মুসনাদে আহমদ- ইমাম আহমদ রহঃ (আল-ফাতহুর রব্বানী)

৪. ইলমের অধ্যায়

হাদীস নং: ২৫
আন্তর্জাতিক নং: ২৩২৬৩
ইলমের অধ্যায়
(৪) পরিচ্ছেদঃ ইলমের বৈঠক ও তার শিষ্টাচার এবং ইলম শিক্ষার্থীদের আদব প্রসঙ্গে
(২৫) হুযায়ফা বিন আল-ইয়ামান (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি বৈঠকের মধ্যস্থলে বসে, সে আল্লাহর নবী (ﷺ)-এর অথবা মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর ভাষায় অভিশপ্ত। (অর্থাৎ সভাস্থলের মধ্যস্থানে বসে অপরের জন্য স্থান করে দিতে অস্বীকার করে, কিংবা অন্যের কষ্টের কারণ হয়, সে অভিশপ্ত।)
كتاب العلم
(4) باب في مجالس العلم وادابها وآداب المتعلم
25) عن أبي مجلز عن حذيفة (بن اليمان) -في الذي يقعد في وسط الحلقة قال: ملعون على لسان النبي صلى الله عليه وسلم أو لسان محمد صلى الله عليه وسلم.

হাদীসের ব্যাখ্যা:

বৃত্তাকারে অর্থাৎ গোল হয়ে বসা লোকদের মাঝখানে গিয়ে যে ব্যক্তি বসে, এ হাদীছে তাকে অভিশপ্ত বলে জানানো হয়েছে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যবানিতে আল্লাহ তা'আলা তাকে লা'নত করেছেন। অর্থাৎ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সম্পর্কে বলেছেন যে, তার প্রতি আল্লাহ তা'আলার লা'নত হোক। বোঝা গেল বৃত্তাকারে থাকা লোকজনদের মাঝখানে গিয়ে বসা নিতান্তই মন্দ কাজ। কেননা এতে এক তো মানুষকে ডিঙিয়ে ভেতরে যেতে হয়। এতে করে তাদেরকে কষ্ট দেওয়া হয়। দ্বিতীয়ত বৃত্তাকারে বসার দ্বারা প্রত্যেকেই প্রত্যেকের চেহারা দেখতে পায়। একজন আরেকজনের চেহারার দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারে। এতে কথা বলাটা যেমন স্বচ্ছন্দ হয়, তেমনি কথা বোঝাটাও সহজ হয়। তাছাড়া চেহারার দিকে তাকিয়ে কথা বলাটা পারস্পরিক মহব্বত সৃষ্টিতেও সহায়ক। এখন কেউ যদি মাঝখানে গিয়ে বসে, তবে একের চেহারা অন্যের আড়ালে পড়ে যায়। ফলে গোল হয়ে বসার উল্লিখিত ফায়দা থেকে উপস্থিত লোকেরা বঞ্চিত হয়ে যায়। আর এভাবে বসা শৃঙ্খলাপরিপন্থিও বটে এবং অন্যদের পক্ষে বিরক্তিকরও। যে আচরণ অন্যের জন্য বিরক্তিকর বা অন্যের ক্ষতিসাধন করে, তা করা কিছুতেই জায়েয নয়। এ কারণেই যে ব্যক্তি এরূপ করে তাকে লা'নত করা হয়েছে। লা'নত করার উদ্দেশ্য সতর্ক করা, যাতে এরূপ কেউ না করে।

কেউ কেউ এর ব্যাখ্যা করেছেন এরূপ যে, অনেক সময় ভাঁড় কিসিমের লোক মাঝখানে বসে আর তার চারপাশে উপস্থিত লোকজন তাকে নিয়ে ঠাট্টা-মশকরা করে। সেও বেহুদা কথাবার্তা ও অরুচিকর ভাবভঙ্গি দ্বারা তাদের সঙ্গে হাস্যরস করে। এর দ্বারা ব্যক্তির মর্যাদা নষ্ট হয়। মানুষের দৃষ্টিতে সে তামাশার বস্তুতে পরিণত হয়। মানুষ আল্লাহ তা'আলার সর্বাপেক্ষা মর্যাদাবান মাখলুক। তাই কারও অন্যের সম্মানে আঘাত করা যেমন জায়েয নয়, তেমনি যা-কিছু দ্বারা আত্মসম্মান নষ্ট হয় তাতে লিপ্ত হওয়াও বৈধ নয়। ভাঁড়ামি করার দ্বারা যেহেতু ব্যক্তির মান-সম্মান ধ্বংস হয়, তাই ইসলাম এ কাজকে সম্পূর্ণ অবৈধ সাব্যস্ত করেছে। কেউ যাতে এহেন অমর্যাদাকর কাজে লিপ্ত না হয়, তাই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ ব্যক্তিকে লা'নত করেছেন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. গোলাকারে বসে থাকা লোকদের মাঝখানে গিয়ে বসা যাবে না।

খ. ভাঁড়ামি করা সম্পূর্ণ নাজায়েয কাজ।

গ. যে কাজ অন্যের বিরক্তির সঞ্চার করে, তা থেকে বিরত থাকতে হবে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান