রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
৩. আহার-পানীয় গ্রহণের আদব
হাদীস নং: ৭৩৯
পরিচ্ছেদ : ৫ নিজের সম্মুখ থেকে খাওয়া এবং যে ব্যক্তি পানাহারের আদব রক্ষা করে না, তাকে উপদেশ ও শিক্ষাদান করা
হাদীছ নং: ৭৩৯
হযরত উমর ইবন আবূ সালামা রাযি. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতিপালনাধীন এক বালক ছিলাম। আমার হাত খাবারপাত্রে ঘোরাফেরা করত। (তা দেখে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, ওহে খোকা! আল্লাহর নাম নাও, ডান হাতে খাও এবং তোমার কাছে যা আছে তা থেকে খাও। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ৫৩৭৬; সহীহ মুসলিম: ২০২২; জামে' তিরমিযী: ১৮৫৭; সুনানে আবু দাউদ: ৩৭৭৭; সুনানে ইবনে মাজাহ ৩২৬৭; মুসনাদে আহমাদ: ১৬৩৩০; সহীহ ইবনে হিব্বান: ১৬৩৩৭; নাসাঈ, আস সুনানুল কুবরা ৬৭২৬; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা : ২৪৪৪১)
হযরত উমর ইবন আবূ সালামা রাযি. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতিপালনাধীন এক বালক ছিলাম। আমার হাত খাবারপাত্রে ঘোরাফেরা করত। (তা দেখে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, ওহে খোকা! আল্লাহর নাম নাও, ডান হাতে খাও এবং তোমার কাছে যা আছে তা থেকে খাও। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ৫৩৭৬; সহীহ মুসলিম: ২০২২; জামে' তিরমিযী: ১৮৫৭; সুনানে আবু দাউদ: ৩৭৭৭; সুনানে ইবনে মাজাহ ৩২৬৭; মুসনাদে আহমাদ: ১৬৩৩০; সহীহ ইবনে হিব্বান: ১৬৩৩৭; নাসাঈ, আস সুনানুল কুবরা ৬৭২৬; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা : ২৪৪৪১)
باب الأكل مِمَّا يليه ووعظه وتأديبه من يسيء أكله
739 - عن عمر بن أَبي سَلمَة رضي الله عنهما، قَالَ: كُنْتُ غُلامًا في حِجْرِ رسولِ الله - صلى الله عليه وسلم - وَكَانَتْ يَدِي تَطِيشُ في الصَّحْفَةِ، فَقَالَ لي رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم: «يَا غُلامُ، سَمِّ اللهَ تَعَالَى، وَكُلْ بِيَمينِكَ، وَكُلْ مِمَّا يَلِيكَ». متفقٌ عَلَيْهِ. (1)
قَوْله: «تَطِيشُ» بكسرِ الطاء وبعدها ياءٌ مثناة من تَحْت، معناه: تتحرك وتمتد إِلَى نَوَاحِي الصَّحْفَةِ.
قَوْله: «تَطِيشُ» بكسرِ الطاء وبعدها ياءٌ مثناة من تَحْت، معناه: تتحرك وتمتد إِلَى نَوَاحِي الصَّحْفَةِ.
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছের বর্ণনাকারী উমর রাযি. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রাবীব ছিলেন। রাবীব বলা হয় স্ত্রীর আগের ঘরের সন্তানকে। উমর রাযি. ছিলেন উম্মুল মুমিনীন হযরত উম্মু সালামা রাযি.-এর আগের স্বামী হযরত আবূ সালামা রাযি. -এর ঔরসজাত। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত উম্মু সালামা রাযি. -কে বিবাহ করার পর বালক উমর রাযি. তাঁর প্রতিপালনে চলে আসেন। তিনি তাঁকে খুব স্নেহ করতেন। যত্নের সঙ্গে দীনের শিক্ষাদান করতেন। সে শিক্ষার এক নমুনা এ হাদীছটিতেও পাওয়া যায়। অন্যান্য বর্ণনায় আছে, বালক উমর রাযি. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে বসে খানা খাচ্ছিলেন। তখন তিনি পাত্রের এখান-ওখান থেকে খাবার তুলে খাচ্ছিলেন। তখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে খানা খাওয়ার আদব শিক্ষা দেন।
এ হাদীছে কয়েকটি আদবের উল্লেখ আছে। তার মধ্যে প্রথম হচ্ছে খাওয়ার শুরুতে بسم الله বলা।
পানাহারের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা সুন্নত। বিসমিল্লাহ বলার দ্বারা বান্দার পক্ষ থেকে বিনয় ও বন্দেগী প্রকাশ পায়। এর দ্বারা আল্লাহ তা'আলার নিআমতের মূল্যায়ন ও শোকর আদায় করা হয়। আল্লাহ তা'আলাই মাখলুকের রিযিকদাতা। খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদন ও সংগ্রহে মানুষের যতই চেষ্টা থাকুক না কেন, তার প্রকৃত দাতা আল্লাহ তা'আলাই। তাই যে-কোনও খাবার বা পানীয় মুখে নেওয়ার আগে বিসমিল্লাহ বলা চাই। এর দ্বারা যেন আল্লাহ তা'আলাকে লক্ষ্য করে বলা হয় যে, হে আল্লাহ! এ খাবার ও পানীয় তোমারই দান। তুমি নিজ দয়ায় আমাকেও সৃষ্টি করেছ এবং আমার জন্য রিযিকেরও ব্যবস্থা করেছ। তুমি আমাকে হাত ও মুখ দিয়েছ। দিয়েছ উদর। তোমার দেওয়া হাত-মুখ দিয়ে সচ্ছন্দ্যে আমি খেতে পারছি। তুমি হজমশক্তি দিয়েছ। যা খাওয়া হয়, তোমার মেহেরবানীতে তা হজমও হয়ে যায়। তুমি দয়া না করলে এ খাবার আমি পেতাম না। তুমি মুখে রুচি না দিলে যত উপাদেয় খাবার হোক আমি খেতে পারতাম না। তুমি হজমশক্তি না দিলে এ খাবার আমার জন্য বিপদের কারণ হয়ে যেত। নানা রোগ-ব্যাধি দেখা দিত। এমনকি তা মৃত্যুরও কারণ হতে পারত। এতকিছু দয়া তুমি এই ক্ষুদ্র বান্দার প্রতি করেছ। তাই হে আল্লাহ! আমি তোমার নামেই খাওয়া শুরু করছি। তুমি এতে বরকত দিয়ো এবং একে আমার জন্য উপকারী করো।
এভাবে বিসমিল্লাহ বলার দ্বারা বান্দার বিনয় ও বন্দেগী প্রকাশ পায়। ফলে খাওয়ার কাজটি ছাওয়াবের কাজে পরিণত হয়ে যায়, কেবল দুনিয়াবী কাজ থাকে না।
খাওয়ার দ্বিতীয় আদব হল ডান হাতে খাওয়া।
ডান হাতে পানাহার করাও সুন্নত। কারও কারও মতে খাওয়ার আগে বিসমিল্লাহ বলা এবং ডান হাতে খাওয়া ওয়াজিব। ডান হাতে খাওয়া মুমিন-মুসলিমের বৈশিষ্ট্য। বাম হাতে খায় শয়তান এবং তার অনুসরণে অমুসলিমগণ। হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
إِذَا أَكَلَ أَحَدُكُمْ فَلْيَأْكُلْ بِيَمِينِهِ، وَإِذَا شَرِبَ فَلْيَشْرَبْ بِيَمِينِهِ فَإِنَّ الشَّيْطَانَ يَأْكُلُ بِشِمَالِهِ وَيَشْرَبُ بِشِمَالِهِ
তোমাদের কেউ যখন খায়, যেন ডান হাতে খায়। আর যখন পান করে, যেন ডান হাতে পান করে। শয়তান বাম হাতে খায় ও বাম হাতে পান করে। (সহীহ মুসলিম: ২০২০; সুনানে আবু দাউদ: ৩৭৭৬; জামে তিরমিযী: ১৭৯৯; সুনানে ইবন মাজাহ : ৩২৬৬; আল আদাবুল মুফরাদ: ১১৮৯; সুনানে দারিমী: ২০৭৩; মুসনাদে আহমাদ: ৪৫৩৭; মুসান্নাফে ইবন আবী শাইবা ২৪৪৩৮; সহীহ ইবন হিব্বান ৫২২৬)
শয়তান যখন বাম হাতে পানাহার করে, তখন কোনও মুসলিম ব্যক্তি এটা করতে পারে কি? আল্লাহ তা'আলার হুকুম হল-
وَلَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُبِينٌ
‘এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চিত জেনো, সে তোমাদের এক প্রকাশ্য শত্রু।’ (সুরা বাকারা (২) আয়াত ১৬৮)
ইদানীং অনেকেই মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও বাম হাতে পানাহার করাকে ফ্যাশন বানিয়ে নিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে তারা শয়তানেরই অনুসরণ করছে। পানাহার করার দ্বারা আল্লাহ তা'আলার নিআমত ভোগ করা হয়। এটি একটি মর্যাদাপূর্ণ কাজ। এরূপ কাজে ডান হাত ব্যবহারই সঙ্গতিপূর্ণ। দুই হাতের মধ্যে বাম হাত অপেক্ষা ডান হাতের মর্যাদা বেশি। এর জন্য আরবী প্রতিশব্দ হল يَمِين যার অর্থ বরকতময় ও কল্যাণময়। শরী'আত ও ভদ্র সমাজও ডান হাতকে মর্যাদার স্থান দেয়। ভদ্র ও দীনদার মহল কোনওকিছু দেওয়া-নেওয়ার ক্ষেত্রে ডান হাতই ব্যবহার করে থাকে। সুতরাং প্রত্যেক মুমিনের কর্তব্য পানাহারে ডান হাত ব্যবহার করা। এমনিভাবে কোনওকিছু দেওয়া ও নেওয়ার ক্ষেত্রেও। হাঁ, ওজর থাকলে ভিন্ন কথা। যার ডান হাতে বিশেষ কোনও সমস্যা আছে, সে অপারগতাহেতু বাম হাতে পানাহার করলে তা দূষণীয় হবে না।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উমর ইবন আবূ সালামা রাযি.-কে তৃতীয় যে বিষয় শিক্ষা দিয়েছেন তা হচ্ছে নিজের কাছ থেকে খাওয়া। অর্থাৎ কয়েকজন মিলে এক পাত্রে খেতে বসলে প্রত্যেকে যার যার সম্মুখ থেকে খাবে, একজন আরেকজনের সম্মুখ থেকে নয়। উমর ইবন আবূ সালামা রাযি. অল্পবয়সের বালক ছিলেন। খাওয়ার আদব-কায়দা জানা ছিল না। তাই একবার এখান থেকে, একবার ওখান থেকে পসন্দমতো নিয়ে নিচ্ছিলেন। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিক্ষা দিলেন, খোকা, নিজের সামনে থেকে খাও।
সম্মিলিত খাবারের পাত্রে এখানে-ওখানে হাত দিলে তা দেখতে যেমন খারাপ দেখা যায়, তেমনি তা লোভেরও পরিচায়ক। এটা অন্যের পক্ষেও অরুচিকর। অবশ্য একই পাত্রে বিভিন্নরকম খাবার থাকলে ভিন্ন কথা। তখন রুচিমতো বিভিন্ন স্থান থেকে খাওয়া যাবে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা শিক্ষা পাওয়া যায় যে, ছেলেমেয়েকে ছোটবেলা থেকেই ইসলামী আদব-কায়দা শিক্ষা দেওয়া চাই।
খ. খাওয়ার আগে বিসমিল্লাহ বলা সুন্নত।
গ. পানাহারে ডান হাত ব্যবহার করা সুন্নত।
ঘ. কয়েকজন এক পাত্রে খেতে বসলে প্রত্যেকের উচিত নিজের কাছ থেকে খাওয়া।
ঙ. কাউকে কোনও ভুলচুক করতে দেখলে তা সংশোধন করে দেওয়া চাই, এমনকি খাবারের সময়ও।
চ. যেসকল কাজ শয়তান ও অমুসলিমদের বৈশিষ্ট্য, মুসলিম ব্যক্তির কর্তব্য তা পরিহার করে চলা।
এ হাদীছে কয়েকটি আদবের উল্লেখ আছে। তার মধ্যে প্রথম হচ্ছে খাওয়ার শুরুতে بسم الله বলা।
পানাহারের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা সুন্নত। বিসমিল্লাহ বলার দ্বারা বান্দার পক্ষ থেকে বিনয় ও বন্দেগী প্রকাশ পায়। এর দ্বারা আল্লাহ তা'আলার নিআমতের মূল্যায়ন ও শোকর আদায় করা হয়। আল্লাহ তা'আলাই মাখলুকের রিযিকদাতা। খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদন ও সংগ্রহে মানুষের যতই চেষ্টা থাকুক না কেন, তার প্রকৃত দাতা আল্লাহ তা'আলাই। তাই যে-কোনও খাবার বা পানীয় মুখে নেওয়ার আগে বিসমিল্লাহ বলা চাই। এর দ্বারা যেন আল্লাহ তা'আলাকে লক্ষ্য করে বলা হয় যে, হে আল্লাহ! এ খাবার ও পানীয় তোমারই দান। তুমি নিজ দয়ায় আমাকেও সৃষ্টি করেছ এবং আমার জন্য রিযিকেরও ব্যবস্থা করেছ। তুমি আমাকে হাত ও মুখ দিয়েছ। দিয়েছ উদর। তোমার দেওয়া হাত-মুখ দিয়ে সচ্ছন্দ্যে আমি খেতে পারছি। তুমি হজমশক্তি দিয়েছ। যা খাওয়া হয়, তোমার মেহেরবানীতে তা হজমও হয়ে যায়। তুমি দয়া না করলে এ খাবার আমি পেতাম না। তুমি মুখে রুচি না দিলে যত উপাদেয় খাবার হোক আমি খেতে পারতাম না। তুমি হজমশক্তি না দিলে এ খাবার আমার জন্য বিপদের কারণ হয়ে যেত। নানা রোগ-ব্যাধি দেখা দিত। এমনকি তা মৃত্যুরও কারণ হতে পারত। এতকিছু দয়া তুমি এই ক্ষুদ্র বান্দার প্রতি করেছ। তাই হে আল্লাহ! আমি তোমার নামেই খাওয়া শুরু করছি। তুমি এতে বরকত দিয়ো এবং একে আমার জন্য উপকারী করো।
এভাবে বিসমিল্লাহ বলার দ্বারা বান্দার বিনয় ও বন্দেগী প্রকাশ পায়। ফলে খাওয়ার কাজটি ছাওয়াবের কাজে পরিণত হয়ে যায়, কেবল দুনিয়াবী কাজ থাকে না।
খাওয়ার দ্বিতীয় আদব হল ডান হাতে খাওয়া।
ডান হাতে পানাহার করাও সুন্নত। কারও কারও মতে খাওয়ার আগে বিসমিল্লাহ বলা এবং ডান হাতে খাওয়া ওয়াজিব। ডান হাতে খাওয়া মুমিন-মুসলিমের বৈশিষ্ট্য। বাম হাতে খায় শয়তান এবং তার অনুসরণে অমুসলিমগণ। হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
إِذَا أَكَلَ أَحَدُكُمْ فَلْيَأْكُلْ بِيَمِينِهِ، وَإِذَا شَرِبَ فَلْيَشْرَبْ بِيَمِينِهِ فَإِنَّ الشَّيْطَانَ يَأْكُلُ بِشِمَالِهِ وَيَشْرَبُ بِشِمَالِهِ
তোমাদের কেউ যখন খায়, যেন ডান হাতে খায়। আর যখন পান করে, যেন ডান হাতে পান করে। শয়তান বাম হাতে খায় ও বাম হাতে পান করে। (সহীহ মুসলিম: ২০২০; সুনানে আবু দাউদ: ৩৭৭৬; জামে তিরমিযী: ১৭৯৯; সুনানে ইবন মাজাহ : ৩২৬৬; আল আদাবুল মুফরাদ: ১১৮৯; সুনানে দারিমী: ২০৭৩; মুসনাদে আহমাদ: ৪৫৩৭; মুসান্নাফে ইবন আবী শাইবা ২৪৪৩৮; সহীহ ইবন হিব্বান ৫২২৬)
শয়তান যখন বাম হাতে পানাহার করে, তখন কোনও মুসলিম ব্যক্তি এটা করতে পারে কি? আল্লাহ তা'আলার হুকুম হল-
وَلَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُبِينٌ
‘এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চিত জেনো, সে তোমাদের এক প্রকাশ্য শত্রু।’ (সুরা বাকারা (২) আয়াত ১৬৮)
ইদানীং অনেকেই মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও বাম হাতে পানাহার করাকে ফ্যাশন বানিয়ে নিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে তারা শয়তানেরই অনুসরণ করছে। পানাহার করার দ্বারা আল্লাহ তা'আলার নিআমত ভোগ করা হয়। এটি একটি মর্যাদাপূর্ণ কাজ। এরূপ কাজে ডান হাত ব্যবহারই সঙ্গতিপূর্ণ। দুই হাতের মধ্যে বাম হাত অপেক্ষা ডান হাতের মর্যাদা বেশি। এর জন্য আরবী প্রতিশব্দ হল يَمِين যার অর্থ বরকতময় ও কল্যাণময়। শরী'আত ও ভদ্র সমাজও ডান হাতকে মর্যাদার স্থান দেয়। ভদ্র ও দীনদার মহল কোনওকিছু দেওয়া-নেওয়ার ক্ষেত্রে ডান হাতই ব্যবহার করে থাকে। সুতরাং প্রত্যেক মুমিনের কর্তব্য পানাহারে ডান হাত ব্যবহার করা। এমনিভাবে কোনওকিছু দেওয়া ও নেওয়ার ক্ষেত্রেও। হাঁ, ওজর থাকলে ভিন্ন কথা। যার ডান হাতে বিশেষ কোনও সমস্যা আছে, সে অপারগতাহেতু বাম হাতে পানাহার করলে তা দূষণীয় হবে না।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উমর ইবন আবূ সালামা রাযি.-কে তৃতীয় যে বিষয় শিক্ষা দিয়েছেন তা হচ্ছে নিজের কাছ থেকে খাওয়া। অর্থাৎ কয়েকজন মিলে এক পাত্রে খেতে বসলে প্রত্যেকে যার যার সম্মুখ থেকে খাবে, একজন আরেকজনের সম্মুখ থেকে নয়। উমর ইবন আবূ সালামা রাযি. অল্পবয়সের বালক ছিলেন। খাওয়ার আদব-কায়দা জানা ছিল না। তাই একবার এখান থেকে, একবার ওখান থেকে পসন্দমতো নিয়ে নিচ্ছিলেন। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিক্ষা দিলেন, খোকা, নিজের সামনে থেকে খাও।
সম্মিলিত খাবারের পাত্রে এখানে-ওখানে হাত দিলে তা দেখতে যেমন খারাপ দেখা যায়, তেমনি তা লোভেরও পরিচায়ক। এটা অন্যের পক্ষেও অরুচিকর। অবশ্য একই পাত্রে বিভিন্নরকম খাবার থাকলে ভিন্ন কথা। তখন রুচিমতো বিভিন্ন স্থান থেকে খাওয়া যাবে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা শিক্ষা পাওয়া যায় যে, ছেলেমেয়েকে ছোটবেলা থেকেই ইসলামী আদব-কায়দা শিক্ষা দেওয়া চাই।
খ. খাওয়ার আগে বিসমিল্লাহ বলা সুন্নত।
গ. পানাহারে ডান হাত ব্যবহার করা সুন্নত।
ঘ. কয়েকজন এক পাত্রে খেতে বসলে প্রত্যেকের উচিত নিজের কাছ থেকে খাওয়া।
ঙ. কাউকে কোনও ভুলচুক করতে দেখলে তা সংশোধন করে দেওয়া চাই, এমনকি খাবারের সময়ও।
চ. যেসকল কাজ শয়তান ও অমুসলিমদের বৈশিষ্ট্য, মুসলিম ব্যক্তির কর্তব্য তা পরিহার করে চলা।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
