আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ
৭৭- স্বপ্ন ও তার ব্যাখ্যা সংক্রান্ত অধ্যায়
হাদীস নং: ৬৫৬৯
আন্তর্জাতিক নং: ৭০৪৫
২৯৭৪. স্বপ্নে অপছন্দনীয় কোনকিছু দেখলে তা কারো কাছে না বলা এবং সে সম্পর্কে কোন আলোচনা না করা।
৬৫৬৯। ইবরাহীম ইবনে হামযা (রাহঃ) ......... আবু সাঈদ খুদরী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে বলতে শুনেছেন, যখন কেউ এমন কোন স্বপ্ন দেখে যা সে পছন্দ করে, তবে মনে করবে যে, তা আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়েছে। তখন যেন সে এজন্য আল্লাহর শোকর আদায় করে এবং তা বর্ণনা করে। আর যখন এর বিপরীত কোন স্বপ্ন দেখে, যা সে পছন্দ করে না, মনে করবে তা শয়তানের পক্ষ থেকে হয়েছে, তখন যেন সে এর অনিষ্ট থেকে আল্লাহর আশ্রয় চায় এবং তা কারো কাছে বর্ণনা না করে। তাহলে এ স্বপ্ন তার কোন ক্ষতি করবে না।
باب إِذَا رَأَى مَا يَكْرَهُ فَلاَ يُخْبِرْ بِهَا وَلاَ يَذْكُرْهَا
7045 - حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ حَمْزَةَ، حَدَّثَنِي ابْنُ أَبِي حَازِمٍ، وَالدَّرَاوَرْدِيُّ، عَنْ يَزِيدَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أُسَامَةَ بْنِ الهَادِ اللَّيْثِيِّ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ خَبَّابٍ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدْرِيِّ، أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: «إِذَا رَأَى أَحَدُكُمُ الرُّؤْيَا يُحِبُّهَا، فَإِنَّهَا مِنَ اللَّهِ، فَلْيَحْمَدِ اللَّهَ عَلَيْهَا وَلْيُحَدِّثْ بِهَا، وَإِذَا رَأَى غَيْرَ ذَلِكَ مِمَّا يَكْرَهُ، فَإِنَّمَا هِيَ مِنَ الشَّيْطَانِ، فَلْيَسْتَعِذْ مِنْ شَرِّهَا، وَلاَ يَذْكُرْهَا لِأَحَدٍ، فَإِنَّهَا لَنْ تَضُرَّهُ»
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছটির বিষয়বস্তু দু'টি- ভালো স্বপ্ন দেখলে কী করণীয় এবং মন্দ স্বপ্ন দেখলে কী করণীয়। ভালো স্বপ্নের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে যে, তা আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে হয়ে থাকে এবং যে ব্যক্তি ভালো স্বপ্ন দেখবে তার কর্তব্য আল্লাহ তা'আলার শোকর আদায় করা। বলা হয়েছে সে যেন আল্লাহ তা'আলার প্রশংসা করে, আলহামদুলিল্লাহ বলে। আলহামদুলিল্লাহ বলাটা শোকর আদায়ের ভাষা। সে চাইলে তার স্বপ্নের কথা অন্যকে বলতেও পারে। তবে সে ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। যে-কাউকে তা বলা ঠিক নয়। কেবল প্রিয় মানুষকেই বলবে। কেননা অপসন্দের বা ঈর্ষান্বিত কাউকে বললে সে উল্টাপাল্টা ব্যাখ্যা করে মন খারাপ করে দিতে পারে। এমনকি ক্ষতি করার চেস্টাও করতে পারে। এ কারণেই তো হযরত ইয়ূসুফ আলাইহিস সালাম যখন স্বপ্নে দেখলেন এগারোটি নক্ষত্র এবং চন্দ্র ও সূর্য তাঁকে সিজদা করছে, তারপর এ স্বপ্নের কথা নিজ পিতা হযরত ইয়া'কুব আলাইহিস সালামকে জানালেন, তখন তিনি তাঁকে সতর্ক করলেন-
يَابُنَيَّ لَا تَقْصُصْ رُؤْيَاكَ عَلَى إِخْوَتِكَ فَيَكِيدُوا لَكَ كَيْدًا إِنَّ الشَّيْطَانَ لِلْإِنْسَانِ عَدُوٌّ مُبِينٌ
বাছা! নিজের স্বপ্ন তোমার ভাইদের কাছে বর্ণনা করো না, পাছে তারা তোমার বিরুদ্ধে কোনও ষড়যন্ত্র করে। কেননা শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। (সূরা ইয়ূসুফ, আয়াত ৫)
