আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৯- আযান-ইকামতের অধ্যায়

হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ৬৮৪
৪৪০। কোন ব্যক্তি লোকদের ইমামতি করার জন্য অগ্রসর হলে যদি পূর্ব (নির্ধারিত) ইমাম এসে যান তাহলে তিনি পিছে সরে আসুন বা না আসুন উভয় অবস্থায় তাঁর নামায আদায় হয়ে যাবে। এ মর্মে আয়িশা (রাযিঃ) থেকে একটি হাদীস বর্ণিত আছে।
৬৫০। আব্দুল্লাহ ইবনে ইউসুফ (রাহঃ) ......... সাহল ইবনে সা’দ সায়িদী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, একবার রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমর ইবনে আওফ গোত্রের এক বিবাদ মীমাংসার জন্য সেখানে যান। ইতিমধ্যে (আসরের) নামাযের সময় হয়ে গেলে, মুআয্‌যিন আবু বকর (রাযিঃ) এর কাছে এসে বললেন, আপনি কি লোকদের নিয়ে নামায আদায় করে নেবেন? তা হলে ইকামত দেই? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আবু বকর (রাযিঃ) নামায আরম্ভ করলেন। লোকেরা নামাযে থাকতে থাকতেই রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাশরীফ আনলেন এবং তিনি সারিগুলো ভেদ করে প্রথম সারিতে গিয়ে দাঁড়ালেন।* তখন সাহাবীগণ হাতে তালি দিতে লাগলেন। আবু বকর (রাযিঃ) নামাযে আর কোন দিকে তাকাতেন না। কিন্তু সাহাবীগণ বেশী করে হাতে তালি দিতে লাগলেন, তখন তিনি তাকালেন এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে দেখতে পেলেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তার প্রতি ইশারা করলেন, নিজের জায়গায় থাক। তখন আবু বকর (রাযিঃ) দু’হাত উঠিয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নির্দেশের জন্য আল্লাহর প্রশংসা করে পিছিয়ে গেলেন এবং কাতারের বরাবর দাঁড়ালেন। আর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সামনে এগিয়ে নামায আদায় করলেন। নামায শেষ করে তিনি বললেন, হে আবু বকর! আমি তোমাকে নির্দেশ দেয়ার পর কিসে তোমাকে বাধা দিয়েছিল? আবু বকর (রাযিঃ) বললেন, আবু কুহাফার পুত্রের জন্য রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সামনে দাঁড়িয়ে নামায আদায় করা শোভা পায় না। তারপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ আমি তোমাদের এত হাতে তালি দিতে দেখলাম। ব্যাপার কি? শোন! নামাযে কারো কিছু ঘটলে সুবহানাল্লাহ বলবে। সুবহানাল্লাহ বললেই তাঁর প্রতি দৃষ্টি দেওয়া হবে। আর হাতে তালি দেওয়া তো মহিলাদের জন্য।

*কেননা তাঁকে পিছনে রেখে লোকেরা নামায আদায় করতে অসুবিধাবোধ করবে, ফলে তাঁদের নামাযের একাগ্রতা বিনষ্ট হবে। তাই তিনি সামনে চলে যান।

হাদীসের ব্যাখ্যা:

পুরুষদের জন্য তাসবীহ ও মহিলাদের জন্য হাতে তালি বাজানোর নির্দেশ এবং এর তাৎপর্য

বস্তুত নামাযের পূর্ণাঙ্গ রূপ ও বিস্তারিত বিধি-নিষেধ একসঙ্গে নয়; বরং পর্যায়ক্রমে শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।
লক্ষ্যণীয়, হাততালি দেওয়ার নিষেধাজ্ঞা কেবল পুরুষদের জন্যই, নারীদের জন্য এটা জায়েয রাখা হয়েছে। বিষয়টা তাৎপর্যপূর্ণ। বস্তুত নামায হচ্ছে যিকর, তিলাওয়াত, দুআ, আল্লাহ অভিমুখিতা ও একান্তভাবে আল্লাহতে সমর্পিত থাকার সমষ্টি। হাতে তালি বাজানো এর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তাই ভুলের প্রতি ইমামের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যও এটা সমীচীন নয়। এর জন্য এমন কোনও পন্থাই অবলম্বন করা উচিত, যা নামাযের কার্যাবলীর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তাসবীহ পড়া (সুবহানাল্লাহ বলা ) সেরকমই এক কাজ । সুতরাং ইমামের ভুল হলে মুসল্লীগণ সুবহানাল্লাহ বলবে, তাতেই ইমাম তার করণীয় বুঝে ফেলবে।
হাঁ, মহিলাদের জন্য হাতে তালি বাজানোর অবকাশ রাখা হয়েছে এজন্য যে, যদিও সুবহানাল্লাহ বলা উৎকৃষ্ট এক যিকর, কিন্তু মহিলাদের জন্য তা নিম্নস্বরে বলাই শ্রেয়। তাদের কন্ঠস্বরে আল্লাহ তাআলা বিশেষ আকর্ষণ রেখেছেন। এটা তাদের জন্য একটা নিআমত। কিন্তু সব নিআমতেরই সঙ্গত ব্যবহার কাম্য। অসঙ্গত ব্যবহার দ্বারা উৎকৃষ্ট নিআমতও ক্ষতির কারণ হয়ে যায়। তাই তাদের কণ্ঠস্বর দ্বারা যাতে পরপুরুষ প্রলুব্ধ না হয় সেদিকে লক্ষ রাখা জরুরি। ইমামের ভুল শোধরাতে গিয়ে তারা উচ্চস্বরে সুবহানাল্লাহ বলে উঠলে শয়তান সে স্বরকে তার বদমতলবে কাজে লাগাতে পারে। হয়তো কোনও পুরুষ-নামাযীর ধ্যান ভাঙিয়ে তার প্রতি মগ্ন করে দেবে। এটা অনেক বড় ক্ষতি। শয়তান যাতে সে ক্ষতি সাধন করতে না পারে, সে লক্ষ্যেই তাদেরকে তাসবীহ'র পরিবর্তে তালি বাজাতে বলা হয়েছে। এটা বড় ক্ষতি থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে ছোট ক্ষতি মেনে নেওয়ার পর্যায়ভুক্ত।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. নামাযে ইমামের ভুল হলে পুরুষ মুক্তাদীর কর্তব্য সুবহানাল্লাহ বলে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা। মহিলা মুসল্লি সুবহানাল্লাহ না বলে হাতে তালি বাজাবে।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন