আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৬৬- দুআ - যিকরের অধ্যায়

হাদীস নং: ৫৯২২
আন্তর্জাতিক নং: ৬৩৬২
৩৩৭৮. ফিতনা থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাওয়া।
৫৯২২। হাফস ইবনে উমর (রাহঃ) ......... আনাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, একবার লোকজন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে নানা প্রশ্ন করতে লাগল, এমনকি প্রশ্ন করতে করতে তাকে বিরক্ত করে ফেলল। এতে তিনি রাগ করলেন এবং মিম্বরে আরোহন করে বললেনঃ আজ তোমরা যত প্রশ্ন করবে, আমি তোমাদের সব প্রশ্নেরই বর্ণনা সহকারে জবাব দিব। এ সময় আমি ডানে ও বামে তাকাতে লাগলাম এবং দেখলাম যে, প্রতিটি লোকই নিজের কাপড় দিয়ে মাথা পেচিয়ে কাঁদছে। এমন সময় একজন লোক, যাকে লোকের সাথে বিবাদের সময় তার বাপের নাম নিয়ে ডাকা হতো না, সে প্রশ্ন করলঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার পিতা কে? তিনি বললেনঃ হুযাফা।
তখন উমর (রাযিঃ) বলতে লাগলেন, আমরা আল্লাহকে রব হিসেবে, ইসলামকে দ্বীন হিসেবে এবং মুহাম্মাদ ﷺ কে রাসূল হিসেবে গ্রহণ করেই সন্তুষ্ট। আমরা ফিতনা থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাচ্ছি। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ আমি ভাল মন্দের যে দৃশ্য আজ দেখলাম, তা আর কখনো দেখিনি। জান্নাত ও জাহান্নামের দৃশ্য আমাকে এমন স্পষ্টভাবে দেখানো হয়েছে যে, যেন এ দুটি এ দেওয়ালের পেছনেই অবস্থিত। রাবী কাতাদা (রাহঃ) হাদীসটি উল্লেখ করার সময় এ আয়াতটি পড়তেনঃ (অর্থ) হে মু'মিনগণ! তোমরা সেসব বিষয়ে প্রশ্ন করো না, যা প্রকাশিত হলে তোমরা দুঃখিত হবে।
باب التَّعَوُّذِ مِنَ الْفِتَنِ
6362 - حَدَّثَنَا حَفْصُ بْنُ عُمَرَ، حَدَّثَنَا هِشَامٌ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: سَأَلُوا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى أَحْفَوْهُ المَسْأَلَةَ، فَغَضِبَ فَصَعِدَ المِنْبَرَ، فَقَالَ: «لاَ تَسْأَلُونِي اليَوْمَ عَنْ شَيْءٍ إِلَّا بَيَّنْتُهُ [ص:78] لَكُمْ» فَجَعَلْتُ أَنْظُرُ يَمِينًا وَشِمَالًا، فَإِذَا كُلُّ رَجُلٍ لاَفٌّ رَأْسَهُ فِي ثَوْبِهِ يَبْكِي، فَإِذَا رَجُلٌ كَانَ إِذَا لاَحَى الرِّجَالَ يُدْعَى لِغَيْرِ أَبِيهِ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ مَنْ أَبِي؟ قَالَ: «حُذَافَةُ» ثُمَّ أَنْشَأَ عُمَرُ فَقَالَ: رَضِينَا بِاللَّهِ رَبًّا، وَبِالإِسْلاَمِ دِينًا، وَبِمُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَسُولًا، نَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الفِتَنِ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا رَأَيْتُ فِي الخَيْرِ وَالشَّرِّ كَاليَوْمِ قَطُّ، إِنَّهُ صُوِّرَتْ لِي الجَنَّةُ وَالنَّارُ، حَتَّى رَأَيْتُهُمَا وَرَاءَ الحَائِطِ» وَكَانَ قَتَادَةُ، يَذْكُرُ عِنْدَ هَذَا الحَدِيثِ هَذِهِ الآيَةَ: {يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لاَ تَسْأَلُوا عَنْ أَشْيَاءَ إِنْ تُبْدَ لَكُمْ تَسُؤْكُمْ} [المائدة: 101]

হাদীসের ব্যাখ্যা:

তাঁর এবং জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝখান থেকে সমস্ত অন্তরাল সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ফলে জান্নাতের নিআমতরাশি ও জাহান্নামের শাস্তিসমূহ সরাসরি দেখতে পাচ্ছিলেন, যেমনটা মি'রাজের ঘটনার পর তাঁর সম্মুখ থেকে সব আড়াল সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল, যদ্দরুন তিনি সরাসরি বায়তুল মাকদিস দেখতে পেয়েছিলেন এবং তা দেখে দেখে সকলের সামনে তার বিবরণ দিয়েছিলেন।

তিনি একাধিকবার এভাবে জান্নাত ও জাহান্নামের দৃশ্য দেখতে পেয়েছেন। বিভিন্ন হাদীছে তা বর্ণিত আছে। যাহোক তিনি জান্নাত ও জাহান্নামের দৃশ্য দেখে সাহাবায়ে কেরামের সামনে অভিব্যক্তি পেশ করলেন فلم أر كاليوم في الخير والشر (এদিনের মত ভালো ও মন্দ কখনও দেখিনি)। অর্থাৎ জান্নাতের যে নি'আমতরাজি আজ আমি দেখতে পেয়েছি, এমন ভালো কিছু আমি আর কখনও দেখিনি। এমনিভাবে জাহান্নামে যেসব শাস্তির ব্যবস্থা দেখেছি, সেরকম মন্দ কিছুও আর কখনও দেখিনি।

এখানে হাদীসটি সংক্ষিপ্ত আকারে আনা হয়েছে। অন্যান্য বর্ণনায় আরো আছে, তারপর তিনি এই বলে তাদের উপদেশ দিলেন ولو تعلمون ما أعلم ، لضحكتم قليلا ، ولبكيتم كثيرا (তোমরা যদি জানতে যা আমি জানি, তবে অবশ্যই তোমরা কম হাসতে এবং বেশি কাঁদতে)। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা পাপীদের জন্য কী কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা রেখেছেন, কী কঠিন কিয়ামতের বিভীষিকা এবং কত কঠিন হাশরের ময়ানের পরিস্থিতি, তা আমি যেমনটা জানি তেমনি তোমরাও যদি জানতে, তবে অবশ্যই কম হাসতে এবং বেশি কাঁদতে। এক বর্ণনায় এরপর আছে ولما ساغ لكم الطعام ولا الشراب، ولما نمتم على الفرش، ولهجرتم النساء ولخرجتم إلى الصعدات تجأرون ‘তোমাদের কাছে পানাহার ভালো লাগত না। তোমরা বিছানায় ঘুমাতে পারতে না। তোমরা নারীদের থেকে দূরে থাকতে। তোমরা চিৎকার করতে করতে রাস্তাঘাটে বের হয়ে পড়তে।

আরো আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদের উপর এরচে' কঠিন কোনও দিন আর আসেনি। তারা তাদের মাথা ঢেকে ফেলেন এবং ডুকরে কাঁদতে থাকেন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. ওয়াজ-নসীহতে হাসানো নয়; বরং কাদানোই প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তরিকা।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন