রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
৭. রোগীর শুশ্রূষা ও মাইয়্যেতের প্রতি কর্তব্য
হাদীস নং: ৯১৯
পরিচ্ছেদ:৯ মায়্যিতের কাছে যা বলবে এবং যার কেউ মারা যায় তাকে যা বলতে হবে
প্রিয়ব্যক্তির মৃত্যু হয়ে গেলে যে দু'আ পড়তে হয়
হাদীছ নং: ৯১৯
হযরত উম্মু সালামা রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা যখন কোনও রোগী বা মায়্যিতের কাছে উপস্থিত হবে, তখন ভালো কথা বলো। কেননা ফিরিশতাগণ তোমরা যা বল তাতে আমীন বলে থাকে। তিনি বলেন, যখন আবূ সালামা মারা গেলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উপস্থিত হলাম। বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আবূ সালামা মারা গেছেন। তিনি বললেন, বলো- اللهم اغْفِرْ لِي وَلَهُ، وَأَعْقِبنِي مِنْهُ عقبى حَسَنَةً (হে আল্লাহ! আমাকে ও তাকে মাফ করে দিন এবং তার পরে আমাকে উত্তম বদলা দান করুন)। সুতরাং আল্লাহ তা'আলা আমাকে তার পরে এমন বদলা দিলেন, যিনি আমার পক্ষে তার চেয়ে উৎকৃষ্ট। অর্থাৎ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। -মুসলিম ও আবু দাউদ
(সহীহ মুসলিম: ৯১৯; জামে তিরমিযী: ৯৭৭; সুনানে আবু দাউদ: ৩১১৫: সুনানে ইবন মাজাহ: ১৪৪৭; সুনানে নাসাঈ: ১৮২৫; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ৯৪০)
হাদীছ নং: ৯১৯
হযরত উম্মু সালামা রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা যখন কোনও রোগী বা মায়্যিতের কাছে উপস্থিত হবে, তখন ভালো কথা বলো। কেননা ফিরিশতাগণ তোমরা যা বল তাতে আমীন বলে থাকে। তিনি বলেন, যখন আবূ সালামা মারা গেলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উপস্থিত হলাম। বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আবূ সালামা মারা গেছেন। তিনি বললেন, বলো- اللهم اغْفِرْ لِي وَلَهُ، وَأَعْقِبنِي مِنْهُ عقبى حَسَنَةً (হে আল্লাহ! আমাকে ও তাকে মাফ করে দিন এবং তার পরে আমাকে উত্তম বদলা দান করুন)। সুতরাং আল্লাহ তা'আলা আমাকে তার পরে এমন বদলা দিলেন, যিনি আমার পক্ষে তার চেয়ে উৎকৃষ্ট। অর্থাৎ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। -মুসলিম ও আবু দাউদ
(সহীহ মুসলিম: ৯১৯; জামে তিরমিযী: ৯৭৭; সুনানে আবু দাউদ: ৩১১৫: সুনানে ইবন মাজাহ: ১৪৪৭; সুনানে নাসাঈ: ১৮২৫; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ৯৪০)
باب ما يقال عند الميت وَمَا يقوله من مات له ميت
919 - عن أُم سَلَمة رضي اللهُ عنها، قالت: قَالَ رسول الله - صلى الله عليه وسلم: «إِذَا حَضَرتُمُ المَرِيضَ أَو المَيِّتَ، فَقُولُوا خَيْرًا، فَإنَّ المَلائِكَةَ يُؤَمِّنُونَ عَلَى مَا تَقُولُونَ»، قالت: فَلَمَّا مَاتَ أَبُو سلَمة، أتَيْتُ النَّبيَّ - صلى الله عليه وسلم - فقلت: يَا رسولَ الله، إنَّ أَبَا سَلَمَة قَدْ مَاتَ، قَالَ: «قُولِي: اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَلَهُ، وَأَعْقِبْنِي مِنْهُ عُقْبَى حَسَنَةً» فقلتُ، فَأعْقَبنِي اللهُ مَنْ هُوَ خَيْرٌ لِي مِنْهُ: مُحَمَّدًا - صلى الله عليه وسلم. رواه مسلم هكَذا: «إِذَا حَضَرتُمُ المَريضَ، أَو المَيِّتَ»، عَلَى الشَّكِّ، ورواه أَبُو داود وغيره: «الميت» بلا شَكّ. (1)
হাদীসের ব্যাখ্যা:
উম্মু সালামা রাযি. জানাচ্ছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
إِذَا حَضَرتمُ الْمَرِيض أَوِ الْمَيتَ، فَقُوْلُوْا خيرا (তোমরা যখন কোনও রোগী বা মায়্যিতের কাছে উপস্থিত হবে, তখন ভালো কথা বলো)। অর্থাৎ রোগী বা মায়্যিতের কাছে যাওয়ার পর তাদের কষ্ট দেখে ধৈর্যহারা হতে নেই। বরং আল্লাহ তা’আলার উপর পূর্ণ ভরসা রাখবে। বিশ্বাস রাখবে যে, বিপদ-আপদ তাঁর ইচ্ছাতেই তাআলার তা দূরও করতে পারেন কেবল তিনিই। তিনিই সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। এ বিশ্বাসের সঙ্গে তাঁর কাছে কল্যাণের দু'আ করবে। অসুস্থ ব্যক্তির জন্য শিফা ও আরোগ্য কামনা করবে। মায়্যিতের জন্য রহমত ও মাগফিরাত প্রার্থনা করবে। খুব সতর্ক থাকবে যাতে মুখ থেকে অশোভন বা অনুচিত কোনও কথা বের না হয়ে পড়ে। এর কারণ সম্পর্কে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
فَإِنَّ الْمَلَائِكَةَ يُؤمِّنُوْنَ عَلَى مَا تَقُوْلُوْنَ (কেননা ফিরিশতাগণ তোমরা যা বল তাতে আমীন বলে থাকে)। সেখানে কোনও না কোনও ফিরিশতা তো থাকেই। মায়্যিতের কাছে থাকে মালাকুল মাওত ও তার সহযোগী ফিরিশতাগণ। অন্য সকলের কাছেই আমল লিপিবদ্ধকারী দুই ফিরিশতা তো থাকেই। তাছাড়াও না জানি আরও কত ফিরিশতা থাকে, যাদেরকে আল্লাহ তা'আলা বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত করে রেখেছেন। সকল ফিরিশতাই নিষ্পাপ। তারা দু'আ করলে তা কবুল হয়। 'আমীন'-ও দু'আই বটে। কেননা এর অর্থ হে আল্লাহ তুমি কবুল করো। কাজেই রোগী বা মায়্যিতের কাছে এমনও কোনও দু'আ করতে নেই, যা তাদের জন্য কিংবা দু'আকারী নিজের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। বরং ধৈর্যের সঙ্গে কল্যাণেরই দু'আ করতে হবে।
হযরত উম্মু সালামা রাযি. বলেন যে, আবূ সালামা মারা গেলে আমি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললাম যে, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আবু সালামা তো মারা গেছে। বলাবাহুল্য, তাঁর এ কথা বলাটা সংবাদ দেওয়ার জন্য নয়। কেননা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো তা জানতেনই। তাঁর মৃত্যুকালে তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন, যেমন পূর্বের হাদীছে বর্ণিত আছে। তাই তাঁকে সংবাদ দেওয়ার কোনও অর্থ হয় না। বরং হযরত উম্মু সালামা রাযি. এটা বলেছিলেন মনের বেদনা ও শোক প্রকাশস্বরূপ।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সান্তনাদানস্বরূপ তাঁকে একটি দু'আ শিক্ষা দিলেন। দু'আটি হল- اللهم اغْفِرْ لِي وَلَهُ، وَأَعْقِبنِي مِنْهُ عقبى حَسَنَةً (হে আল্লাহ! আমাকে ও তাকে মাফ করে দিন এবং তার পরে আমাকে উত্তম বদলা দান করুন)। লক্ষণীয়, এ দু'আয় যে মাগফিরাতের দু'আ করা হয়েছে, তাতে নিজের কথাই আসে এসেছে যে, হে আল্লাহ! ক্ষমা করুন আমাকে। এটাই নিয়ম। অন্যের মাগফিরাতের জন্য দু’আ করার সময়ও প্রথমে নিজ গুনাহের জন্য ক্ষমা চাওয়া উচিত। এটাই বন্দেগীর দাবী। প্রত্যেক বান্দা নিজেও তো গুনাহগার। নিজের গুনাহ ক্ষমা করানোই বেশী জরুরী। আগে নিজেকেই জাহান্নাম থেকে বাঁচানো দরকার। তাছাড়া নিজে গুনাহগার হওয়া সত্ত্বেও আগে অন্যের গুনাহমাফির কথা বলা এক ধরনের স্পর্ধাও বটে। সুতরাং কেউ যদি গুনাহমাফির জন্য দু'আ চায় কিংবা নিজের পক্ষ থেকেই অন্যের গুনাহমাফির কোন দু'আ করা হয়, তবে আল্লাহ তা'আলার কাছে প্রথমে নিজ গুনাহের জন্য ক্ষমা চাইবে। তারপর অন্যের গুনাহমাফির জন্য দু'আ করবে।
দু'আটির দ্বিতীয় অংশে বলা হয়েছে যে, তার পরে আমাকে উত্তম বদল দান করুন। অন্য বর্ণনায় আছে হযরত উম্মু সালামা রাযি, এই ভেবে মনে মনে অবাক হচ্ছিলেন যে, আবূ সালামার চেয়ে উত্তম স্বামী আর কে হতে পারে! তাঁর এত এত গুণ। এ অবস্থায় তাঁর জীবনে আবূ সালামার উত্তম বদল হয়ে আর কে আসবে? কিন্তু নবী কারীম সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেহেতু তাঁকে এ দু'আ করতে বলেছেন, তাই তাঁর প্রতি নিবেদিতপ্রাণ সাহাবিয়া হিসেবে তিনি দু'আটি করলেন। তিনি তার ফলও পেলেন। তাঁর কল্পনার বাইরে এমন এক বদল তিনি পেলেন, যার চেয়ে উত্তম জগতে আর কেউ হতে পারে না। স্বামীর ইন্তিকালের পর তিনি যখন ইদ্দতের মেয়াদ পার করলেন, তখন স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ থেকে বিবাহের প্রস্তাব আসল। তিনি ধন্য হলেন। উম্মুল মুমিনীনের মর্যাদা লাভ করলেন। মুগ্ধতা ও কৃতজ্ঞতায় আকুল হয়ে তিনি বলেন-
فَأَعْقَبنِي اللَّهُ مَنْ هُوَ خَيْرٌ لِي مِنْهُ: مُحَمَّدًا ﷺ - সুতরাং আল্লাহ তা'আলা আমাকে তার পরে এমন বদল দিলেন, যিনি আমার পক্ষে তার চেয়ে উৎকৃষ্ট। অর্থাৎ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. রোগী বা মায়্যিতের কাছে উপস্থিত ব্যক্তিদের সবরের পরিচয় দিতে হবে।
খ. মুমিন ব্যক্তির দু'আয় ফিরিশতাগণ আমীন বলে থাকে। আমীন অর্থ হে আল্লাহ! কবুল করুন।
গ. ফিরিশতাদের দু'আ অবশ্যই কবুল হয়। তাই বিপদ-আপদে অধৈর্য হয়ে কিছুতেই অনুচিত দু'আ করতে নেই।
ঘ. স্বামী বা স্ত্রী মারা গেলে পরবর্তী করণীয় বিষয়ে নির্ভরযোগ্য আলেমদের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
ঙ. কারও স্বামী বা স্ত্রী মারা গেলে তাকে ধৈর্যধারণের উপদেশ দেওয়া চাই। তারও উচিত সে উপদেশ গ্রহণ করা।
চ. কোনও প্রিয়জন মারা গেলে হাদীছে বর্ণিত দু'আটি অবশ্যই পড়া উচিত। তাতে আশা রাখা যায় আল্লাহ তা'আলা ইহজগতেও তার উত্তম বিনিময় দান করবেন।
إِذَا حَضَرتمُ الْمَرِيض أَوِ الْمَيتَ، فَقُوْلُوْا خيرا (তোমরা যখন কোনও রোগী বা মায়্যিতের কাছে উপস্থিত হবে, তখন ভালো কথা বলো)। অর্থাৎ রোগী বা মায়্যিতের কাছে যাওয়ার পর তাদের কষ্ট দেখে ধৈর্যহারা হতে নেই। বরং আল্লাহ তা’আলার উপর পূর্ণ ভরসা রাখবে। বিশ্বাস রাখবে যে, বিপদ-আপদ তাঁর ইচ্ছাতেই তাআলার তা দূরও করতে পারেন কেবল তিনিই। তিনিই সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। এ বিশ্বাসের সঙ্গে তাঁর কাছে কল্যাণের দু'আ করবে। অসুস্থ ব্যক্তির জন্য শিফা ও আরোগ্য কামনা করবে। মায়্যিতের জন্য রহমত ও মাগফিরাত প্রার্থনা করবে। খুব সতর্ক থাকবে যাতে মুখ থেকে অশোভন বা অনুচিত কোনও কথা বের না হয়ে পড়ে। এর কারণ সম্পর্কে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
فَإِنَّ الْمَلَائِكَةَ يُؤمِّنُوْنَ عَلَى مَا تَقُوْلُوْنَ (কেননা ফিরিশতাগণ তোমরা যা বল তাতে আমীন বলে থাকে)। সেখানে কোনও না কোনও ফিরিশতা তো থাকেই। মায়্যিতের কাছে থাকে মালাকুল মাওত ও তার সহযোগী ফিরিশতাগণ। অন্য সকলের কাছেই আমল লিপিবদ্ধকারী দুই ফিরিশতা তো থাকেই। তাছাড়াও না জানি আরও কত ফিরিশতা থাকে, যাদেরকে আল্লাহ তা'আলা বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত করে রেখেছেন। সকল ফিরিশতাই নিষ্পাপ। তারা দু'আ করলে তা কবুল হয়। 'আমীন'-ও দু'আই বটে। কেননা এর অর্থ হে আল্লাহ তুমি কবুল করো। কাজেই রোগী বা মায়্যিতের কাছে এমনও কোনও দু'আ করতে নেই, যা তাদের জন্য কিংবা দু'আকারী নিজের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। বরং ধৈর্যের সঙ্গে কল্যাণেরই দু'আ করতে হবে।
হযরত উম্মু সালামা রাযি. বলেন যে, আবূ সালামা মারা গেলে আমি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললাম যে, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আবু সালামা তো মারা গেছে। বলাবাহুল্য, তাঁর এ কথা বলাটা সংবাদ দেওয়ার জন্য নয়। কেননা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো তা জানতেনই। তাঁর মৃত্যুকালে তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন, যেমন পূর্বের হাদীছে বর্ণিত আছে। তাই তাঁকে সংবাদ দেওয়ার কোনও অর্থ হয় না। বরং হযরত উম্মু সালামা রাযি. এটা বলেছিলেন মনের বেদনা ও শোক প্রকাশস্বরূপ।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সান্তনাদানস্বরূপ তাঁকে একটি দু'আ শিক্ষা দিলেন। দু'আটি হল- اللهم اغْفِرْ لِي وَلَهُ، وَأَعْقِبنِي مِنْهُ عقبى حَسَنَةً (হে আল্লাহ! আমাকে ও তাকে মাফ করে দিন এবং তার পরে আমাকে উত্তম বদলা দান করুন)। লক্ষণীয়, এ দু'আয় যে মাগফিরাতের দু'আ করা হয়েছে, তাতে নিজের কথাই আসে এসেছে যে, হে আল্লাহ! ক্ষমা করুন আমাকে। এটাই নিয়ম। অন্যের মাগফিরাতের জন্য দু’আ করার সময়ও প্রথমে নিজ গুনাহের জন্য ক্ষমা চাওয়া উচিত। এটাই বন্দেগীর দাবী। প্রত্যেক বান্দা নিজেও তো গুনাহগার। নিজের গুনাহ ক্ষমা করানোই বেশী জরুরী। আগে নিজেকেই জাহান্নাম থেকে বাঁচানো দরকার। তাছাড়া নিজে গুনাহগার হওয়া সত্ত্বেও আগে অন্যের গুনাহমাফির কথা বলা এক ধরনের স্পর্ধাও বটে। সুতরাং কেউ যদি গুনাহমাফির জন্য দু'আ চায় কিংবা নিজের পক্ষ থেকেই অন্যের গুনাহমাফির কোন দু'আ করা হয়, তবে আল্লাহ তা'আলার কাছে প্রথমে নিজ গুনাহের জন্য ক্ষমা চাইবে। তারপর অন্যের গুনাহমাফির জন্য দু'আ করবে।
দু'আটির দ্বিতীয় অংশে বলা হয়েছে যে, তার পরে আমাকে উত্তম বদল দান করুন। অন্য বর্ণনায় আছে হযরত উম্মু সালামা রাযি, এই ভেবে মনে মনে অবাক হচ্ছিলেন যে, আবূ সালামার চেয়ে উত্তম স্বামী আর কে হতে পারে! তাঁর এত এত গুণ। এ অবস্থায় তাঁর জীবনে আবূ সালামার উত্তম বদল হয়ে আর কে আসবে? কিন্তু নবী কারীম সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেহেতু তাঁকে এ দু'আ করতে বলেছেন, তাই তাঁর প্রতি নিবেদিতপ্রাণ সাহাবিয়া হিসেবে তিনি দু'আটি করলেন। তিনি তার ফলও পেলেন। তাঁর কল্পনার বাইরে এমন এক বদল তিনি পেলেন, যার চেয়ে উত্তম জগতে আর কেউ হতে পারে না। স্বামীর ইন্তিকালের পর তিনি যখন ইদ্দতের মেয়াদ পার করলেন, তখন স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ থেকে বিবাহের প্রস্তাব আসল। তিনি ধন্য হলেন। উম্মুল মুমিনীনের মর্যাদা লাভ করলেন। মুগ্ধতা ও কৃতজ্ঞতায় আকুল হয়ে তিনি বলেন-
فَأَعْقَبنِي اللَّهُ مَنْ هُوَ خَيْرٌ لِي مِنْهُ: مُحَمَّدًا ﷺ - সুতরাং আল্লাহ তা'আলা আমাকে তার পরে এমন বদল দিলেন, যিনি আমার পক্ষে তার চেয়ে উৎকৃষ্ট। অর্থাৎ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. রোগী বা মায়্যিতের কাছে উপস্থিত ব্যক্তিদের সবরের পরিচয় দিতে হবে।
খ. মুমিন ব্যক্তির দু'আয় ফিরিশতাগণ আমীন বলে থাকে। আমীন অর্থ হে আল্লাহ! কবুল করুন।
গ. ফিরিশতাদের দু'আ অবশ্যই কবুল হয়। তাই বিপদ-আপদে অধৈর্য হয়ে কিছুতেই অনুচিত দু'আ করতে নেই।
ঘ. স্বামী বা স্ত্রী মারা গেলে পরবর্তী করণীয় বিষয়ে নির্ভরযোগ্য আলেমদের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
ঙ. কারও স্বামী বা স্ত্রী মারা গেলে তাকে ধৈর্যধারণের উপদেশ দেওয়া চাই। তারও উচিত সে উপদেশ গ্রহণ করা।
চ. কোনও প্রিয়জন মারা গেলে হাদীছে বর্ণিত দু'আটি অবশ্যই পড়া উচিত। তাতে আশা রাখা যায় আল্লাহ তা'আলা ইহজগতেও তার উত্তম বিনিময় দান করবেন।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
