রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
৪. পোষাক-পরিচ্ছদের বর্ণনা
হাদীস নং: ৮০২
 পোষাক-পরিচ্ছদের বর্ণনা
পরিচ্ছেদ:৫ পোশাকে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা এবং অভাবগ্রস্ত না হলে ও শরী'আতের চাহিদা ব্যতিরেকে তুচ্ছ পোশাক পরিধান না করা
হাদীছ নং: ৮০২
আমর ইবন শু'আয়ব রহ, তাঁর পিতার সূত্রে দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ নিজ বান্দার প্রতি তাঁর অনুগ্রহের প্রকাশ দেখতে পসন্দ করেন।
(জামে' তিরমিযী: ২৮১৯। মুসনাদে আহমাদ: ৮০৯২; মুসনাদে আবু দাউদ তয়ালিসী: ২৩৭৫। তাবারানী, আল মু'জামুল আওসাত: ৪৬৬৮; হাকিম, আল মুস্তাদরাক: ৭১৮৮; বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান; ৪২৫১)
আমর ইবন শু'আয়ব রহ, তাঁর পিতার সূত্রে দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ নিজ বান্দার প্রতি তাঁর অনুগ্রহের প্রকাশ দেখতে পসন্দ করেন।
(জামে' তিরমিযী: ২৮১৯। মুসনাদে আহমাদ: ৮০৯২; মুসনাদে আবু দাউদ তয়ালিসী: ২৩৭৫। তাবারানী, আল মু'জামুল আওসাত: ৪৬৬৮; হাকিম, আল মুস্তাদরাক: ৭১৮৮; বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান; ৪২৫১)
كتاب اللباس
باب استحباب التوسط في اللباس وَلاَ يقتصر عَلَى مَا يزري بِهِ لغير حاجة وَلاَ مقصود شرعي
802 - عن عمرو بن شعيب، عن أبيهِ، عن جَدِّهِ - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رسول الله - صلى الله عليه وسلم: «إنَّ اللهَ يُحِبُّ أَنْ يُرَى أثَرُ نِعْمَتِهِ عَلَى عَبْدِهِ». رواه الترمذي، (1) وقال: «حديث حسن».
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছটিতে জীবনযাপনের অতি সুন্দর এক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পোশাক-আশাক, পানাহার ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে কে কী মান রক্ষা করবে, সে সম্পর্কে এ হাদীছটি দ্বারা সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। এতে বলা হয়েছে, আল্লাহ তা'আলা তাঁর যে বান্দাকে যে নি'আমত দান করেছেন, বান্দার আচার-আচরণ ও কাজকর্ম দ্বারা যাতে সে নি'আমতের প্রকাশ পায় তা আল্লাহ তা'আলা পসন্দ করেন। কাজেই পোশাক তৈরির সময় তাকে লক্ষ রাখতে হবে যেন পোশাকটি তার আর্থিক অবস্থার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হয়। এমন যেন না হয় যে, পোশাক দেখলে আর্থিকভাবে তার প্রকৃত যে অবস্থা সে তুলনায় গরীব মনে হবে। আর্থিকভাবে যে ব্যক্তি সচ্ছল, তার সে সচ্ছলতার প্রকাশ পোশাকের মধ্যে থাকা উচিত। এটাও সচ্ছলতার এক ধরনের কৃতজ্ঞতা। সচ্ছলতা থাকা সত্ত্বেও পোশাক দেখলে যদি অসচ্ছল মনে হয়, তবে তা সচ্ছলতাকে লুকানোর মধ্যে পড়ে যায়। এভাবে আল্লাহপ্রদত্ত নি'আমত লুকানো কিছুতেই সমীচীন নয়। এটা নি'আমতের অকৃতজ্ঞতা। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
وَأَمَّا بِنِعْمَةِ رَبِّكَ فَحَدِّثْ
এবং তোমার প্রতিপালকের যে নি'আমত (পেয়েছ), তার চর্চা করতে থাকো। (সূরা দুহা, আয়াত ১১)
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে-
الَّذِينَ يَبْخَلُونَ وَيَأْمُرُونَ النَّاسَ بِالْبُخْلِ وَيَكْتُمُونَ مَا آتَاهُمُ اللَّهُ مِنْ فَضْلِهِ وَأَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِينَ عَذَابًا مُهِينًا (37)
যারা নিজেরা কৃপণতা করে এবং মানুষকেও কৃপণতার নির্দেশ দেয়, আর আল্লাহ নিজ অনুগ্রহ হতে তাদের যা দান করেছেন তা গোপন করে, আমি (এরূপ) অকৃতজ্ঞদের জন্য লাঞ্ছনাকর শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি। (সূরা নিসা, আয়াত ৩৭)
    
একবার নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সাহাবীকে অতি তুচ্ছ মানের পোশাক পরিহিত অবস্থায় দেখে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কি সম্পদ আছে? তিনি বললেন, হাঁ, আল্লাহ তা'আলা আমাকে সব রকমের সম্পদ দান করেছেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন-
إِذَا كَانَ لَكَ مَالٌ فَلْيُرَ عَلَيْكَ
'তোমার যদি সম্পদ থাকে, তবে তোমার উপর যেন তার ছাপ লক্ষ করা যায়’।
(সুনানে নাসাঈ: ৫২৯৪; জামে তিরমিযী: ২০০৬; তহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার: ৩০৪১: সহীহ ইবনে হিব্বান: ৫৪১৬; হাকিম, আল মুস্তাদরাক: ৬৫; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা : ১৯৭১০; শু'আবুল ঈমান: ৭৭১৯; তাবারানী, আল মু'জামুল আওসাত: ১৭০২; জামে' মা'মার ইবন রাশিদ: ২০৫১৩; মুসনাদে আবু দাউদ তয়ালিসী: ১৩৯৯)
অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলার কৃতজ্ঞতা প্রকাশার্থে তুমি তাঁর দেওয়া নি'আমত লুকাবে না; বরং নিজ আচার-আচরণ দ্বারা তা প্রকাশ করবে। যেমন সামর্থ্যের সাথে সঙ্গতি রেখে পোশাক পরা, আত্মীয়-স্বজনের সাহায্য-সহযোগিতা করা, গরীবদের দান-খয়রাত করা এবং অন্যান্য কল্যাণকর কাজে খরচ করা।
    
"হযরত মু'আয ইবন আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি (উচ্চমানের) পোশাক পরিধানের সামর্থ্য রাখা সত্ত্বেও আল্লাহর জন্য বিনয় অবলম্বনের লক্ষ্যে তা পরিহার করে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা'আলা সমস্ত মাখলুকের সামনে তাকে ডাকবেন এবং তাকে ঈমানের পোশাকসমূহ থেকে যেটি ইচ্ছা পরিধান করার এখতিয়ার দেবেন।"
উক্ত হাদীছ দ্বারা জানা গেছে, পোশাক-পরিচ্ছদের দ্বারা যাতে অহংকার প্রকাশ না পায়, সেদিকে লক্ষ রাখা জরুরি। তাই জাঁকজমকপূর্ণ পোশাক পরিহার করা মুস্তাহাব। এমন পোশাক পরতে হবে, যা দ্বারা বিনয় প্রকাশ পায়। আবার আলোচ্য হাদীছে আর্থিক অবস্থার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ পোশাক পরতে বলা হয়েছে। আর্থিক অবস্থা যদি ভালো হয়, তবে তার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ পোশাক পরতে গেলে সে পোশাক হবে উন্নত মানের। বেশি দামি পোশাক তো জাঁকজমকপূর্ণই হয়। অন্যদিকে বিনয়ী পোশাক হয় সাধারণ মানের। এ হিসেবে উভয় হাদীছ পরস্পরবিরোধী মনে হয়। এর সমাধান কী?
উলামায়ে কেরাম উভয় হাদীছ সামনে রেখে বলেন, সাধারণভাবে মুস্তাহাব হল মধ্যম মানের পোশাক পরা। বেশি দামি পোশাক হলে মানুষকে দেখানোর মানসিকতা ও অহংকারের আশঙ্কা থাকে। আবার বেশি নিম্নমানের হলে তা হয় অমর্যাদাকর। মুমিন ব্যক্তির নিজ সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা করাও জরুরি। তবে হাঁ, উদ্দেশ্য যদি হয় আল্লাহর জন্য বিনয়প্রকাশ, তবে ভিন্ন কথা। বিনয়ের উদ্দেশ্যে নিজ সামর্থ্যের তুলনায় নিম্নমানের পোশাক পরাতে কোনও দোষ নেই। এমনিভাবে যে ব্যক্তি নিতান্ত গরীব সে যদি অতি সাধারণ মানের পোশাক পরে, তবে সেটা তার ওজর। এটা আত্মাবমাননার মধ্যে পড়বে না।
     
আবার সচ্ছল ব্যক্তি যদি আল্লাহর নি'আমত প্রকাশ করার লক্ষ্যে বেশি দামি পোশাক পরে, তাও দূষণীয় হবে না। কেননা এতে করে গরীবেরা তার আর্থিক সম্পন্নতা সম্পর্কে জানতে পারবে। ফলে বিপদ-আপদে তারা সাহায্য-সহযোগিতার জন্য তার কাছে আসার ভরসা পাবে এবং সেও তাদের সাহায্য করার সুযোগ পাবে। ধনী ব্যক্তিরাও জানবে যে, সে সচ্ছল। ফলে তারা তাকে আর্থিক সাহায্য করা বা যাকাত-সদাকা দেওয়ার কথা চিন্তা করবে না।
    
বুযুর্গানে দীনের অনেকে গরীব হওয়া সত্ত্বেও এ উদ্দেশ্যে দামি পোশাক পরতেন যে, মানুষ যাতে তাদেরকে তাদের মুখাপেক্ষী না মনে করে এবং তাদের প্রতি অনুকম্পা প্রকাশের ইচ্ছা করে তাদেরকে অপমানিত করার সুযোগ না পায়। তারা তাদের প্রকাশ্য ও গুপ্ত উভয় প্রকার মুখাপেক্ষিতা কেবল আল্লাহ তা'আলার জন্যই নিবেদিত রাখতেন।
    
সারকথা সহীহ নিয়ত ও ইখলাসও গুরুত্বপূর্ণ। সহীহ নিয়তের সঙ্গে যেমন দামি পোশাক পরলেও সমস্যা নেই, তেমনি একদম তুচ্ছ ও অতি সাধারণ পোশাক পরলেও ক্ষতি নেই। নিয়ত অনুযায়ী উভয়টিই প্রশংসনীয়। তবে সাধারণ ব্যক্তিদের জন্য সাধারণ অবস্থায় মধ্যম মানের পোশাকই নিরাপদ। এতে অহংকার থেকে বাঁচা ও আত্মাবমাননা থেকে রক্ষা পাওয়া সহজ হয়।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. আর্থিক সচ্ছলতা আল্লাহ তা'আলার নি'আমত। এর জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা জরুরি।
খ. আল্লাহর দেওয়া নি'আমত লুকানো সমীচীন নয়। লুকানোটাও এক প্রকার অকৃতজ্ঞতা।
গ. নিজ পোশাক-পরিচ্ছদ ও কাজকর্ম এমন হওয়া উচিত, যাতে তা দ্বারা আল্লাহপ্রদত্ত নি'আমতের প্রকাশ হয়।
وَأَمَّا بِنِعْمَةِ رَبِّكَ فَحَدِّثْ
এবং তোমার প্রতিপালকের যে নি'আমত (পেয়েছ), তার চর্চা করতে থাকো। (সূরা দুহা, আয়াত ১১)
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে-
الَّذِينَ يَبْخَلُونَ وَيَأْمُرُونَ النَّاسَ بِالْبُخْلِ وَيَكْتُمُونَ مَا آتَاهُمُ اللَّهُ مِنْ فَضْلِهِ وَأَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِينَ عَذَابًا مُهِينًا (37)
যারা নিজেরা কৃপণতা করে এবং মানুষকেও কৃপণতার নির্দেশ দেয়, আর আল্লাহ নিজ অনুগ্রহ হতে তাদের যা দান করেছেন তা গোপন করে, আমি (এরূপ) অকৃতজ্ঞদের জন্য লাঞ্ছনাকর শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি। (সূরা নিসা, আয়াত ৩৭)
একবার নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সাহাবীকে অতি তুচ্ছ মানের পোশাক পরিহিত অবস্থায় দেখে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কি সম্পদ আছে? তিনি বললেন, হাঁ, আল্লাহ তা'আলা আমাকে সব রকমের সম্পদ দান করেছেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন-
إِذَا كَانَ لَكَ مَالٌ فَلْيُرَ عَلَيْكَ
'তোমার যদি সম্পদ থাকে, তবে তোমার উপর যেন তার ছাপ লক্ষ করা যায়’।
(সুনানে নাসাঈ: ৫২৯৪; জামে তিরমিযী: ২০০৬; তহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার: ৩০৪১: সহীহ ইবনে হিব্বান: ৫৪১৬; হাকিম, আল মুস্তাদরাক: ৬৫; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা : ১৯৭১০; শু'আবুল ঈমান: ৭৭১৯; তাবারানী, আল মু'জামুল আওসাত: ১৭০২; জামে' মা'মার ইবন রাশিদ: ২০৫১৩; মুসনাদে আবু দাউদ তয়ালিসী: ১৩৯৯)
অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলার কৃতজ্ঞতা প্রকাশার্থে তুমি তাঁর দেওয়া নি'আমত লুকাবে না; বরং নিজ আচার-আচরণ দ্বারা তা প্রকাশ করবে। যেমন সামর্থ্যের সাথে সঙ্গতি রেখে পোশাক পরা, আত্মীয়-স্বজনের সাহায্য-সহযোগিতা করা, গরীবদের দান-খয়রাত করা এবং অন্যান্য কল্যাণকর কাজে খরচ করা।
"হযরত মু'আয ইবন আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি (উচ্চমানের) পোশাক পরিধানের সামর্থ্য রাখা সত্ত্বেও আল্লাহর জন্য বিনয় অবলম্বনের লক্ষ্যে তা পরিহার করে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা'আলা সমস্ত মাখলুকের সামনে তাকে ডাকবেন এবং তাকে ঈমানের পোশাকসমূহ থেকে যেটি ইচ্ছা পরিধান করার এখতিয়ার দেবেন।"
উক্ত হাদীছ দ্বারা জানা গেছে, পোশাক-পরিচ্ছদের দ্বারা যাতে অহংকার প্রকাশ না পায়, সেদিকে লক্ষ রাখা জরুরি। তাই জাঁকজমকপূর্ণ পোশাক পরিহার করা মুস্তাহাব। এমন পোশাক পরতে হবে, যা দ্বারা বিনয় প্রকাশ পায়। আবার আলোচ্য হাদীছে আর্থিক অবস্থার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ পোশাক পরতে বলা হয়েছে। আর্থিক অবস্থা যদি ভালো হয়, তবে তার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ পোশাক পরতে গেলে সে পোশাক হবে উন্নত মানের। বেশি দামি পোশাক তো জাঁকজমকপূর্ণই হয়। অন্যদিকে বিনয়ী পোশাক হয় সাধারণ মানের। এ হিসেবে উভয় হাদীছ পরস্পরবিরোধী মনে হয়। এর সমাধান কী?
উলামায়ে কেরাম উভয় হাদীছ সামনে রেখে বলেন, সাধারণভাবে মুস্তাহাব হল মধ্যম মানের পোশাক পরা। বেশি দামি পোশাক হলে মানুষকে দেখানোর মানসিকতা ও অহংকারের আশঙ্কা থাকে। আবার বেশি নিম্নমানের হলে তা হয় অমর্যাদাকর। মুমিন ব্যক্তির নিজ সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা করাও জরুরি। তবে হাঁ, উদ্দেশ্য যদি হয় আল্লাহর জন্য বিনয়প্রকাশ, তবে ভিন্ন কথা। বিনয়ের উদ্দেশ্যে নিজ সামর্থ্যের তুলনায় নিম্নমানের পোশাক পরাতে কোনও দোষ নেই। এমনিভাবে যে ব্যক্তি নিতান্ত গরীব সে যদি অতি সাধারণ মানের পোশাক পরে, তবে সেটা তার ওজর। এটা আত্মাবমাননার মধ্যে পড়বে না।
আবার সচ্ছল ব্যক্তি যদি আল্লাহর নি'আমত প্রকাশ করার লক্ষ্যে বেশি দামি পোশাক পরে, তাও দূষণীয় হবে না। কেননা এতে করে গরীবেরা তার আর্থিক সম্পন্নতা সম্পর্কে জানতে পারবে। ফলে বিপদ-আপদে তারা সাহায্য-সহযোগিতার জন্য তার কাছে আসার ভরসা পাবে এবং সেও তাদের সাহায্য করার সুযোগ পাবে। ধনী ব্যক্তিরাও জানবে যে, সে সচ্ছল। ফলে তারা তাকে আর্থিক সাহায্য করা বা যাকাত-সদাকা দেওয়ার কথা চিন্তা করবে না।
বুযুর্গানে দীনের অনেকে গরীব হওয়া সত্ত্বেও এ উদ্দেশ্যে দামি পোশাক পরতেন যে, মানুষ যাতে তাদেরকে তাদের মুখাপেক্ষী না মনে করে এবং তাদের প্রতি অনুকম্পা প্রকাশের ইচ্ছা করে তাদেরকে অপমানিত করার সুযোগ না পায়। তারা তাদের প্রকাশ্য ও গুপ্ত উভয় প্রকার মুখাপেক্ষিতা কেবল আল্লাহ তা'আলার জন্যই নিবেদিত রাখতেন।
সারকথা সহীহ নিয়ত ও ইখলাসও গুরুত্বপূর্ণ। সহীহ নিয়তের সঙ্গে যেমন দামি পোশাক পরলেও সমস্যা নেই, তেমনি একদম তুচ্ছ ও অতি সাধারণ পোশাক পরলেও ক্ষতি নেই। নিয়ত অনুযায়ী উভয়টিই প্রশংসনীয়। তবে সাধারণ ব্যক্তিদের জন্য সাধারণ অবস্থায় মধ্যম মানের পোশাকই নিরাপদ। এতে অহংকার থেকে বাঁচা ও আত্মাবমাননা থেকে রক্ষা পাওয়া সহজ হয়।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. আর্থিক সচ্ছলতা আল্লাহ তা'আলার নি'আমত। এর জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা জরুরি।
খ. আল্লাহর দেওয়া নি'আমত লুকানো সমীচীন নয়। লুকানোটাও এক প্রকার অকৃতজ্ঞতা।
গ. নিজ পোশাক-পরিচ্ছদ ও কাজকর্ম এমন হওয়া উচিত, যাতে তা দ্বারা আল্লাহপ্রদত্ত নি'আমতের প্রকাশ হয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)