্যকর্তব্য।
প্রশ্ন হচ্ছে, এর দ্বারা কোন স্তরের আমীর ও নেতার কথা বোঝানো হয়েছে? কেউ বলেন, সর্বোচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন শাসককে বোঝানো উদ্দেশ্য। এর উপর প্রশ্ন উঠতে পারে যে, সর্বোচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন শাসক বা খলীফা হওয়ার জন্য তো কুরায়শ বংশীয় হওয়া শর্ত। হাদীছে ইরশাদ হয়েছে-
الْأَئِمَّةُ مِنْ قُرَيْشٍ
ইমাম (খলীফা) হবে কুরায়শ বংশ থেকে। (মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা ৩২৩৮৮; মুসনাদে আবু দাউদ তয়ালিসী: ৯৬৮; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ৭২৫; মুসনাদুল বাযযার ৬১৮১; নাসাঈ, আস সুনানুল কুবরা: ৫৯০৯; মুসনাদে আবু ইয়া'লা ৩৬৪৪; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ৫২৯৮; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ১০২)
কাজেই হাবশী গোলামের খলীফা হওয়ার অবকাশ কোথায় যে, তার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে হবে?
এর উত্তর হল, কুরায়শ বংশীয় হওয়ার শর্ত নিয়মতান্ত্রিক খলীফা নিয়োগের বেলায় প্রযোজ্য। কাউকে যখন খলীফা মনোনীত করা হবে, তখন শর্ত হল কুরায়শ বংশের উপযুক্ত কোনও ব্যক্তিকেই মনোনীত করতে হবে। কিন্তু কেউ যদি গায়ের জোরে ক্ষমতা দখল করে বসে, তার ক্ষেত্রে শর্তের কী প্রশ্ন? এরূপ ব্যক্তি যদি ক্ষমতা সুসংহত করতে সক্ষম হয়, তবে বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য এড়ানোর লক্ষ্যে তার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করাও জরুরি।
কারও মতে আলোচ্য হাদীছে হাবশী গোলামের আমীর ও শাসক হওয়ার অর্থ আঞ্চলিক ও প্রাদেশিক শাসক হওয়া বা কোনও বাহিনীর সেনাপতি হওয়ার কথা বোঝানো হয়েছে। সর্বোচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন শাসক বা খলীফা বোঝানো উদ্দেশ্য নয়। اسْتُعْمِل শব্দটি দ্বারাও এদিকে ইঙ্গিত পাওয়া যায়। কেননা এর উৎপত্তি عمل থেকে, যা দ্বারা অনেক সময় শাসনকর্তার কাজ বা খলীফার পক্ষ থেকে পদত্ত বিশেষ দায়িত্বপালন বোঝানো হয়। সুতরাং প্রাদেশিক শাসনকর্তা ও যাকাত উসূলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বোঝানোর জন্য عامل শব্দটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সুতরাং হাদীছটি দ্বারা বোঝানো উদ্দেশ্য, খলীফা যদি কোনও হাবশী গোলাম বা এরূপ অতি সাধারণ পর্যায়ের কোনও ব্যক্তিকে প্রাদেশিক শাসনকর্তা বা কোনও বাহিনীর সেনাপতি নিযুক্ত করেন, তবে তার নেতৃত্ব মেনে চলা অবশ্যকর্তব্য। কেন আরও উত্তম ব্যক্তি বর্তমান থাকা সত্ত্বেও এরূপ অতি সাধারণ ব্যক্তিকে ক্ষমতা দেওয়া হল, এরূপ প্রশ্ন তোলা যাবে না। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুতার যুদ্ধে একসময়কার গোলাম হযরত যায়দ ইবন হারিছা রাযি.-কে সেনাপতি নিযুক্ত করেছিলেন। তাঁর পুত্র হযরত উসামা রাযি.- কেও প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ ওফাতের আগে প্রেরিত এক বাহিনীর সেনাপতি বানিয়েছিলেন। উভয় বাহিনীতে শীর্ষস্থানীয় সাহাবীগণ অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং পিতা-পুত্র উভয়কে সেনাপতিরূপে মেনে নিয়েছিলেন। এরূপ উদারতা ও সাম্যের শিক্ষা কেবল ইসলামেই আছে।
অনেকে এ হাদীছ দ্বারা প্রমাণ দিয়েছেন যে, গোলাম যদি নামাযের ইমামত করে, তবে তা জায়েয হবে এবং তার ইকতিদায় নামায পড়তে হবে। হযরত আবূ যার রাযি. একবার জামাতে হাজির হলে দেখতে পান এক গোলাম ইমামতের জন্য দাঁড়িয়েছে। তাঁকে দেখে লোকজন বলল, এই যে আবূ যার এসে গেছেন। এ কথা শুনতেই সে গোলাম পিছিয়ে এসে আবূ যার রাযি.-কে ইমাম বানাতে চাইলেন। কিন্তু তিনি তাতে রাজি হলেন না। তিনি বললেন, আমার বন্ধু (নবী কারীম) সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে উপদেশ দিয়েছেন, যদি হাত-পা কাটা হাবশী গোলামও হয়, তবুও তার আনুগত্য করবে। অগত্যা সে গোলামই নামাযের ইমামত করলেন এবং হযরত আবু যার রাযি. তার ইকতিদায় নামায আদায় করলেন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
শাসক ও প্রশাসক যে বংশের, যে বর্ণের ও যে অঞ্চলের লোকই হোক না কেন, তার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা অবশ্যকর্তব্য।
