আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ
৬৭- নম্রতা ও যুহদের অধ্যায়
হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ৬৫১৪
৩৪৫৩. মৃত্যুযন্ত্রণা।
৬০৭০। হুমায়দী (রাহঃ) ......... আনাস ইবনে মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ তিনটি জিনিস মৃত ব্যক্তির অনুসরণ করে থাকে। দুটি ফিরে আসে, আর একটি তার সাথে থেকে যায়। তার পরিবারবর্গ, তার মাল ও তার আমল তার অনুসরণ করে থাকে। তার পরিবারবর্গ ও তার মাল ফিরে আসে, পক্ষান্তরে তার আমল তারই সাথে থেকে যায়।
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছে তিনটি জিনিসের কথা বলা হয়েছে, যার মধ্যে মাত্র একটিই এমন, যা মৃতব্যক্তি সঙ্গে নিয়ে যায়। অন্য দুটি কবরের কিনারা পর্যন্ত সঙ্গে যায়। তারপর যখন দাফন সম্পন্ন হয়ে যায়, তখন ফিরে আসে। যা যায় তা হচ্ছে তার আমল, আর ফিরে আসে পরিবার-পরিজন ও ধনসম্পদ।
দুনিয়ায় মানুষ পরিবার-পরিজনের মধ্যে থাকে। তাদের সুখের জন্য কামাইরোজগার করে। তার স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ে যাতে আরামে থাকতে পারে, তাদের কোনওরকম কষ্ট না হয় এবং সে মরে গেলেও তারা কোনও অভাবের মধ্যে না পড়ে, এটাই থাকে তার একমাত্র ধ্যানজ্ঞান। এর জন্য সে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উপার্জন করে। দিনরাত পরিশ্রম করে। কিন্তু যাদের জন্য এত কষ্ট করে, প্রকৃতপক্ষে তারা তার কতটুকু উপকারে আসে? এমনিভাবে স্ত্রীও স্বামী-সন্তানদের জন্য দিনরাত খেটে যায়। যখন এদের ছেড়ে সে কবরে যায়, তখন এদের কেউ তার কোনও উপকারে আসে না।
প্রকৃত উপকার তো তাই, যা পরকালীন জীবনে কাজে আসে। পরকালের সূচনা হয় কবর থেকে। কবর এক অন্ধকার ঘর। সেখানে কোনও সঙ্গীসাথী নেই। কেউ সঙ্গে যায় না। না স্বামীর সঙ্গে স্ত্রী, না স্ত্রীর সঙ্গে তার স্বামী। না পিতামাতার সঙ্গে সন্তান যায়, না সন্তানের সাথে পিতামাতা। আর না যায় এক বন্ধুর সাথে আরেক বন্ধু। যে মায়্যিত জীবিতকালে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পরিবার-পরিজনের জন্য কাজ করেছে, তাদের কেউ কি এ ঘোর অন্ধকার কবরে তার সঙ্গে যাবে না। দিনরাত খেটে যে সম্পদ সে জমা করেছে, তাও এখানে কোনও কাজে আসবে না। একা এক অসহায় মায়্যিত, আর আছে ভয়ংকর নিঃসঙ্গতা। না পরিবারের কেউ কাজে আসছে, না অর্থসম্পদ। কাজে যদি কোনওকিছু আসতে পারে, তা কেবলই আমল- নেক আমল।
মানুষের আমল দু' প্রকার। ভালো আমল ও মন্দ আমল। ভালো আমল তা-ই, যা শরী'আত মোতাবেক হয়। আর মন্দ হল শরী‘আতবিরোধী আমল।
শরী'আত মোতাবেক কাজ বলতে কেবল নামায-রোযাকেই বোঝায় না। নামায, রোযা, হজ্জ ও যাকাত অবশ্যই ভালো আমল। সেইসঙ্গে হালাল উপার্জন করা, হারাম থেকে বেঁচে থাকা, মানুষের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা, জুলুম-অবিচার থেকে বেঁচে থাকা, পরিবার-পরিজনসহ সকল মানুষের হক আদায় করা, ছেলে-মেয়েকে দীন ও শরীআত শেখানো ও ইসলামী জীবনে অভ্যস্ত করা, মানুষকে সৎ কাজের আদেশ করা ও অসৎ কাজে নিষেধ করা ইত্যাদি বিষয়গুলোও অনেক বড় নেক আমল।
মোটকথা, পারিবারিক ও সামাজিক জীবন বর্জন নয়; বরং শরী'আতের শিক্ষা অনুযায়ী পারিবারিক ও সামাজিক জীবনযাপন করাও সৎ কাজের অন্তর্ভুক্ত। এভাবে জীবনযাপন করলে সারাজীবন যত কাজ করা হবে সবই নেক আমল। এরূপ জীবনযাপন অবস্থায় যে ব্যক্তির মৃত্যু হবে, অন্ধকার কবরে প্রচুর নেক আমল তার সঙ্গী হয়ে থাকবে। তার অন্ধকার দূর হয়ে যাবে এবং নিঃসঙ্গতার ভীতি কেটে যাবে। এক হাদীছে আছেঃ-
ويأتيه رجل حسن الوجه، حسن الثياب، طيب الريح، فيقول: أبشر بالذي يسرك فيقول: من أنت؟ فيقول: أنا عملك الصالح
“তার কাছে আসবে সুন্দর চেহারা, সুন্দর পোশাক ও সুঘ্রাণযুক্ত এক ব্যক্তি। সে বলবে, এমন বিষয়ের সুসংবাদ নাও, যা তোমাকে আনন্দ দেবে। মায়্যিত বলবে, তুমি কে? সে বলবে, আমি তোমার নেক আমল।মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৮৫৩৪। মুসতাদরাক, হাদীছ ১০৭
কবরে নেককার মায়্যিতের সঙ্গে যাওয়া নেক আমলই কাজে আসবে না শুধু, কাজে আসবে তার রেখে যাওয়া পরিবার-পরিজন ও ধনসম্পদও। কারণ যে পরিবার-পরিজন সে রেখে গেছে তারা নেককার। তারা তার জন্য দুআ করবে, তার জন্য দানখয়রাত করবে এবং কবরে তার আরামের জন্য শরী'আতের শেখানো সকল পন্থা অবলম্বন করবে।
পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি শরী'আত মোতাবেক আমল করেনি, পরিবার-পরিজনকে ইসলামী জীবনে অভ্যস্ত করেনি, সামাজিক জীবনে দীনের নির্দেশনা মানেনি এবং আয়রোজগারে শরী'আতের আদেশ-নিষেধ মেনে চলেনি, সে তার পারিবারিক ও সামাজিক যত কাজকর্ম করেছে তা সবই হয়েছে মন্দ আমল। নামায-রোযা ও হজ্জ যাকাতে অবহেলা করে থাকলে সেই পাপের সঙ্গে এসব মন্দ আমলও যুক্ত হয়েছে। এখন কবরে গেলে তার সঙ্গী হয়ে থাকবে এই রাশি রাশি মন্দ আমল।
আহা! পরিবারের দিকে তাকিয়ে সে যা করেছে, তাতে কোনও নিয়মনীতি মানেনি। তাদের আরও বেশি সুখের জন্য উপার্জন করেছে হারাম পথেও। উপার্জনের নেশায় সে উন্মত্ত হয়ে পড়েছিল। শরী'আতের বিধান মানার চেয়ে টাকাপয়সাকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছিল। নামায, রোযা, যাকাত ও হজ্জের প্রতি উদাসীন ছিল। সত্য ও সততা ছিল তার কাছে উপেক্ষিত। একদিকে শরী'আতের আহকাম ভালোভাবে মানা হয়নি, অন্যদিকে যা নিষেধ করা হয়েছিল তা থেকেও পুরোপুরি বিরত থাকেনি। উভয়দিক থেকেই আমল হয়েছে মন্দ। আজ সেই মন্দ আমল তার কবরের সঙ্গী। যেমন উপরে বর্ণিত হাদীছে শেষের দিকে আছেঃ-
ويأتيه رجل قبيح الوجه قبيح الثياب منتن الريح، فيقول: أبشر بالذي يسوءك، فيقول: من أنت؟ فيقول أنا عملك الخبيث
“তার কাছে আসবে এমন এক ব্যক্তি, যার চেহারা নিকৃষ্ট, পোশাক নিকৃষ্ট এবং শরীরে দুর্গন্ধ। সে বলবে, তুমি অপ্রীতিকর পরিণতির সংবাদ নাও। মায়্যিত বলবে, তুমি কে? সে বলবে, আমি তোমার নিকৃষ্ট আমল।””প্রাগুক্ত
এভাবে সঙ্গীহীন অন্ধকার কবরে মন্দ আমল তার বাড়তি যন্ত্রণার কারণ হবে। সাপ ও বিচ্ছু হয়ে তা তাকে দংশন করতে থাকবে। না তার পরিবার-পরিজন তার কোনও কাজে আসবে, না সঞ্চিত ধনসম্পদ। এসব তো কাজে আসবেই না, উল্টো এমনও হতে পারে, তার দেখানো কুপথে চলার কারণে পরিবার-পরিজনের অর্জিত গুনাহ কবরে তার বাড়তি দুর্ভোগ বয়ে আনবে এবং তার রেখে যাওয়া সম্পদের অপব্যবহার তার আরও বেশি আযাবের কারণ হবে। এদের কোনওকিছু তার সঙ্গে তো গেলই না; উপরন্তু থেকে যাওয়াটাও তার পক্ষে কল্যাণকর হল না। কী ভয়ঙ্কর দুর্ভাগ্য! এর থেকে নিস্তার পেতে হলে প্রত্যেকের কর্তব্য নামায, রোযা ও হজ্জ-যাকাত আদায়ে মনোযোগী থাকার পাশাপাশি ইহজীবনের প্রতিটি কাজ শরী'আত মোতাবেক সম্পন্ন করা। তা সম্পন্ন করতে নফসের বিরুদ্ধে যতই মুজাহাদা করতে হোক এবং সমাজের রেওয়াজ-প্রথার বিরুদ্ধে যতই সংগ্রাম করতে হোক, তাতে পিছপা হওয়া যাবে না। এ মুজাহাদা ও সংগ্রামের মধ্যেই নিহিত কবরের শান্তি ও আখিরাতের মুক্তি।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা নেক কাজের গুরুত্ব বোঝা যায়। কাজেই নফস ও সামাজিক প্রথার বিরুদ্ধে যতই মুজাহাদা করার প্রয়োজন হোক, সর্বাবস্থায় নেক আমলে যত্নবান থাকা অবশ্যকর্তব্য।
খ. স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে কেউ কবরের সঙ্গী হবে না। কাজেই তাদের দুনিয়াদারী গড়ার জন্য কবরে দুর্ভোগ ডেকে আনা ও নিজ আখিরাত ধ্বংস করা কোনও বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারে না।
গ. টাকাপয়সা ও ধনসম্পদ কবরে যায় না। তাই এর মোহে পড়ে কবরের শান্তি নষ্ট করা কতই না বোকামি।
দুনিয়ায় মানুষ পরিবার-পরিজনের মধ্যে থাকে। তাদের সুখের জন্য কামাইরোজগার করে। তার স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ে যাতে আরামে থাকতে পারে, তাদের কোনওরকম কষ্ট না হয় এবং সে মরে গেলেও তারা কোনও অভাবের মধ্যে না পড়ে, এটাই থাকে তার একমাত্র ধ্যানজ্ঞান। এর জন্য সে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উপার্জন করে। দিনরাত পরিশ্রম করে। কিন্তু যাদের জন্য এত কষ্ট করে, প্রকৃতপক্ষে তারা তার কতটুকু উপকারে আসে? এমনিভাবে স্ত্রীও স্বামী-সন্তানদের জন্য দিনরাত খেটে যায়। যখন এদের ছেড়ে সে কবরে যায়, তখন এদের কেউ তার কোনও উপকারে আসে না।
প্রকৃত উপকার তো তাই, যা পরকালীন জীবনে কাজে আসে। পরকালের সূচনা হয় কবর থেকে। কবর এক অন্ধকার ঘর। সেখানে কোনও সঙ্গীসাথী নেই। কেউ সঙ্গে যায় না। না স্বামীর সঙ্গে স্ত্রী, না স্ত্রীর সঙ্গে তার স্বামী। না পিতামাতার সঙ্গে সন্তান যায়, না সন্তানের সাথে পিতামাতা। আর না যায় এক বন্ধুর সাথে আরেক বন্ধু। যে মায়্যিত জীবিতকালে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পরিবার-পরিজনের জন্য কাজ করেছে, তাদের কেউ কি এ ঘোর অন্ধকার কবরে তার সঙ্গে যাবে না। দিনরাত খেটে যে সম্পদ সে জমা করেছে, তাও এখানে কোনও কাজে আসবে না। একা এক অসহায় মায়্যিত, আর আছে ভয়ংকর নিঃসঙ্গতা। না পরিবারের কেউ কাজে আসছে, না অর্থসম্পদ। কাজে যদি কোনওকিছু আসতে পারে, তা কেবলই আমল- নেক আমল।
মানুষের আমল দু' প্রকার। ভালো আমল ও মন্দ আমল। ভালো আমল তা-ই, যা শরী'আত মোতাবেক হয়। আর মন্দ হল শরী‘আতবিরোধী আমল।
শরী'আত মোতাবেক কাজ বলতে কেবল নামায-রোযাকেই বোঝায় না। নামায, রোযা, হজ্জ ও যাকাত অবশ্যই ভালো আমল। সেইসঙ্গে হালাল উপার্জন করা, হারাম থেকে বেঁচে থাকা, মানুষের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা, জুলুম-অবিচার থেকে বেঁচে থাকা, পরিবার-পরিজনসহ সকল মানুষের হক আদায় করা, ছেলে-মেয়েকে দীন ও শরীআত শেখানো ও ইসলামী জীবনে অভ্যস্ত করা, মানুষকে সৎ কাজের আদেশ করা ও অসৎ কাজে নিষেধ করা ইত্যাদি বিষয়গুলোও অনেক বড় নেক আমল।
মোটকথা, পারিবারিক ও সামাজিক জীবন বর্জন নয়; বরং শরী'আতের শিক্ষা অনুযায়ী পারিবারিক ও সামাজিক জীবনযাপন করাও সৎ কাজের অন্তর্ভুক্ত। এভাবে জীবনযাপন করলে সারাজীবন যত কাজ করা হবে সবই নেক আমল। এরূপ জীবনযাপন অবস্থায় যে ব্যক্তির মৃত্যু হবে, অন্ধকার কবরে প্রচুর নেক আমল তার সঙ্গী হয়ে থাকবে। তার অন্ধকার দূর হয়ে যাবে এবং নিঃসঙ্গতার ভীতি কেটে যাবে। এক হাদীছে আছেঃ-
ويأتيه رجل حسن الوجه، حسن الثياب، طيب الريح، فيقول: أبشر بالذي يسرك فيقول: من أنت؟ فيقول: أنا عملك الصالح
“তার কাছে আসবে সুন্দর চেহারা, সুন্দর পোশাক ও সুঘ্রাণযুক্ত এক ব্যক্তি। সে বলবে, এমন বিষয়ের সুসংবাদ নাও, যা তোমাকে আনন্দ দেবে। মায়্যিত বলবে, তুমি কে? সে বলবে, আমি তোমার নেক আমল।মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৮৫৩৪। মুসতাদরাক, হাদীছ ১০৭
কবরে নেককার মায়্যিতের সঙ্গে যাওয়া নেক আমলই কাজে আসবে না শুধু, কাজে আসবে তার রেখে যাওয়া পরিবার-পরিজন ও ধনসম্পদও। কারণ যে পরিবার-পরিজন সে রেখে গেছে তারা নেককার। তারা তার জন্য দুআ করবে, তার জন্য দানখয়রাত করবে এবং কবরে তার আরামের জন্য শরী'আতের শেখানো সকল পন্থা অবলম্বন করবে।
পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি শরী'আত মোতাবেক আমল করেনি, পরিবার-পরিজনকে ইসলামী জীবনে অভ্যস্ত করেনি, সামাজিক জীবনে দীনের নির্দেশনা মানেনি এবং আয়রোজগারে শরী'আতের আদেশ-নিষেধ মেনে চলেনি, সে তার পারিবারিক ও সামাজিক যত কাজকর্ম করেছে তা সবই হয়েছে মন্দ আমল। নামায-রোযা ও হজ্জ যাকাতে অবহেলা করে থাকলে সেই পাপের সঙ্গে এসব মন্দ আমলও যুক্ত হয়েছে। এখন কবরে গেলে তার সঙ্গী হয়ে থাকবে এই রাশি রাশি মন্দ আমল।
আহা! পরিবারের দিকে তাকিয়ে সে যা করেছে, তাতে কোনও নিয়মনীতি মানেনি। তাদের আরও বেশি সুখের জন্য উপার্জন করেছে হারাম পথেও। উপার্জনের নেশায় সে উন্মত্ত হয়ে পড়েছিল। শরী'আতের বিধান মানার চেয়ে টাকাপয়সাকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছিল। নামায, রোযা, যাকাত ও হজ্জের প্রতি উদাসীন ছিল। সত্য ও সততা ছিল তার কাছে উপেক্ষিত। একদিকে শরী'আতের আহকাম ভালোভাবে মানা হয়নি, অন্যদিকে যা নিষেধ করা হয়েছিল তা থেকেও পুরোপুরি বিরত থাকেনি। উভয়দিক থেকেই আমল হয়েছে মন্দ। আজ সেই মন্দ আমল তার কবরের সঙ্গী। যেমন উপরে বর্ণিত হাদীছে শেষের দিকে আছেঃ-
ويأتيه رجل قبيح الوجه قبيح الثياب منتن الريح، فيقول: أبشر بالذي يسوءك، فيقول: من أنت؟ فيقول أنا عملك الخبيث
“তার কাছে আসবে এমন এক ব্যক্তি, যার চেহারা নিকৃষ্ট, পোশাক নিকৃষ্ট এবং শরীরে দুর্গন্ধ। সে বলবে, তুমি অপ্রীতিকর পরিণতির সংবাদ নাও। মায়্যিত বলবে, তুমি কে? সে বলবে, আমি তোমার নিকৃষ্ট আমল।””প্রাগুক্ত
এভাবে সঙ্গীহীন অন্ধকার কবরে মন্দ আমল তার বাড়তি যন্ত্রণার কারণ হবে। সাপ ও বিচ্ছু হয়ে তা তাকে দংশন করতে থাকবে। না তার পরিবার-পরিজন তার কোনও কাজে আসবে, না সঞ্চিত ধনসম্পদ। এসব তো কাজে আসবেই না, উল্টো এমনও হতে পারে, তার দেখানো কুপথে চলার কারণে পরিবার-পরিজনের অর্জিত গুনাহ কবরে তার বাড়তি দুর্ভোগ বয়ে আনবে এবং তার রেখে যাওয়া সম্পদের অপব্যবহার তার আরও বেশি আযাবের কারণ হবে। এদের কোনওকিছু তার সঙ্গে তো গেলই না; উপরন্তু থেকে যাওয়াটাও তার পক্ষে কল্যাণকর হল না। কী ভয়ঙ্কর দুর্ভাগ্য! এর থেকে নিস্তার পেতে হলে প্রত্যেকের কর্তব্য নামায, রোযা ও হজ্জ-যাকাত আদায়ে মনোযোগী থাকার পাশাপাশি ইহজীবনের প্রতিটি কাজ শরী'আত মোতাবেক সম্পন্ন করা। তা সম্পন্ন করতে নফসের বিরুদ্ধে যতই মুজাহাদা করতে হোক এবং সমাজের রেওয়াজ-প্রথার বিরুদ্ধে যতই সংগ্রাম করতে হোক, তাতে পিছপা হওয়া যাবে না। এ মুজাহাদা ও সংগ্রামের মধ্যেই নিহিত কবরের শান্তি ও আখিরাতের মুক্তি।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা নেক কাজের গুরুত্ব বোঝা যায়। কাজেই নফস ও সামাজিক প্রথার বিরুদ্ধে যতই মুজাহাদা করার প্রয়োজন হোক, সর্বাবস্থায় নেক আমলে যত্নবান থাকা অবশ্যকর্তব্য।
খ. স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে কেউ কবরের সঙ্গী হবে না। কাজেই তাদের দুনিয়াদারী গড়ার জন্য কবরে দুর্ভোগ ডেকে আনা ও নিজ আখিরাত ধ্বংস করা কোনও বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারে না।
গ. টাকাপয়সা ও ধনসম্পদ কবরে যায় না। তাই এর মোহে পড়ে কবরের শান্তি নষ্ট করা কতই না বোকামি।