মন্দ স্বপ্ন সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তা শয়তানের পক্ষ থেকে। অর্থাৎ শয়তানই তাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য, তাকে পেরেশান করার জন্য এবং তার মনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা সৃষ্টির জন্য অবাস্তব ও আজগুবি বিষয় তার অন্তরে বা তার কল্পনায় উপস্থিত করেছে। শয়তানের কাজই হল মানুষকে বিশেষত মুমিনদের পেরেশান করা। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
إِنَّمَا النَّجْوَى مِنَ الشَّيْطَانِ لِيَحْزُنَ الَّذِينَ آمَنُوا وَلَيْسَ بِضَارِّهِمْ شَيْئًا إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ وَعَلَى اللَّهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُونَ
কানাকানি হয় শয়তানের পক্ষ থেকে, যাতে সে মুমিনদেরকে দুঃখ দিতে পারে। কিন্তু সে আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত তাদের বিন্দুমাত্র ক্ষতি করতে পারে না। মুমিনদের উচিত কেবল আল্লাহরই উপর ভরসা করা। (সূরা মুজাদালা, আয়াত ১০)
তো স্বপ্নের ভেতর ভীতিকর কথা শোনানো বা ভীতিকর দৃশ্য দেখানো দ্বারা শয়তানের উদ্দেশ্য অন্তরে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা জাগানো। কাজেই এ ক্ষেত্রে করণীয় হল আল্লাহ তা'আলার আশ্রয় গ্রহণ করা, যাতে শয়তান সে স্বপ্নের দ্বারা তার কোনও ক্ষতি করতে না পারে। দ্বিতীয় করণীয় অন্যের কাছে এরূপ স্বপ্ন প্রকাশ করা হতে বিরত থাকা। কেননা হতে পারে যার কাছে সে স্বপ্ন প্রকাশ করা হল, সে স্বপ্নটির বাহ্যিক মন্দত্ব দেখে সে অনুযায়ী একটা ব্যাখ্যা করে দিল। এতে করে সে আরও বেশি পেরেশান হয়ে যাবে। তাছাড়া অনেক সময় স্বপ্নের যেমন ব্যাখ্যা করা হয় তেমনি ফলেও যায়। অনেকেরই মতে স্বপ্নের ফলাফল তার ব্যাখ্যার উপর নির্ভর করে। ব্যাখ্যা ভালো করলে ফল ভালো হয়, মন্দ করলে মন্দ হয়।
যাহোক এ হাদীছে মন্দ স্বপ্নের ক্ষেত্রে দুটি কাজ করতে বলা হয়েছে- আল্লাহ তা'আলার আশ্রয় গ্রহণ করা এবং অন্যের কাছে প্রকাশ করা হতে বিরত থাকা। এ দু’টি কাজ করলে শয়তান সে স্বপ্ন দ্বারা তার কোনও ক্ষতি করতে পারবে না। কেননা আল্লাহ তা'আলা তাকে হেফাজত করবেন। ফলে তার মন শান্ত ও স্থির থাকবে। কোনও পেরেশানি ও অস্থিরতা তার মনে স্থান পাবে না এবং অস্থিরতাবশে এমন কোনও কাজও তার দ্বারা হবে না, যা তার জন্য দুনিয়া ও আখিরাতের ক্ষতির কারণ হতে পারে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. ভালো স্বপ্ন আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে হয়। কাজেই এটা নি'আমত। এর জন্য আল্লাহ তা'আলার শোকর আদায় করতে হবে।
খ. ভালো স্বপ্ন দেখলে তা যে-কাউকে বলতে নেই। যারা ভালোবাসে, সেরকম লোককেই বলা চাই।
গ. মন্দ স্বপ্নে শয়তানের প্রভাব ও সক্রিয়তা থাকে। তাই তার অনিষ্ট থেকে বাঁচার জন্য কিছু ব্যবস্থা দেওয়া হয়েছে। ব্যবস্থাসমূহ নিম্নরূপ-
১. আল্লাহ তা'আলার আশ্রয় গ্রহণ করা অর্থাৎ أَعُوْذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجيمِ পড়া। এটা তিনবার পড়া ভালো।
২. তা প্রিয়-অপ্রিয় কাউকেই না বলা।
يَابُنَيَّ لَا تَقْصُصْ رُؤْيَاكَ عَلَى إِخْوَتِكَ فَيَكِيدُوا لَكَ كَيْدًا إِنَّ الشَّيْطَانَ لِلْإِنْسَانِ عَدُوٌّ مُبِينٌ
বাছা! নিজের স্বপ্ন তোমার ভাইদের কাছে বর্ণনা করো না, পাছে তারা তোমার বিরুদ্ধে কোনও ষড়যন্ত্র করে। কেননা শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। (সূরা ইয়ূসুফ, আয়াত ৫)
মন্দ স্বপ্ন সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তা শয়তানের পক্ষ থেকে। অর্থাৎ শয়তানই তাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য, তাকে পেরেশান করার জন্য এবং তার মনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা সৃষ্টির জন্য অবাস্তব ও আজগুবি বিষয় তার অন্তরে বা তার কল্পনায় উপস্থিত করেছে। শয়তানের কাজই হল মানুষকে বিশেষত মুমিনদের পেরেশান করা। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
إِنَّمَا النَّجْوَى مِنَ الشَّيْطَانِ لِيَحْزُنَ الَّذِينَ آمَنُوا وَلَيْسَ بِضَارِّهِمْ شَيْئًا إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ وَعَلَى اللَّهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُونَ
কানাকানি হয় শয়তানের পক্ষ থেকে, যাতে সে মুমিনদেরকে দুঃখ দিতে পারে। কিন্তু সে আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত তাদের বিন্দুমাত্র ক্ষতি করতে পারে না। মুমিনদের উচিত কেবল আল্লাহরই উপর ভরসা করা। (সূরা মুজাদালা, আয়াত ১০)
তো স্বপ্নের ভেতর ভীতিকর কথা শোনানো বা ভীতিকর দৃশ্য দেখানো দ্বারা শয়তানের উদ্দেশ্য অন্তরে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা জাগানো। কাজেই এ ক্ষেত্রে করণীয় হল আল্লাহ তা'আলার আশ্রয় গ্রহণ করা, যাতে শয়তান সে স্বপ্নের দ্বারা তার কোনও ক্ষতি করতে না পারে। দ্বিতীয় করণীয় অন্যের কাছে এরূপ স্বপ্ন প্রকাশ করা হতে বিরত থাকা। কেননা হতে পারে যার কাছে সে স্বপ্ন প্রকাশ করা হল, সে স্বপ্নটির বাহ্যিক মন্দত্ব দেখে সে অনুযায়ী একটা ব্যাখ্যা করে দিল। এতে করে সে আরও বেশি পেরেশান হয়ে যাবে। তাছাড়া অনেক সময় স্বপ্নের যেমন ব্যাখ্যা করা হয় তেমনি ফলেও যায়। অনেকেরই মতে স্বপ্নের ফলাফল তার ব্যাখ্যার উপর নির্ভর করে। ব্যাখ্যা ভালো করলে ফল ভালো হয়, মন্দ করলে মন্দ হয়।
যাহোক এ হাদীছে মন্দ স্বপ্নের ক্ষেত্রে দুটি কাজ করতে বলা হয়েছে- আল্লাহ তা'আলার আশ্রয় গ্রহণ করা এবং অন্যের কাছে প্রকাশ করা হতে বিরত থাকা। এ দু’টি কাজ করলে শয়তান সে স্বপ্ন দ্বারা তার কোনও ক্ষতি করতে পারবে না। কেননা আল্লাহ তা'আলা তাকে হেফাজত করবেন। ফলে তার মন শান্ত ও স্থির থাকবে। কোনও পেরেশানি ও অস্থিরতা তার মনে স্থান পাবে না এবং অস্থিরতাবশে এমন কোনও কাজও তার দ্বারা হবে না, যা তার জন্য দুনিয়া ও আখিরাতের ক্ষতির কারণ হতে পারে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. ভালো স্বপ্ন আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে হয়। কাজেই এটা নি'আমত। এর জন্য আল্লাহ তা'আলার শোকর আদায় করতে হবে।
খ. ভালো স্বপ্ন দেখলে তা যে-কাউকে বলতে নেই। যারা ভালোবাসে, সেরকম লোককেই বলা চাই।
গ. মন্দ স্বপ্নে শয়তানের প্রভাব ও সক্রিয়তা থাকে। তাই তার অনিষ্ট থেকে বাঁচার জন্য কিছু ব্যবস্থা দেওয়া হয়েছে। ব্যবস্থাসমূহ নিম্নরূপ-
১. আল্লাহ তা'আলার আশ্রয় গ্রহণ করা অর্থাৎ أَعُوْذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجيمِ পড়া। এটা তিনবার পড়া ভালো।
২. তা প্রিয়-অপ্রিয় কাউকেই না বলা।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)


বর্ণনাকারী: