আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৬৭- নম্রতা ও যুহদের অধ্যায়

হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ৬৫৭৩
৩৪৬৩. সিরাত হল জাহান্নামের পুল।
৬১২৬। আবুল ইয়ামান ও মাহমুদ (রাহঃ) ......... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ একদা কতিপয় লোক বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কিয়ামতের দিন আমরা কি আমাদের প্রভুকে দেখতে পাব? উত্তরে তিনি বললেনঃ সূর্যের নীচে যখন কোন মেঘ না থাকে, তখন তা দেখতে কি তোমাদের কোন অসুবিধা হয়? তারা বলল, না, ইয়া রাসূলাল্লাহ। তিনি বললেনঃ পূর্ণিমার চাঁদ যদি মেঘের অন্তরালে না থাকে তবে তা দেখতে কি তোমাদের কোন অসুবিধা হয়? তারা বলল, না, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি বললেনঃ তোমরা নিশ্চয়ই কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলাকে ঐরূপ দেখতে পাবে।
আল্লাহ তাআলা সকল মানুষকে একত্রিত করে বলবেন, (দুনিয়াতে) তোমরা যে যেই জিনিসের ইবাদত করেছিলে, সে তার সাথে চলে যাও। অতএব সূর্যের ইবাদতকারী সূর্যের সাথে, চন্দ্রের ইবাদতকারী চন্দ্রের সাথে এবং মূর্তিপূজারী মূর্তির সাথে চলে যাবে। অবশিষ্ট থাকবে এ উম্মতের লোকেরা, যাদের মাঝে মুনাফিক সম্প্রদায়ের লোকও থাকবে। তারা আল্লাহ তাআলাকে যে আকৃতিতে জানত, তার ব্যতিক্রম আকৃতিতে আল্লাহ তাআলা তাদের কাছে হাযির হবেন এবং বলবেন, আমি তোমাদের প্রভু। তখন তারা বলবে, আমরা তোমার থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাই। আমাদের প্রভু না আসা পর্যন্ত আমরা এ স্থানেই থেকে যাব। আমাদের প্রভু যখন আমাদের কাছে আসবেন, আমরা তাকে চিনে নেব। এরপর যে আকৃতিতে তারা আল্লাহ তাআলাকে জানত, সে আকৃতিতে তিনি তাদের কাছে হাযির হবেন এবং বলবেন, আমি তোমাদের প্রভু। তখন তারা বলবে হ্যাঁ, আপনি আমাদের প্রভু। তখন তারা আল্লাহ তাআলার অনুসরণ করবে। এরপর জাহান্নামের পুল স্থাপন করা হবে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন যে, সর্ব প্রথম আমি সেই পুল অতিক্রম করব। আর সেইদিন সমস্ত রাসূলের দুআ হবে اللَّهُمَّ سَلِّمْ سَلِّمْ অর্থাৎ হে আল্লাহ! রক্ষা কর, রক্ষা কর। সেই পুলের মাঝে সা'দান নামক (একপ্রকার তিক্ত কাটাদার গাছ) গাছের কাটার ন্যায় কাঁটা থাকবে। তোমরা কি সা'দানের কাঁটা দেখেছ। তারা বলল, হ্যাঁ, ইয়া রাসূলাল্লাহ। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ এ কাঁটাগুলি সা’দানের কাঁটার মতই হবে, তবে তা যে কত বড় হবে সে সম্পর্কে আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। সে কাঁটাগুলো মানুষকে তাদের আমল অনুসারে ছিনিয়ে নেবে। তাদের মাঝে কতিপয় লোক এমন হবে যে, তারা তাদের আমলের কারণে ধ্বংস হয়ে যাবে। আর কতিপয় লোক এমন হবে যে, তাদের আমল হবে সরিষাতুল্য নগণ্য। তবুও তারা নাজাত পাবে। এমনকি আল্লাহ তাআলা বান্দাদের বিচারকার্য সম্পাদন করবেন এবং ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর সাক্ষ্যদাতাদের থেকে যাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করার ইচ্ছা করবেন, আল্লাহ তাদেরকে বের করার জন্য ফিরিশতাদেরকে আদেশ করবেন। সিজদার চিহ্ন থেকে ফিরিশতারা তাদেরকে চিনতে পারবে।
আর আল্লাহ তাআলা বনী আদমের ঐ সিজদার স্থানগুলিকে জাহান্নামের জন্য হারাম করে দিয়েছেন। সুতরাং ফিরিশতারা তাদেরকে এমতাবস্থায় বের করবে যে, তখন তাদের দেহ থাকবে কয়লার মত। তারপর তাদের দেহে পানি ঢেলে দেয়া হবে। যাকে বলা হয় -মাউল হায়াত- সঞ্জীবনী পানি। সাগরের ঢেউয়ে ভেসে আসা আবর্জনায় যেরূপ উদ্ভিদ জন্মায়, পরে এগুলো যেরূপ সজীব হয় তারাও সেরূপ সজীব হয়ে যাবে। এ সময় জাহান্নামের দিকে মুখ করে এক ব্যক্তি দাড়িয়ে থাকবে আর বলবে, হে প্রভু! জাহান্নামের হাওয়া আমাকে ঝলসে দিয়েছে, এর জ্বলন্ত অঙ্গার আমাকে জ্বালিয়ে দিয়েছে। সুতরাং তুমি আমার চেহারাটা জাহান্নামের দিক থেকে ঘুরিয়ে দাও। এভাবে সে আল্লাহকে ডাকতে থাকবে। তখন আল্লাহ তাআলা বলবেনঃ আমি যদি তোমাকে এটা দিয়ে দেই তবে আর তুমি অন্যটির প্রার্থনা করবে? লোকটি বলবে, না, তোমার ইজ্জতের কসম! আর অন্যকিছু চাইব না। সুতরাং তার চেহারাটা জাহান্নামের দিক থেকে ফিরিয়ে দেয়া হবে। এরপর সে বলবে, হে প্রভূ! তুমি আমাকে জান্নাতের দরজার নিকটবর্তী করে দাও। আল্লাহ তাআলা বলবেন, তুমি কি বলনি যে, তুমি আমার কাছে আর অন্য কিছু চাইবে না? আফসোস তোমার জন্য হে আদম সন্তান! তুমি কতই না গাদ্দার? সে এরূপই প্রার্থনা করতে থাকবে। তখন আল্লাহ তাআলা বলবেনঃ সম্ভবত আমি যদি তোমাকে এটা দিয়ে দেই, তবে তুমি অন্য আরেকটি আমার কাছে প্রার্থনা করবে। লোকটি বলবে, না, তোমার ইজ্জতের কসম! অন্যটি আর চাইব না। তখন সে আল্লাহ তাআলার সঙ্গে এই মর্মে ওয়াদা করবে যে, সে আর কিছুই চাইবে না। তখন আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতের দরজার নিকটবর্তী করবেন। সে যখন জান্নাতের মধ্যস্থিত নিআমতগুলি দেখতে পাবে, তখন আল্লাহ যতক্ষণ চাইবেন ততক্ষণ সে চুপ থাকবে। এরপরই সে বলতে থাকবে, হে প্রভু! তুমি আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দাও। তখন আল্লাহ তাআলা বলবেন, তুমি কি বল নাই যে, তুমি আর কিছু চাইবে না? আফসোস তোমার জন্য হে আদম সন্তান! তুমি কতইনা গাদ্দার। লোকটি বলবে, হে প্রভু! তুমি আমাকে তোমার সৃষ্ট জীবের মাঝে সবচেয়ে হতভাগ্য কর না। এভাবে সে প্রার্থনা করতে থাকবে। পরিশেষে আল্লাহ তাআলা হেঁসে ফেলবেন। আর আল্লাহ তাআলা যখন হেঁসে ফেলবেন, তখন তাকে জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দিয়ে দিবেন। এরপর সে যখন জান্নাতে প্রবেশ করবে, তখন তাকে বলা হবে, তোমার যা ইচ্ছে হয়, আমার কাছে চাও। সে (বিভিন্ন) আরয করবে, এমনকি তার আকাঙ্ক্ষা নিঃশেষ হয়ে যাবে। তখন আল্লাহ তাআলা বলবেনঃ এগুলি তোমার এবং এর সমপরিমাণও তোমার।
আবু হুরায়রা (রাযিঃ) বলেনঃ ঐ লোকটি হচ্ছে সর্বশেষ জান্নাতে প্রবেশকারী। রাবী বলেন যে, এ সময় আবু সাঈদ খুদরী (রাযিঃ) আবু হুরায়রা (রাযিঃ) এর সঙ্গে বসা ছিলেন। আবু হুরায়রা (রাযিঃ) এর বর্ণনার মাঝে আবু সাঈদ খুদরীর নিকট কোনরূপ পরিবর্তন ধরা পড়েনি। একপর্যায়ে তিনি যখন هَذَا لَكَ وَمِثْلُهُ مَعَهُ পর্যন্ত বর্ণনা করলেন, তখন আবু সাঈদ খুদরী (রাযিঃ) বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে বলতে শুনেছি, তিনি هَذَا لَكَ وَعَشَرَةُ أَمْثَالِهِ এটি তোমার এবং অনুরূপ দশগুণ বলেছেন। আবু হুরায়রা (রাযিঃ) বলেনঃ আমি مِثْلُهُ مَعَهُ স্মরণ রেখেছি।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন