আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৭৮- কিয়ামত ও ফিতনাসমূহের বিবরণ

হাদীস নং: ৬৬১০
আন্তর্জাতিক নং: ৭০৮৯ - ৭০৯১
২৯৯১. ফিতনা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা।
৬৬১০। মুআয ইবনে ফাযালা (রাহঃ) ......... আনাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, লোকেরা নবী (ﷺ) এর কাছে প্রশ্ন করত। এমনকি প্রশ্ন করতে করতে তারা তাঁকে বিরক্ত করে তুলত। একদিন নবী (ﷺ) মিম্বরে আরোহণ করলেন এবং বললেনঃ তোমরা (আজ) আমাকে যাই প্রশ্ন করবে, আমি তারই উত্তর প্রদান করব। আনাস (রাযিঃ) বলেন, আমি ডানে বামে তাকাচ্ছিলাম। দেখতে পেলাম প্রত্যেকেই আপন বস্ত্রে মাথা গুজে কাঁদছে। তখন এমন এক ব্যক্তি পারস্পরিক বাকবিতণ্ডার সময় যাকে অন্য এক ব্যক্তির (যে প্রকৃতপক্ষে তার পিতা নয়) সন্তান বলে সম্বোধন করাতে উঠে জিজ্ঞাসা করল, হে আল্লাহর নবী! আমার পিতা কে? তিনি বললেনঃ হুযাফা তোমার পিতা।
এরপর উমর (রাযিঃ) সম্মুখে এলেন এবং বললেনঃ আমরা রব হিসাবে আল্লাহকে, দ্বীন হিসাবে ইসলামকে এবং মুহাম্মাদ (ﷺ) কে রাসুল হিসাবে মেনে পরিতুষ্ট। ফিতনার অনিষ্ট থেকে আমরা আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। এরপর নবী (ﷺ) বললেনঃ আজকের মত এত উত্তম বস্তু এবং এত খারাপ বস্তু আমি আর কখনো প্রত্যক্ষ করিনি। আমার সম্মুখে জান্নাত ও জাহান্নাম পেশ করা হয়েছে। এমনকি আমি সে দুটোকে এ দেওয়ালের পাশেই দেখতে পাচ্ছিলাম। কাতাদা বলেন, উপরে বর্ণিত হাদীসটি নিম্নোক্ত আয়াত প্রসঙ্গে বলে উল্লেখ করা হয়, ইরশাদ হলোঃ হে যারা ঈমান এনেছ, তোমরা সেসব বিষয়ে প্রশ্ন করো না, যা প্রকাশিত হলে তোমরা দুঃখিত হবে। (৫ঃ ১০১)।
আব্বাস নারসী (রাহঃ) ......... আনাস (রাযিঃ) থেকে পূর্বোক্ত হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তবে এ সূত্রে আনাস (রাযিঃ) كُلُّ رَجُلٍ رَأْسُهُ فِي ثَوْبِهِ يَبْكِي এর স্থলে كُلُّ رَجُلٍ لاف رَأْسُهُ فِي ثَوْبِهِ يَبْكِي (প্রত্যেক ব্যক্তি তার মাথায় কাপড় দিয়ে আচ্ছাদিত করে কাঁদছিল) বলে উল্লেখ করেছেন। এবং نَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْ سُوءِ الْفِتَنِ এর স্থলে عَائِذًا بِاللَّهِ مِنْ سُوءِ الْفِتَنِ অথবা أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْ سُوءِ الْفِتَنِ উল্লেখ করেছেন।
ইমাম বুখারী (রাহঃ) বলেন, খলীফা (রাহঃ) ......... আনাস (রাযিঃ) সূত্রে নবী (ﷺ) থেকে পূর্বোক্ত হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। এ সূত্রে তিনি عَائِذًا بِاللَّهِ مِنْ شَرِّ الْفِتَنِ বলেছেন।
باب التَّعَوُّذِ مِنَ الْفِتَنِ
7089 - حَدَّثَنَا مُعَاذُ بْنُ فَضَالَةَ، حَدَّثَنَا هِشَامٌ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: سَأَلُوا النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى أَحْفَوْهُ بِالْمَسْأَلَةِ، فَصَعِدَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاتَ يَوْمٍ المِنْبَرَ فَقَالَ: «لاَ تَسْأَلُونِي عَنْ شَيْءٍ إِلَّا بَيَّنْتُ لَكُمْ» فَجَعَلْتُ أَنْظُرُ يَمِينًا وَشِمَالًا، فَإِذَا كُلُّ رَجُلٍ لاَفٌّ رَأْسَهُ فِي ثَوْبِهِ يَبْكِي، فَأَنْشَأَ رَجُلٌ، كَانَ إِذَا لاَحَى يُدْعَى إِلَى غَيْرِ أَبِيهِ، فَقَالَ: يَا نَبِيَّ اللَّهِ مَنْ أَبِي؟ فَقَالَ: «أَبُوكَ حُذَافَةُ» ثُمَّ أَنْشَأَ عُمَرُ فَقَالَ: رَضِينَا بِاللَّهِ رَبًّا، وَبِالإِسْلاَمِ دِينًا، وَبِمُحَمَّدٍ رَسُولًا، نَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْ سُوءِ الفِتَنِ. فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا رَأَيْتُ فِي الخَيْرِ وَالشَّرِّ كَاليَوْمِ قَطُّ، إِنَّهُ صُوِّرَتْ لِي الجَنَّةُ وَالنَّارُ، حَتَّى رَأَيْتُهُمَا دُونَ الحَائِطِ» فَكَانَ قَتَادَةُ يَذْكُرُ هَذَا الحَدِيثَ عِنْدَ هَذِهِ الآيَةِ {يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لاَ تَسْأَلُوا عَنْ أَشْيَاءَ إِنْ تُبْدَ لَكُمْ تَسُؤْكُمْ} [المائدة: 101]
7090 - وَقَالَ عَبَّاسٌ النَّرْسِيُّ: حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ زُرَيْعٍ، حَدَّثَنَا سَعِيدٌ، حَدَّثَنَا قَتَادَةُ: أَنَّ أَنَسًا، حَدَّثَهُمْ: أَنَّ نَبِيَّ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، بِهَذَا، وَقَالَ: «كُلُّ رَجُلٍ لاَفًّا رَأْسَهُ فِي ثَوْبِهِ يَبْكِي» وَقَالَ: «عَائِذًا بِاللَّهِ مِنْ سُوءِ الفِتَنِ» أَوْ قَالَ: «أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْ سُوءِ الفِتَنِ»
7091 - وقَالَ لِي خَلِيفَةُ: حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ زُرَيْعٍ، حَدَّثَنَا سَعِيدٌ، وَمُعْتَمِرٌ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ قَتَادَةَ، أَنَّ أَنَسًا، حَدَّثَهُمْ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِهَذَا. وَقَالَ: «عَائِذًا بِاللَّهِ مِنْ شَرِّ الفِتَنِ»

হাদীসের ব্যাখ্যা:

তাঁর এবং জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝখান থেকে সমস্ত অন্তরাল সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ফলে জান্নাতের নিআমতরাশি ও জাহান্নামের শাস্তিসমূহ সরাসরি দেখতে পাচ্ছিলেন, যেমনটা মি'রাজের ঘটনার পর তাঁর সম্মুখ থেকে সব আড়াল সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল, যদ্দরুন তিনি সরাসরি বায়তুল মাকদিস দেখতে পেয়েছিলেন এবং তা দেখে দেখে সকলের সামনে তার বিবরণ দিয়েছিলেন।

তিনি একাধিকবার এভাবে জান্নাত ও জাহান্নামের দৃশ্য দেখতে পেয়েছেন। বিভিন্ন হাদীছে তা বর্ণিত আছে। যাহোক তিনি জান্নাত ও জাহান্নামের দৃশ্য দেখে সাহাবায়ে কেরামের সামনে অভিব্যক্তি পেশ করলেন فلم أر كاليوم في الخير والشر (এদিনের মত ভালো ও মন্দ কখনও দেখিনি)। অর্থাৎ জান্নাতের যে নি'আমতরাজি আজ আমি দেখতে পেয়েছি, এমন ভালো কিছু আমি আর কখনও দেখিনি। এমনিভাবে জাহান্নামে যেসব শাস্তির ব্যবস্থা দেখেছি, সেরকম মন্দ কিছুও আর কখনও দেখিনি।

এখানে হাদীসটি সংক্ষিপ্ত আকারে আনা হয়েছে। অন্যান্য বর্ণনায় আরো আছে, তারপর তিনি এই বলে তাদের উপদেশ দিলেন ولو تعلمون ما أعلم ، لضحكتم قليلا ، ولبكيتم كثيرا (তোমরা যদি জানতে যা আমি জানি, তবে অবশ্যই তোমরা কম হাসতে এবং বেশি কাঁদতে)। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা পাপীদের জন্য কী কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা রেখেছেন, কী কঠিন কিয়ামতের বিভীষিকা এবং কত কঠিন হাশরের ময়ানের পরিস্থিতি, তা আমি যেমনটা জানি তেমনি তোমরাও যদি জানতে, তবে অবশ্যই কম হাসতে এবং বেশি কাঁদতে। এক বর্ণনায় এরপর আছে ولما ساغ لكم الطعام ولا الشراب، ولما نمتم على الفرش، ولهجرتم النساء ولخرجتم إلى الصعدات تجأرون ‘তোমাদের কাছে পানাহার ভালো লাগত না। তোমরা বিছানায় ঘুমাতে পারতে না। তোমরা নারীদের থেকে দূরে থাকতে। তোমরা চিৎকার করতে করতে রাস্তাঘাটে বের হয়ে পড়তে।

আরো আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদের উপর এরচে' কঠিন কোনও দিন আর আসেনি। তারা তাদের মাথা ঢেকে ফেলেন এবং ডুকরে কাঁদতে থাকেন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. ওয়াজ-নসীহতে হাসানো নয়; বরং কাদানোই প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তরিকা।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)
সহীহ বুখারী - হাদীস নং ৬৬১০ | মুসলিম বাংলা