রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
৩. আহার-পানীয় গ্রহণের আদব
হাদীস নং: ৭৫৩
পরিচ্ছেদ: ১০ তিন আঙ্গুলে খাওয়া, আঙ্গুল চেটে খাওয়া, চাটার আগে আঙ্গুল না মোছা, পাত্র চেটে খাওয়া, যে খাবার পড়ে যায় তা তুলে খাওয়া, চেটে খাওয়ার পর সে আঙ্গুল হাতের বাহু বা পায়ে কিংবা অন্য কিছুতে মোছা
হাদীছ নং: ৭৫৩
সা‘ঈদ ইবনুল হারিছ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি হযরত জাবির রাযি.-কে জিজ্ঞেস করলেন, আগুনে পাকানো কিছু খেলে ওযু করতে হবে কি না? তিনি বললেন, না। আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যমানায় সেরকম খাবার কমই পেতাম। যখন তা পেতাম, তখন (তা খাওয়ার পর হাত মোছার জন্য) আমাদের কোনও রুমাল ছিল না। ছিল কেবল আমাদের হাত, বাহু ও পা (আমরা তাতেই হাত মুছে নিতাম)। তারপর নামায পড়তাম, কিন্তু ওযু করতাম না। -বুখারী
(সহীহ বুখারী: ৫৪৫৭; সুনানে ইবন মাজাহ ৩২৮২; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ১৬৯)
সা‘ঈদ ইবনুল হারিছ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি হযরত জাবির রাযি.-কে জিজ্ঞেস করলেন, আগুনে পাকানো কিছু খেলে ওযু করতে হবে কি না? তিনি বললেন, না। আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যমানায় সেরকম খাবার কমই পেতাম। যখন তা পেতাম, তখন (তা খাওয়ার পর হাত মোছার জন্য) আমাদের কোনও রুমাল ছিল না। ছিল কেবল আমাদের হাত, বাহু ও পা (আমরা তাতেই হাত মুছে নিতাম)। তারপর নামায পড়তাম, কিন্তু ওযু করতাম না। -বুখারী
(সহীহ বুখারী: ৫৪৫৭; সুনানে ইবন মাজাহ ৩২৮২; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ১৬৯)
باب استحباب الأكل بثلاث أصابع، واستحباب لعق الأصابع، وكراهة مسحها قبل لعقها
واستحباب لعق القصعة وأخذ اللقمة الَّتي تسقط منه وأكلها، ومسحها بعد اللعق بالساعد والقدم وغيرها
واستحباب لعق القصعة وأخذ اللقمة الَّتي تسقط منه وأكلها، ومسحها بعد اللعق بالساعد والقدم وغيرها
753 - وعن سعيد بنِ الحارث: أنّه سأل جابرًا - رضي الله عنه - عنِ الوُضُوءِ مِمَّا مَسَّتِ النَّارُ، فَقَالَ: لا، قَدْ كُنَّا زَمَنَ النبيِّ - صلى الله عليه وسلم - لا نَجِدُ مِثْلَ ذَلِكَ الطَّعامِ إِلاَّ قليلًا، فإذا نَحْنُ وجَدْنَاهُ، لَمْ يَكُنْ لنا مَنَادِيلُ إِلاَّ أكُفَّنا، وسَواعِدَنَا، وأقْدامَنَا، ثُمَّ نُصَلِّي وَلاَ نَتَوَضَّأُ. رواه البخاري. (1)
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছটি দ্বারা অনুমান করা যায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যমানায় সাহাবায়ে কেরাম কতটা অভাবগ্রস্ত ছিলেন। হযরত জাবির রাযি. জানান, সে যমানায় আগুনে পাকানো জিনিস তাঁরা খুব কমই পেতেন। তার মানে রুটি, গোশত, তরকারি ইত্যাদি তাঁদের কমই খাওয়া হত। বেশিরভাগ খেজুর খেয়েই কাটিয়ে দিতেন। সে খেজুরও কি সবসময় পেট ভরে খেতে পারতেন? অনেক সময়ই এক-দু'টো খেজুর খেয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হত।
মাঝেমধ্যে যখন রান্না করা খাবার খাওয়া হত, তখন তারা হাত মুছতেন কী দিয়ে? হযরত জাবির রাযি. বলেন, হাত মোছার জন্য আমাদের কোনও রুমাল ছিল না। অর্থাৎ বাড়তি কাপড় ছিল না। বাড়তি কাপড় কোথায় থাকবে, যেখানে অধিকাংশেরই এক জোড়ার বেশি কাপড় ছিল না! অনেকের তো মাত্র একটা লুঙ্গিই ছিল, এর বেশি কিছু নয়। তাহলে তাঁরা হাত মুছতেন কীভাবে? হযরত জাবির রাযি. জানান, তাঁরা হাত মুছতেন কখনও হাতে হাতেই। অর্থাৎ খাওয়া তো হতো তিন-চার আঙ্গুল দিয়ে। তারপর দুই হাত পরস্পর ডলাডলি করে সে আঙ্গুলগুলো মুছে নিতেন। অথবা হাতের বাহুতে বা পায়ে মুছে ফেলতেন।
তাবি‘ঈ সা‘ঈদ ইবনুল হারিছ রহ.-এর জিজ্ঞাসা ছিল, আগুনে রান্না করা জিনিস খেলে ওযু করতে হবে কি না? হযরত জাবির রাযি. এর উত্তরে বলেন, রান্না করা জিনিস খাওয়ার পর আমরা নামায পড়তাম, কিন্তু ওযু করতাম না। অর্থাৎ আগের ওযূ দিয়েই নামায পড়তাম। খাওয়ার পর নতুন করে ওযু করতাম না। এর দ্বারা বোঝা গেল রান্না করা জিনিস খেলে ওযু নষ্ট হয় না।
এখানে প্রশ্ন জাগে, সা‘ঈদ ইবনুল হারিছ রহ. প্রশ্নটি কেন করেছিলেন? উত্তর হল, কোনও কোনও হাদীছে রান্না করা জিনিস খাওয়ার পর ওযূর নির্দেশ আছে। তাঁর জিজ্ঞাসা ছিল সে নির্দেশ এখনও বহাল আছে কি না কিংবা সে নির্দেশটির তাৎপর্য কী। হযরত জাবির রাযি.-এর হাদীছ দ্বারা বোঝা যায় হয় সে নির্দেশটি রহিত হয়ে গেছে, অথবা সে নির্দেশ দ্বারা ওযূর আবশ্যিকতা বোঝানো হয়নি। বরং বোঝানো উদ্দেশ্য ছিল রান্না করা খাবার খাওয়ার পর ওযূ করে নেওয়া ভালো। অর্থাৎ মুস্তাহাব। সে হিসেবে এ হুকুম এখনও বহাল আছে। অর্থাৎ কেউ যদি রান্না করা কোনও খাবার খায়, তবে এর দ্বারা তার ওযু ভাঙ্গে না বটে, ফলে ওযু করা জরুরিও হয় না। কিন্তু আগুন যেহেতু জাহান্নামের বস্তু, তাছাড়া শয়তানকে সৃষ্টি করা হয়েছে আগুন দ্বারা, আর রান্না করা খাদ্যে সেই আগুনের ছোঁয়া লেগেছে, তাই ওযু করে নেওয়া ভালো। যাতে ওযূর পানির স্পর্শে আগুনের সব মন্দ প্রভাব দূর হয়ে যায়।
হাদীছটির শিক্ষা
ক. সাহাবায়ে কেরাম অত্যন্ত অভাব-অনটনের জীবন কাটিয়েছেন। তাই কোনও অভাবগ্রস্তকে হেলা করতে নেই; বরং অভাবগ্রস্তের প্রতি সহানুভূতি ও ভালোবাসা রাখাই কাম্য।
খ. সাহাবায়ে কেরামের অভাব-অনটন দ্বারা আমরা আমাদের নিজেদের অভাব- অনটনকালীন করণীয় নির্ণয় করতে পারি। আর তা হচ্ছে সবর করা এবং যা আছে তাতে সন্তুষ্ট থাকা। তাদের অভাব-অনটনের প্রতি লক্ষ করে আমরা আমাদের অভাব-অনটনের ভার লাঘবও করতে পারি।
গ. রান্না করা খাবার খেলে ওযু করা জরুরি হয় না।
মাঝেমধ্যে যখন রান্না করা খাবার খাওয়া হত, তখন তারা হাত মুছতেন কী দিয়ে? হযরত জাবির রাযি. বলেন, হাত মোছার জন্য আমাদের কোনও রুমাল ছিল না। অর্থাৎ বাড়তি কাপড় ছিল না। বাড়তি কাপড় কোথায় থাকবে, যেখানে অধিকাংশেরই এক জোড়ার বেশি কাপড় ছিল না! অনেকের তো মাত্র একটা লুঙ্গিই ছিল, এর বেশি কিছু নয়। তাহলে তাঁরা হাত মুছতেন কীভাবে? হযরত জাবির রাযি. জানান, তাঁরা হাত মুছতেন কখনও হাতে হাতেই। অর্থাৎ খাওয়া তো হতো তিন-চার আঙ্গুল দিয়ে। তারপর দুই হাত পরস্পর ডলাডলি করে সে আঙ্গুলগুলো মুছে নিতেন। অথবা হাতের বাহুতে বা পায়ে মুছে ফেলতেন।
তাবি‘ঈ সা‘ঈদ ইবনুল হারিছ রহ.-এর জিজ্ঞাসা ছিল, আগুনে রান্না করা জিনিস খেলে ওযু করতে হবে কি না? হযরত জাবির রাযি. এর উত্তরে বলেন, রান্না করা জিনিস খাওয়ার পর আমরা নামায পড়তাম, কিন্তু ওযু করতাম না। অর্থাৎ আগের ওযূ দিয়েই নামায পড়তাম। খাওয়ার পর নতুন করে ওযু করতাম না। এর দ্বারা বোঝা গেল রান্না করা জিনিস খেলে ওযু নষ্ট হয় না।
এখানে প্রশ্ন জাগে, সা‘ঈদ ইবনুল হারিছ রহ. প্রশ্নটি কেন করেছিলেন? উত্তর হল, কোনও কোনও হাদীছে রান্না করা জিনিস খাওয়ার পর ওযূর নির্দেশ আছে। তাঁর জিজ্ঞাসা ছিল সে নির্দেশ এখনও বহাল আছে কি না কিংবা সে নির্দেশটির তাৎপর্য কী। হযরত জাবির রাযি.-এর হাদীছ দ্বারা বোঝা যায় হয় সে নির্দেশটি রহিত হয়ে গেছে, অথবা সে নির্দেশ দ্বারা ওযূর আবশ্যিকতা বোঝানো হয়নি। বরং বোঝানো উদ্দেশ্য ছিল রান্না করা খাবার খাওয়ার পর ওযূ করে নেওয়া ভালো। অর্থাৎ মুস্তাহাব। সে হিসেবে এ হুকুম এখনও বহাল আছে। অর্থাৎ কেউ যদি রান্না করা কোনও খাবার খায়, তবে এর দ্বারা তার ওযু ভাঙ্গে না বটে, ফলে ওযু করা জরুরিও হয় না। কিন্তু আগুন যেহেতু জাহান্নামের বস্তু, তাছাড়া শয়তানকে সৃষ্টি করা হয়েছে আগুন দ্বারা, আর রান্না করা খাদ্যে সেই আগুনের ছোঁয়া লেগেছে, তাই ওযু করে নেওয়া ভালো। যাতে ওযূর পানির স্পর্শে আগুনের সব মন্দ প্রভাব দূর হয়ে যায়।
হাদীছটির শিক্ষা
ক. সাহাবায়ে কেরাম অত্যন্ত অভাব-অনটনের জীবন কাটিয়েছেন। তাই কোনও অভাবগ্রস্তকে হেলা করতে নেই; বরং অভাবগ্রস্তের প্রতি সহানুভূতি ও ভালোবাসা রাখাই কাম্য।
খ. সাহাবায়ে কেরামের অভাব-অনটন দ্বারা আমরা আমাদের নিজেদের অভাব- অনটনকালীন করণীয় নির্ণয় করতে পারি। আর তা হচ্ছে সবর করা এবং যা আছে তাতে সন্তুষ্ট থাকা। তাদের অভাব-অনটনের প্রতি লক্ষ করে আমরা আমাদের অভাব-অনটনের ভার লাঘবও করতে পারি।
গ. রান্না করা খাবার খেলে ওযু করা জরুরি হয় না।
রিয়াযুস সালিহীন,মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম।
