মুসনাদে আহমদ- ইমাম আহমদ রহঃ (আল-ফাতহুর রব্বানী)
১. একত্ববাদ ও দীনের মূল ভিত্তিসমূহের আলোচনা
হাদীস নং: ৩৩
আন্তর্জাতিক নং: ২১৪৬৬
একত্ববাদ ও দীনের মূল ভিত্তিসমূহের আলোচনা
(৪) পরিচ্ছেদঃ একত্ববাদী মু’মিনগণের প্রাপ্য নিয়ামতরাজি ও পুরষ্কার এবং মুশরিকদের জন্য নির্ধারিত ভয়াবহ তিরষ্কার ও শাস্তি প্রসঙ্গে
(৩৩) আবূল আসওয়াদ আদ্দুয়ালী থেকে বর্ণিত, তিনি আবূ যর (রা) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, (একদা) আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কাছে আগমন করলাম, তাঁর গায়ে জড়ানো ছিল সাদা কাপড়, আর তিনি ছিলেন নিদ্রিত, (আমি প্রস্থান করলাম এবং কিছুহ্মণ পর) পুনরায় তাঁর কাছে আগমন করলাম তার সাথে কথা বলতে (কিন্তু) তখনও তিনি নিদ্রিত ছিলেন।(এবারও প্রস্থান করার কিছুহ্মণ পর) পুনরায় তাঁর কাছে ফিরে আসলাম, এবার তিনি জাগ্রত হয়েছেন।আমি তাঁর সন্নিকটে উপবিষ্ট হলাম।তিনি ইরশাদ করলেন।যদি কোন ব্যক্তি ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ বা আল্লাহ ভিন্ন কোন ইলাহ নেই’ একথা ঘোষণা করে এবং এর উপর (অর্থাৎ এই বিশ্বাসে স্থিত অবস্থায়) মৃত্যুবরণ করে তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।আমি বললাম, সে যদি ব্যভিচার করে চুরি করে তাহলেও কি? তিনি বলেনঃ যদিও সে ব্যভিচার করে চুরি করে তাহলেও (আবার) বললাম, সে যদি ব্যভিচার করে চুরি করে? তিনি বললেনঃ যদিও সে ব্যভিচার করে চুরি করে তাহলেও।তিনবার এইরূপ বললেন এবং চতুর্থবার বলেনঃ
“যদিও আবূ যর-এর নাসিকা মৃত্তিকা মলিন হয়।অতঃপর আবূ যর (রা) তাঁর পরিধেয় (ইয়ার) টেনে ধরে সেখান থেকে বের হচ্ছিলেন আর বলছিলেন-
“যদিও আবূ যর এর নাসিকা মৃত্তিকায় মলিন হয়।”
(বুখারী মুসলিম ইবন্ হাব্বান বাইহাকী, নাসাঈ ও তিরমিযী।তিনি হাদীসটি সহীহ বলে মন্তব্য করেন।)
“যদিও আবূ যর-এর নাসিকা মৃত্তিকা মলিন হয়।অতঃপর আবূ যর (রা) তাঁর পরিধেয় (ইয়ার) টেনে ধরে সেখান থেকে বের হচ্ছিলেন আর বলছিলেন-
“যদিও আবূ যর এর নাসিকা মৃত্তিকায় মলিন হয়।”
(বুখারী মুসলিম ইবন্ হাব্বান বাইহাকী, নাসাঈ ও তিরমিযী।তিনি হাদীসটি সহীহ বলে মন্তব্য করেন।)
كتاب التوحيد
(4) باب فيما جاء في نعيم الموحدين وثوابهم ووعيد المشركين وعقابهم
(33) وعن أبي الأسود الدئلى عن ابى ذر رضى الله عنه قال اتيت رسول الله صلى الله عليه وسلم وعليه ثوب أبيض فإذا هو نائم ثم أتيته أحدثه فإذا هو نائم ثم أتيته وقد استيقظ فجلست اليه فقال ما من عبد قال لا اله الا الله ثم مات على ذلك إلا دخل الحنة قلت وان زنى وان سرق قال وان زنى وان سرق قلت وان زنى وان سرق قال وان زنى وان سرق ثلاثاثم قال فى الرابعة على رغم (1) انف ابى ذر قال فخرج ابو ذر يجر إزاره وهو يقول وإن رغم أنف ابى ذر
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছ দ্বারা সাধারণভাবে বোঝা যাচ্ছে যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে কোনওকিছুকে শরীক না করা অবস্থায় মারা যাবে, তাকে জাহান্নামে যেতে হবে না, সে সরাসরি জান্নাতে চলে যাবে। সন্দেহ নেই অনেক বড় সুসংবাদ। এ সুসংবাদ যে-কোনও মুমিন-মুসলিমকে আপ্লুত করবে। কিন্তু এর উপর প্রশ্নও ওঠে। কেননা কোনও কোনও হাদীছে কোনও কোনও গুনাহ সম্পর্কে স্পষ্টই বলা হয়েছে তাতে লিপ্ত ব্যক্তিকে জাহান্নামে যেতে হবে। সে জান্নাতে যেতে পারবে না। যেমন এক হাদীছে আছে-
لا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ قَاطِع
"আত্মীয়তা ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।"
অপর এক হাদীছে আছে-
لا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنَّانٌ، وَلَا عَاق، وَلَا مُدْمِنُ خَمْرٍ
