রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

৬. সালাম-মুসাফাহার আদব

হাদীস নং: ৮৫৬
সালাম-মুসাফাহার আদব
পরিচ্ছেদ :৩ সালামের আদবসমূহ
হাদীছ নং: ৮৫৬

হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আরোহী সালাম দেবে পায়ে হেঁটে চলা ব্যক্তিকে, হেঁটে চলা যাক্তি সালাম দেবে বসে থাকা ব্যক্তিকে এবং অল্প সংখ্যক লোক সালাম দেবে বেশি সংখ্যক লোককে। -বুখারী ও মুসলিম
বুখারীর এক বর্ণনায় আছে, ছোট সালাম দেবে বড়কে।
(সহীহ বুখারী: ৬২৩১; সহীহ মুসলিম: ২১৬০; সুনানে আবূ দাউদ: ৫১৯৮; জামে' তিরমিযী : ২৭০৩; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ২৫৮৭১; মুসনাদে আহমাদ: ৮২৯৩; সুনানে দারিমী : ২৬৭৬; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ১৮৭২০; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ৩৩০৪; জামে' মা'মার ইবন রাশিদ: ১৯৪৪৩; মুসনাদে ইসহাক ইবন রাহূয়াহ : ৪৭৫)
كتاب السلام
باب آداب السلام
856 - عن أَبي هريرة - رضي الله عنه: أنَّ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «يُسَلِّمُ الرَّاكِبُ عَلَى المَاشِي، وَالمَاشِي عَلَى القَاعِدِ، وَالقَليلُ عَلَى الكَثِيرِ». متفقٌ عَلَيْهِ. (1)
وفي رواية للبخاري: «والصغيرُ عَلَى الكَبيرِ».

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এমনিতে তো আগে সালাম দেওয়া উত্তম। সালামদাতা যে-ই হোক। যাকেই সালাম দেওয়া হোক। তারপরও শান্তি-শৃঙ্খলার লক্ষ্যে কিছু নিয়মও বলে দেওয়া হয়েছে। সে নিয়ম রক্ষার দ্বারা শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি বড়কে সম্মান করা, অন্যের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ, বিনয়-নম্রতার চর্চা প্রভৃতি আত্মিক গুণাবলি বিকাশের সাধনাও হয়ে যায়। হাদীছটিতে বলা হয়েছে-
يسلم الراكب على الماشي (আরোহী সালাম দেবে পায়ে হেঁটে চলা ব্যক্তিকে)। কেননা যে ব্যাক্তি পায়ে হেঁটে চলে, তার চলাটা কষ্টসাধ্য কাজ। আরোহী ব্যক্তি আরামে অল্পসময়ের মধ্যে তার গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে পারে। তাই তার উচিত যে ব্যক্তি পায়ে হেঁটে চলে তার প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করা। সালাম দেওয়ার দ্বারা সে সহমর্মিতা প্রকাশ পায়। তাছাড়া দুনিয়াবী দিক থেকে আরোহী ব্যক্তির অবস্থান হেঁটে চলা ব্যক্তির উপরে। এ কারণে তার মনে অহংকার জন্মানোর অবকাশ থাকে। তা যাতে জন্মাতে না পারে, সেজন্য দরকার বিনয়ের চর্চা। আগে সালাম দেওয়াটা বিনয়ের প্রকাশ। কাজেই আরোহী ব্যক্তি আগে সালাম দিলে তা দ্বারা বিনয়ের চর্চা হবে এবং অহংকার দূর হবে। সেদিক থেকে এ নিয়ম বড়ই কল্যাণকর।

আরো বলা হয়েছে- وَالْمَاشِي عَلَى الْقَاعِدِ (হেঁটে চলা ব্যক্তি সালাম দেবে বসে থাকা ব্যক্তিকে)। কেননা কোনও ব্যক্তি যখন বসা থাকে আর কেউ তার দিকে এগিয়ে আসতে থাকে, তখন তার মনে নানা আশঙ্কা দেখা দেয়। না জানি সে কোনও ক্ষতি করে বসে। তাই তাকে আশ্বস্ত করা দরকার। সালাম এক আশ্বাসবাণী। এর দ্বারা সালামদাতা আশ্বস্ত করে যে, তুমি নিশ্চিন্তে থাকো। আমার দ্বারা তোমার কোনও ক্ষতি হবে না। এজন্যই চলমান ব্যক্তির বসে থাকা ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া উচিত।

আরো আছে- وَالْقَلِيلُ عَلَى الْكَثِيرِ (অল্প সংখ্যক লোক সালাম দেবে বেশি সংখ্যক লোককে)। কেননা যে দলে লোক বেশি, তাদের হকও বেশি। লোক বেশি হওয়ায় তাদের মধ্যে আল্লাহ তা'আলার পসন্দের লোকও বেশি থাকার সম্ভাবনা। তাই ছোট দলের উচিত বড় দলকে সালাম দেওয়া। তবে ছোট দলের পক্ষ থেকে যে-কোনও একজন সালাম দিলেই হক আদায় হয়ে যাবে। অনুরূপ বড় দলের পক্ষ থেকেও যে- কোনও একজন জবাব দিলেই চলবে।

হাদীসে আরো আছে- وَالصَّغَيْرُ عَلَى الْكَبِيرِ (ছোট সালাম দেবে বড়কে)। কেননা বড়কে সম্মান করা জরুরি। তাকে সালাম দেওয়ার দ্বারা সে সম্মান প্রকাশ পায়।

উল্লেখ্য, এ সবই আদব। অর্থাৎ এরকম হওয়া ভালো। এর মানে এরকম নয়, অপর পক্ষ অপেক্ষায় থাকবে যে, আগে তাকে সালাম দেওয়া হবে এবং সে তার জবাব দেবে। অনেকেই এরকম করে। তাকে আগে সালাম না দেওয়া হলে আপত্তি জানায়। এমনকি ধমকায়, বকা দেয়, মারমুখীও হয়ে ওঠে। এটা কিছুতেই বাঞ্ছনীয় নয়। অন্যের সালামের অপেক্ষায় না থেকে নিজেই কেন আগে সালাম দিবে না? আগে সালাম দেওয়া যেহেতু উত্তম, তাই আমি যে-ই হই না কেন, যে অবস্থায়ই থাকি না কেন, আমিই আগে সালাম দেব। এতেই আমার কল্যাণ।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. এ হাদীছে সালামের যে আদব শেখানো হয়েছে, সে অনুযায়ী সালাম আগে দেওয়ার দায়িত্ব যার যার উপর অর্পিত হয়, তাদের প্রত্যেককেই এ শিক্ষার উপর আমলে সচেষ্ট থাকতে হবে।

খ. এ শিক্ষার ভেতর যে আখলাকী শিক্ষা আছে, সেদিকেও লক্ষ রাখা চাই। যেমন বাহনে চড়ে যাওয়া বা দামি বাহনে চলার কারণে অহমিকার শিকার না হওয়া, দুর্বল ও গরীবের প্রতি সহমর্মী থাকা, বড়কে সম্মান করা, বিনয় ও নম্রতায় অভ্যস্ত হওয়া ইত্যাদি।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)