রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
৭. রোগীর শুশ্রূষা ও মাইয়্যেতের প্রতি কর্তব্য
হাদীস নং: ৯২৫
পরিচ্ছেদ:১০ মায়্যিতের জন্য চিৎকার ও বিলাপ করা ব্যতীত স্বাভাবিক কান্নার বৈধতা
নাতির রোগযন্ত্রণা দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ক্রন্দন করা
হাদীছ নং: ৯২৫
হযরত উসামা ইবন যায়দ রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে তাঁর এক কন্যার পুত্রকে তুলে দেওয়া হল। তখন সে মুমূর্ষু। তাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চোখ থেকে অশ্রু ঝরতে লাগল। হযরত সা'দ রাযি. বলে উঠলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এটা কী? তিনি বললেন, এটা রহমত, যা আল্লাহ তাঁর বান্দাদের অন্তরে স্থাপিত করেছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে যারা দয়াশীল, তাদের প্রতি দয়া করে থাকেন। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ৭৩৭৭; সহীহ মুসলিম: ৯২৩; সুনানে ইবন মাজাহ: ১৫৮৮; সুনানে নাসাঈ : ১৮৬২; মুসনাদুল বাযযার: ২৫৯৩ মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক: ৬৬৭০; মুসনাদে আবূ দাঊদ তয়ালিসী: ৬৭১; সহীহ ইবনে হিব্বান: ৪৬১; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ৭১২৯)
হাদীছ নং: ৯২৫
হযরত উসামা ইবন যায়দ রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে তাঁর এক কন্যার পুত্রকে তুলে দেওয়া হল। তখন সে মুমূর্ষু। তাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চোখ থেকে অশ্রু ঝরতে লাগল। হযরত সা'দ রাযি. বলে উঠলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এটা কী? তিনি বললেন, এটা রহমত, যা আল্লাহ তাঁর বান্দাদের অন্তরে স্থাপিত করেছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে যারা দয়াশীল, তাদের প্রতি দয়া করে থাকেন। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ৭৩৭৭; সহীহ মুসলিম: ৯২৩; সুনানে ইবন মাজাহ: ১৫৮৮; সুনানে নাসাঈ : ১৮৬২; মুসনাদুল বাযযার: ২৫৯৩ মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক: ৬৬৭০; মুসনাদে আবূ দাঊদ তয়ালিসী: ৬৭১; সহীহ ইবনে হিব্বান: ৪৬১; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ৭১২৯)
باب جواز البكاء عَلَى الميت بغير ندب وَلاَ نياحة
925 - وعن أُسَامَة بن زَيدٍ رضي اللهُ عنهما: أنَّ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - رُفِعَ إِلَيْهِ ابنُ ابْنَتِهِ وَهُوَ فِي المَوتِ، فَفَاضَتْ عَيْنَا رسولِ اللهِ - صلى الله عليه وسلم - فَقَالَ لَهُ سَعدٌ: مَا هَذَا يَا رسولَ الله؟! قَالَ: «هذِهِ رَحْمَةٌ جَعَلَهَا اللهُ تَعَالَى في قُلُوبِ عِبَادِهِ، وَإنَّمَا يَرْحَمُ اللهُ مِنْ عِبَادِهِ الرُّحَمَاءَ». متفقٌ عَلَيْهِ. (1)
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এটি একটি দীর্ঘ হাদীছের শেষ অংশ। তার সারসংক্ষেপ হল- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কন্যা হযরত যায়নাব রাযি.-এর শিশুসন্তান খুব বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি তাঁর মহান পিতাকে যাওয়ার জন্য তাঁর কাছে লোক পাঠালেন। তিনি তখন নিজে না গিয়ে বার্তাবাহককে এই বলে ফেরত পাঠালেন যে, তাকে বলো, আল্লাহ তা'আলারই তা, যা তিনি নিয়ে নিয়েছেন এবং তাঁরই তা, যা তিনি দান করেছেন। আর তাঁর কাছে প্রতিটি জিনিসের এক নির্ধারিত মেয়াদ আছে। সুতরাং তাকে আদেশ করো যেন ধৈর্য ধরে এবং ছাওয়াবের আশা করে।
হযরত যায়নাব রাযি. ফের লোক পাঠালেন এবং কসম দিয়ে বললেন যেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবশ্যই তাঁর কাছে যান। শেষপর্যন্ত তিনি ঘনিষ্ঠ কয়েকজন সাহাবীকে সঙ্গে নিয়ে হযরত যায়নাব রাযি.-এর বাড়িতে আসলেন। এর পরের বিবরণ হাদীছটির আলোচ্য অংশে দেওয়া হয়েছে।
অসুস্থ শিশুকে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোলে তুলে দেওয়া হল। শিশুটি তখন রোগযন্ত্রণায় ছটফট করছিল। তা দেখে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মমতাময় প্রাণ বিগলিত হল। আদরে নাতনীর কষ্টে তাঁরও মন কষ্টে ভরে গেল। তাঁর দু'চোখ থেকে পানি ঝড়তে লাগল। তা দেখে হযরত সা’দ ইবন উবাদা রাযি. প্রশ্নই করে বসলেন-
مَا هذَا يَا رَسُوْلَ اللَّهِ؟ (ইয়া রাসূলাল্লাহ! এটা কী)? অর্থাৎ ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি যে কাঁদছেন? সম্ভবত তখন কান্নার নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কিত হাদীছ তাঁর মনে পড়ে গিয়েছিল। অর্থাৎ আপনি তো এরূপ ক্ষেত্রে কাঁদতে নিষেধ করেছেন। তা সত্ত্বেও আপনি নিজে যে কাঁদছেন এর কারণ কী? অথবা হযরত সা'দ রাযি, হয়তো ভাবছিলেন মসিবতে তো ধৈর্যধারণ করা চাই। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে কাঁদছেন, ধৈর্যধারণের সঙ্গে তার সঙ্গতি কী?
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেন- هذا رَحْمَةٌ جعلها الله تعالى في قُلُوْبِ عِبَادِهِ (এটা রহমত, যা আল্লাহ তাঁর বান্দাদের অন্তরে স্থাপিত করেছেন)। অর্থাৎ এ কান্না হল রহমত ও দয়ার প্রকাশ, যা আল্লাহ তাঁর বান্দাদের অন্তরে রেখে দিয়েছেন। অর্থাৎ মানবমনে যেহেতু সৃষ্টিগতভাবেই দয়ামায়া আছে, তাই শোকে-দুঃখে কাঁদা স্বাভাবিক। এ কান্না সে দয়ামায়ারই প্রকাশ। এতে কোনও দোষ নেই এবং এটা সবরেরও পরিপন্থি নয়। দোষ হচ্ছে বিলাপ করা ও সীমালঙ্ঘন করা। তারপর তিনি ইরশাদ করেন-
وَإِنَّمَا يَرْحَمُ اللَّهُ مِنْ عِبَادِهِ الرُّحَمَاءَ (নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে যারা দয়াশীল তাদের প্রতি দয়া করে থাকেন)। কাজেই দয়ামায়ার গুণ অর্জন করা উচিত। অন্যের দুঃখ-কষ্টে ব্যথিত হওয়া উচিত। মনে দয়ামায়া থাকলে অন্যের দুঃখ-কষ্টে বেদনাবোধ হওয়াই স্বাভাবিক। আর অন্তরে বেদনাবোধ হলে স্বাভাবিকভাবে কান্নাও আসবে। সুতরাং কান্না দোষের নয়; বরং প্রশংসার। কেননা এটা অন্তরস্থ রহমত ও দয়ামায়ার নিদর্শন। দয়ামায়া আল্লাহ তা'আলার বড় পসন্দ। যে বান্দার অন্তরে দয়ামায়া থাকে, আল্লাহ তা'আলা তার প্রতি দয়া করেন। আল্লাহ তা'আলার দয়া ও রহমত দোজাহানের মুক্তি ও নাজাতের একমাত্র উপায়। সুতরাং দয়ামায়ার চর্চা করলে আশা করা যায় আখিরাতে এ অছিলায় নাজাত লাভ হবে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছটি দ্বারা নাতির প্রতি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্নেহ-মমতার পরিচয় পাওয়া যায়।
খ. হাদীছটি দ্বারা আরও জানা যায়, শোকে-দুঃখে সংযত কান্না দোষের নয়। বরং তা প্রশংসনীয়।
গ. কারও অন্তরে কোনও বিষয়ে খটকা লাগলে বিজ্ঞ আলেমের কাছে জিজ্ঞেস করে তার নিরসন করিয়ে নেওয়া উচিত। যেমন হযরত সা'দ রাযি. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে জিজ্ঞেস করে মনের খটকা দূর করেছিলেন।
ঘ. দয়ামায়া একটি মহৎ গুণ। এটা অর্জনের চেষ্টা করা উচিত।
ঙ. দুনিয়া ও আখিরাতে সে ব্যক্তি আল্লাহ তা'আলার রহমত ও দয়া বেশি পাবে, যে সৃষ্টির প্রতি বেশি দয়ার আচরণ করে।
হযরত যায়নাব রাযি. ফের লোক পাঠালেন এবং কসম দিয়ে বললেন যেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবশ্যই তাঁর কাছে যান। শেষপর্যন্ত তিনি ঘনিষ্ঠ কয়েকজন সাহাবীকে সঙ্গে নিয়ে হযরত যায়নাব রাযি.-এর বাড়িতে আসলেন। এর পরের বিবরণ হাদীছটির আলোচ্য অংশে দেওয়া হয়েছে।
অসুস্থ শিশুকে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোলে তুলে দেওয়া হল। শিশুটি তখন রোগযন্ত্রণায় ছটফট করছিল। তা দেখে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মমতাময় প্রাণ বিগলিত হল। আদরে নাতনীর কষ্টে তাঁরও মন কষ্টে ভরে গেল। তাঁর দু'চোখ থেকে পানি ঝড়তে লাগল। তা দেখে হযরত সা’দ ইবন উবাদা রাযি. প্রশ্নই করে বসলেন-
