মুসনাদে আহমদ- ইমাম আহমদ রহঃ (আল-ফাতহুর রব্বানী)

৭. নামাযের অধ্যায়

হাদীস নং: ১৫
আন্তর্জাতিক নং: ৮৯২৪
নামাযের অধ্যায়
(২) পরিচ্ছেদঃ পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের মর্যাদা ও সেগুলোর দ্বারা গুনাহ মাফ হওয়া প্রসঙ্গে
(১৫) আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনও রাসূল (ﷺ)-কে বলতে শুনেছেন। তোমরা বলো, তোমাদের কারো বাড়ির দরজায় যদি একটা নদী থাকে আর যদি সে তাতে প্রতিদিন পাঁচবার গোসল করে, তার গায়ে কি কোন ময়লা থাকতে পারে? তাঁরা বললেন, তার গায়ে কোন ময়লা থাকতে পারে না। (অতঃপর) তিনি বললেন, এটা হলো পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের মত। আল্লাহ তা'আলা এর দ্বারা গুনাহ মাফ করে দেন।
كتاب الصلاة
(2) باب فى فضل الصلوات الخمس وانها مكفرة للذنوب
(15) عن أبى هريرة رضى الله عنه أنَّه سمع رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول أرأيتم لو أنَّ نهرًا بباب أحدكم يغتسل منه كلَّ يومٍ خمس مرَّاتٍ ما تقولون هل يبقى من درنه؟ قالوا لا يبقى من درنه شيءٌ، قال ذاك مثل الصَّلوات الخمس يمحو الله بها الخطايا

হাদীসের ব্যাখ্যা:

নামাযকে বাড়ির সম্মুখে প্রবাহিত গভীর নদীর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। নদী গভীর ও প্রবাহমান হলে তার পানি স্বচ্ছ হয়ে থাকে। পানি যত স্বচ্ছ হয়, তা দ্বারা ময়লাও ততবেশি দূর হয়। কর্মব্যস্ততায় ধুলোমলিন লোক পরিষ্কার পানি দ্বারা রোজ পাঁচবার গোসল করলে তার শরীরে আদৌ ময়লা থাকতে পারে না। ঠিক তেমনি নামায দ্বারাও পাপের মলিনতা দূর হয়। যে ব্যক্তি রোজ পাঁচবার বাড়ি থেকে বের হয়ে সামনের মসজিদে নামায পড়বে, তার সেদিনের সমস্ত সগীরা গুনাহ মাফ হয়ে যাবে।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
الصَّلَوَاتُ الْخَمْسُ وَالْجُمُعَةُ إِلَى الْجُمُعَةِ، كَفَّارَاتٌ لِمَا بَيْنَهُنَّ، مَا لَمْ تُغْشَ الْكَبَائِرُ .
'পাঁচ নামায এবং জুমু'আ হতে অপর জুমু'আ তার মধ্যবর্তী সমস্ত গুনাহের জন্য কাফ্ফারা, যাবৎ না কবীরা গুনাহ করা হয়।

অর্থাৎ পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের প্রতি দুই ওয়াক্ত দ্বারা তার মাঝখানের সগীরা গুনাহসমূহ মাফ হয়ে যায়। এমনিভাবে এক জুমু'আ থেকে অপর জুমু'আ দ্বারা মধ্যবর্তী সমস্ত সগীরা গুনাহ মাফ হয়ে যায়। আল্লাহু আকবার। কতইনা মেহেরবান আমাদের মাওলা। নামায পড়া তাঁর আদেশ। মনিব কোনও আদেশ করলে গোলাম তা মানতে বাধ্য। তাতে আবার পুরস্কার কিসের? অথচ দয়াময় আল্লাহ নামাযের বিনিময়ে আখিরাতে বিশাল পুরস্কারও দান করবেন। তদুপরি এর মধ্যে তিনি এই বাড়তি কল্যাণও নিহিত রেখেছেন যে, এর দ্বারা পাপের পঙ্কিলতাও দূর হয়। বান্দা নিজ অবহেলা ও অসতর্কতায় পাপ করে, অথচ সেজন্য সহজে যাতে সে শাস্তির সম্মুখীন না হয় সেজন্য তিনি দয়াপরবশ হয়ে অতি সহজে তার ক্ষমালাভেরও ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এতসব মেহেরবানীর কী শোকর আমার আদায় করতে পারি? নামায দ্বারা গুনাহ মাফ হওয়া সম্পর্কে কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
وَأَقِمِ الصَّلَاةَ طَرَفَيِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِنَ اللَّيْلِ إِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِ ذَلِكَ ذِكْرَى لِلذَّاكِرِينَ
এবং (হে নবী!) দিনের উভয় প্রান্তে এবং রাতের কিছু অংশে নামায কায়েম কর। নিশ্চয়ই পুণ্যরাজি পাপরাশিকে মিটিয়ে দেয়। যারা উপদেশ মানে তাদের জন্য এটা এক উপদেশ।

প্রকাশ থাকে যে, নামায দ্বারা মাফ হয় শুধু সগীরা গুনাহ, কবীরা গুনাহ নয়। কবীরা শুনাহ মাফ হওয়ার জন্য তাওবা জরুরি।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. এ হাদীছ দ্বারা আল্লাহ তা'আলার অশেষ দয়ামায়ার পরিচয় পাওয়া যায়।

খ. এ হাদীছ আমাদের অন্তরে ক্ষমাপ্রাপ্তির আশা যোগায়।

গ. এ হাদীছ আমাদেরকে সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায়ের প্রতি উৎসাহ দান করে। আমরা অবশ্যই এর উপর আমল করতে থাকব। আল্লাহ তা'আলা তাওফীক দান করুন।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান