আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৬৭- নম্রতা ও যুহদের অধ্যায়

হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ৬৫৩১
৩৪৫৮. মহান আল্লাহর বাণীঃ তারা কি চিন্তা করে না যে, তারা পুনরুত্থিত হবে মহাদিবসে, যেদিন সমস্ত মানুষ জগতসমূহের প্রতিপালকের সম্মুখে দাঁড়াবে (৮৩ঃ ৪, ৫, ৬)। وَتَقَطَّعَتْ بِهِمُ সম্পর্কে ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) বলেন, সেদিন দুনিয়ার সমস্ত যোগসূত্র ছিন্ন হয়ে যাবে।
৬০৮৭। ইসমাঈল ইবনে আবান (রাহঃ) ......... ইবনে উমর (রাযিঃ) নবী (ﷺ) থেকে বর্ণিত, মহান আল্লাহর বাণীঃ সেদিন মানূষ তাদের প্রভূর সামনে দণ্ডায়মান হবে। নবী (ﷺ) বলেনঃ তাদের কেউ দণ্ডায়মান হবে ঘামের মাঝে কান পর্যন্ত ডুবে থাকা অবস্থায়।

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে হাশরের ময়দানে সমস্ত মাখলূক হিসাব-নিকাশের জন্য যখন আল্লাহ তাআলার সামনে দাঁড়ানো থাকবে, তখন তার পরিস্থিতি কী ভয়াবহ হবে তার খানিকটা তুলে ধরা হয়েছে। এতে জানানো হয়েছে যে, সেদিন কেউ কেউ নিজ ঘামের মধ্যে কানের মাঝামাঝি পর্যন্ত ডুবে যাবে। এতটা ঘামের কারণ এক তো উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।কঠিন উদ্বেগে প্রচণ্ড শীতের মধ্যেও মানুষ ঘেমে যায়। হিসাব-নিকাশের পর শেষ গতি জান্নাত হবে না জাহান্নাম, এরচে' বড় উদ্বেগ আর কিছুই হতে পারে না। ঘামে শরীরের সবটা পানি নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার জন্য এই এক দুর্ভাবনাই যথেষ্ট। তারপর আবার সূর্য মাথার কাছাকাছি চলে আসবে। তদুপরি জাহান্নাম কাছে নিয়ে আসা হবে। হাশরের ময়দানে অবস্থানকালও হবে অনেক দীর্ঘ। কোনও কোনও বর্ণনানুযায়ী দুনিয়ার সময় হিসাবে পঞ্চাশ হাজার বছর। সুতরাং এমন অগ্নিউত্তাপে এত দীর্ঘকালব্যাপী অসংখ্য মানুষের দেহের ঘামে হাশরের ময়দান যদি সাগরেও পরিণত হয়ে যায়, তা অসম্ভব কিছু নয়।

প্রশ্ন হতে পারে, হাশরের ময়দান যদি ঘামের সাগরে পরিণত হয়, তবে তাতে তো সকলেরই সমান ডুবে যাওয়ার কথা, কেউ হাঁটু পর্যন্ত, আবার কেউ গলা পর্যন্ত ডুববে কেন?

এর উত্তর হলো, হতে পারে আল্লাহ তাআলা যার শাস্তি কম তার পায়ের নিচের মাটি উঁচু করে দেবেন বা অপেক্ষাকৃত উঁচু স্থানে তাকে দাঁড় করানো হবে। এমনও হতে পারে যে, প্রত্যেকের আমল অনুযায়ী তার ঘাম কেবল তার স্থানেই সীমাবদ্ধ থাকবে, সে সীমা অতিক্রম করবে না। হযরত মূসা আলাইহিস সালাম ও তাঁর কওমের জন্য পথ করে দিতে তো সাগরের পানিও দু'পাশে আটকে দেওয়া হয়েছিল। তেমনিভাবে যার যার ঘাম তার তার স্থানে আটকে রাখা সম্ভব হতেই পারে। প্রকৃতপক্ষে আখেরাতের সবকিছু দুনিয়ায় বসে পুরোপুরি বুঝে ফেলা সম্ভব নয়। আমাদের কাজ যতটুকু বলা হয়েছে অতটুকুতে বিশ্বাস রাখা।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

এ হাদীছ আমাদের সামনে হাশর-ময়দানের বিভীষিকা তুলে ধরেছে, যাতে আমরা সেদিনের কষ্ট হতে বাঁচার লক্ষ্যে আল্লাহ তাআলার আদেশ-নিষেধ পালনে আরও বেশি সচেষ্ট হই।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন