রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

৩. আহার-পানীয় গ্রহণের আদব

হাদীস নং: ৭৭০
পরিচ্ছেদ: ১৫ দাঁড়িয়ে পান করার বৈধতা ও বসে পান করার উৎকৃষ্টতা
হাদীছ নং: ৭৭০
হযরত আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদেরকে দাঁড়িয়ে পান করতে নিষেধ করেছেন। কাতাদা রহ. বলেন, আমরা হযরত আনাস রাযি.-কে জিজ্ঞেস করলাম, তবে আহার করা? তিনি বললেন, সেটা অধিকতর মন্দ। অথবা বললেন, অধিকতর নিকৃষ্ট। -মুসলিম
(সহীহ মুসলিম: ২০২৪; সুনানে আবু দাউদ: ৩৭১৭; জামে তিরমিযী: ১৮৭৯; সুনানে ইবন মাজাহ ৩৪২৪; মুসনাদে আবু দাউদ তয়ালিসী: ২১২৯; মুসনাদুল বাযযার: ৭০৬৭; মুসনাদে আবু ইয়া'লা ৩১৬৫; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর ২১২৪; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ৩০৪৫; সহীহ ইবনে হিব্বান ৫৩২১)

মুসলিমের অপর এক বর্ণনায় আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে পান করতে তিরস্কারের সঙ্গে মানা করেছেন।
باب بيان جواز الشرب قائمًا وبيان أنَّ الأكمل والأفضل الشرب قاعدًا
770 - وعن أنس - رضي الله عنه - عن النبيِّ - صلى الله عليه وسلم: أنه نَهى أن يَشْرَبَ الرَّجُلُ قَائِمًا. قَالَ قتادة: فَقُلْنَا لأَنَسٍ: فالأَكْلُ؟ قَالَ: ذَلِكَ أَشَرُّ - أَوْ أخْبَثُ. رواه مسلم. (1) وفي رواية لَهُ: أنَّ النبيَّ - صلى الله عليه وسلم - زَجَرَ عَن الشُّرْب قائِمًا.

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছটিতে দাঁড়িয়ে পানি পান করতে নিষেধ করা হয়েছে। কোন কোন হাদীছ দ্বারা বোঝা যায় দাঁড়িয়ে পান করা জায়েয। উলামায়ে কেরাম উভয় হাদীছের মধ্যে এভাবে সমন্বয় সাধন করেছেন যে, দাঁড়িয়ে পান করার নিষেধাজ্ঞা হারাম অর্থে নয়; বরং মাকরূহ অর্থে। অর্থাৎ এমনিতে দাঁড়িয়ে পান করা জায়েয। তবে তা অপসন্দনীয় তথা মাকরূহ। সে কারণেই এই হাদীছে দাঁড়িয়ে পান করতে নিষেধ করা হয়েছে। কোনও মুমিন-মুসলিমের অপসন্দনীয় কাজও করা উচিত নয়। তার সব কাজই সুন্দর ও সুচারুরূপে হওয়া উচিত। দাঁড়িয়ে পানাহার করা অপেক্ষা বসে পানাহার করাটা যে সুন্দর, তা যে-কেউ স্বীকার করবে। এটা স্বাস্থ্যের পক্ষেও ভালো। বসে শান্তভাবে পানাহার করলে খাবার ও পানীয় ধীরে সচ্ছন্দ্যে উদরস্থ হয়। দাঁড়িয়ে পানাহার করলে তা হয় দ্রুতগতিতে। তাতে পাকস্থলীতে চাপ পড়ে। হজমেও ব্যাঘাত ঘটে।

প্রশ্ন হতে পারে, কোন কোন হাদীছে তো ভুলে দাঁড়িয়ে পান করলে বমি করতে বলা হয়েছে, তা দ্বারা ইঙ্গিত হয় না যে, দাঁড়িয়ে পান করাটা খুবই মন্দ কাজ?
উত্তর হল, বমি করার আদেশ 'মুস্তাহাব' অর্থে। অর্থাৎ বমি করা ওয়াজিব ও অপরিহার্য নয়; করাটা ভালো। উচিত ছিল সুন্নতের অনুসরণার্থে বসে পান করা। তা যখন করা হয়নি, তখন তার জন্য ভালো এটাই যে, বমি করে সে পানি ফেলে দেবে, তারপর নতুন করে সুন্নত মোতাবেক পান করবে। এমনও হতে পারে যে, বমি করার আদেশ কেবলই তিরস্কার করার জন্য। প্রকৃত অর্থেই বমি করতে বলা হয়নি।

হাদীছে ভুলে দাঁড়িয়ে পান করলে বমি করতে বলা হয়েছে। তার মানে এ নয় যে, ইচ্ছাকৃত দাঁড়িয়ে পান করলে কোনও অসুবিধা নেই। বরং বিষয়টিকে এভাবে বুঝতে হবে যে, ভুলে দাঁড়িয়ে পান করলেই যখন বমির হুকুম, তখন ইচ্ছাকৃত দাঁড়িয়ে পান করলে তো তা অধিকতর মন্দ হবে। অথবা বিশেষভাবে ভুলের কথা বলা হয়েছে এ কারণে যে, মুমিন ব্যক্তি তো অবশ্যই সুন্নত মোতাবেক পান করবে। ইচ্ছাকৃত সে দাঁড়িয়ে পান করতেই পারে না। তাঁর দাঁড়িয়ে পান করাটা হতে পারে ভুলক্রমে। তবে ভুলক্রমে হলেও কাজটি যেহেতু মন্দ, তাই তার প্রতিকার দরকার। সে হিসেবেই বমি করার হুকুম।

হাদীসে আছে, শিষ্য কাতাদা রহ.-এর জিজ্ঞাসার উত্তরে হযরত আনাস রাযি. দাঁড়িয়ে আহার করাকে অধিকতর মন্দ বলেছেন। কেননা পান করার চেয়ে আহার করাতে সময় বেশি লাগে। দাঁড়িয়ে পান করলে মন্দ কাজটি অল্পসময়ে শেষ হয়ে যায়। কিন্তু দাঁড়িয়ে আহার করলে মন্দ কাজ করা হয় অপেক্ষাকৃত বেশি সময়। এ কারণেই দাঁড়িয়ে আহার করাকে অধিকতর মন্দ বলেছেন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

পানি, শরবত ইত্যাদি দাঁড়িয়ে পান করতে নেই। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষা অনুযায়ী তা অপসন্দনীয় কাজ।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)
রিয়াযুস সালিহীন - হাদীস নং ৭৭০ | মুসলিম বাংলা