আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৭৪- আল্লাহদ্রোহী ও ধর্মত্যাগীদেরকে তওবার প্রতি আহবান ও তাদের সাথে যুদ্ধ

হাদীস নং: ৬৪৫৫
আন্তর্জাতিক নং: ৬৯২৩
২৮৯৯. ধর্মত্যাগী পুরুষ ও নারীর হুকুম।
৬৪৫৫। মুসাদ্দাদ (রাহঃ) ......... আবু মুসা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী (ﷺ) এর কাছে এলাম। আমার সাথে আশআরী গোত্রের দু’ব্যক্তি ছিল। একজন আমার ডানদিকে, অপরজন আমার বামদিকে। আর রাসূল (ﷺ) তখন মিসওয়াক করছিলেন। উভয়েই তাঁর কাছে আবদার জানাল। তখন তিনি বললেনঃ হে আবু মুসা! অথবা বললেন, হে আব্দুল্লাহ ইবনে কায়স! রাবী বলেন, আমি বললাম, ঐ সত্তার কসম! যিনি আপনাকে সত্য দ্বীনসহ পাঠিয়েছেন, তারা তাদের অন্তরে কী আছে তা আমাকে জানায়নি এবং তারা যে চাকরি প্রার্থনা করবে তা আমি বুঝতে পারিনি। আমি যেন তখন তাঁর ঠোটের নীচে মিসওয়াকের প্রতি লক্ষ্য করছিলাম যে, তা এক কোণে সরে গেছে। তখন তিনি বললেন, আমরা আমাদের কাজে এমন কাউকে নিয়োগ দিব না বা দেই না, যে নিজেই তা চায়। বরং হে আবু মুসা! অথবা বললেন, হে আব্দুল্লাহ ইবনে কায়স! তুমি ইয়ামানে যাও।
এরপর তিনি তার পেছনে মুআয ইবনে জাবাল (রাযিঃ) কে পাঠালেন। যখন তিনি তথায় পৌঁছলেন, তখন আবু মুসা (রাযিঃ) তার জন্য একটি গদি বিছালেন। আর বললেন, নেমে আসুন। ঘটনাক্রমে তার কাছে একজন লোক শৃঙ্খলাবদ্ধ ছিল। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ঐ লোকটি কে? আবু মুসা (রাযিঃ) বললেন, সে প্রথমে ইহুদী ছিল এবং পরে মুসলমান হয়েছিল। কিন্তু পুনরায় সে ইহুদী হয়ে গিয়েছে। আবু মুসা (রাযিঃ) বললেন, বসুন। মুআয (রাযিঃ) বললেন, না, বসব না, যতক্ষণ না তাকে হত্যা করা হবে। এটাই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ফায়সালা। কথাটি তিনি তিনবার বললেন। এরপর তার সম্পর্কে নির্দেশ দেয়া হল এবং তাকে হত্যা করা হল। তারপর তাঁরা উভয়ই কিয়ামুল লায়ল (রাত্র জাগরণ) সম্পর্কে আলোচনা করলেন। তখন একজন বললেন, আমি কিন্তু ইবাদতও করি, নিদ্রাও যাই। আর নিদ্রাবস্থায় ঐ আশা রাখি, যা ইবাদত অবস্থায় রাখি।
بَاب حُكْمِ الْمُرْتَدِّ وَالْمُرْتَدَّةِ وَاسْتِتَابَتِهِمْ
6923 - حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا يَحْيَى، عَنْ قُرَّةَ بْنِ خَالِدٍ، حَدَّثَنِي حُمَيْدُ بْنُ هِلاَلٍ، حَدَّثَنَا أَبُو بُرْدَةَ، عَنْ أَبِي مُوسَى، قَالَ: أَقْبَلْتُ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَمَعِي رَجُلاَنِ مِنَ الأَشْعَرِيِّينَ، أَحَدُهُمَا عَنْ يَمِينِي وَالآخَرُ عَنْ يَسَارِي، وَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَسْتَاكُ، فَكِلاَهُمَا سَأَلَ، فَقَالَ: " يَا أَبَا مُوسَى، أَوْ: يَا عَبْدَ اللَّهِ بْنَ قَيْسٍ " قَالَ: قُلْتُ: وَالَّذِي بَعَثَكَ بِالحَقِّ مَا أَطْلَعَانِي عَلَى مَا فِي أَنْفُسِهِمَا، وَمَا شَعَرْتُ أَنَّهُمَا يَطْلُبَانِ العَمَلَ، فَكَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَى سِوَاكِهِ تَحْتَ شَفَتِهِ قَلَصَتْ، فَقَالَ: " لَنْ، أَوْ: لاَ نَسْتَعْمِلُ عَلَى عَمَلِنَا مَنْ أَرَادَهُ، وَلَكِنِ اذْهَبْ أَنْتَ يَا أَبَا مُوسَى، أَوْ يَا عَبْدَ اللَّهِ بْنَ قَيْسٍ، إِلَى اليَمَنِ " ثُمَّ اتَّبَعَهُ مُعَاذُ بْنُ جَبَلٍ، فَلَمَّا قَدِمَ عَلَيْهِ أَلْقَى لَهُ وِسَادَةً، قَالَ: انْزِلْ، وَإِذَا رَجُلٌ عِنْدَهُ مُوثَقٌ، قَالَ: مَا هَذَا؟ قَالَ: كَانَ يَهُودِيًّا فَأَسْلَمَ ثُمَّ تَهَوَّدَ، قَالَ: اجْلِسْ، قَالَ: لاَ أَجْلِسُ حَتَّى يُقْتَلَ، قَضَاءُ اللَّهِ وَرَسُولِهِ، ثَلاَثَ مَرَّاتٍ. فَأَمَرَ بِهِ فَقُتِلَ، ثُمَّ تَذَاكَرَا قِيَامَ اللَّيْلِ، فَقَالَ أَحَدُهُمَا: أَمَّا أَنَا فَأَقُومُ وَأَنَامُ، وَأَرْجُو فِي نَوْمَتِي مَا أَرْجُو فِي قَوْمَتِي

হাদীসের ব্যাখ্যা:

কোন কোন বর্ণনায় আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহর কসম! আমরা এমন কারও উপর এ কাজের দায়িত্ব অর্পণ করি না, যে তা কামনা করে কিংবা এমন কাউকেও নয়, যে এর প্রতি লোভ করে।

হযরত আবূ মূসা আশ'আরী রাযি.-এর দুই চাচাতো ভাই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে সরকারি কোনও পদ প্রার্থনা করলে তিনি তাকে তা দিতে অস্বীকার করলেন এবং বললেন-
إِنَّا وَاللهِ لَا نُوَلِّي هَذَا الْعَمَلَ أَحَدًا سَأَلَهُ، أَوْ أَحَدًا حَرَصَ عَلَيْهِ (আল্লাহর কসম! আমরা এমন কারও উপর এ কাজের দায়িত্ব অর্পণ করি না, যে তা কামনা করে কিংবা এমন কাউকেও নয়, যে এর প্রতি লোভ করে)। কেননা সরকারি উচ্চপদ ও ক্ষমতা এক গুরুদায়িত্ব। মনের লোভ-লালসা, স্বজনপ্রীতি ইত্যাদি নানা কারণে সাধারণত ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়েই যায়। কাজেই এ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করা সকলের পক্ষে সম্ভব হয় না। এ দায়িত্ব এক আমানত। এতে ত্রুটি-বিচ্যুতি হলে আখিরাতে আল্লাহর সামনে জবাব দিতে হবে। ফলে সেদিন এ দায়িত্ব ও ক্ষমতা অনেক বড় দুর্গতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। সুতরাং যার একটু বিবেক-বুদ্ধি আছে এবং আছে আল্লাহর ভয়, তার তো কিছুতেই এ গুরুভার কামনা করা উচিত নয়; বরং যথাসম্ভব এড়িয়েই চলা উচিত। তা সত্ত্বেও যদি কেউ এটা প্রার্থনা করে, তখন স্বাভাবিকভাবেই বোঝা যায় সে এর লোভে পড়ে গেছে। নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যেই এটা প্রার্থনা করছে। তার উদ্দেশ্য ইসলাম ও উম্মত এবং দেশ ও জনগণের সেবা করা নয়। এরূপ লোককে দায়িত্ব প্রদান করা কিছুতেই সমীচীন নয়। সে মানুষের দীন-দুনিয়া বরবাদ করে ফেলবে। সেইসঙ্গে সে নিজেও ধ্বংস হবে। বিশেষত এ কারণেও যে, সে দায়িত্ব পালনের জন্য আল্লাহ তা'আলার সাহায্য পাবে না। কোনও পদ যে চেয়ে নেয়, সে আল্লাহর সাহায্য পায় না। যে আল্লাহর সাহায্য পায় না, সে সত্যিকারভাবে মানুষের সাহায্য পাওয়া থেকেও বঞ্চিত থাকে। সাহায্যবঞ্চিতরূপে তাকে ওই পদের উপর ছেড়ে দেওয়া হয়। ফলে সে শয়তান ও নফসের কবলে পড়ে যায়।

প্রকাশ থাকে যে, কেউ যদি হালাল উপার্জনের জন্য সরকারি পদ প্রার্থনা করে এবং যোগ্যতাও থাকে, লোভ-লালসা পূরণ করা তার উদ্দেশ্য না হয়, উদ্দেশ্য হয় আমানতদারির সঙ্গে দায়িত্ব পালন করা, তখন পদ প্রার্থনা করা জায়েয আছে, যেমন হযরত ইয়ূসুফ আলাইহিস সালাম তা প্রার্থনা করেছিলেন।

এমনিভাবে নিজের যদি যোগ্যতা থাকে আর এ অবস্থায় পদ গ্রহণ না করলে কোনও অযোগ্য ব্যক্তির হাতে তা চলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে কিংবা বর্তমানেও কোনও অযোগ্য ব্যক্তির হাতে সে পদ থাকায় তা দ্বারা আমানতের খেয়ানত হচ্ছে, এরকম অবস্থায়ও নিজের থেকে সে পদ চেয়ে নেওয়া বৈধ। অন্যথায় সাধারণ অবস্থায় তা বৈধ নয়। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পদপ্রার্থীকে নিয়োগদান করতে অস্বীকার করে আমাদেরকে সাধারণ অবস্থার নিয়ম জানিয়ে দিয়েছেন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. শরী'আতসম্মত কারণ ব্যতিরেকে নেতৃত্ব, ক্ষমতা ও রাষ্ট্রীয় পদের জন্য আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করা উচিত নয়।

খ. যে ব্যক্তি নেতৃত্ব ও ক্ষমতার অভিলাষী হয়, তাকে তা দেওয়া উচিত নয়, যদি না শরী'আতসম্মত কোনও কারণ পাওয়া যায়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)