"দান করার পর যে ব্যক্তি খোঁটা দেয়, পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান এবং মদ পানকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।"
এরকম আরও বহু হাদীছ আছে, যা প্রমাণ করে কোনও কোনও কবীরা গুনাহের কারণে মুমিনদেরকেও জাহান্নামে যেতে হবে। তারা জান্নাতে যেতে পারবে না। হাদীসে আছে, হযরত আবু যার রাযি.তখন প্রশ্ন করলেন- (যদিও সে ব্যভিচার করে এবং যদিও সে চুরি করে)? অর্থাৎ কোনও ব্যক্তি যদি তাওহীদের অবস্থায় মারা যায় এবং সে শিরকে লিপ্ত না হয়ে থাকে, কিন্তু সে ব্যভিচার বা চুরির মত মহাপাপ করে থাকে, তবুও কি সে জান্নাতে প্রবেশ করবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন-(যদিও সে ব্যভিচার করে, যদিও সে চুরি করে)। অর্থাৎ এরূপ মহাপাপ করা সত্ত্বেও সে জান্নাতে যাবে। আর এ উভয় কথার মধ্যে কোনও বিরোধ নেই। কেননা শিরকে লিপ্ত না থাকা অবস্থায় মারা গেলে যে জান্নাতে প্রবেশ করবে তার অর্থ তার যদি কোনও কবীরা গুনাহ না থাকে তবে শুরুতেই জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর কবীরা গুনাহ থাকলে প্রথমে জাহান্নামে তার নির্দিষ্ট শাস্তি ভোগ করবে এবং শাস্তির মেয়াদ পূরণ হওয়ার পর সে জান্নাতে যাবে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. তাওহীদ আঁকড়ে ধরা চাই। এটাই আখিরাতে মুক্তিলাভের আসল উপায়।
খ. সদা সর্বদা সতর্ক থাকা উচিত যাতে কোনওক্রমেই শিরকে জড়িয়ে পড়া না হয়। কেননা শিরককারী জান্নাতে যেতে পারবে না।
গ. কিছুতেই কবীরা গুনাহ করা উচিত নয়। কখনও হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে তাওবা করে ফেলা চাই। অন্যথায় জাহান্নামের শাস্তিভোগের আশঙ্কা রয়েছে।
لا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ قَاطِع
"আত্মীয়তা ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।"
অপর এক হাদীছে আছে-
لا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنَّانٌ، وَلَا عَاق، وَلَا مُدْمِنُ خَمْرٍ
"দান করার পর যে ব্যক্তি খোঁটা দেয়, পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান এবং মদ পানকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।"
এরকম আরও বহু হাদীছ আছে, যা প্রমাণ করে কোনও কোনও কবীরা গুনাহের কারণে মুমিনদেরকেও জাহান্নামে যেতে হবে। তারা জান্নাতে যেতে পারবে না। হাদীসে আছে, হযরত আবু যার রাযি.তখন প্রশ্ন করলেন- (যদিও সে ব্যভিচার করে এবং যদিও সে চুরি করে)? অর্থাৎ কোনও ব্যক্তি যদি তাওহীদের অবস্থায় মারা যায় এবং সে শিরকে লিপ্ত না হয়ে থাকে, কিন্তু সে ব্যভিচার বা চুরির মত মহাপাপ করে থাকে, তবুও কি সে জান্নাতে প্রবেশ করবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন-(যদিও সে ব্যভিচার করে, যদিও সে চুরি করে)। অর্থাৎ এরূপ মহাপাপ করা সত্ত্বেও সে জান্নাতে যাবে। আর এ উভয় কথার মধ্যে কোনও বিরোধ নেই। কেননা শিরকে লিপ্ত না থাকা অবস্থায় মারা গেলে যে জান্নাতে প্রবেশ করবে তার অর্থ তার যদি কোনও কবীরা গুনাহ না থাকে তবে শুরুতেই জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর কবীরা গুনাহ থাকলে প্রথমে জাহান্নামে তার নির্দিষ্ট শাস্তি ভোগ করবে এবং শাস্তির মেয়াদ পূরণ হওয়ার পর সে জান্নাতে যাবে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. তাওহীদ আঁকড়ে ধরা চাই। এটাই আখিরাতে মুক্তিলাভের আসল উপায়।
খ. সদা সর্বদা সতর্ক থাকা উচিত যাতে কোনওক্রমেই শিরকে জড়িয়ে পড়া না হয়। কেননা শিরককারী জান্নাতে যেতে পারবে না।
গ. কিছুতেই কবীরা গুনাহ করা উচিত নয়। কখনও হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে তাওবা করে ফেলা চাই। অন্যথায় জাহান্নামের শাস্তিভোগের আশঙ্কা রয়েছে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)