রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
২. বিবিধ আদব - শিষ্টাচারের অধ্যায়
হাদীস নং: ৭০২
বিবিধ আদব - শিষ্টাচারের অধ্যায়
গাম্ভীর্য ও ধীর-শান্ত অবস্থা
الْوَقَارُ অর্থ গাম্ভীর্য ও ধীরস্থিরতা। যেসকল ক্ষেত্রে মানুষ সাধারণত অস্থিরতা প্রকাশ করে ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নাড়াচাড়া করে, তাতে শান্ত ও স্থির থাকাকে اَلْوَقَارُ বলা হয়। কেউ কেউ বলেন, اَلْوَقَارُ হল অনর্থক কথা ও অহেতুক কাজ হতে বিরত থাকা, অযথা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নাড়াচাড়া না করা, অধিক পরিমাণে ইশারা-ইঙ্গিত করা হতে বিরত থাকা, বেশি বেশি রাগ না করা, কথা শ্রবণে মনোযোগী থাকা, উত্তর দিতে তাড়াহুড়া না করা এবং দৃষ্টি ও আওয়াজ সংযত রাখা।
السکينة অর্থ শান্ত ও স্থির থাকা। অস্থিরতা প্রকাশ ও অহেতুক কাজ করা হতে বিরত থাকাকে السکينة বলা হয়। মূলত উভয় শব্দ কাছাকাছি অর্থবোধক।
গাম্ভীর্যপূর্ণ ও ধীরশান্ত প্রকৃতি অবলম্বন করা প্রশংসনীয় গুণ। কুরআন ও হাদীছ এ গুণ অর্জনের প্রতি উৎসাহ প্রদান করেছে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও এ গুণের অধিকারী ছিলেন। এ গুণ অবলম্বন দ্বারা মানুষের মধ্যে ব্যক্তির ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। এ গুণের অধিকারী ব্যক্তিকে মানুষ বিশেষ সম্মান ও শ্রদ্ধার দৃষ্টিতে দেখে। তারা তার কথা ও মতামতের বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। একজন ব্যক্তিত্ববান লোক হিসেবে মানুষ তাকে নেতৃত্বের আসনে বসায়। ফলে এরূপ ব্যক্তির দ্বারা জনকল্যাণমূলক কাজ করা এবং উন্নত ও শান্তিপূর্ণ সমাজগঠনে ভূমিকা রাখা সহজ হয়। একজন সত্যিকারের মুসলিমের তো সেই ভূমিকা রাখাই উচিত। কেননা ইসলাম এক জনকল্যাণমূলক দীন। ইসলাম তার অনুসারীদেরকে জনকল্যাণমূলক কাজে উৎসাহিত করে।
বস্তুত ধীরশান্ত স্বভাবের প্রয়োজন জীবনের সকল ক্ষেত্রেই। পারিবারিক জীবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্র পরিচালনা পর্যন্ত সকল জায়গায় এটা গুরুত্বপূর্ণ। অস্থিরতা প্রকাশ সর্বাবস্থায় সকল ক্ষেত্রেই ক্ষতিকর। দুঃখ-কষ্টে নিজেকে সঠিক অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত রাখতে যেমন ধীরস্থির গুণের প্রয়োজন, তেমনি এর প্রয়োজন সুখ-শান্তিকালে নিজেকে বেসামাল হওয়া থেকে সুরক্ষাদানের জন্যও। স্বামী, স্ত্রী, পিতা, মাতা, শিক্ষক, শাসক-প্রশাসক তথা প্রত্যেক দায়িত্বশীলের আপন আপন ক্ষেত্রে সুচারুরূপে দায়িত্ব-কর্তব্য পালনের জন্য এ গুণের চর্চা অপরিহার্য। অন্যথায় দায়িত্ব-কর্তব্য পালন সুষ্ঠু ও সুন্দর তো হবেই না, উল্টো অস্থিরমতিত্বের কারণে দেখা দেবে নানা বিপত্তি। ঘরে-বাইরে সর্বত্র যে নানা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে আমরা দেখি, তার একটা বড় কারণ আমাদের ধীরস্থিরতার অভাব। সুতরাং আমাদের মধ্যে যারা জন্মগতভাবে ধীরস্থির স্বভাবের নয়, চেষ্টা ও সাধনার মাধ্যমে এ গুণ অর্জন করে নেওয়া তাদের একান্ত কর্তব্য। সে লক্ষ্যেই এ গ্রন্থে বক্ষ্যমাণ পরিচ্ছেদটির অবতারণা।
‘গাম্ভীর্য ও ধীর-শান্ত অবস্থা’ সম্পর্কিত একটি আয়াত
وَعِبَادُ الرَّحْمَنِ الَّذِينَ يَمْشُونَ عَلَى الْأَرْضِ هَوْنًا وَإِذَا خَاطَبَهُمُ الْجَاهِلُونَ قَالُوا سَلَامًا (63)
অর্থ: রহমানের বান্দা তারা, যারা ভূমিতে শান্তভাবে চলাফেরা করে এবং অজ্ঞলোক যখন তাদেরকে লক্ষ্য করে (অজ্ঞতাসুলভ) কথা বলে, তখন তারা শান্তিপূর্ণ কথা বলে।’(সূরা ফুরকান (২৫), আয়াত ৬৩)
ব্যাখ্যা
এ আয়াতটিতে মুমিন ব্যক্তির বিশেষ দু'টি গুণ বর্ণিত হয়েছে। একটি গুণ হাঁটাচলা সম্পর্কিত এবং আরেকটি গুণ কথাবার্তা সম্পর্কিত। প্রথম গুণটি সম্পর্কে আয়াতটিতে বলা হয়েছে-
يَمْشُونَ عَلَى الْأَرْضِ هَوْنًا (যারা ভূমিতে শান্তভাবে চলাফেরা করে)। هون শব্দটির অর্থ নম্রতা, কোমলতা, ধীরস্থিরতা ও গাম্ভীর্য। আয়াতটিতে বোঝানো হচ্ছে, যারা আল্লাহ তা'আলার প্রকৃত বান্দা ও ইবাদত-বন্দেগীতে পরিপক্ক, তারা মাটির উপর দর্প ও অহংকারের সঙ্গে চলে না; বরং তারা চলে বিনয়ের সঙ্গে ও ধীরস্থিরভাবে।
দ্বিতীয় গুণটি হচ্ছে- وَإِذَا خَاطَبَهُمُ الْجَاهِلُونَ قَالُوا سَلَامًا ‘এবং অজ্ঞলোক যখন তাদেরকে লক্ষ্য করে (অজ্ঞতাসুলভ) কথা বলে, তখন তারা শান্তিপূর্ণ কথা বলে'। অর্থাৎ নির্বোধ লোকেরা যখন তাদের সঙ্গে এমন কথা বলে যা তারা পসন্দ করে না, হয়তো মানসম্মানে আঘাত করে কথা বলে, গালমন্দ করে, অহেতুক খোঁচা মারে কিংবা বেহুদা কথা বলে সময় নষ্ট করে, মোটকথা অনুচিত ও অপ্রীতিকর যে কথাই তাদের সঙ্গে বলে, তাতে তারা সমানে সমান উত্তর দেয় না। অজ্ঞদের বিপরীতে তারা অজ্ঞতাসুলভ কথা বলে না। গালির উত্তর গালি দিয়ে দেয় না। বরং এমন কথা বলে, যা দ্বারা শান্তি রক্ষা হয়। নিজেরা তো উত্তেজিত হয়ই না; বরং তাদের শান্তিপূর্ণ কথার দ্বারা অপরপক্ষের উত্তেজনাও প্রশমিত হয়। অন্ততপক্ষে অধিকতর আগ্রাসী হওয়া থেকে ক্ষান্ত তো হয়ই।
বাক্যটির আরেক অর্থ হতে পারে, অজ্ঞলোকেরা যখন তাদেরকে লক্ষ্য করে অপ্রীতিকর কোনও কথা বলে, তখন তারা বলে দেয় 'সালাম'। অর্থাৎ তারা তাদের সঙ্গে কলহ-বিবাদে লিপ্ত হয় না; বরং সালাম বলে বিদায় নেয়। যেমন অপর এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-
وَإِذَا سَمِعُوا اللَّغْوَ أَعْرَضُوا عَنْهُ وَقَالُوا لَنَا أَعْمَالُنَا وَلَكُمْ أَعْمَالُكُمْ سَلَامٌ عَلَيْكُمْ لَا نَبْتَغِي الْجَاهِلِينَ (55)
‘তারা যখন কোনও বেহুদা কথা শোনে, তা এড়িয়ে যায় এবং বলে, আমাদের জন্য আমাদের কর্ম এবং তোমাদের জন্য তোমাদের কর্ম। তোমাদেরকে সালাম। আমরা অজ্ঞদের সাথে জড়িত হতে চাই না।’(সুরা কাসাস (২৮), আয়াত ৫৫)
লক্ষণীয়, যারা অন্যের সঙ্গে অপ্রীতিকর ও অবাঞ্ছনীয় কথা বলে, আয়াতে তাদেরকে অজ্ঞ সাব্যস্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ এরূপ কথা বলা কোনও জ্ঞানী ও শিক্ষিত লোকের কাজ হতে পারে না। যারা তা বলে, তারা শিক্ষিত হলেও প্রকৃত জ্ঞানী নয়। বাস্তবিকপক্ষে তারা অজ্ঞদেরই অন্তর্ভুক্ত। প্রত্যেক বিদ্বান ও শিক্ষিত লোকের এদিকে লক্ষ রাখা একান্ত কর্তব্য।
