রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

৬. সালাম-মুসাফাহার আদব

হাদীস নং: ৮৬৫
সালাম-মুসাফাহার আদব
পরিচ্ছেদ :৮ কাফের ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া, কোনও কাফের সালাম দিলে তার জবাব দেওয়ার পদ্ধতি এবং যে মজলিসে মুসলিম ও কাফের উভয়প্রকার লোক থাকে, সেখানে সালাম দেওয়া প্রসঙ্গ
অমুসলিমদের সালাম দেওয়া যাবে কি
হাদীছ নং: ৮৬৫

হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা ইহুদি ও নাসারাকে আগে সালাম দিয়ো না। পথে তাদের কারও সঙ্গে তোমাদের দেখা হলে তাকে পথের সংকীর্ণ স্থানের দিকে যেতে বাধ্য করো। -মুসলিম
(সহীহ মুসলিম : ২১৬৭; জামে তিরমিযী : ২৭০০; মুসনাদে আহমাদ: ৮৫৪০; মুসনাদুল বাযযার: ৯০৫২; তহাবী, শারহু মা'আনিল আছার: ৭২৬০; বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান : ৮৫১২)
كتاب السلام
باب تحريم ابتدائنا الكافر بالسلام وكيفية الرد عليهم واستحباب السلام عَلَى أهل مجلسٍ فيهم مسلمون وكفار
865 - وعن أَبي هريرة - رضي الله عنه: أنَّ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «لاَ تَبْدَأُوا اليَهُودَ وَلاَ النَّصَارَى بالسَّلامِ، فَإِذَا لَقِيتُمْ أَحَدَهُمْ في طَرِيق فَاضطَرُّوهُ إِلَى أَضْيَقِهِ (1)». رواه مسلم. (2)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

সালাম ইসলামের নিদর্শন। এটা মুসলিমদের পারস্পরিক অভিবাদন। এর দ্বারা এক মুসলিম অপর মুসলিমকে সম্মান জানায়। তার জন্য দু'আ করে। তাই এটা কেবল মুসলিমদের জন্যই প্রযোজ্য। অন্যদের জন্য নয়। অন্যরা আল্লাহর অবাধ্যতা করে। যে আল্লাহর অবাধ্য, তাকে সম্মান করা যায় না। যে আল্লাহর অবাধ্য, তার জন্য আল্লাহর রহমতের দু'আ করা উচিত নয়। তাই হাদীছে অমুসলিমকে সালাম দিতে নিষেধ করা হয়েছে।

হাদীছটি দ্বারা জানা গেল কোনও অমুসলিমকে সালাম দেওয়া যাবে না। তাহলে তাদের কারও সঙ্গে দেখা হলে কীভাবে অভিবাদন জানানো হবে? অমুসলিম সহকর্মী, প্রতিবেশী ও পরিচিত জনদের সঙ্গে যখন দেখা-সাক্ষাৎ হয়, তখন কী বলে তার প্রতি সৌজন্য প্রকাশ করা হবে? তাকে পাশকাটিয়ে যাওয়াটা অভদ্রতা। ইসলাম সৌজন্য ও ভদ্রতা প্রকাশের শিক্ষা দেয়। যে-কারও প্রতি অভদ্র আচরণ ইসলামে নিন্দনীয়। কাজেই এক্ষেত্রে ভদ্রতা প্রকাশের জন্য কী শব্দ ব্যবহার করা হবে? হাদীছটির ভেতর চিন্তা করলে এর সমাধান পাওয়া যায়। হাদীছটিতে অমুসলিমকে সালাম দিতে নিষেধ করা হয়েছে। কাজেই তাদেরকে সালাম দেওয়া যাবে না বটে, কিন্তু তাদের মধ্যে অভিবাদনের যে ভাষা প্রচলিত আছে তা ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন সুপ্রভাত, শুভ সন্ধ্যা ইত্যাদি। তবে কিছুতেই নমস্কার বা নমস্তে শব্দ ব্যবহার করা যাবে না। কেননা এ শব্দ হিন্দুদের ধর্মীয় নিদর্শন ও তাদের বিশেষ অভিবাদন। এর অর্থ আমি আপনার প্রতি মাথা ঝুঁকালাম। কোনও মুসলিম আল্লাহ ছাড়া আর কারও সামনে মাথা ঝোঁকাতে পারে না। সম্মান ও শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের জন্য মাথা নোওয়ানো কেবল আল্লাহ তা'আলার ক্ষেত্রেই নির্ধারিত। অন্যত্র এর ব্যবহার সম্পূর্ণ অবৈধ।

প্রশ্ন হচ্ছে, তারা যদি আগে সালাম দেয় তখন কী করণীয়? এর উত্তর সামনের হাদীছে আসছে।
হাদীছটির দ্বিতীয় হুকুম হল- فَإِذَا لَقِيتُمْ أَحَدَهُمْ فِي طَرِيقِ فَاضْطَرُّوهُ إِلَى أَضيقِهِ
(তাদের কারও সঙ্গে তোমাদের দেখা হলে তাকে পথের সংকীর্ণ স্থানের দিকে যেতে বাধ্য করো)। অর্থাৎ তোমরা চলবে রাস্তার মাঝখান দিয়ে আর তাদেরকে চলতে দেবে রাস্তার প্রান্ত দিয়ে। এ হুকুম এমন ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যেখানে চলার পথ প্রশস্ত নয়। পথের মাঝখান দিয়ে চলাচল করলে দুই পাশে চলাচলের জন্য সংকীর্ণ জায়গা থাকে। স্বাভাবিকভাবেই এরূপ ক্ষেত্রে যারা সেই পথের দুই ধার দিয়ে চলবে, তাদের তুলনায় যারা মাঝখান দিয়ে চলবে তাদেরকে বেশি মর্যাদাবান মনে হবে। আল্লাহর যমীনে সেই মর্যাদা পাওয়ার অধিকার কেবল তাদেরই, যারা আল্লাহকে মানে ও তাঁর আনুগত্য করে। যারা তাঁকে মানে না ও তাঁর আনুগত্য করে না, তাদেরকে তুলনামূলকভাবে বেশি মর্যাদা দিলে প্রকারান্তরে তাতে আল্লাহর অবাধ্যতা করা হয়। সেজন্যই নিজেরা রাস্তার মাঝখান দিয়ে চলে তাদেরকে প্রান্তভাগ দিয়ে চলতে দিতে হুকুম করা হয়েছে।

রাস্তা প্রশস্ত হলে এর প্রয়োজন পড়ে না। সে ক্ষেত্রে কারওই কিনারা দিয়ে চলার দরকার হয় না। সকলেই মাঝখান দিয়ে চলতে পারে আর এতে করে একের তুলনায় অন্যের বেশি মর্যাদা প্রকাশ পাওয়ার অবকাশ আসে না। তাই সে তুলনায় অমুসলিমদেরকে রাস্তার কিনারা দিয়ে চলতে বাধ্য করার প্রয়োজনও পড়ে না। এ অবস্থায় তাদেরকে কিনারা দিয়ে চলতে বাধ্য করলে তাদেরকে শুধু শুধু কষ্ট দেওয়া হবে। কাউকেই অকারণে কষ্ট দেওয়া জায়েয নয়। এজন্যই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বা সাহাবায়ে কেরাম রাস্তায় চলাচল করার সময় অমুসলিমদেরকে কিনারা দিয়ে চলতে বাধ্য করেছেন বলে কোনও প্রমাণ পাওয়া যায় না। এর দ্বারা বোঝা যায় এ হুকুমটি বিশেষ ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। এটি সকল ক্ষেত্রের জন্য সাধারণ নির্দেশ নয়।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. কোনও অমুসলিমকে সালাম দেওয়া জায়েয নয়।

খ. আল্লাহর অবাধ্য ব্যক্তি কোনও মুসলিমের কাছে সম্মান পাওয়ার অধিকার রাখে না।

গ. রাস্তায় চলাচলকালে লক্ষ রাখতে হবে যাতে নিজ আচরণ দ্বারা মুসলিম ব্যক্তির উপর অমুসলিম ব্যক্তিকে প্রাধান্য দেওয়া না হয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)