রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
৬. সালাম-মুসাফাহার আদব
হাদীস নং: ৮৬৯
 সালাম-মুসাফাহার আদব
পরিচ্ছেদ:১০ অনুমতি গ্রহণ ও তার নিয়ম-নীতি
'অনুমতি গ্রহণ ও তার নিয়ম-নীতি' সম্পর্কিত দু'টি আয়াত
• এক নং আয়াত
يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَدْخُلُوا بُيُوتًا غَيْرَ بُيُوتِكُمْ حَتَّى تَسْتَأْنِسُوا وَ تُسَلِّمُوا عَلَى أَهْلِهَا
অর্থ : হে মুমিনগণ! নিজ গৃহ ছাড়া অন্যের গৃহে প্রবেশ করো না, যতক্ষণ না অনুমতি গ্রহণ কর ও তার বাসিন্দাদেরকে সালাম দাও। (সূরা নূর, আয়াত ২৭)
ব্যাখ্যা
এ আয়াতে অন্যের ঘরে প্রবেশকালে অনুমতি নেওয়া ও সালাম দেওয়ার হুকুম করা হয়েছে। অনুমতি ছাড়া এবং সালাম না দিয়ে অন্যের ঘরে প্রবেশ করা যাবে না। অন্যের ঘর বলতে এমন ঘর বোঝানো উদ্দেশ্য, যে ঘরে অন্য কেউ থাকে। তার মানে কেউ যদি নিজ ঘর অন্যকে ভাড়া দেয়, তবে যাকে ভাড়া দিল তার অনুমতি ছাড়া সে নিজেও ওই ঘরে প্রবেশ করতে পারবে না।
অনুমতি গ্রহণ বোঝানোর জন্য আয়াতে শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে تستأنسوا (অনুমতি গ্রহণ কর)। শব্দটির উৎপত্তি الأنس থেকে। এর অর্থ প্রীতি, পসন্দ, পরিচিতি, সৌজন্য, বন্ধুত্ব ইত্যাদি। অনুমতি গ্রহণের অর্থে এই মূলধাতু থেকে উৎপন্ন تستأنسوا শব্দটির ব্যবহার খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা অন্যের গৃহে অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করাটা সৌজন্য ও ভদ্রতার পরিপন্থি। গৃহবাসী এটা পসন্দ করে না। সে এতে বিরক্তি বোধ করে। অনুমতি চাইলে প্রথমে গৃহবাসী তাকে চিনতে পারে। সে তার ভদ্রতার পরিচয় পেয়ে তার প্রতি আগ্রহবোধ করে এবং খুশিমনে তাকে প্রবেশ করতে অনুমতি দেয়। ফলে উভয়ের মধ্যে সুসম্পর্ক ও বন্ধুত্ব গড়ে ওঠার পথ তৈরি হয়।
আয়াতে অন্যের ঘরে প্রবেশকালে দু'টি কাজ করতে বলা হয়েছে। এক তো হল অনুমতি চাওয়া। আর দ্বিতীয় হল গৃহবাসীকে সালাম দেওয়া। বোঝা গেল কেবল অনুমতি চাওয়াই যথেষ্ট নয়, সালামও দিতে হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, আগে কোনটি করবে? সলাম দেবে তারপর অনুমতি চাবে, নাকি আগে অনুমতি চেয়ে তারপর সালাম দেবে? আয়াতে আগে অনুমতি চাওয়ার উল্লেখ আছে। তাই কেউ কেউ বলেন, প্রথম কাজ অনুমতি চাওয়া। কিন্তু ব্যাকরণের নিয়ম অনুযায়ী আগে উল্লেখের দ্বারা আগে করার প্রতি নির্দেশ হয় না। সংযোজক অব্যয় 'و' (ওয়াও) এর দ্বারা কেবল দু'টি বিষয়কে একত্র করা হয়। এর দ্বারা তারতীব বা পর্যায়ক্রম বোঝানো উদ্দেশ্য হয় না। অধিকাংশ আলেমের মতে নিয়ম হল আগে সালাম দেওয়া, তারপর অনুমতি চাওয়া। এর সপক্ষে তারা হাদীছ উল্লেখ করেন যে, একবার এক সাহাবী নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট প্রবেশ করলেন। কিন্তু তিনি সালামও দিলেন না, অনুমতিও চাইলেন না। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন-
ارْجِعْ فَقُلْ : السَّلَامُ عَلَيْكُمْ، أَأَدْخُل ؟
'তুমি ফিরে যাও এবং বলো- আসসালামু আলাইকুম, আমি কি প্রবেশ করতে পারি?’
(জামে' তিরমিযী : ২৭১০; সুনানে আবু দাউদ: ৫১৭৬; বুখারী, আল আদাবুল মুফরাদ: ১০৮১; নাসাঈ, আস সুনানুল কুবরা : ৬৭০২; ইবনুস সুন্নী, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লায়লা :৬৬৪; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ১৭৬৬৬)
হযরত জাবির রাযি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
لَا تَأْذَنُوا لِمَنْ لَمْ يَبْدَأُ بِالسَّلَامِ
'তোমরা তাকে অনুমতি দেবে না, যে প্রথমে সালাম দেবে না।'
(বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান : ৮৪৩৩; মুসনাদে আবূ ইয়া'লা : ১৮০৯)
মোটকথা, অন্যের ঘরে বা কক্ষে প্রবেশকালে অবশ্যই সালাম দিয়ে অনুমতি নিতে হবে, তাতে সে ব্যক্তি যতই কাছের বা যতই প্রিয় হোক, এমনকি নিজ পিতা-মাতা বা ছেলেমেয়েও যদি হয়।
• দুই নং আয়াত
وَإِذَا بَلَغَ الْأَطْفَالُ مِنْكُمُ الْحُلُمَ فَلْيَسْتَأْذِنُوا كَمَا اسْتَأْذَنَ الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ
অর্থ: এবং তোমাদের শিশুরা সাবালকত্বে উপনীত হলে তারাও যেন অনুমতি গ্রহণ করে, যেমন তাদের আগে বয়ঃপ্রাপ্তগণ অনুমতি গ্রহণ করে আসছে। (সূরা নূর, আয়াত ৫৯)
ব্যাখ্যা
এ আয়াতটিতে সাধারণভাবে আদেশ করা হয়েছে যে, যারা বয়ঃপ্রাপ্ত তাদেরকে কারও ঘরে বা কক্ষে প্রবেশ করতে হলে অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করতে হবে। তা পুরুষ, নারী, মাহরাম, গায়রে মাহরাম যার কাছেই প্রবেশ করুক। এ বিষয়ে মানুষ খুবই অসচেতন। যে যার কক্ষে ইচ্ছা যখন-তখন ঢুকে পড়ে। অনুমতি নেওয়ার কোনও প্রয়োজন বোধ করে না। এটা অনেক সময়ই বিব্রত হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায় অনাকাঙ্ক্ষিতরূপে দেখতে পাওয়ায় প্রবেশকারী নিজেও লজ্জিত হয়। কাউকে যাতে এরূপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে না হয়, সেজন্যই অনুমতি গ্রহণের বিধান দেওয়া হয়েছে। যে যার ঘরেই প্রবেশ করুক না কেন, অবশ্যই অনুমতি নিয়েই প্রবেশ করতে হবে। এমনকি মায়ের ঘরে প্রবেশ করতে চাইলেও অনুমতি নেওয়া জরুরি। একবার হযরত হুযায়ফা রাযি.-কে জিজ্ঞেস করা হল, মায়ের কাছে প্রবেশ করতে অনুমতি নিতে হবে কি? তিনি বললেন, হাঁ, অনুমতি নিতে হবে। অন্যথায় সে হয়তো এমন কিছু দেখবে, যা সে দেখতে পসন্দ করে না। স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকেই এরূপ বর্ণিত আছে। একবার এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার মায়ের নিকট প্রবেশ করার জন্য কি আমাকে অনুমতি নিতে হবে? তিনি বললেন, হাঁ। লোকটি বলল, আমি তো তার সঙ্গে একই ঘরে থাকি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তবুও তার নিকট প্রবেশ করার জন্য তুমি অনুমতি চেয়ে নেবে। লোকটি বলল, আমি তো তার খেদমত করে থাকি। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- أُتَّحِبُّ أَنْ تَرَاهَا عُرْيَانَةً؟ (তুমি কি তাকে নগ্ন দেখতে পসন্দ করবে)? লোকটি বলল, না। তিনি বললেন, তাহলে তার কাছে প্রবেশকালে অনুমতি গ্রহণ করবে।
(বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা : ১৩৫৫৮; খারাইতী, মাকারিমুল আখলাক : ৭৯৪; মুআত্তা মালিক (আব্দুল বাকী সম্পাদিত): ১; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ১৭৬০০)
সুতরাং শরী'আতের এ আদেশের বিষয়ে সকলেরই সচেতন হওয়া উচিত। ঘরে ঘরে এর উপর আমলের চর্চা থাকা চাই। বালেগ হওয়ার অনেক আগে থেকেই শিশুদেরকে এর তা'লীম দিতে হবে। যখন বালেগ হওয়ার কাছাকাছি বয়সে পৌঁছাবে, তখন বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে তাদেরকে দিয়ে এ হুকুম পালন করাতে হবে, যাতে কিছুতেই অনুমতি ছাড়া কারও কক্ষে প্রবেশ না করে। এ বয়সে অভ্যস্ত হয়ে গেলে বালেগ হওয়ার পর তারা যথারীতি এ নিয়ম পালন করবে। অন্যথায় তখনও তাদের দ্বারা গাফলাতি হবে। আর সে গাফলাতির দায় পিতা-মাতার উপরই বর্তাবে।
আয়াতটির শিক্ষা
ক. কারও ঘরে বা কক্ষে অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করতে নেই।
খ. শিশুবয়স থেকেই অন্যের ঘরে প্রবেশের জন্য অনুমতি গ্রহণের তা'লীম দেওয়া উচিত।
'অনুমতি গ্রহণ ও তার নিয়ম-নীতি' সম্পর্কিত দু'টি আয়াত
• এক নং আয়াত
يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَدْخُلُوا بُيُوتًا غَيْرَ بُيُوتِكُمْ حَتَّى تَسْتَأْنِسُوا وَ تُسَلِّمُوا عَلَى أَهْلِهَا
অর্থ : হে মুমিনগণ! নিজ গৃহ ছাড়া অন্যের গৃহে প্রবেশ করো না, যতক্ষণ না অনুমতি গ্রহণ কর ও তার বাসিন্দাদেরকে সালাম দাও। (সূরা নূর, আয়াত ২৭)
ব্যাখ্যা
এ আয়াতে অন্যের ঘরে প্রবেশকালে অনুমতি নেওয়া ও সালাম দেওয়ার হুকুম করা হয়েছে। অনুমতি ছাড়া এবং সালাম না দিয়ে অন্যের ঘরে প্রবেশ করা যাবে না। অন্যের ঘর বলতে এমন ঘর বোঝানো উদ্দেশ্য, যে ঘরে অন্য কেউ থাকে। তার মানে কেউ যদি নিজ ঘর অন্যকে ভাড়া দেয়, তবে যাকে ভাড়া দিল তার অনুমতি ছাড়া সে নিজেও ওই ঘরে প্রবেশ করতে পারবে না।
অনুমতি গ্রহণ বোঝানোর জন্য আয়াতে শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে تستأنسوا (অনুমতি গ্রহণ কর)। শব্দটির উৎপত্তি الأنس থেকে। এর অর্থ প্রীতি, পসন্দ, পরিচিতি, সৌজন্য, বন্ধুত্ব ইত্যাদি। অনুমতি গ্রহণের অর্থে এই মূলধাতু থেকে উৎপন্ন تستأنسوا শব্দটির ব্যবহার খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা অন্যের গৃহে অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করাটা সৌজন্য ও ভদ্রতার পরিপন্থি। গৃহবাসী এটা পসন্দ করে না। সে এতে বিরক্তি বোধ করে। অনুমতি চাইলে প্রথমে গৃহবাসী তাকে চিনতে পারে। সে তার ভদ্রতার পরিচয় পেয়ে তার প্রতি আগ্রহবোধ করে এবং খুশিমনে তাকে প্রবেশ করতে অনুমতি দেয়। ফলে উভয়ের মধ্যে সুসম্পর্ক ও বন্ধুত্ব গড়ে ওঠার পথ তৈরি হয়।
আয়াতে অন্যের ঘরে প্রবেশকালে দু'টি কাজ করতে বলা হয়েছে। এক তো হল অনুমতি চাওয়া। আর দ্বিতীয় হল গৃহবাসীকে সালাম দেওয়া। বোঝা গেল কেবল অনুমতি চাওয়াই যথেষ্ট নয়, সালামও দিতে হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, আগে কোনটি করবে? সলাম দেবে তারপর অনুমতি চাবে, নাকি আগে অনুমতি চেয়ে তারপর সালাম দেবে? আয়াতে আগে অনুমতি চাওয়ার উল্লেখ আছে। তাই কেউ কেউ বলেন, প্রথম কাজ অনুমতি চাওয়া। কিন্তু ব্যাকরণের নিয়ম অনুযায়ী আগে উল্লেখের দ্বারা আগে করার প্রতি নির্দেশ হয় না। সংযোজক অব্যয় 'و' (ওয়াও) এর দ্বারা কেবল দু'টি বিষয়কে একত্র করা হয়। এর দ্বারা তারতীব বা পর্যায়ক্রম বোঝানো উদ্দেশ্য হয় না। অধিকাংশ আলেমের মতে নিয়ম হল আগে সালাম দেওয়া, তারপর অনুমতি চাওয়া। এর সপক্ষে তারা হাদীছ উল্লেখ করেন যে, একবার এক সাহাবী নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট প্রবেশ করলেন। কিন্তু তিনি সালামও দিলেন না, অনুমতিও চাইলেন না। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন-
ارْجِعْ فَقُلْ : السَّلَامُ عَلَيْكُمْ، أَأَدْخُل ؟
'তুমি ফিরে যাও এবং বলো- আসসালামু আলাইকুম, আমি কি প্রবেশ করতে পারি?’
(জামে' তিরমিযী : ২৭১০; সুনানে আবু দাউদ: ৫১৭৬; বুখারী, আল আদাবুল মুফরাদ: ১০৮১; নাসাঈ, আস সুনানুল কুবরা : ৬৭০২; ইবনুস সুন্নী, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লায়লা :৬৬৪; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ১৭৬৬৬)
হযরত জাবির রাযি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
لَا تَأْذَنُوا لِمَنْ لَمْ يَبْدَأُ بِالسَّلَامِ
'তোমরা তাকে অনুমতি দেবে না, যে প্রথমে সালাম দেবে না।'
(বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান : ৮৪৩৩; মুসনাদে আবূ ইয়া'লা : ১৮০৯)
মোটকথা, অন্যের ঘরে বা কক্ষে প্রবেশকালে অবশ্যই সালাম দিয়ে অনুমতি নিতে হবে, তাতে সে ব্যক্তি যতই কাছের বা যতই প্রিয় হোক, এমনকি নিজ পিতা-মাতা বা ছেলেমেয়েও যদি হয়।
• দুই নং আয়াত
وَإِذَا بَلَغَ الْأَطْفَالُ مِنْكُمُ الْحُلُمَ فَلْيَسْتَأْذِنُوا كَمَا اسْتَأْذَنَ الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ
অর্থ: এবং তোমাদের শিশুরা সাবালকত্বে উপনীত হলে তারাও যেন অনুমতি গ্রহণ করে, যেমন তাদের আগে বয়ঃপ্রাপ্তগণ অনুমতি গ্রহণ করে আসছে। (সূরা নূর, আয়াত ৫৯)
ব্যাখ্যা
এ আয়াতটিতে সাধারণভাবে আদেশ করা হয়েছে যে, যারা বয়ঃপ্রাপ্ত তাদেরকে কারও ঘরে বা কক্ষে প্রবেশ করতে হলে অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করতে হবে। তা পুরুষ, নারী, মাহরাম, গায়রে মাহরাম যার কাছেই প্রবেশ করুক। এ বিষয়ে মানুষ খুবই অসচেতন। যে যার কক্ষে ইচ্ছা যখন-তখন ঢুকে পড়ে। অনুমতি নেওয়ার কোনও প্রয়োজন বোধ করে না। এটা অনেক সময়ই বিব্রত হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায় অনাকাঙ্ক্ষিতরূপে দেখতে পাওয়ায় প্রবেশকারী নিজেও লজ্জিত হয়। কাউকে যাতে এরূপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে না হয়, সেজন্যই অনুমতি গ্রহণের বিধান দেওয়া হয়েছে। যে যার ঘরেই প্রবেশ করুক না কেন, অবশ্যই অনুমতি নিয়েই প্রবেশ করতে হবে। এমনকি মায়ের ঘরে প্রবেশ করতে চাইলেও অনুমতি নেওয়া জরুরি। একবার হযরত হুযায়ফা রাযি.-কে জিজ্ঞেস করা হল, মায়ের কাছে প্রবেশ করতে অনুমতি নিতে হবে কি? তিনি বললেন, হাঁ, অনুমতি নিতে হবে। অন্যথায় সে হয়তো এমন কিছু দেখবে, যা সে দেখতে পসন্দ করে না। স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকেই এরূপ বর্ণিত আছে। একবার এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার মায়ের নিকট প্রবেশ করার জন্য কি আমাকে অনুমতি নিতে হবে? তিনি বললেন, হাঁ। লোকটি বলল, আমি তো তার সঙ্গে একই ঘরে থাকি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তবুও তার নিকট প্রবেশ করার জন্য তুমি অনুমতি চেয়ে নেবে। লোকটি বলল, আমি তো তার খেদমত করে থাকি। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- أُتَّحِبُّ أَنْ تَرَاهَا عُرْيَانَةً؟ (তুমি কি তাকে নগ্ন দেখতে পসন্দ করবে)? লোকটি বলল, না। তিনি বললেন, তাহলে তার কাছে প্রবেশকালে অনুমতি গ্রহণ করবে।
(বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা : ১৩৫৫৮; খারাইতী, মাকারিমুল আখলাক : ৭৯৪; মুআত্তা মালিক (আব্দুল বাকী সম্পাদিত): ১; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ১৭৬০০)
সুতরাং শরী'আতের এ আদেশের বিষয়ে সকলেরই সচেতন হওয়া উচিত। ঘরে ঘরে এর উপর আমলের চর্চা থাকা চাই। বালেগ হওয়ার অনেক আগে থেকেই শিশুদেরকে এর তা'লীম দিতে হবে। যখন বালেগ হওয়ার কাছাকাছি বয়সে পৌঁছাবে, তখন বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে তাদেরকে দিয়ে এ হুকুম পালন করাতে হবে, যাতে কিছুতেই অনুমতি ছাড়া কারও কক্ষে প্রবেশ না করে। এ বয়সে অভ্যস্ত হয়ে গেলে বালেগ হওয়ার পর তারা যথারীতি এ নিয়ম পালন করবে। অন্যথায় তখনও তাদের দ্বারা গাফলাতি হবে। আর সে গাফলাতির দায় পিতা-মাতার উপরই বর্তাবে।
আয়াতটির শিক্ষা
ক. কারও ঘরে বা কক্ষে অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করতে নেই।
খ. শিশুবয়স থেকেই অন্যের ঘরে প্রবেশের জন্য অনুমতি গ্রহণের তা'লীম দেওয়া উচিত।
কারও সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য কতবার অনুমতি চাওয়া যাবে
হাদীছ নং: ৮৬৯
হযরত আবু মুসা আশ'আরী রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, অনুমতি চাওয়াটা তিনবার। তারপর তোমাকে অনুমতি দেওয়া হলে তো ভালো, অন্যথায় ফিরে যেয়ো। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ৬২৪৫; সহীহ মুসলিম: ২১৫৩; জামে’ তিরমিযী: ২৬৯০; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ২৫৯৭০; তহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার: ১৫৭৮; সহীহ ইবনে হিব্বান : ৫৮১০; বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান: ৮৪৩৪)
হাদীছ নং: ৮৬৯
হযরত আবু মুসা আশ'আরী রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, অনুমতি চাওয়াটা তিনবার। তারপর তোমাকে অনুমতি দেওয়া হলে তো ভালো, অন্যথায় ফিরে যেয়ো। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ৬২৪৫; সহীহ মুসলিম: ২১৫৩; জামে’ তিরমিযী: ২৬৯০; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ২৫৯৭০; তহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার: ১৫৭৮; সহীহ ইবনে হিব্বান : ৫৮১০; বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান: ৮৪৩৪)
كتاب السلام
باب الاستئذان وآدابه
قَالَ الله تَعَالَى: {يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لاَ تَدْخُلُوا بُيُوتًا غَيْرَ بُيُوتِكُمْ حَتَّى تَسْتَأنِسُوا وَتُسَلِّمُوا عَلَى أَهْلِهَا} [النور: 27]، وقال تَعَالَى: {وَإِذَا بَلَغَ الأَطْفَالُ مِنْكُم الحُلُمَ فَلْيَسْتَأذِنُوا كَمَا اسْتَأْذَنَ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ} [النور: 59].
قَالَ الله تَعَالَى: {يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لاَ تَدْخُلُوا بُيُوتًا غَيْرَ بُيُوتِكُمْ حَتَّى تَسْتَأنِسُوا وَتُسَلِّمُوا عَلَى أَهْلِهَا} [النور: 27]، وقال تَعَالَى: {وَإِذَا بَلَغَ الأَطْفَالُ مِنْكُم الحُلُمَ فَلْيَسْتَأذِنُوا كَمَا اسْتَأْذَنَ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ} [النور: 59].
869 - عن أَبي موسى الأشعري - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رسول الله - صلى الله عليه وسلم: «الاسْتِئْذَانُ ثَلاثٌ، فَإنْ أُذِنَ لَكَ وَإِلاَّ فَارْجِعْ». متفقٌ عَلَيْهِ. (1)
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছটির বক্তব্য হল কারও সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাইলে তার অনুমতি নিতে হবে। অনুমতি চাওয়ার সর্বোচ্চ পরিমাণ তিনবার। অর্থাৎ সাক্ষাৎপ্রার্থী দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সালামের মাধ্যমে অনুমতি চাইবে। যদি অনুমতি না পাওয়া যায়, দ্বিতীয়বার একইভাবে অনুমতি চাইবে। তারপরও অনুমতি না পাওয়া গেলে একইভাবে আরও একবার অনুমতি চাইবে। তাও যদি অনুমতি দেওয়া না হয়, তবে ফিরে যাবে। এ প্রসঙ্গে হযরত উমর ফারুক রাযি. ও হযরত আবূ মূসা আশ'আরী রাযি.-এর একটি সুন্দর ঘটনা বর্ণিত আছে। ঘটনাটি নিম্নরূপ-
    
একবার হযরত আবু মূসা আশ'আরী রাযি. হযরত উমর রাযি.-এর বাড়ির দরজায় উপস্থিত হয়ে অনুমতি প্রার্থনা করলেন। তিনি পরপর তিনবার অনুমতি চাইলেন। কিন্তু অনুমতি দেওয়া হল না। তিনি পরের দিন তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন এবং আগের দিনের বৃত্তান্ত তাঁকে জানালেন। বললেন, আমি গতকাল এসেছিলাম। এসে তিনবার সালাম দিই। কিন্তু আমাকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। তাই ফিরে যাই। হযরত উমর রাযি. বললেন, আমরা তোমার সালাম শুনেছি। কিন্তু তখন আমরা একটা কাজে ব্যস্ত ছিলাম। তা তুমি আরও অনুমতি চাইলে না কেন? অনুমতি দেওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে? হযরত আবু মুসা রাযি. বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুমতি গ্রহণের যে নিয়ম শিখিয়েছেন সে অনুযায়ীই আমি অনুমতি চেয়েছি। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি অনুমতি চাওয়াটা তিনবার। তারপরও অনুমতি না পাওয়া গেলে ফিরে যাবে। হযরত উমর রাযি. বললেন, তুমি এ বিষয়ে সাক্ষী হাজির করো। অন্যথায় তোমাকে কঠিন শাস্তি দেব। এতে হযরত আবূ মূসা আশ'আরী রাযি. মনঃক্ষুণ্ণ হলেন। তখনই তিনি আনসারদের একটি মজলিসে গিয়ে উপস্থিত হলেন। দেখেই বোঝা যাচ্ছিল তিনি ক্ষুব্ধ ও বিচলিত। তিনি মজলিসের লোকদের লক্ষ্য করে বললেন, আপনাদেরকে আল্লাহর কসম দিয়ে জিজ্ঞেস করছি, আপনাদের মধ্যে কেউ কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন- اَلْاِسْتأذَانُ ثَلَاتٌ، فَإِنْ أُذِنَ لَكَ وَ إِلَّا فَارْجِعْ (অনুমতি চাওয়াটা তিনবার। তারপর তোমাকে অনুমতি দেওয়া হলে তো ভালো, অন্যথায় ফিরে যেয়ো)। সে মজলিসের প্রধান ছিলেন বিখ্যাত সাহাবী হযরত উবাঈ ইবন কা'ব রাযি.। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কেন, কী হয়েছে? হযরত আবূ মূসা রাযি. তাদের সামনে ঘটনার বিবরণ দিলেন। হযরত উবাঈ ইবন কা'ব রাযি. বললেন, এ বিষয়ে সাক্ষী দিতে যাবে আমাদের মধ্যকার সর্বকনিষ্ঠ ব্যক্তি। সে মজলিসে হযরত আবূ সা'ঈদ খুদরী রাযি.-ও ছিলেন। তিনি ছিলেন বয়সে সবার ছোট। সিদ্ধান্ত মোতাবেক তিনি গিয়ে সাক্ষ্য দিলেন এবং বললেন যে, আমাদেরকে অনুমতিগ্রহণ বিষয়ে এমনই শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। হযরত উমর ফারূক রাযি. বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ শিক্ষাটি আমার অজানা ছিল। বাজারে কেনাবেচায় ব্যস্ত থাকাটা আমাকে এ বিষয়ে অনবহিত রেখেছে। (সহীহ মুসলিম: ২১৫৩; সুনানে আবু দাউদ: ৫১৮২)
    
এক বর্ণনায় আছে, হযরত উমর রাযি. মসজিদেও এ বিষয়ে সাক্ষ্য চেয়েছিলেন। তখন হযরত উবাঈ ইবন কা'ব রাযি. স্বয়ং সাক্ষ্যদান করেন এবং বলেন, হে উমর ইবনুল খাত্তাব! আপনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদের জন্য আযাবে পরিণত হবেন না। হযরত উমর রাযি. বললেন, সুবহানাল্লাহ! আমি তো একটি কথা শুনলাম আর সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে চাইলাম। (সহীহ মুসলিম: ২১৫৪; সুনানে আবু দাউদ: ৫১৮১; তহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার: ১৫৮২)
     
বস্তুত এটা ছিল হযরত উমর ফারুক রাযি.-এর দূরদর্শীতা ও হাদীছ বিষয়ে তাঁর কঠোর সতর্কতা। হযরত আবূ মূসা রাযি.-এর বিশ্বস্ততায় তাঁর কোনও সন্দেহ ছিল না। কিন্তু হাদীছ যেহেতু শরী'আতের দলীল, তাই এর বর্ণনায় যাতে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হয় সেটাই ছিল তাঁর লক্ষ্যবস্তু। তাঁর আমলে তিনি ছিলেন সমগ্র উম্মতের অভিভাবক। তাই উম্মতের দীন ও দুনিয়া উভয় বিষয়ে তাঁর সতর্ক অবস্থান বাঞ্ছনীয় ছিল। বিশেষত এ শরী'আত যেহেতু সর্বশেষ শরী'আত, তাই কিয়ামত পর্যন্ত এর সুরক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করা উম্মতের উলামা ও শাসকবর্গের অপরিহার্য কর্তব্য ছিল। সাহাবায়ে কেরাম থেকে শুরু করে পরবর্তী শত শত বছর উম্মতের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ এ কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করে এসেছে। ফলে আজ এ আখেরী শরী'আত ও এর উৎস কুরআন-সুন্নাহ যথাযথভাবে সংরক্ষিত আছে।
     
যাহোক অনুমতি চাওয়ার সর্বোচ্চ সীমা হল তিনবার। তিনবারের পর আর অনুমতি চাওয়া সঙ্গত নয়। এটা পীড়াপীড়ির মধ্যে পড়ে। কাউকে পীড়াপীড়ি করে কষ্ট দেওয়া উচিত না। অনুমতি চাইলে যে অনুমতি দিতেই হবে এর কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। মানুষের নানারকম ওজর থাকতে পারে। হয়তো এমন সময় অনুমতি চাওয়া হয়েছে, যখন অনুমতি দেওয়াটা সম্ভব নয়। তা দিতে গেলে বিশেষ কষ্ট বা পেরেশানি হবে। সাক্ষাৎপ্রার্থীর উচিত মানুষের কষ্ট-ক্লেশ বা ওজর-অজুহাতকে সম্মান দেওয়া এবং অনুমতি না পাওয়াকে সহজভাবে গ্রহণ করা। হাঁ, সাক্ষাৎপ্রার্থীর প্রয়োজনও বিশেষ জরুরি হতে পারে। তাই যথাসম্ভব অনুমতি দেওয়া বাঞ্ছনীয়। কঠিন ওজর না থাকলে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া সঙ্গত নয়।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. কারও সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাইলে আগে অনুমতি নেওয়া জরুরি।
খ. অনুমতি চাওয়ার সর্বোচ্চ সীমা তিনবার। তৃতীয়বারেও অনুমতি পাওয়া না গেলে ফিরে যেতে হবে। চতুর্থ বার অনুমতি চাওয়া বিধিসম্মত নয়।
একবার হযরত আবু মূসা আশ'আরী রাযি. হযরত উমর রাযি.-এর বাড়ির দরজায় উপস্থিত হয়ে অনুমতি প্রার্থনা করলেন। তিনি পরপর তিনবার অনুমতি চাইলেন। কিন্তু অনুমতি দেওয়া হল না। তিনি পরের দিন তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন এবং আগের দিনের বৃত্তান্ত তাঁকে জানালেন। বললেন, আমি গতকাল এসেছিলাম। এসে তিনবার সালাম দিই। কিন্তু আমাকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। তাই ফিরে যাই। হযরত উমর রাযি. বললেন, আমরা তোমার সালাম শুনেছি। কিন্তু তখন আমরা একটা কাজে ব্যস্ত ছিলাম। তা তুমি আরও অনুমতি চাইলে না কেন? অনুমতি দেওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে? হযরত আবু মুসা রাযি. বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুমতি গ্রহণের যে নিয়ম শিখিয়েছেন সে অনুযায়ীই আমি অনুমতি চেয়েছি। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি অনুমতি চাওয়াটা তিনবার। তারপরও অনুমতি না পাওয়া গেলে ফিরে যাবে। হযরত উমর রাযি. বললেন, তুমি এ বিষয়ে সাক্ষী হাজির করো। অন্যথায় তোমাকে কঠিন শাস্তি দেব। এতে হযরত আবূ মূসা আশ'আরী রাযি. মনঃক্ষুণ্ণ হলেন। তখনই তিনি আনসারদের একটি মজলিসে গিয়ে উপস্থিত হলেন। দেখেই বোঝা যাচ্ছিল তিনি ক্ষুব্ধ ও বিচলিত। তিনি মজলিসের লোকদের লক্ষ্য করে বললেন, আপনাদেরকে আল্লাহর কসম দিয়ে জিজ্ঞেস করছি, আপনাদের মধ্যে কেউ কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন- اَلْاِسْتأذَانُ ثَلَاتٌ، فَإِنْ أُذِنَ لَكَ وَ إِلَّا فَارْجِعْ (অনুমতি চাওয়াটা তিনবার। তারপর তোমাকে অনুমতি দেওয়া হলে তো ভালো, অন্যথায় ফিরে যেয়ো)। সে মজলিসের প্রধান ছিলেন বিখ্যাত সাহাবী হযরত উবাঈ ইবন কা'ব রাযি.। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কেন, কী হয়েছে? হযরত আবূ মূসা রাযি. তাদের সামনে ঘটনার বিবরণ দিলেন। হযরত উবাঈ ইবন কা'ব রাযি. বললেন, এ বিষয়ে সাক্ষী দিতে যাবে আমাদের মধ্যকার সর্বকনিষ্ঠ ব্যক্তি। সে মজলিসে হযরত আবূ সা'ঈদ খুদরী রাযি.-ও ছিলেন। তিনি ছিলেন বয়সে সবার ছোট। সিদ্ধান্ত মোতাবেক তিনি গিয়ে সাক্ষ্য দিলেন এবং বললেন যে, আমাদেরকে অনুমতিগ্রহণ বিষয়ে এমনই শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। হযরত উমর ফারূক রাযি. বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ শিক্ষাটি আমার অজানা ছিল। বাজারে কেনাবেচায় ব্যস্ত থাকাটা আমাকে এ বিষয়ে অনবহিত রেখেছে। (সহীহ মুসলিম: ২১৫৩; সুনানে আবু দাউদ: ৫১৮২)
এক বর্ণনায় আছে, হযরত উমর রাযি. মসজিদেও এ বিষয়ে সাক্ষ্য চেয়েছিলেন। তখন হযরত উবাঈ ইবন কা'ব রাযি. স্বয়ং সাক্ষ্যদান করেন এবং বলেন, হে উমর ইবনুল খাত্তাব! আপনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদের জন্য আযাবে পরিণত হবেন না। হযরত উমর রাযি. বললেন, সুবহানাল্লাহ! আমি তো একটি কথা শুনলাম আর সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে চাইলাম। (সহীহ মুসলিম: ২১৫৪; সুনানে আবু দাউদ: ৫১৮১; তহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার: ১৫৮২)
বস্তুত এটা ছিল হযরত উমর ফারুক রাযি.-এর দূরদর্শীতা ও হাদীছ বিষয়ে তাঁর কঠোর সতর্কতা। হযরত আবূ মূসা রাযি.-এর বিশ্বস্ততায় তাঁর কোনও সন্দেহ ছিল না। কিন্তু হাদীছ যেহেতু শরী'আতের দলীল, তাই এর বর্ণনায় যাতে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হয় সেটাই ছিল তাঁর লক্ষ্যবস্তু। তাঁর আমলে তিনি ছিলেন সমগ্র উম্মতের অভিভাবক। তাই উম্মতের দীন ও দুনিয়া উভয় বিষয়ে তাঁর সতর্ক অবস্থান বাঞ্ছনীয় ছিল। বিশেষত এ শরী'আত যেহেতু সর্বশেষ শরী'আত, তাই কিয়ামত পর্যন্ত এর সুরক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করা উম্মতের উলামা ও শাসকবর্গের অপরিহার্য কর্তব্য ছিল। সাহাবায়ে কেরাম থেকে শুরু করে পরবর্তী শত শত বছর উম্মতের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ এ কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করে এসেছে। ফলে আজ এ আখেরী শরী'আত ও এর উৎস কুরআন-সুন্নাহ যথাযথভাবে সংরক্ষিত আছে।
যাহোক অনুমতি চাওয়ার সর্বোচ্চ সীমা হল তিনবার। তিনবারের পর আর অনুমতি চাওয়া সঙ্গত নয়। এটা পীড়াপীড়ির মধ্যে পড়ে। কাউকে পীড়াপীড়ি করে কষ্ট দেওয়া উচিত না। অনুমতি চাইলে যে অনুমতি দিতেই হবে এর কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। মানুষের নানারকম ওজর থাকতে পারে। হয়তো এমন সময় অনুমতি চাওয়া হয়েছে, যখন অনুমতি দেওয়াটা সম্ভব নয়। তা দিতে গেলে বিশেষ কষ্ট বা পেরেশানি হবে। সাক্ষাৎপ্রার্থীর উচিত মানুষের কষ্ট-ক্লেশ বা ওজর-অজুহাতকে সম্মান দেওয়া এবং অনুমতি না পাওয়াকে সহজভাবে গ্রহণ করা। হাঁ, সাক্ষাৎপ্রার্থীর প্রয়োজনও বিশেষ জরুরি হতে পারে। তাই যথাসম্ভব অনুমতি দেওয়া বাঞ্ছনীয়। কঠিন ওজর না থাকলে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া সঙ্গত নয়।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. কারও সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাইলে আগে অনুমতি নেওয়া জরুরি।
খ. অনুমতি চাওয়ার সর্বোচ্চ সীমা তিনবার। তৃতীয়বারেও অনুমতি পাওয়া না গেলে ফিরে যেতে হবে। চতুর্থ বার অনুমতি চাওয়া বিধিসম্মত নয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)