মুসনাদে আহমদ- ইমাম আহমদ রহঃ (আল-ফাতহুর রব্বানী)
৩. তাক্বদীরের অধ্যায়
হাদীস নং: ২১
আন্তর্জাতিক নং: ৩৭৪ - ১
(৩) পরিচ্ছেদঃ তাকদীরে বিশ্বাস প্রসঙ্গে
(২১) ইয়াহইয়া বিন ইয়া'মার থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইবন্ উমর (রা)-কে বললাম, আমরা বিভিন্ন দূর-দূরান্তের গন্তব্যে সফর করে থাকি, তখন আমরা এমন সম্প্রদায়ের সাক্ষাৎ লাভ করি যারা বলে থাকে যে, ‘তাকদীর' বলে কিছু নেই। ইবন উমর (রা) আমার কথা শুনে বললেন, যদি তোমরা এ ধরনের সম্প্রদায়ের সাক্ষাৎ পাও, তবে তাদেরকে জানিয়ে দিও যে, আব্দুল্লাহ বিন উমর তাদের দায়-দায়িত্ব থেকে মুক্ত এবং তারাও তাঁর দায়িত্ব থেকে মুক্ত। (একথাটি তিনি তিনবার বললেন, এরপর তিনি বলতে থাকেন, একবার আমরা রাসূল (ﷺ)-এর দরবারে উপস্থিত ছিলাম, তখন জনৈক ব্যক্তি আগমন করেন (রাসূল (ﷺ)-এর কাছে) এবং তাঁর অবস্থা বর্ণনা করেন। রাসূল (ﷺ) তাঁকে বললেন, কাছে এসো, তখন তিনি কিছুটা কাছে এলেন, রাসূল (ﷺ) পুনরায় বলেন, কাছে এসো, তিনি আরও কাছে গেলেন এবং অবস্থা এমন হল যে আগন্তুকের হাঁটু রাসূল (ﷺ)-এর হাঁটু ছুঁই ছুঁই করছে। অতঃপর আগন্তুক বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! ঈমান কী? অথবা আমাকে ঈমান সম্পর্কে কিছু বলুন, রাসূল (ﷺ) বললেন, আপনি আন্তরিক বিশ্বাস স্থাপন করবেন আল্লাহর সত্তায়, তাঁর ফিরিশতাগণে, তাঁর কিতাবসমূহে, তাঁর প্রেরিত রাসূলগণে, শেষ দিবসে এবং বিশ্বাস স্থাপন করবেন তাকদীরে। সুফিয়ান বলেন, আমার মনে হল যে, তিনি এও বলেছিলেন, ভাল হউক কিংবা মন্দ হোক। আগন্তুক জিজ্ঞেস করলেন, ইসলাম কী? উত্তরে রাসূল (ﷺ) বললেন, সালাত প্রতিষ্ঠা করা, যাকাত প্রদান, বায়তুল্লাহর হজ্ব পালন, রমযানের সিয়াম পালন, অপবিত্রতা থেকে গোসল (ফরয গোসল) করা (ইত্যাদি) প্রতিটি বিষয়। আগন্তুক বললেন, সত্য বলেছেন, সত্য বলেছেন। উপস্থিত দর্শকবৃন্দ বলেন, কোন ব্যক্তিকে তাঁর চেয়ে অধিক সম্মান প্রদর্শন করতে আমরা দেখি নি। তিনি যেন রাসূল (ﷺ)-কে (প্রশ্নের মাধ্যমে) শিক্ষা দিচ্ছেন। এরপর আগন্তুক আবার প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ), আমাকে 'ইহসান' সম্পর্কে কিছু বলুন, উত্তরে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেনঃ আপনি আল্লাহর ইবাদত করবেন এমনভাবে যেন আপনি আল্লাহকে দেখতে পাচ্ছেন। আর যদি আপনি তাঁকে দেখতে না পারেন, তিনি তো (অবশ্যই) আপনাকে দেখছেন (এই আন্তরিক অনুভূতির নাম হচ্ছে 'ইহসান') আগন্তুকের চাইতে অধিক সম্মান প্রদর্শনকারী রাসূলের প্রতি অন্য কাউকে দেখিনি, আগন্তুক বললেন- সত্য বলেছেন, সত্য বলেছেন। এবার আমাকে 'কিয়ামত' সম্পর্কে কিছু বলুন, রাসূল (ﷺ) বললেন, (এ বিষয়ে) যাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছে তিনি প্রশ্নকারীর চেয়ে অধিক কিছু অবগত নন । এবারও (প্রশ্নকারী) কয়েকবার বললেন, 'সত্য বলেছেন' আর আমরা আবারও বলছি যে, রাসূলকে সম্মান প্রদর্শনের ব্যাপারে এর চেয়ে অধিক কাউকে দেখি নি।
এ পর্যায়ে প্রশ্নকারী (আগন্তুক) প্রস্থান করলেন, সুফিয়ান বলেন, আমি জানতে পেরেছি যে, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) (আগন্তুকের প্রস্থানের পর) দর্শকদের বলেছিলেন যে, তোমরা তাঁকে খুঁজে বের কর, কিন্তু তাঁরা তাঁকে খুঁজে পায় নি। তখন তিনি (রাসূল (ﷺ) বললেন, ইনি হচ্ছেন জিবরাঈল (আ), তোমাদেরকে তোমাদের দীন শিক্ষা দেয়ার উদ্দেশ্যে (আজ) এসেছিলেন, তিনি যে কোন আকৃতি ধারণ করেই আসুন না কেন, আমি তাঁকে চিনতে পারি কিন্তু এরূপে তাঁকে চিনতে পারি নি।
(এই বর্ণনাকারী থেকে দ্বিতীয় সূত্রে বর্ণিত) তিনি বলেন, আমি ইবন উমর (রা)-কে বললাম, আমাদের মধ্যে কিছু লোক এমন আছেন যে, তারা মনে করে থাকে যে, কর্ম ও ফলাফল তাদের নিজের হাতে, যদি তারা ইচ্ছা করে কর্ম করবেন, আর যদি ইচ্ছা না করে কর্ম করবে না (এরূপ ধারণা তারা লালন করে থাকে)। তিনি বললেন, ঐরূপ লোকদের জানিয়ে দিও যে, আমি তাদের দায়-দায়িত্ব থেকে মুক্ত এবং তারাও আমার দায় থেকে মুক্ত (অর্থাৎ তাদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই)। অতঃপর বলেন, একদা জিবরাঈল (আ) নবী (ﷺ)-এর কাছে এসে বললেন, ইয়া মুহাম্মাদ, ইসলাম কী? তিনি বললেন, আল্লাহর ইবাদত করবেন তাঁর সাথে কোন কিছু শরীক করবেন না, সালাত কায়েম করবেন, যাকাত প্রদান করবেন, রমযানের সিয়াম পালন করবেন, বায়তুল্লাহর হজ্ব পালন করবেন। জিবরাঈল (আ) বললেন, যদি আমি এরূপ করি, তবে আমি কি মুসলিম? তিনি বললেন, হ্যাঁ। জিবরাঈল (আ) বললেন, আপনি সত্য বলেছেন, জিবরাঈল (আ) আবার প্রশ্ন করলেন, 'ইহসান' কী? বললেন, আল্লাহ তা'আলাকে ভয় করবেন, যেন আপনি তাঁকে দেখছেন, যদিও আপনি তাঁকে দেখতে পাচ্ছেন না কিন্তু তিনি তো আপনাকে দেখছেন। জিবরাঈল (আ) বললেন যদি আমি এরূপ করি তবে কি আমি 'মুহসিন'? তিনি বললেন, হ্যাঁ, জিবরাঈল (আ) বললেন, আপনি সত্য বলেছেন । এবার বলুন ঈমান কী? বললেন, আন্তরিক বিশ্বাস রাখবেন আল্লাহর ওপর, তাঁর ফিরিশতাগণের ওপর, তাঁর কিতাবসমূহের ওপর, তাঁর রাসূলগণের ওপর, মৃত্যুর পর পুনরুত্থানের ওপর, জান্নাত ও দোযখের ওপর এবং সামগ্রিকভাবে তাকদীরের ওপর। জিবরাঈল (আ) বললেন, এরূপ করলে কি আমি মু'মিন? রাসূল (ﷺ) উত্তর করলেন, হ্যাঁ, জিবরাঈল (আ) বললেন, আপনি সত্য বলেছেন। (অন্য একটি বর্ণনায় এ কথাটি অতিরিক্ত এসেছে যে, জিবরাঈল, (আ) রাসূল (ﷺ)-এর কাছে দাহিয়্যা (আল-কালবী)-এর আকৃতি ধারণ করে আগমন করতেন।
(একই বর্ণনাকারী থেকে তৃতীয় একটি সূত্রে বর্ণিত) হযরত ইবন উমর (রা) থেকে বর্ণিত, (একদা) জিবরাঈল (আ) রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, ঈমান কী? তিনি বললেন, আন্তরিক বিশ্বাস রাখবেন আল্লাহর ওপর, তাঁর ফিরিশতাগণের ওপর, তাঁর কিতাবসমূহের ওপর, তাঁর রাসূলগণের ওপর, শেষ দিবসের ওপর এবং ভাল-মন্দ তাকদীরের ওপর। তখন জিবরাঈল (আ) বললেন, আপনি সত্য বলেছেন। তখন আমরা তাঁর আচরণে বিস্মিত হলাম । (কারণ) তিনি প্রশ্নও করেছেন, আবার (প্রশ্নের উত্তর) সত্যয়ন করেছেন। বর্ণনাকারী বলেছেন, অতঃপর আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বললেন, ইনি হচ্ছেন জিবরাঈল (আ) তোমাদেরকে তোমাদের দীনের প্রধান বিষয়গুলো (চিহ্নসমূহ) শিক্ষা দেয়ার উদ্দেশ্যে আগমন করেছেন।
(একই বর্ণনাকারী থেকে চতুর্থ একটি সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা (একদা) আব্দুল্লাহ ইবন উমর (রা)-এর সাথে সাক্ষাৎ করি এবং তাকদীর প্রসঙ্গে লোকদের (ভ্রান্ত) ধারণা সম্পর্কে আলোচনা করি। তখন তিনি আমাদেরকে বলেন, তোমরা ঐসব লোকদের কাছে যখন প্রত্যাবর্তন করবে, তখন তাদেরকে বলে দেবে যে, ইবন্ উমর তোমাদের (দায়-দায়িত্ব) থেকে মুক্ত এবং তোমরাও তাঁর (দায়) থেকে মুক্ত। তিনি তিনবার বললেন। এরপর এমন সময় জনৈক ভদ্রলোক পায়ে হেঁটে তাঁর কাছে আগমন করলেন, তাঁর চেহারা সুন্দর, কেশরাজি সুন্দর, তাঁর পরিধেয় বস্ত্র শুভ্র সুন্দর। উপস্থিত জনতা পরস্পর মুখ দেখাদেখি করতে লাগলেন। (কেননা) আমরা কেউ তাঁকে চিনতে পারছিলাম না, অথবা তিনি সফরকারীও (মুসাফির) নন। অতঃপর আগন্তুক বললেন, আসতে পারি ইয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ)! রাসূল (ﷺ) বললেন, হ্যাঁ। অতঃপর তিনি (তাঁর) কাছে এলেন এবং এমনভাবে উপবিষ্ট হলেন যে, তার হাঁটুদ্বয় রাসূল (ﷺ)-এর হাঁটুদ্বয়ের সাথে রাখলেন এবং হস্তদ্বয় রাখলেন তার (স্বীয়) রানের (উরুর) উপর। (এভাবেই এ হাদীস অগ্রসর হয়েছে, যেমনটি কিতাবুল ঈমানের দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে এসেছে। তাতে আরও রয়েছে যে, প্রশ্নকারী আগন্তুক চলে যাওয়ার পর) রাসূল (ﷺ) বলেন, ঐ ব্যক্তিকে খুঁজতে হবে, জনতা (তাঁকে অনুসরণ করে) তালাশ করল কিন্তু কিছুই দেখতে পেল না। অতঃপর রাসূল (ﷺ) দুই দিন অথবা তিনদিন অতিবাহিত করলেন । এরপর বললেন, হে খাত্তাব পুত্র (উমর), আপনি জানেন কি ঐসব বিষয়ে প্রশ্নকর্তা কে ছিলেন? (উমর (রা) বললেন, আল্লাহ ও তদীয় রাসূল ভাল জানেন। রাসূল (ﷺ) বললেন, তিনি ছিলেন জিবরাঈল (আ)। তিনি এসেছিলেন তোমাদেরকে তোমাদের দীন শিক্ষা দেওয়ার জন্য। বর্ণনাকারী বলেন, রাসূল (ﷺ)-কে এ পর্যায়ে জুহাইনা অথবা মুযাইনা গোত্রের জনৈক ব্যক্তি প্রশ্ন করেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ), আমরা তবে কিসের ভিত্তিতে আমল বা কর্ম করবো- এমন বিষয়ে যা অতিবাহিত হয়ে গিয়েছে বা অতীত হয়ে গিয়েছে; না কি এমন বিষয়ে যা এখন নতুনভাবে শুরু করা হবে? (অর্থাৎ আমরা তাকদীরে বিশ্বাস রেখে কাজ করবো, নাকি আমরা কর্মের মাধ্যমে ভাগ্য নির্ধারণ করবো?) রাসূল (ﷺ) বললেন, যা অতিবাহিত হয়েছে বা অতীত হয়ে গিয়েছে (সেই তাকদীরে বিশ্বাস রেখে কর্ম করবে।)
অতঃপর অন্য একজন অথবা কয়েকজন জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! আমরা কিসের ভিত্তিতে, কিভাবে কর্ম করবো? রাসূল বললেন, জান্নাতবাসীগণের জন্য জান্নাতে প্রবেশের যোগ্য কর্মসমূহ সহজ ও সাবলীল হবে, আর দোযখবাসীদের জন্য দোযখবাসীর কাজ সহজ ও অনায়াসী হবে। ইয়াহইয়া বলেন, তিনি (রাসূল) এইভাবেই বলেছেন, যেমন তুমি এখন আমার সম্মুখে বর্ণনা করলে। (মুসলিম, তাবারানী, আবূ না'ঈম ও অন্যান্য)
এ পর্যায়ে প্রশ্নকারী (আগন্তুক) প্রস্থান করলেন, সুফিয়ান বলেন, আমি জানতে পেরেছি যে, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) (আগন্তুকের প্রস্থানের পর) দর্শকদের বলেছিলেন যে, তোমরা তাঁকে খুঁজে বের কর, কিন্তু তাঁরা তাঁকে খুঁজে পায় নি। তখন তিনি (রাসূল (ﷺ) বললেন, ইনি হচ্ছেন জিবরাঈল (আ), তোমাদেরকে তোমাদের দীন শিক্ষা দেয়ার উদ্দেশ্যে (আজ) এসেছিলেন, তিনি যে কোন আকৃতি ধারণ করেই আসুন না কেন, আমি তাঁকে চিনতে পারি কিন্তু এরূপে তাঁকে চিনতে পারি নি।
(এই বর্ণনাকারী থেকে দ্বিতীয় সূত্রে বর্ণিত) তিনি বলেন, আমি ইবন উমর (রা)-কে বললাম, আমাদের মধ্যে কিছু লোক এমন আছেন যে, তারা মনে করে থাকে যে, কর্ম ও ফলাফল তাদের নিজের হাতে, যদি তারা ইচ্ছা করে কর্ম করবেন, আর যদি ইচ্ছা না করে কর্ম করবে না (এরূপ ধারণা তারা লালন করে থাকে)। তিনি বললেন, ঐরূপ লোকদের জানিয়ে দিও যে, আমি তাদের দায়-দায়িত্ব থেকে মুক্ত এবং তারাও আমার দায় থেকে মুক্ত (অর্থাৎ তাদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই)। অতঃপর বলেন, একদা জিবরাঈল (আ) নবী (ﷺ)-এর কাছে এসে বললেন, ইয়া মুহাম্মাদ, ইসলাম কী? তিনি বললেন, আল্লাহর ইবাদত করবেন তাঁর সাথে কোন কিছু শরীক করবেন না, সালাত কায়েম করবেন, যাকাত প্রদান করবেন, রমযানের সিয়াম পালন করবেন, বায়তুল্লাহর হজ্ব পালন করবেন। জিবরাঈল (আ) বললেন, যদি আমি এরূপ করি, তবে আমি কি মুসলিম? তিনি বললেন, হ্যাঁ। জিবরাঈল (আ) বললেন, আপনি সত্য বলেছেন, জিবরাঈল (আ) আবার প্রশ্ন করলেন, 'ইহসান' কী? বললেন, আল্লাহ তা'আলাকে ভয় করবেন, যেন আপনি তাঁকে দেখছেন, যদিও আপনি তাঁকে দেখতে পাচ্ছেন না কিন্তু তিনি তো আপনাকে দেখছেন। জিবরাঈল (আ) বললেন যদি আমি এরূপ করি তবে কি আমি 'মুহসিন'? তিনি বললেন, হ্যাঁ, জিবরাঈল (আ) বললেন, আপনি সত্য বলেছেন । এবার বলুন ঈমান কী? বললেন, আন্তরিক বিশ্বাস রাখবেন আল্লাহর ওপর, তাঁর ফিরিশতাগণের ওপর, তাঁর কিতাবসমূহের ওপর, তাঁর রাসূলগণের ওপর, মৃত্যুর পর পুনরুত্থানের ওপর, জান্নাত ও দোযখের ওপর এবং সামগ্রিকভাবে তাকদীরের ওপর। জিবরাঈল (আ) বললেন, এরূপ করলে কি আমি মু'মিন? রাসূল (ﷺ) উত্তর করলেন, হ্যাঁ, জিবরাঈল (আ) বললেন, আপনি সত্য বলেছেন। (অন্য একটি বর্ণনায় এ কথাটি অতিরিক্ত এসেছে যে, জিবরাঈল, (আ) রাসূল (ﷺ)-এর কাছে দাহিয়্যা (আল-কালবী)-এর আকৃতি ধারণ করে আগমন করতেন।
(একই বর্ণনাকারী থেকে তৃতীয় একটি সূত্রে বর্ণিত) হযরত ইবন উমর (রা) থেকে বর্ণিত, (একদা) জিবরাঈল (আ) রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, ঈমান কী? তিনি বললেন, আন্তরিক বিশ্বাস রাখবেন আল্লাহর ওপর, তাঁর ফিরিশতাগণের ওপর, তাঁর কিতাবসমূহের ওপর, তাঁর রাসূলগণের ওপর, শেষ দিবসের ওপর এবং ভাল-মন্দ তাকদীরের ওপর। তখন জিবরাঈল (আ) বললেন, আপনি সত্য বলেছেন। তখন আমরা তাঁর আচরণে বিস্মিত হলাম । (কারণ) তিনি প্রশ্নও করেছেন, আবার (প্রশ্নের উত্তর) সত্যয়ন করেছেন। বর্ণনাকারী বলেছেন, অতঃপর আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বললেন, ইনি হচ্ছেন জিবরাঈল (আ) তোমাদেরকে তোমাদের দীনের প্রধান বিষয়গুলো (চিহ্নসমূহ) শিক্ষা দেয়ার উদ্দেশ্যে আগমন করেছেন।
(একই বর্ণনাকারী থেকে চতুর্থ একটি সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা (একদা) আব্দুল্লাহ ইবন উমর (রা)-এর সাথে সাক্ষাৎ করি এবং তাকদীর প্রসঙ্গে লোকদের (ভ্রান্ত) ধারণা সম্পর্কে আলোচনা করি। তখন তিনি আমাদেরকে বলেন, তোমরা ঐসব লোকদের কাছে যখন প্রত্যাবর্তন করবে, তখন তাদেরকে বলে দেবে যে, ইবন্ উমর তোমাদের (দায়-দায়িত্ব) থেকে মুক্ত এবং তোমরাও তাঁর (দায়) থেকে মুক্ত। তিনি তিনবার বললেন। এরপর এমন সময় জনৈক ভদ্রলোক পায়ে হেঁটে তাঁর কাছে আগমন করলেন, তাঁর চেহারা সুন্দর, কেশরাজি সুন্দর, তাঁর পরিধেয় বস্ত্র শুভ্র সুন্দর। উপস্থিত জনতা পরস্পর মুখ দেখাদেখি করতে লাগলেন। (কেননা) আমরা কেউ তাঁকে চিনতে পারছিলাম না, অথবা তিনি সফরকারীও (মুসাফির) নন। অতঃপর আগন্তুক বললেন, আসতে পারি ইয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ)! রাসূল (ﷺ) বললেন, হ্যাঁ। অতঃপর তিনি (তাঁর) কাছে এলেন এবং এমনভাবে উপবিষ্ট হলেন যে, তার হাঁটুদ্বয় রাসূল (ﷺ)-এর হাঁটুদ্বয়ের সাথে রাখলেন এবং হস্তদ্বয় রাখলেন তার (স্বীয়) রানের (উরুর) উপর। (এভাবেই এ হাদীস অগ্রসর হয়েছে, যেমনটি কিতাবুল ঈমানের দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে এসেছে। তাতে আরও রয়েছে যে, প্রশ্নকারী আগন্তুক চলে যাওয়ার পর) রাসূল (ﷺ) বলেন, ঐ ব্যক্তিকে খুঁজতে হবে, জনতা (তাঁকে অনুসরণ করে) তালাশ করল কিন্তু কিছুই দেখতে পেল না। অতঃপর রাসূল (ﷺ) দুই দিন অথবা তিনদিন অতিবাহিত করলেন । এরপর বললেন, হে খাত্তাব পুত্র (উমর), আপনি জানেন কি ঐসব বিষয়ে প্রশ্নকর্তা কে ছিলেন? (উমর (রা) বললেন, আল্লাহ ও তদীয় রাসূল ভাল জানেন। রাসূল (ﷺ) বললেন, তিনি ছিলেন জিবরাঈল (আ)। তিনি এসেছিলেন তোমাদেরকে তোমাদের দীন শিক্ষা দেওয়ার জন্য। বর্ণনাকারী বলেন, রাসূল (ﷺ)-কে এ পর্যায়ে জুহাইনা অথবা মুযাইনা গোত্রের জনৈক ব্যক্তি প্রশ্ন করেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ), আমরা তবে কিসের ভিত্তিতে আমল বা কর্ম করবো- এমন বিষয়ে যা অতিবাহিত হয়ে গিয়েছে বা অতীত হয়ে গিয়েছে; না কি এমন বিষয়ে যা এখন নতুনভাবে শুরু করা হবে? (অর্থাৎ আমরা তাকদীরে বিশ্বাস রেখে কাজ করবো, নাকি আমরা কর্মের মাধ্যমে ভাগ্য নির্ধারণ করবো?) রাসূল (ﷺ) বললেন, যা অতিবাহিত হয়েছে বা অতীত হয়ে গিয়েছে (সেই তাকদীরে বিশ্বাস রেখে কর্ম করবে।)
অতঃপর অন্য একজন অথবা কয়েকজন জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! আমরা কিসের ভিত্তিতে, কিভাবে কর্ম করবো? রাসূল বললেন, জান্নাতবাসীগণের জন্য জান্নাতে প্রবেশের যোগ্য কর্মসমূহ সহজ ও সাবলীল হবে, আর দোযখবাসীদের জন্য দোযখবাসীর কাজ সহজ ও অনায়াসী হবে। ইয়াহইয়া বলেন, তিনি (রাসূল) এইভাবেই বলেছেন, যেমন তুমি এখন আমার সম্মুখে বর্ণনা করলে। (মুসলিম, তাবারানী, আবূ না'ঈম ও অন্যান্য)
(3) باب في اِِلإيمان بالقدر
(21) عن يحيى بن يعمر 5 قال قلت لابن عمر (رضي الله عنهما) إنا نسافر في الآفاق فنلقى قوما يقولون لا قدر، فقال ابن عمر إذا لقيتموهم فأخبروهم أن عبد الله بن عمر منهم بريء وأنهم منه برآء ثلاثا 6 ثم أنشأ يحدث، بينما نحن عند رسول الله صلى الله عليه وسلم فجاء رجل فذكر من هيئته فقال
رسول الله صلى الله عليه وسلم ادنه فدنا فقال ادنه فدنا حتى كاد ركبتاه تمسان ركبتيه فقال يا رسول الله أخبرني ما الإيمان أو عن الإيمان، قال تؤمن بالله وملائكته وكتبه ورسله واليوم الآخر وتؤمن بالقدر قال سفيان أراه قال خيره وشره، قال فما الإسلام، قال إقام الصلاة وإيتاء الزكاة وحج البيت وصيام شهر رمضان وغسل من الجنابة كل ذلك قال صدقت صدقت، قال القوم ما رأينا رجلا أشد توقيرا لرسول الله صلى الله عليه وسلم من هذا كأنه يعلم رسول الله صلى الله عليه وسلم ثم قال يا رسول الله أخبرني عن الإحسان، قال أن تعبد الله كأنك تراه فإلا تراه فإنه يراك، كل ذلك نقول ما رأينا رجلا أشد توقيرا لرسول الله صلى الله عليه وسلم من هذا فيقول صدقت صدقت، قال أخبرني عن الساعة قال ما المسئول عنها بأعلم بها من السائل قال فقال صدقت قال ذاك مرارا ما رأينا رجلا أشد توقيرا لرسول الله صلى الله عليه وسلم من هذا ثم ولى قال سفيان فبلغني أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال التمسوه فلم يجدوه قال هذا جبريل جاءكم يعلمكم دينكم، ما أتاني في صورة إلا عرفته غير هذه الصورة
(وعنه من طريق ثان) 1 قال قلت لابن عمر إن عندنا رجالا يزعمون أن الأمر بأيديهم فإن شاؤا عملوا وإن شاؤوا لم يعملوا فقال أخبرهم أني منهم بريء وأنهم مني برآء ثم قال جاء جبريل إلى النبي صلى الله عليه وسلم فقال يا محمد ما الإسلام فقال تعبد الله
لا تشرك بالله شيئا وتقيم الصلاة وتؤتي الزكاة وتصوم رمضان وتحج البيت قال فإذا فعلت ذلك، فأنا مسلم؟ قال نعم، قال صدقت قال فما الإحسان؟ قال تخشى الله تعالى كأنك تراه فإن لا تك تراه فإنه يراك قال فإذا فعلت ذلك فأنا محسن، قال نعم قال صدقت، قال فما الإيمان قال تؤمن بالله وملائكته وكتبه ورسله والبعث من بعد الموت والجنة والنار والقدر كله، قال فإذا فعلت ذلك فأنا مؤمن قال نعم قال صدقت (زاد في رواية وكان جبريل يأتي النبي صلى الله عليه وسلم في صورة دحية
(وعنه من طريق ثالث) 1 عن ابن عمر رضي الله عنهما أن جبريل قال للنبي صلى الله عليه وسلم ما الإيمان قال أن تؤمن بالله وملائكته وكتبه ورسله واليوم الآخر وبالقدر خيره وشره فقال له جبريل عليه السلام صدقت قال فتعجبنا منه يسأله ويصدقه قال فقال النبي صلى الله عليه وسلم ذاك جبريل أتاكم يعلمكم معالم دينكم
(وعنه من طريق رابع) 2 أي عن يحيى بن يعمر وحميد بن عبد الرحمن الحميري قال لقينا عبد الله بن عمر رضي الله عنهما فذكرنا القدر وما يقولون فيه 3 فقال لنا إذا رجعتم إليهم فقولوا إن ابن عمر منكم بريء وأنتم منه برآء ثلاث مرار ثم قال أخبرني عمر بن الخطاب رضي الله عنه أنهم بينا هم جلوس أو قعود عند النبي صلى الله عليه وسلم جاءه رجل يمشي حسن الوجه حسن الشعر عليه ثياب بيض فنظر القوم بعضهم
لا تشرك بالله شيئا وتقيم الصلاة وتؤتي الزكاة وتصوم رمضان وتحج البيت قال فإذا فعلت ذلك، فأنا مسلم؟ قال نعم، قال صدقت قال فما الإحسان؟ قال تخشى الله تعالى كأنك تراه فإن لا تك تراه فإنه يراك قال فإذا فعلت ذلك فأنا محسن، قال نعم قال صدقت، قال فما الإيمان قال تؤمن بالله وملائكته وكتبه ورسله والبعث من بعد الموت والجنة والنار والقدر كله، قال فإذا فعلت ذلك فأنا مؤمن قال نعم قال صدقت (زاد في رواية وكان جبريل يأتي النبي صلى الله عليه وسلم في صورة دحية
رسول الله صلى الله عليه وسلم ادنه فدنا فقال ادنه فدنا حتى كاد ركبتاه تمسان ركبتيه فقال يا رسول الله أخبرني ما الإيمان أو عن الإيمان، قال تؤمن بالله وملائكته وكتبه ورسله واليوم الآخر وتؤمن بالقدر قال سفيان أراه قال خيره وشره، قال فما الإسلام، قال إقام الصلاة وإيتاء الزكاة وحج البيت وصيام شهر رمضان وغسل من الجنابة كل ذلك قال صدقت صدقت، قال القوم ما رأينا رجلا أشد توقيرا لرسول الله صلى الله عليه وسلم من هذا كأنه يعلم رسول الله صلى الله عليه وسلم ثم قال يا رسول الله أخبرني عن الإحسان، قال أن تعبد الله كأنك تراه فإلا تراه فإنه يراك، كل ذلك نقول ما رأينا رجلا أشد توقيرا لرسول الله صلى الله عليه وسلم من هذا فيقول صدقت صدقت، قال أخبرني عن الساعة قال ما المسئول عنها بأعلم بها من السائل قال فقال صدقت قال ذاك مرارا ما رأينا رجلا أشد توقيرا لرسول الله صلى الله عليه وسلم من هذا ثم ولى قال سفيان فبلغني أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال التمسوه فلم يجدوه قال هذا جبريل جاءكم يعلمكم دينكم، ما أتاني في صورة إلا عرفته غير هذه الصورة
(وعنه من طريق ثان) 1 قال قلت لابن عمر إن عندنا رجالا يزعمون أن الأمر بأيديهم فإن شاؤا عملوا وإن شاؤوا لم يعملوا فقال أخبرهم أني منهم بريء وأنهم مني برآء ثم قال جاء جبريل إلى النبي صلى الله عليه وسلم فقال يا محمد ما الإسلام فقال تعبد الله
لا تشرك بالله شيئا وتقيم الصلاة وتؤتي الزكاة وتصوم رمضان وتحج البيت قال فإذا فعلت ذلك، فأنا مسلم؟ قال نعم، قال صدقت قال فما الإحسان؟ قال تخشى الله تعالى كأنك تراه فإن لا تك تراه فإنه يراك قال فإذا فعلت ذلك فأنا محسن، قال نعم قال صدقت، قال فما الإيمان قال تؤمن بالله وملائكته وكتبه ورسله والبعث من بعد الموت والجنة والنار والقدر كله، قال فإذا فعلت ذلك فأنا مؤمن قال نعم قال صدقت (زاد في رواية وكان جبريل يأتي النبي صلى الله عليه وسلم في صورة دحية
(وعنه من طريق ثالث) 1 عن ابن عمر رضي الله عنهما أن جبريل قال للنبي صلى الله عليه وسلم ما الإيمان قال أن تؤمن بالله وملائكته وكتبه ورسله واليوم الآخر وبالقدر خيره وشره فقال له جبريل عليه السلام صدقت قال فتعجبنا منه يسأله ويصدقه قال فقال النبي صلى الله عليه وسلم ذاك جبريل أتاكم يعلمكم معالم دينكم
(وعنه من طريق رابع) 2 أي عن يحيى بن يعمر وحميد بن عبد الرحمن الحميري قال لقينا عبد الله بن عمر رضي الله عنهما فذكرنا القدر وما يقولون فيه 3 فقال لنا إذا رجعتم إليهم فقولوا إن ابن عمر منكم بريء وأنتم منه برآء ثلاث مرار ثم قال أخبرني عمر بن الخطاب رضي الله عنه أنهم بينا هم جلوس أو قعود عند النبي صلى الله عليه وسلم جاءه رجل يمشي حسن الوجه حسن الشعر عليه ثياب بيض فنظر القوم بعضهم
لا تشرك بالله شيئا وتقيم الصلاة وتؤتي الزكاة وتصوم رمضان وتحج البيت قال فإذا فعلت ذلك، فأنا مسلم؟ قال نعم، قال صدقت قال فما الإحسان؟ قال تخشى الله تعالى كأنك تراه فإن لا تك تراه فإنه يراك قال فإذا فعلت ذلك فأنا محسن، قال نعم قال صدقت، قال فما الإيمان قال تؤمن بالله وملائكته وكتبه ورسله والبعث من بعد الموت والجنة والنار والقدر كله، قال فإذا فعلت ذلك فأنا مؤمن قال نعم قال صدقت (زاد في رواية وكان جبريل يأتي النبي صلى الله عليه وسلم في صورة دحية
