রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
৫. ঘুমানো ও মজলিসের আদব
হাদীস নং: ৮৩৪
ঘুমানো ও মজলিসের আদব
পরিচ্ছেদ:৩ মজলিস ও মজলিসের সঙ্গীদের সম্পর্কিত আদব-কায়দা
আল্লাহ তা'আলার যিকিরবিহীন মজলিস ও এরূপ মজলিসে অংশগ্রহণকারীদের দৃষ্টান্ত
হাদীছ নং: ৮৩৪
হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যারাই এমন কোনও মজলিস থেকে ওঠে, যে মজলিসে তারা আল্লাহর যিকির করে না, তারা যেন ওঠে গাধার মড়া থেকে। আর সে মজলিস তাদের জন্য হবে আক্ষেপ। -আবু দাউদ'
(সুনানে আবূ দাউদ: ৪৮৫৫; মুসনাদুল বাযযার: ৯০৯৯)
হাদীছ নং: ৮৩৪
হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যারাই এমন কোনও মজলিস থেকে ওঠে, যে মজলিসে তারা আল্লাহর যিকির করে না, তারা যেন ওঠে গাধার মড়া থেকে। আর সে মজলিস তাদের জন্য হবে আক্ষেপ। -আবু দাউদ'
(সুনানে আবূ দাউদ: ৪৮৫৫; মুসনাদুল বাযযার: ৯০৯৯)
كتاب آداب النوم والاضطجاع والقعود والمجلس والجليس والرؤيا
باب في آداب المجلس والجليس
834 - وعن أَبي هريرة - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رسول الله - صلى الله عليه وسلم: «مَا مِنْ قَوْمٍ يَقُومُونَ مِنْ مَجْلِسٍ لاَ يَذْكُرُونَ الله تَعَالَى فِيهِ، إِلاَّ قَامُوا عَنْ مِثْل جِيفَةِ حِمَارٍ، وَكَانَ لَهُمْ حَسْرَةٌ». رواه أَبُو داود بإسنادٍ صحيح. (1)
হাদীসের ব্যাখ্যা:
যে মজলিস বা বৈঠকে আল্লাহ তা'আলার যিকির ও স্মরণ করা হয় না, সে মজলিস যে কত নিকৃষ্ট ও কদর্য, এ হাদীছে তা তুলে ধরা হয়েছে। তা তুলে ধরা হয়েছে উপমার মাধ্যমে। মজলিসটিকে তুলনা করা হয়েছে মড়া গাধার সঙ্গে। আর সে মজলিসে অংশগ্রহণকারীদেরকে তুলনা করা হয়েছে সেই মড়া গাধা খেয়ে যারা ওঠে তাদের সঙ্গে। গাধা এমনিই পশুদের মধ্যে নিম্নশ্রেণির। সেই গাধা যদি হয় মড়া, তবে তার কদর্যতার সীমা থাকে না। মড়া বস্তুটি গাধা হোক বা অন্য কোনও পশু, কোথাও পড়ে থাকলে তার উপর শকুনের দল হুমড়ি খেয়ে পড়ে। তারা তা খেয়ে শেষ করে উড়ে চলে যায়। কোনও মানুষ সে মড়া পশুর কাছেও যায় না। কাছ দিয়ে যেতে হলে ঘৃণায় থুথু ফেলে ও নাক চেপে ধরে। এমনই ঘৃণ্য সে বস্তুটি। এই ঘৃণ্য বস্তুকে যারা খায় সেই শকুনকেও পাখিদের মধ্যে নিকৃষ্ট গণ্য করা হয়। এবার ভাবুন যে মজলিসকে এমন মড়া বস্তুর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে, সে মজলিস কত নিকৃষ্ট! আর যারা এমন মজলিসে অংশগ্রহণ করে মর্যাদায় তারা কতটা হীন! এ দৃষ্টান্ত দ্বারা আমাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে যেন আমরা কিছুতেই এরূপ মজলিসে অংশগ্রহণ না করি। যদি কখনও কোনও মজলিসে অংশগ্রহণ করা হয়, তবে অবশ্যই যেন সেখানে আল্লাহর যিকির কিছু না কিছু করি। যেন দীনের আলোচনা করি, তাওবা-ইস্তিগফার করি, সদুপদেশ দিই, সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করি। এ সবই আল্লাহর যিকির। কোনওরকম যিকিরই যদি না করি, তবে তা হবে দুর্ভাগ্যজনক। কেননা হাদীসে আছে-
وكان لهم حسرة (আর সে মজলিস তাদের জন্য হবে আক্ষেপ)। এ আক্ষেপ হবে আখিরাতে। অপর এক হাদীছে আছে-
مَا مِنْ قَوْمٍ جَلَسُوا مَجْلِسًا لَمْ يَذْكُرُوا اللَّهَ فِيهِ، إِلَّا رَأَوْهُ حَسْرَةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ
'যারাই এমন কোনও মজলিসে বসেছে, যে মজলিসে তারা আল্লাহর যিকির করেনি, কিয়ামতের দিন তারা সে মজলিসকে দেখতে পাবে আক্ষেপরূপে’। (মুসনাদে আহমাদ: ৭০৯৩)
আক্ষেপ হবে এ কারণে যে, সে মজলিসে জীবনের কতটা মূল্যবান সময় চলে গেল অথচ তার বিপরীতে এমন কিছুই অর্জিত হল না, যা আখিরাতে কাজে আসতে পারে। আখিরাতে যখন বান্দার কাছ থেকে তার আয়ুর হিসাব নেওয়া হবে, তখন সে দেখতে পাবে দুনিয়ায় বিভিন্ন মজলিসে এমন কত সময় সে কাটিয়েছে, যেসব মজলিসে সে আল্লাহর কোনও যিকির করেনি আর এভাবে অযথাই তার সে সময়গুলো নষ্ট হয়েছে। তখন যদি সে আল্লাহর যিকির করত, তবে আজ তা তার কতইনা কাজে আসত! এভাবে সে সেইসব মজলিসের জন্য আক্ষেপ করতে থাকবে।
বোঝা গেল আল্লাহ তা'আলার যিকিরই আসল জিনিস। আল্লাহর যিকির যাতে থাকে তা অশেষ মূল্যবান। আর আল্লাহর যিকির যাতে থাকে না, তার কোনও মূল্য নেই। বাহ্যদৃষ্টিতে তা যতই আড়ম্বরপূর্ণ হোক। মানুষের কাছে তা যতই প্রশংসিত হোক। সুতরাং নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
أَلَا إِنَّ الدُّنْيَا مَلْعُونَةٌ ، مَلْعُونٌ مَا فِيهَا ، إِلَّا ذِكْرُ اللَّهِ، وَمَا وَالاهُ، وَعَالِمٌ أَوْ مُتَعَلِّمُ
'শোনো! নিঃসন্দেহে দুনিয়া অভিশপ্ত। অভিশপ্ত তার মধ্যে যা-কিছু আছে সবই, তবে আল্লাহর যিকির এবং যা-কিছু তার নিকটবর্তী (যা আল্লাহ ভালোবাসেন), আলেম ও তালিবে ইলম।' (জামে তিরমিযী: ২৩২২; সুনানে ইবন মাজাহ: ৪১১২; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ৪০২৯)
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা সর্বাবস্থায় আল্লাহ তা'আলার যিকির করার গুরুত্ব উপলব্ধি করা যায়।
খ. হাদীছটি মজলিস ও বৈঠকে আল্লাহ তা'আলার যিকির ও স্মরণের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে।
গ. সমাবেশ ও মজমায় আল্লাহ তা'আলার যিকির না হওয়াটা বিপজ্জনক।
ঘ. জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত বড় মূল্যবান। তাই একটি মুহূর্তও পরকালীন অর্জন ব্যতিরেকে কাটাতে নেই।
وكان لهم حسرة (আর সে মজলিস তাদের জন্য হবে আক্ষেপ)। এ আক্ষেপ হবে আখিরাতে। অপর এক হাদীছে আছে-
مَا مِنْ قَوْمٍ جَلَسُوا مَجْلِسًا لَمْ يَذْكُرُوا اللَّهَ فِيهِ، إِلَّا رَأَوْهُ حَسْرَةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ
'যারাই এমন কোনও মজলিসে বসেছে, যে মজলিসে তারা আল্লাহর যিকির করেনি, কিয়ামতের দিন তারা সে মজলিসকে দেখতে পাবে আক্ষেপরূপে’। (মুসনাদে আহমাদ: ৭০৯৩)
আক্ষেপ হবে এ কারণে যে, সে মজলিসে জীবনের কতটা মূল্যবান সময় চলে গেল অথচ তার বিপরীতে এমন কিছুই অর্জিত হল না, যা আখিরাতে কাজে আসতে পারে। আখিরাতে যখন বান্দার কাছ থেকে তার আয়ুর হিসাব নেওয়া হবে, তখন সে দেখতে পাবে দুনিয়ায় বিভিন্ন মজলিসে এমন কত সময় সে কাটিয়েছে, যেসব মজলিসে সে আল্লাহর কোনও যিকির করেনি আর এভাবে অযথাই তার সে সময়গুলো নষ্ট হয়েছে। তখন যদি সে আল্লাহর যিকির করত, তবে আজ তা তার কতইনা কাজে আসত! এভাবে সে সেইসব মজলিসের জন্য আক্ষেপ করতে থাকবে।
বোঝা গেল আল্লাহ তা'আলার যিকিরই আসল জিনিস। আল্লাহর যিকির যাতে থাকে তা অশেষ মূল্যবান। আর আল্লাহর যিকির যাতে থাকে না, তার কোনও মূল্য নেই। বাহ্যদৃষ্টিতে তা যতই আড়ম্বরপূর্ণ হোক। মানুষের কাছে তা যতই প্রশংসিত হোক। সুতরাং নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
أَلَا إِنَّ الدُّنْيَا مَلْعُونَةٌ ، مَلْعُونٌ مَا فِيهَا ، إِلَّا ذِكْرُ اللَّهِ، وَمَا وَالاهُ، وَعَالِمٌ أَوْ مُتَعَلِّمُ
'শোনো! নিঃসন্দেহে দুনিয়া অভিশপ্ত। অভিশপ্ত তার মধ্যে যা-কিছু আছে সবই, তবে আল্লাহর যিকির এবং যা-কিছু তার নিকটবর্তী (যা আল্লাহ ভালোবাসেন), আলেম ও তালিবে ইলম।' (জামে তিরমিযী: ২৩২২; সুনানে ইবন মাজাহ: ৪১১২; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ৪০২৯)
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা সর্বাবস্থায় আল্লাহ তা'আলার যিকির করার গুরুত্ব উপলব্ধি করা যায়।
খ. হাদীছটি মজলিস ও বৈঠকে আল্লাহ তা'আলার যিকির ও স্মরণের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে।
গ. সমাবেশ ও মজমায় আল্লাহ তা'আলার যিকির না হওয়াটা বিপজ্জনক।
ঘ. জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত বড় মূল্যবান। তাই একটি মুহূর্তও পরকালীন অর্জন ব্যতিরেকে কাটাতে নেই।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)