مَا هذَا يَا رَسُوْلَ اللَّهِ؟ (ইয়া রাসূলাল্লাহ! এটা কী)? অর্থাৎ ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি যে কাঁদছেন? সম্ভবত তখন কান্নার নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কিত হাদীছ তাঁর মনে পড়ে গিয়েছিল। অর্থাৎ আপনি তো এরূপ ক্ষেত্রে কাঁদতে নিষেধ করেছেন। তা সত্ত্বেও আপনি নিজে যে কাঁদছেন এর কারণ কী? অথবা হযরত সা'দ রাযি, হয়তো ভাবছিলেন মসিবতে তো ধৈর্যধারণ করা চাই। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে কাঁদছেন, ধৈর্যধারণের সঙ্গে তার সঙ্গতি কী?
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেন- هذا رَحْمَةٌ جعلها الله تعالى في قُلُوْبِ عِبَادِهِ (এটা রহমত, যা আল্লাহ তাঁর বান্দাদের অন্তরে স্থাপিত করেছেন)। অর্থাৎ এ কান্না হল রহমত ও দয়ার প্রকাশ, যা আল্লাহ তাঁর বান্দাদের অন্তরে রেখে দিয়েছেন। অর্থাৎ মানবমনে যেহেতু সৃষ্টিগতভাবেই দয়ামায়া আছে, তাই শোকে-দুঃখে কাঁদা স্বাভাবিক। এ কান্না সে দয়ামায়ারই প্রকাশ। এতে কোনও দোষ নেই এবং এটা সবরেরও পরিপন্থি নয়। দোষ হচ্ছে বিলাপ করা ও সীমালঙ্ঘন করা। তারপর তিনি ইরশাদ করেন-
وَإِنَّمَا يَرْحَمُ اللَّهُ مِنْ عِبَادِهِ الرُّحَمَاءَ (নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে যারা দয়াশীল তাদের প্রতি দয়া করে থাকেন)। কাজেই দয়ামায়ার গুণ অর্জন করা উচিত। অন্যের দুঃখ-কষ্টে ব্যথিত হওয়া উচিত। মনে দয়ামায়া থাকলে অন্যের দুঃখ-কষ্টে বেদনাবোধ হওয়াই স্বাভাবিক। আর অন্তরে বেদনাবোধ হলে স্বাভাবিকভাবে কান্নাও আসবে। সুতরাং কান্না দোষের নয়; বরং প্রশংসার। কেননা এটা অন্তরস্থ রহমত ও দয়ামায়ার নিদর্শন। দয়ামায়া আল্লাহ তা'আলার বড় পসন্দ। যে বান্দার অন্তরে দয়ামায়া থাকে, আল্লাহ তা'আলা তার প্রতি দয়া করেন। আল্লাহ তা'আলার দয়া ও রহমত দোজাহানের মুক্তি ও নাজাতের একমাত্র উপায়। সুতরাং দয়ামায়ার চর্চা করলে আশা করা যায় আখিরাতে এ অছিলায় নাজাত লাভ হবে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছটি দ্বারা নাতির প্রতি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্নেহ-মমতার পরিচয় পাওয়া যায়।
খ. হাদীছটি দ্বারা আরও জানা যায়, শোকে-দুঃখে সংযত কান্না দোষের নয়। বরং তা প্রশংসনীয়।
গ. কারও অন্তরে কোনও বিষয়ে খটকা লাগলে বিজ্ঞ আলেমের কাছে জিজ্ঞেস করে তার নিরসন করিয়ে নেওয়া উচিত। যেমন হযরত সা'দ রাযি. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে জিজ্ঞেস করে মনের খটকা দূর করেছিলেন।
ঘ. দয়ামায়া একটি মহৎ গুণ। এটা অর্জনের চেষ্টা করা উচিত।
ঙ. দুনিয়া ও আখিরাতে সে ব্যক্তি আল্লাহ তা'আলার রহমত ও দয়া বেশি পাবে, যে সৃষ্টির প্রতি বেশি দয়ার আচরণ করে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
