আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৬৭- নম্রতা ও যুহদের অধ্যায়

হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ৬৪৫৬
৩৪২৯. নবী (ﷺ) ও তাঁর সাহাবীগণের জীবন যাপন কিরূপ ছিল এবং তাঁরা দুনিয়া থেকে কী অবস্থায় বিদায় নিলেন।
৬০১২। আহমদ ইবনে আবু রাজা (রাহঃ) ......... আয়েশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর বিছানা চামড়ার তৈরী ছিল এবং তার ভেতরে ছিল খেজুরের আঁশ।

হাদীসের ব্যাখ্যা:

কোন কোন হাদীছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিছানা সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তা ছিল চামড়ার, যার মাঝখানে খেজুর গাছের বাকলের পুর দেওয়া ছিল। কোন কোন বর্ণনায় আছে, এরকম ছিল তাঁর বালিশ, আর বিছানা ছিল চাটাইয়ের। যেমন এক রেওয়ায়েতে আছে-
فَإِذَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلى حَصِيرٍ قَدْ أَثرَ فِي جَنْبِهِ، وَتَحْتَ رَأْسِهِ مِرْفَقَةٌ مِنْ أدم حَشْوُهَا لِيفٌ
"হযরত উমর রাযি. বলেন, আমি লক্ষ করে দেখি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চাটাইয়ের উপর শুয়ে আছেন। তাঁর পার্শ্বদেশে চাটাইয়ের ছাপ পড়ে গেছে। আর তাঁর মাথার নিচে আছে খেজুর গাছের বাকলের পুরবিশিষ্ট চামড়ার বালিশ।"

বস্তুত এ দু'রকম বর্ণনার মধ্যে কোনও বিরোধ নেই। কেননা এটা অসম্ভব নয় যে, তাঁর বালিশের মতো চামড়ার এমন বিছানাও হয়তো ছিল, যার মাঝঝখানে খেজুর গাছের বাকলের পুর দেওয়া ছিল। তবে এরকম বিছানা তিনি কদাচ ব্যবহার করেছেন।

বেশিরভাগ খেজুর পাতার চাটাই-ই ব্যবহার করেছেন। আরাম-আয়েশ ও বিলাসিতার সঙ্গে সম্পর্ক না থাকায় এরকম মোটা, শক্ত বিছানাই তাঁর পসন্দ ছিল। নরম বিছানার ব্যবস্থা করা হলে তিনি তা পসন্দ করতেন না। আম্মাজান আয়েশা সিদ্দীকা রাযি. থেকেই বর্ণিত আছে-
دَخَلَتْ عَلَيَّ امْرَأَةٌ مِنَ الْأَنْصَارِ، فَرَأَتْ فِراش رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: قَطِيقَةٌ مَثنيَّةٌ، فَانْطَلَقَتْ فَبَعَثَتْ إِلَيَّ بِفِرَاشٍ حَشْوهُ الصُّوْفُ، فَدَخَلَ عَلَيَّ رَسُولُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: مَا هَذَا يَا عَائِشَةُ؟ قَالَتْ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، فلانة الأَنْصَارِيَّةُ دَخَلَتْ عَلَيَّ، فَرَأتْ فِرَاشكَ فَذَهَبَتْ فَبَعَثَتْ إِلَيَّ بِهَذَا قَالَ: رُدّيْهِ يَا عَائِشَةُ فَوَاللّهِ لَوْ شِئْتُ لأَجْرَى اللهُ مَعِي جِبَالَ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ.
জনৈকা আনসারী আমার কাছে এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিছানাটি দেখতে পেল। সেটি ছিল দুই ভাঁজ করা একটি কম্বল (এক বর্ণনায় আছে, সে বলল, আপনাদের কি এ ছাড়া কোনও বিছানা নেই? আমি বললাম, না)। তারপর সে চলে গেল এবং আমার কাছে এমন একটি বিছানা পাঠাল, যার মাঝখানে পশমের পুর দেওয়া ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে এসে যখন সে বিছানাটি দেখলেন, জিজ্ঞেস করলেন, হে আয়েশা! এটা কী? আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! অমুক আনসারী মহিলা আমার কাছে এসে আপনার বিছানাটি দেখেছিল। তারপর সে এটা পাঠিয়ে দিয়েছে। তিনি বললেন, হে আয়েশা! এটা ফিরিয়ে দাও। আল্লাহর কসম, আমি চাইলে আল্লাহ আমার সঙ্গে সোনা-রুপার পাহাড় প্রবাহিত করে দিতেন।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মাস'ঊদ রাযি. থেকে বর্ণিত আছে-
"রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি চাটাইয়ের উপর শুয়েছিলেন। তাঁর পার্শ্বদেশে চাটাইয়ের দাগ পড়ে যায়। যখন জাগ্রত হন, আমি তাঁর পাঁজর মুছতে
থাকি এবং বলি, ইয়া রাসূলুল্লাহ, আমাদের কি অনুমতি দেবেন না, যাতে আপনার জন্য চাটাইয়ের উপর কিছু বিছাই। (অন্য বর্ণনায় আমরা কি আপনার জন্য এমন কিছু আনতে পারি না, যা আপনাকে এর থেকে সুরক্ষা দেবে?) তিনি বললেন, দুনিয়ার সঙ্গে আমার কিসের সম্পর্ক? দুনিয়া ও আমি তো হলাম এরকম, যেমন একজন আরোহী কোনও গাছের নিচে ছায়া গ্রহণ করছিল, তারপর (যখন সময় হল) সে গাছটি ছেড়ে চলে গেল"

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. এ হাদীছ দ্বারা আমরা দুনিয়ার আরাম-আয়েশ ও বিলাসিতায় লিপ্ত না হওয়ার শিক্ষা পাই। প্রকৃত নবীপ্রেমিকের পক্ষে বিলাসিতা সাজে না।

খ. প্রকৃত নবীপ্রেমিকের কষ্ট-ক্লেশ সহ্য করার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন