রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
২. বিবিধ আদব - শিষ্টাচারের অধ্যায়
হাদীস নং: ৭০৮
বিবিধ আদব - শিষ্টাচারের অধ্যায়
১২ (ভবিষ্যৎ) কল্যাণের জন্য সুসংবাদ দেওয়া এবং প্রাপ্ত কল্যাণের জন্য অভিনন্দন জানানো
বি’রে আরীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গমন ও প্রথম তিন খলীফা সম্পর্কে জান্নাতের সুসংবাদদান
হাদীছ নং: ৭০৮
হযরত আবু মূসা আশ'আরী রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি নিজ ঘরে ওযু করলেন। তারপর বের হয়ে পড়লেন। তিনি (মনে মনে) বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সঙ্গে থাকব এবং আজকের পুরোটা দিন তাঁর সঙ্গেই কাটাব। সুতরাং তিনি মসজিদে আসলেন। (লোকজনকে) জিজ্ঞেস করলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোথায়? তারা বলল, ওদিকে গেছেন। তিনি বলেন, আমি তাঁর পদচিহ্ন ধরে বের হয়ে পড়লাম এবং তাঁর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে থাকলাম। পরিশেষে জানতে পারলাম তিনি বি’রে আরীসে (আরীস নামক কুয়ায়) প্রবেশ করেছেন। আমি কুয়াটির দরজায় বসে পড়লাম। তার দরজা ছিল খেজুর গাছের ডালের। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে নিজ প্রয়োজন সেরে ওযু করলেন। আমি ওঠে তাঁর কাছে গেলাম। গিয়ে দেখি তিনি বি'রে আরীসের উপর বসে আছেন। তিনি কুয়ার প্রাচীরে বসে দুই পা কুয়ার ভেতর ঝুলিয়ে রেখেছেন। তার দুই নলা অনাবৃত হয়ে আছে। আমি তাঁকে সালাম দিলাম। তারপর ফিরে গিয়ে দরজার কাছে বসে পড়লাম। (মনে মনে) বললাম, আজ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দ্বাররক্ষী হব।একটু পরেই আবু বকর আসলেন এবং দরজায় ধাক্কা দিলেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কে? তিনি বললেন, আবু বকর। বললাম, অপেক্ষা করুন। তারপর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গেলাম। বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এই যে আবু বকর আপনার অনুমতি চাচ্ছেন। তিনি বললেন, তাকে অনুমতি দাও এবং জান্নাতের সুসংবাদ শোনাও। আমি ফিরে এসে আবূ বকরকে বললাম, প্রবেশ করুন। আর শুনুন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে জান্নাতের সুসংবাদ দিচ্ছেন। অতঃপর আবু বকর প্রবেশ করলেন। তিনি এসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ডানদিকে কুয়ার প্রাচীরে তাঁর সঙ্গে বসে পড়লেন এবং পা দু'টি কুয়ার ভেতর ঝুলিয়ে দিলেন। ঠিক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেমনটি করেছেন। তিনিও তার দুই নলা উন্মুক্ত করে দিলেন। তারপর আমি ফিরে গেলাম এবং দরজায় বসে পড়লাম। ওদিকে আমি আমার ভাইকে রেখে এসেছিলাম। তিনি তখন ওযু করছিলেন। আমার সঙ্গে তাঁর যুক্ত হওয়ার কথা। আমি (মনে মনে) বললাম, আল্লাহ যদি তার কোনও কল্যাণ চান, তবে তিনি তাকে নিয়ে আসবেন। এমনই মুহূর্তে এক ব্যক্তি দরজায় নাড়া দিচ্ছিল। আমি বললাম, কে? বললেন, উমর ইবনুল খাত্তাব। আমি বললাম, একটু অপেক্ষা করুন। তারপর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসলাম। তাঁকে সালাম দিয়ে বললাম, এই যে উমর অনুমতি চাচ্ছেন। তিনি বললেন, তাকে অনুমতি দাও এবং জান্নাতের সুসংবাদ শোনাও। আমি উমরের কাছে এসে বললাম, তিনি অনুমতি দিয়েছেন। আপনি প্রবেশ করুন। আর শুনুন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে জান্নাতের সুসংবাদ দিচ্ছেন। তিনি প্রবেশ করলেন, তারপর কুয়ার প্রাচীরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বামপাশে বসে পড়লেন এবং দুই পা কুয়ার ভেতর ঝুলিয়ে দিলেন। আমি ফিরে এসে দরজায় বসে পড়লাম। (মনে মনে) বললাম, আল্লাহ যদি অমুকের (অর্থাৎ তাঁর ভাইয়ের) কল্যাণ চান, তবে তাকে নিয়ে আসবেন। এমনই মুহূর্তে এক ব্যক্তি দরজায় নাড়া দিল। আমি বললাম, কে? বললেন, উছমান ইবন আফফান। আমি বললাম, একটু অপেক্ষা করুন। তারপর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে তার সম্পর্কে অবহিত করলাম। তিনি বললেন, তাকে অনুমতি দাও এবং তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও। সেইসঙ্গে একটা বিপদে আক্রান্ত হওয়ার কথাও জানিয়ো। আমি ফিরে এসে বললাম, আপনি প্রবেশ করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন। সেইসঙ্গে আপনি একটা বিপদে আক্রান্ত হবেন বলেও জানিয়েছেন। তিনি প্রবেশ করলেন। গিয়ে দেখেন কুয়ার প্রাচীর ভরে গেছে। সুতরাং তিনি তাঁদের মুখোমুখি অপর প্রান্তে বসলেন। বর্ণনাকারী শারীক রহ. বলেন, সা'ঈদ ইবনুল মুসায়্যিব রহ. বলেছেন, আমি এর ব্যাখ্যা করেছি, (এটা ছিল) তাঁদের কবর (এরকমই হওয়ার ইঙ্গিত)। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ৩৬৭৪; সহীহ মুসলিম: ২৪০৩; জামে তিরমিযী: ৩৭১০; মুসনাদুল বাযযার: ৩০৫১; জামে মা'মার ইবন রাশিদ: ২০৪০২; আল-আদাবুল মুফরাদ: ৯৬৫; বাগাবী, শারহুস সন্নাহ: ৩৯০৩)
অপর এক বর্ণনায় আরও আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে দরজা পাহারা দেওয়ার হুকুম করলেন। তাতে আরও আছে, হযরত উছমান রাযি.-কে যখন সুসংবাদ দেওয়া হল, তখন তিনি আল্লাহ তা'আলার প্রশংসা করলেন এবং বললেন, আল্লাহই সাহায্যকারী।
হাদীছ নং: ৭০৮
হযরত আবু মূসা আশ'আরী রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি নিজ ঘরে ওযু করলেন। তারপর বের হয়ে পড়লেন। তিনি (মনে মনে) বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সঙ্গে থাকব এবং আজকের পুরোটা দিন তাঁর সঙ্গেই কাটাব। সুতরাং তিনি মসজিদে আসলেন। (লোকজনকে) জিজ্ঞেস করলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোথায়? তারা বলল, ওদিকে গেছেন। তিনি বলেন, আমি তাঁর পদচিহ্ন ধরে বের হয়ে পড়লাম এবং তাঁর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে থাকলাম। পরিশেষে জানতে পারলাম তিনি বি’রে আরীসে (আরীস নামক কুয়ায়) প্রবেশ করেছেন। আমি কুয়াটির দরজায় বসে পড়লাম। তার দরজা ছিল খেজুর গাছের ডালের। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে নিজ প্রয়োজন সেরে ওযু করলেন। আমি ওঠে তাঁর কাছে গেলাম। গিয়ে দেখি তিনি বি'রে আরীসের উপর বসে আছেন। তিনি কুয়ার প্রাচীরে বসে দুই পা কুয়ার ভেতর ঝুলিয়ে রেখেছেন। তার দুই নলা অনাবৃত হয়ে আছে। আমি তাঁকে সালাম দিলাম। তারপর ফিরে গিয়ে দরজার কাছে বসে পড়লাম। (মনে মনে) বললাম, আজ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দ্বাররক্ষী হব।একটু পরেই আবু বকর আসলেন এবং দরজায় ধাক্কা দিলেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কে? তিনি বললেন, আবু বকর। বললাম, অপেক্ষা করুন। তারপর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গেলাম। বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এই যে আবু বকর আপনার অনুমতি চাচ্ছেন। তিনি বললেন, তাকে অনুমতি দাও এবং জান্নাতের সুসংবাদ শোনাও। আমি ফিরে এসে আবূ বকরকে বললাম, প্রবেশ করুন। আর শুনুন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে জান্নাতের সুসংবাদ দিচ্ছেন। অতঃপর আবু বকর প্রবেশ করলেন। তিনি এসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ডানদিকে কুয়ার প্রাচীরে তাঁর সঙ্গে বসে পড়লেন এবং পা দু'টি কুয়ার ভেতর ঝুলিয়ে দিলেন। ঠিক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেমনটি করেছেন। তিনিও তার দুই নলা উন্মুক্ত করে দিলেন। তারপর আমি ফিরে গেলাম এবং দরজায় বসে পড়লাম। ওদিকে আমি আমার ভাইকে রেখে এসেছিলাম। তিনি তখন ওযু করছিলেন। আমার সঙ্গে তাঁর যুক্ত হওয়ার কথা। আমি (মনে মনে) বললাম, আল্লাহ যদি তার কোনও কল্যাণ চান, তবে তিনি তাকে নিয়ে আসবেন। এমনই মুহূর্তে এক ব্যক্তি দরজায় নাড়া দিচ্ছিল। আমি বললাম, কে? বললেন, উমর ইবনুল খাত্তাব। আমি বললাম, একটু অপেক্ষা করুন। তারপর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসলাম। তাঁকে সালাম দিয়ে বললাম, এই যে উমর অনুমতি চাচ্ছেন। তিনি বললেন, তাকে অনুমতি দাও এবং জান্নাতের সুসংবাদ শোনাও। আমি উমরের কাছে এসে বললাম, তিনি অনুমতি দিয়েছেন। আপনি প্রবেশ করুন। আর শুনুন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে জান্নাতের সুসংবাদ দিচ্ছেন। তিনি প্রবেশ করলেন, তারপর কুয়ার প্রাচীরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বামপাশে বসে পড়লেন এবং দুই পা কুয়ার ভেতর ঝুলিয়ে দিলেন। আমি ফিরে এসে দরজায় বসে পড়লাম। (মনে মনে) বললাম, আল্লাহ যদি অমুকের (অর্থাৎ তাঁর ভাইয়ের) কল্যাণ চান, তবে তাকে নিয়ে আসবেন। এমনই মুহূর্তে এক ব্যক্তি দরজায় নাড়া দিল। আমি বললাম, কে? বললেন, উছমান ইবন আফফান। আমি বললাম, একটু অপেক্ষা করুন। তারপর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে তার সম্পর্কে অবহিত করলাম। তিনি বললেন, তাকে অনুমতি দাও এবং তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও। সেইসঙ্গে একটা বিপদে আক্রান্ত হওয়ার কথাও জানিয়ো। আমি ফিরে এসে বললাম, আপনি প্রবেশ করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন। সেইসঙ্গে আপনি একটা বিপদে আক্রান্ত হবেন বলেও জানিয়েছেন। তিনি প্রবেশ করলেন। গিয়ে দেখেন কুয়ার প্রাচীর ভরে গেছে। সুতরাং তিনি তাঁদের মুখোমুখি অপর প্রান্তে বসলেন। বর্ণনাকারী শারীক রহ. বলেন, সা'ঈদ ইবনুল মুসায়্যিব রহ. বলেছেন, আমি এর ব্যাখ্যা করেছি, (এটা ছিল) তাঁদের কবর (এরকমই হওয়ার ইঙ্গিত)। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ৩৬৭৪; সহীহ মুসলিম: ২৪০৩; জামে তিরমিযী: ৩৭১০; মুসনাদুল বাযযার: ৩০৫১; জামে মা'মার ইবন রাশিদ: ২০৪০২; আল-আদাবুল মুফরাদ: ৯৬৫; বাগাবী, শারহুস সন্নাহ: ৩৯০৩)
অপর এক বর্ণনায় আরও আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে দরজা পাহারা দেওয়ার হুকুম করলেন। তাতে আরও আছে, হযরত উছমান রাযি.-কে যখন সুসংবাদ দেওয়া হল, তখন তিনি আল্লাহ তা'আলার প্রশংসা করলেন এবং বললেন, আল্লাহই সাহায্যকারী।
كتاب الأدب
باب استحباب التبشير والتهنئة بالخير
708 - وعن أَبي موسى الأشعري - رضي الله عنه: أَنَّهُ تَوَضَّأ في بَيْتِهِ، ثُمَّ خَرَجَ، فَقَالَ: لأَلْزَمَنَّ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - وَلأَكُونَنَّ مَعَهُ يَوْمِي هَذَا، فَجَاءَ الْمَسْجِدَ، فَسَألَ عَنِ النَّبيِّ - صلى الله عليه وسلم - فَقَالُوا وجَّهَ هاهُنَا، قَالَ: فَخَرَجْتُ عَلَى أثَرِهِ أسْألُ عَنْهُ، حَتَّى دَخَلَ بِئْرَ أريسٍ، فَجَلَسْتُ عِندَ البَابِ حتَّى قضى رسول الله - صلى الله عليه وسلم - حاجتهُ وتوضأ، فقمتُ إليهِ، فإذا هو قد جلسَ على بئرِ أريسٍ وتوَسَّطَ قُفَّهَا، وكشَفَ عنْ ساقيهِ ودلاّهُما في البئرِ، فسلمتُ عَليهِ ثمَّ انصَرَفتُ، فجلستُ عِندَ البابِ، فَقُلْتُ: لأَكُونَنَّ بَوَّابَ رسولِ اللهِ - صلى الله عليه وسلم - الْيَوْمَ، فَجَاءَ أَبُو بَكْرٍ - رضي الله عنه - فَدَفَعَ الْبَابَ، فقلتُ: مَنْ هَذَا؟ فَقَالَ: أَبُو بَكْرٍ، فقُلتُ: عَلَى رِسْلِكَ، ثُمَّ ذَهبْتُ، فقلتُ: يَا رسول الله، هَذَا أَبُو بَكْرٍ يَستَأْذِنُ، فَقَالَ: «ائْذَنْ لَهُ وَبَشِّرْهُ بِالْجَنَّةِ» فَأقْبَلْتُ حَتَّى قُلْتُ لأَبي بَكْرٍ: ادْخُلْ وَرسول الله - صلى الله عليه وسلم - يُبَشِّرُكَ بِالجَنَّةِ، فَدَخَلَ أَبُو بَكرٍ حَتَّى جَلَسَ عَنْ يَمينِ النَّبيِّ - صلى الله عليه وسلم - مَعَهُ في القُفِّ، وَدَلَّى رِجْلَيْهِ في البِئْرِ كَمَا صَنَعَ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - وَكَشَفَ عَنْ سَاقَيْهِ، ثُمَّ رَجَعْتُ وَجَلَسْتُ، وَقَدْ تَرَكْتُ أخِي يَتَوَضَّأ وَيَلْحَقُنِي، فقلتُ: إنْ يُرِدِ الله بِفُلانٍ - يُريدُ أخَاهُ - خَيْرًا يَأتِ بِهِ. فَإذَا إنْسَانٌ يُحَرِّكُ الْبَاب، فقلتُ: مَنْ هَذَا؟ فَقَالَ: عُمَرُ بن الخَطّابِ، فقلتُ: عَلَى رِسْلِكَ، ثُمَّ جِئْتُ إِلَى رسول الله - صلى الله عليه وسلم - فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ وَقُلْتُ: هَذَا عُمَرُ يَسْتَأذِنُ؟ فَقَالَ: «ائْذَنْ لَهُ وَبَشِّرْهُ بالجَنَّةِ» فَجِئْتُ عُمَرَ، فقلتُ: أَذِنَ وَيُبَشِّرُكَ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - بِالجَنَّةِ، فَدَخَلَ فَجَلَسَ مَعَ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - في القُفِّ عَنْ يَسَارِهِ وَدَلَّى رِجْلَيْهِ في البِئرِ، ثُمَّ رَجَعْتُ فَجَلَسْتُ، فَقُلتُ: إنْ يُرِدِ اللهُ بِفُلاَنٍ خَيْرًا - يَعْنِي أخَاهُ - يَأْتِ بِهِ، فَجَاءَ إنْسَانٌ فَحَرَّكَ الْبَابَ. فَقُلتُ: مَنْ هَذَا؟ فَقَالَ: عُثْمَانُ بن عَفَّانَ. فقلتُ: عَلَى رِسْلِكَ، وجِئْتُ النَّبيَّ - صلى الله عليه وسلم - فأخْبَرْتُهُ، فقالَ: «ائْذَنْ لَهُ وَبَشِّرْهُ بِالجَنَّةِ مَعَ بَلْوَى تُصِيبُهُ» فَجِئْتُ، فقلتُ: ادْخُلْ وَيُبَشِّرُكَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم - بِالجَنَّةِ مَعَ بَلْوَى تُصيبُكَ، فَدَخَلَ فَوجَدَ الْقُفَّ قَدْ مُلِئَ، فجلس وِجَاهَهُمْ مِنَ الشِّقِّ الآخرِ. قَالَ سَعيدُ بْنُ الْمُسَيَّبِ: فَأوَّلْتُهَا قُبُورَهُمْ. متفقٌ عَلَيْهِ. (1)
وزاد في رواية: وأمرني رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم - بحفظِ الباب. وَفيها: أنَّ عُثْمانَ حِيْنَ بَشَّرَهُ حَمِدَ اللهَ تَعَالَى، ثُمَّ قَالَ: اللهُ المُسْتَعانُ. [ص:228]
وَقَوْلُه: «وَجَّهَ» بفتحِ الواوِ وتشديد الجيمِ. أيْ: تَوَجَّهَ. وَقَوْلُه: «بِئْر أَرِيْسٍ» هُوَ بفتح الهمزة وكسرِ الراءِ وبعدها ياءٌ مثناة من تحت ساكِنة ثُمَّ سِين مهملة وَهُوَ مصروف ومنهم من منع صرفه، وَ «القُفُّ» بضم القاف وتشديد الفاءِ: وَهُوَ المبنيُّ حول البئر. وَقَوْلُه: «عَلَى رِسْلِك» بكسر الراء عَلَى المشهور، وقيل: بفتحِهَا، أيْ: ارفق.
وزاد في رواية: وأمرني رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم - بحفظِ الباب. وَفيها: أنَّ عُثْمانَ حِيْنَ بَشَّرَهُ حَمِدَ اللهَ تَعَالَى، ثُمَّ قَالَ: اللهُ المُسْتَعانُ. [ص:228]
وَقَوْلُه: «وَجَّهَ» بفتحِ الواوِ وتشديد الجيمِ. أيْ: تَوَجَّهَ. وَقَوْلُه: «بِئْر أَرِيْسٍ» هُوَ بفتح الهمزة وكسرِ الراءِ وبعدها ياءٌ مثناة من تحت ساكِنة ثُمَّ سِين مهملة وَهُوَ مصروف ومنهم من منع صرفه، وَ «القُفُّ» بضم القاف وتشديد الفاءِ: وَهُوَ المبنيُّ حول البئر. وَقَوْلُه: «عَلَى رِسْلِك» بكسر الراء عَلَى المشهور، وقيل: بفتحِهَا، أيْ: ارفق.
হাদীসের ব্যাখ্যা:
কোন কোন বর্ণনায় সংক্ষিপ্ত আকারে বর্ণিত হলেও এটি মূলত একটি দীর্ঘ হাদীছ। এতে বর্ণিত হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাকী বি’রে আরীসে গিয়েছিলেন। বি’রে আরীস অর্থ আরীসের কুয়া। আরীস ছিল এক ইহুদির নাম। সে এ কুয়াটির মালিক ছিল। কুয়াটি ছিল কুবা মসজিদের উত্তর-পশ্চিম দিকে প্রাচীরঘেরা একটি বাগানের ভেতর। কুয়াটির নামে বাগানটিরও নাম হয়ে যায় বি'রে আরীস। বর্তমানে কুয়াটির কোনও চিহ্ন নেই। তার উপর দিয়ে প্রশস্ত রাস্তা চলে গেছে।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বাগানে যাওয়ার পর হযরত আবূ মূসা আশ'আরী রাযি. তাঁকে খুঁজতে খুঁজতে সেখানে চলে যান এবং বাগানটির দরজায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য প্রহরীর কাজ করতে থাকেন। তারপর সেখানে যথাক্রমে হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি., হযরত উমর ফারুক রাযি. ও হযরত উছমান গনী রাযি.-ও উপস্থিত হন। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের তিনজনকেই হযরত আবূ মূসা রাযি.-এর মাধ্যমে জান্নাতের সুসংবাদ দেন। সেইসঙ্গে হযরত উছমান রাযি. সম্পর্কে একটি ভবিষ্যদ্বাণীও করেন। তাতে জানান যে, তাঁকে একটি কঠিন মসিবতের সম্মুখীন হতে হবে।
হাদীছটিতে আছে, আরীস কুয়ার তীরে তাঁরা সকলেই পা ঝুলিয়ে বসেছিলেন। তার একদিকে বসেছিলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর ডান পাশে হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাযি. ও বাম পাশে হযরত উমর রাযি.। অপরদিকে তাঁদের মুখোমুখি হয়ে হযরত উছমান রাযি. একা বসেছিলেন।
বিখ্যাত তাবি'ঈ হযরত সা'ঈদ ইবনুল মুসায়্যিব রহ. এর ব্যাখ্যা করেছেন যে, এটা ছিল তাঁদের কবর কীভাবে হবে সেদিকে ইঙ্গিত। তাঁদের কবর এভাবেই হয়েছে। মসজিদে নববীর পাশে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে তাঁর পাশাপাশি প্রথম দুই খলীফার কবর হয়েছে। হযরত উছমান গনী রাযি.-এর কবর তাঁদের থেকে আলাদা, একটু দূরে আল-বাকী' কবরস্থানে।
হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাযি. ও হযরত উমর রাযি. যে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পাশে বসেছিলেন, তাতে দেখা যাচ্ছে হযরত আবূ বকর রাযি. বসেছেন ডানদিকে এবং হযরত উমর রাযি. বামদিকে। এর দ্বারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক ও ঘনিষ্ঠতার ইঙ্গিত মেলে। অর্থাৎ দু'জনই অনেক ঘনিষ্ঠ এবং হযরত আবু বকর রাযি. সে ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছেন। কেননা তিনি ডানদিকে আর হযরত উমর রাযি, বামদিকে। বামদিকের উপর যেমন ডানদিকে শ্রেষ্ঠত্ব, হযরত উমর রাযি.-এর উপর হযরত আবু বকর রাযি.-এর শ্রেষ্ঠত্ব সেরকমই। তারপরও তাঁরা দু'জন তাঁর সর্বাপেক্ষা ঘনিষ্ঠ। তাঁর দুই হাত স্বরূপ। একজন ডানহাত, একজন বামহাত। বিভিন্ন হাদীছে দেখা যায়, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের সঙ্গে হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাযি. ও উমর ফারুক রাযি.-এর নামও একত্রে উল্লেখ করতেন। বলতেন, আমি, আবূ বকর ও উমর।
এ হাদীছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত উছমান রাযি, সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে, তিনি কোনও কঠিন বিপদে পড়বেন। কী সে কঠিন বিপদ? অন্য হাদীছে এর ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি. থেকে বর্ণিত-
ذَكَرَ رَسُولُ اللهِ ﷺ فِتْنَة ، فَقَالَ : يُقْتَلُ هذَا فِيْهَا مَظْلُومًا لِعُثْمَانَ
‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ফিতনার কথা বর্ণনা করেন। তাতে তিনি বলেন, সে ফিতনায় ওই ব্যক্তি মজলুমরূপে নিহত হবে। তিনি এটা বলেছিলেন উছমানকে লক্ষ্য করে।’ (জামে' তিরমিযী: ৩৭০৮)
হযরত উছমান রাযি.-ও বুঝতে পেরেছিলেন তা কোনও কঠিন বিপদই হবে। তাই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাঁকে কোনও কঠিন বিপদে পড়ার কথা জানালেন, তখন সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলেন, আল্লাহ তা'আলাই সাহায্যকারী। অপর এক বর্ণনায় আছে, তিনি বলেছিলেন, হে আল্লাহ! আমাকে ধৈর্যধারণের তাওফীক দিয়ো।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ ভবিষ্যদ্বাণী সত্য প্রমাণিত হয়। হযরত উছমান রাযি.-এর খেলাফতকালের শেষদিকে তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ দানা বাঁধে। সে বিদ্রোহ ছিল আব্দুল্লাহ ইবন সাবা নামক এক দুর্বৃত্তকারীর ষড়যন্ত্রের ফল। লোকটি নানা মিথ্যা প্রচারণার মাধ্যমে মানুষকে তাঁর বিরুদ্ধে উত্তেজিত করে তোলে। তার প্ররোচনায় মানুষ তাঁর অপসারণের দাবি তোলে। অথচ তিনি ছিলেন সত্যনিষ্ঠ ও সঠিক পথে প্রতিষ্ঠিত খলীফা। তিনি ন্যায়ের উপর ছিলেন। তিনি যে ন্যায়ের উপর থাকবেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে ভবিষ্যদ্বাণীও করে গিয়েছিলেন।
হযরত মুররা ইবন কা'ব রাযি. হযরত উছমান রাযি.-এর শাহাদাতের পর এরকম এক হাদীছ বর্ণনা করেন। তাতে আছে-
وَذَكَرَ الْفِتَنَ فَقَرَّبَهَا، فَمَرَّ رَجُلٌ مُقَنَّعٌ فِي ثَوْب فَقَالَ : هَذَا يَوْمَئِذٍ عَلَى الْهُدَى، فَقُمْتُ إِلَيْهِ فَإِذَا هُوَ عُثْمَانُ بْنُ عَفَّانَ قَالَ : فَأَقْبَلْتُ عَلَيْهِ بِوَجْهِهِ، فَقُلْتُ : هَذَا؟ قَالَ : نَعَمْ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন ফিতনার কথা উল্লেখ করেন এবং সেগুলো নিকটবর্তী বলে জানান। এ সময় একটি কাপড় দিয়ে মাথা ঢাকা অবস্থায় এক ব্যক্তি কাছ দিয়ে যাচ্ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, এই ব্যক্তি সেদিন হিদায়াতের উপর থাকবে। আমি উঠে তার কাছে গেলাম। দেখি তিনি উছমান ইবন আফফান। আমি তার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বললাম, ইনি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হাঁ। (জামে' তিরমিযী: ৩৭০৪)
বস্তুত চক্রান্তকারীরাও জানত তিনি হিদায়াতের উপর আছেন। কিন্তু তাদের উদ্দেশ্যই ছিল ফিতনা সৃষ্টি করা। সে লক্ষ্যে তারা তাঁর বিরুদ্ধে একের পর এক অপবাদ ও মিথ্যা অভিযোগ দাঁড় করাতে থাকে। তাতে তারা সফলও হয়ে যায়। ক্রমে মিশর, বসরা, কূফা প্রভৃতি অঞ্চলে বিদ্রোহীরা সংঘবদ্ধ হতে থাকে। পরিশেষে হিজরী ৩৫ সনে ৪ হাজার বিদ্রোহী মদীনা মুনাউওয়ারায় এসে সমবেত হয়। তারা হযরত উছমান রাযি.-কে তাঁর গৃহে অবরুদ্ধ করে ফেলে। দীর্ঘ ২ মাস ২০ দিন তিনি অবরুদ্ধ অবস্থায় থাকেন। এ সময়ে সাহাবায়ে কেরামের অনেকেই তাঁর কাছে বিদ্রোহীদের প্রতিরোধ করার অনুমতি চান। কিন্তু মদীনা মুনাউওয়ারায় রক্তপাত হবে, এটা তিনি কিছুতেই মানতে পারছিলেন না। পরিশেষে যুলহিজ্জা মাসের ১২ তারিখ জুমু'আর দিন তারা তাঁর উপর হামলা চালায়। পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতরত অবস্থায় তারা তাঁকে শহীদ করে দেয়। এভাবে তিনি নিজ রক্তের বিনিময়ে এ পবিত্র নগরকে ব্যাপক রক্তপাত থেকে হেফাজত করেন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
এ হাদীছ দ্বারা আমরা যা-কিছু জানতে পারি তার কয়েকটি নিম্নরূপ-
ক. সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি. ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সর্বাপেক্ষা ঘনিষ্ঠ।
খ. হযরত উমর রাযি. এ উম্মতের দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি।
গ. হযরত আবূ মূসা আশ'আরী রাযি. যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি কতটা নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন, তাও এ হাদীছ দ্বারা জানা যায়।
ঘ. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনেককেই তাদের জীবিত অবস্থায় জান্নাতের সুসংবাদ শুনিয়েছেন। হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাযি., হযরত উমর ফারুক রাযি. ও হযরত উছমান গনী রাযি. তাদের অন্যতম।
ঙ. কারও সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাইলে তার অনুমতি নেওয়া জরুরি।
চ. কেউ কোনও কল্যাণ ও বরকতপূর্ণ বিষয় অর্জন করতে পারলে নিজ ভাইয়ের জন্যও আকাঙ্ক্ষা থাকা চাই যাতে তারও তা অর্জিত হয়।
ছ. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেসব বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন তার প্রত্যেকটি সত্য প্রমাণিত হয়েছে। এটাও তাঁর নবুওয়াতের সত্যতার একটি দলীল।
জ. হযরত উছমান রাযি. কতটা শান্তিপ্রিয় ও সহনশীল ব্যক্তি ছিলেন, এ হাদীছ দ্বারা আমরা তাও জানতে পারি।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বাগানে যাওয়ার পর হযরত আবূ মূসা আশ'আরী রাযি. তাঁকে খুঁজতে খুঁজতে সেখানে চলে যান এবং বাগানটির দরজায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য প্রহরীর কাজ করতে থাকেন। তারপর সেখানে যথাক্রমে হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি., হযরত উমর ফারুক রাযি. ও হযরত উছমান গনী রাযি.-ও উপস্থিত হন। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের তিনজনকেই হযরত আবূ মূসা রাযি.-এর মাধ্যমে জান্নাতের সুসংবাদ দেন। সেইসঙ্গে হযরত উছমান রাযি. সম্পর্কে একটি ভবিষ্যদ্বাণীও করেন। তাতে জানান যে, তাঁকে একটি কঠিন মসিবতের সম্মুখীন হতে হবে।
হাদীছটিতে আছে, আরীস কুয়ার তীরে তাঁরা সকলেই পা ঝুলিয়ে বসেছিলেন। তার একদিকে বসেছিলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর ডান পাশে হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাযি. ও বাম পাশে হযরত উমর রাযি.। অপরদিকে তাঁদের মুখোমুখি হয়ে হযরত উছমান রাযি. একা বসেছিলেন।
বিখ্যাত তাবি'ঈ হযরত সা'ঈদ ইবনুল মুসায়্যিব রহ. এর ব্যাখ্যা করেছেন যে, এটা ছিল তাঁদের কবর কীভাবে হবে সেদিকে ইঙ্গিত। তাঁদের কবর এভাবেই হয়েছে। মসজিদে নববীর পাশে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে তাঁর পাশাপাশি প্রথম দুই খলীফার কবর হয়েছে। হযরত উছমান গনী রাযি.-এর কবর তাঁদের থেকে আলাদা, একটু দূরে আল-বাকী' কবরস্থানে।
হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাযি. ও হযরত উমর রাযি. যে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পাশে বসেছিলেন, তাতে দেখা যাচ্ছে হযরত আবূ বকর রাযি. বসেছেন ডানদিকে এবং হযরত উমর রাযি. বামদিকে। এর দ্বারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক ও ঘনিষ্ঠতার ইঙ্গিত মেলে। অর্থাৎ দু'জনই অনেক ঘনিষ্ঠ এবং হযরত আবু বকর রাযি. সে ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছেন। কেননা তিনি ডানদিকে আর হযরত উমর রাযি, বামদিকে। বামদিকের উপর যেমন ডানদিকে শ্রেষ্ঠত্ব, হযরত উমর রাযি.-এর উপর হযরত আবু বকর রাযি.-এর শ্রেষ্ঠত্ব সেরকমই। তারপরও তাঁরা দু'জন তাঁর সর্বাপেক্ষা ঘনিষ্ঠ। তাঁর দুই হাত স্বরূপ। একজন ডানহাত, একজন বামহাত। বিভিন্ন হাদীছে দেখা যায়, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের সঙ্গে হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাযি. ও উমর ফারুক রাযি.-এর নামও একত্রে উল্লেখ করতেন। বলতেন, আমি, আবূ বকর ও উমর।
এ হাদীছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত উছমান রাযি, সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে, তিনি কোনও কঠিন বিপদে পড়বেন। কী সে কঠিন বিপদ? অন্য হাদীছে এর ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি. থেকে বর্ণিত-
ذَكَرَ رَسُولُ اللهِ ﷺ فِتْنَة ، فَقَالَ : يُقْتَلُ هذَا فِيْهَا مَظْلُومًا لِعُثْمَانَ
‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ফিতনার কথা বর্ণনা করেন। তাতে তিনি বলেন, সে ফিতনায় ওই ব্যক্তি মজলুমরূপে নিহত হবে। তিনি এটা বলেছিলেন উছমানকে লক্ষ্য করে।’ (জামে' তিরমিযী: ৩৭০৮)
হযরত উছমান রাযি.-ও বুঝতে পেরেছিলেন তা কোনও কঠিন বিপদই হবে। তাই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাঁকে কোনও কঠিন বিপদে পড়ার কথা জানালেন, তখন সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলেন, আল্লাহ তা'আলাই সাহায্যকারী। অপর এক বর্ণনায় আছে, তিনি বলেছিলেন, হে আল্লাহ! আমাকে ধৈর্যধারণের তাওফীক দিয়ো।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ ভবিষ্যদ্বাণী সত্য প্রমাণিত হয়। হযরত উছমান রাযি.-এর খেলাফতকালের শেষদিকে তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ দানা বাঁধে। সে বিদ্রোহ ছিল আব্দুল্লাহ ইবন সাবা নামক এক দুর্বৃত্তকারীর ষড়যন্ত্রের ফল। লোকটি নানা মিথ্যা প্রচারণার মাধ্যমে মানুষকে তাঁর বিরুদ্ধে উত্তেজিত করে তোলে। তার প্ররোচনায় মানুষ তাঁর অপসারণের দাবি তোলে। অথচ তিনি ছিলেন সত্যনিষ্ঠ ও সঠিক পথে প্রতিষ্ঠিত খলীফা। তিনি ন্যায়ের উপর ছিলেন। তিনি যে ন্যায়ের উপর থাকবেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে ভবিষ্যদ্বাণীও করে গিয়েছিলেন।
হযরত মুররা ইবন কা'ব রাযি. হযরত উছমান রাযি.-এর শাহাদাতের পর এরকম এক হাদীছ বর্ণনা করেন। তাতে আছে-
وَذَكَرَ الْفِتَنَ فَقَرَّبَهَا، فَمَرَّ رَجُلٌ مُقَنَّعٌ فِي ثَوْب فَقَالَ : هَذَا يَوْمَئِذٍ عَلَى الْهُدَى، فَقُمْتُ إِلَيْهِ فَإِذَا هُوَ عُثْمَانُ بْنُ عَفَّانَ قَالَ : فَأَقْبَلْتُ عَلَيْهِ بِوَجْهِهِ، فَقُلْتُ : هَذَا؟ قَالَ : نَعَمْ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন ফিতনার কথা উল্লেখ করেন এবং সেগুলো নিকটবর্তী বলে জানান। এ সময় একটি কাপড় দিয়ে মাথা ঢাকা অবস্থায় এক ব্যক্তি কাছ দিয়ে যাচ্ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, এই ব্যক্তি সেদিন হিদায়াতের উপর থাকবে। আমি উঠে তার কাছে গেলাম। দেখি তিনি উছমান ইবন আফফান। আমি তার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বললাম, ইনি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হাঁ। (জামে' তিরমিযী: ৩৭০৪)
বস্তুত চক্রান্তকারীরাও জানত তিনি হিদায়াতের উপর আছেন। কিন্তু তাদের উদ্দেশ্যই ছিল ফিতনা সৃষ্টি করা। সে লক্ষ্যে তারা তাঁর বিরুদ্ধে একের পর এক অপবাদ ও মিথ্যা অভিযোগ দাঁড় করাতে থাকে। তাতে তারা সফলও হয়ে যায়। ক্রমে মিশর, বসরা, কূফা প্রভৃতি অঞ্চলে বিদ্রোহীরা সংঘবদ্ধ হতে থাকে। পরিশেষে হিজরী ৩৫ সনে ৪ হাজার বিদ্রোহী মদীনা মুনাউওয়ারায় এসে সমবেত হয়। তারা হযরত উছমান রাযি.-কে তাঁর গৃহে অবরুদ্ধ করে ফেলে। দীর্ঘ ২ মাস ২০ দিন তিনি অবরুদ্ধ অবস্থায় থাকেন। এ সময়ে সাহাবায়ে কেরামের অনেকেই তাঁর কাছে বিদ্রোহীদের প্রতিরোধ করার অনুমতি চান। কিন্তু মদীনা মুনাউওয়ারায় রক্তপাত হবে, এটা তিনি কিছুতেই মানতে পারছিলেন না। পরিশেষে যুলহিজ্জা মাসের ১২ তারিখ জুমু'আর দিন তারা তাঁর উপর হামলা চালায়। পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতরত অবস্থায় তারা তাঁকে শহীদ করে দেয়। এভাবে তিনি নিজ রক্তের বিনিময়ে এ পবিত্র নগরকে ব্যাপক রক্তপাত থেকে হেফাজত করেন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
এ হাদীছ দ্বারা আমরা যা-কিছু জানতে পারি তার কয়েকটি নিম্নরূপ-
ক. সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি. ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সর্বাপেক্ষা ঘনিষ্ঠ।
খ. হযরত উমর রাযি. এ উম্মতের দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি।
গ. হযরত আবূ মূসা আশ'আরী রাযি. যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি কতটা নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন, তাও এ হাদীছ দ্বারা জানা যায়।
ঘ. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনেককেই তাদের জীবিত অবস্থায় জান্নাতের সুসংবাদ শুনিয়েছেন। হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাযি., হযরত উমর ফারুক রাযি. ও হযরত উছমান গনী রাযি. তাদের অন্যতম।
ঙ. কারও সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাইলে তার অনুমতি নেওয়া জরুরি।
চ. কেউ কোনও কল্যাণ ও বরকতপূর্ণ বিষয় অর্জন করতে পারলে নিজ ভাইয়ের জন্যও আকাঙ্ক্ষা থাকা চাই যাতে তারও তা অর্জিত হয়।
ছ. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেসব বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন তার প্রত্যেকটি সত্য প্রমাণিত হয়েছে। এটাও তাঁর নবুওয়াতের সত্যতার একটি দলীল।
জ. হযরত উছমান রাযি. কতটা শান্তিপ্রিয় ও সহনশীল ব্যক্তি ছিলেন, এ হাদীছ দ্বারা আমরা তাও জানতে পারি।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)