আরও লক্ষণীয়, আয়াতটিতে এরূপ গুণবিশিষ্ট ব্যক্তিদের 'রহমানের বান্দা' বিশেষণে বিশেষায়িত করা হয়েছে। এর মধ্যে ইঙ্গিত রয়েছে, যারা চলাফেরায় শান্ত হবে এবং কতাবার্তায় হবে শান্তিপূর্ণ, অর্থাৎ ঝগড়া-ফাসাদ এড়িয়ে চলবে, তারা আল্লাহ তা'আলার পক্ষ হতে রহমত ও দয়া লাভের উপযুক্ত হবে। দুনিয়া ও আখিরাতে আল্লাহ তা'আলা তাদের প্রতি তাঁর বিশেষ রহমত বর্ষণ করবেন।
আয়াতটির শিক্ষা
ক. দয়াময় আল্লাহর প্রকৃত বান্দা হতে হলে ধীর-শান্ত স্বভাব আয়ত্ত করতে হবে।
খ. হাঁটাচলায় অহমিকা পরিহার করে শান্ত ও বিনয়ী থাকা জরুরি।
গ. অপ্রীতিকর ও অবাঞ্ছিত কথা বলা অজ্ঞতার পরিচায়ক।
ঘ. অজ্ঞ লোকেরা যতই অপ্রীতিকর কথা বলুক না কেন, দয়াময় আল্লাহর বান্দাদেরকে অবশ্যই তা উপেক্ষা করতে হবে। তাদের সঙ্গে কলহ-বিবাদে না জড়িয়ে সালাম জানিয়ে বিদায় নেওয়াই প্রকৃত বান্দার পরিচায়ক।
الْوَقَارُ অর্থ গাম্ভীর্য ও ধীরস্থিরতা। যেসকল ক্ষেত্রে মানুষ সাধারণত অস্থিরতা প্রকাশ করে ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নাড়াচাড়া করে, তাতে শান্ত ও স্থির থাকাকে اَلْوَقَارُ বলা হয়। কেউ কেউ বলেন, اَلْوَقَارُ হল অনর্থক কথা ও অহেতুক কাজ হতে বিরত থাকা, অযথা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নাড়াচাড়া না করা, অধিক পরিমাণে ইশারা-ইঙ্গিত করা হতে বিরত থাকা, বেশি বেশি রাগ না করা, কথা শ্রবণে মনোযোগী থাকা, উত্তর দিতে তাড়াহুড়া না করা এবং দৃষ্টি ও আওয়াজ সংযত রাখা।
السکينة অর্থ শান্ত ও স্থির থাকা। অস্থিরতা প্রকাশ ও অহেতুক কাজ করা হতে বিরত থাকাকে السکينة বলা হয়। মূলত উভয় শব্দ কাছাকাছি অর্থবোধক।
গাম্ভীর্যপূর্ণ ও ধীরশান্ত প্রকৃতি অবলম্বন করা প্রশংসনীয় গুণ। কুরআন ও হাদীছ এ গুণ অর্জনের প্রতি উৎসাহ প্রদান করেছে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও এ গুণের অধিকারী ছিলেন। এ গুণ অবলম্বন দ্বারা মানুষের মধ্যে ব্যক্তির ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। এ গুণের অধিকারী ব্যক্তিকে মানুষ বিশেষ সম্মান ও শ্রদ্ধার দৃষ্টিতে দেখে। তারা তার কথা ও মতামতের বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। একজন ব্যক্তিত্ববান লোক হিসেবে মানুষ তাকে নেতৃত্বের আসনে বসায়। ফলে এরূপ ব্যক্তির দ্বারা জনকল্যাণমূলক কাজ করা এবং উন্নত ও শান্তিপূর্ণ সমাজগঠনে ভূমিকা রাখা সহজ হয়। একজন সত্যিকারের মুসলিমের তো সেই ভূমিকা রাখাই উচিত। কেননা ইসলাম এক জনকল্যাণমূলক দীন। ইসলাম তার অনুসারীদেরকে জনকল্যাণমূলক কাজে উৎসাহিত করে।
বস্তুত ধীরশান্ত স্বভাবের প্রয়োজন জীবনের সকল ক্ষেত্রেই। পারিবারিক জীবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্র পরিচালনা পর্যন্ত সকল জায়গায় এটা গুরুত্বপূর্ণ। অস্থিরতা প্রকাশ সর্বাবস্থায় সকল ক্ষেত্রেই ক্ষতিকর। দুঃখ-কষ্টে নিজেকে সঠিক অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত রাখতে যেমন ধীরস্থির গুণের প্রয়োজন, তেমনি এর প্রয়োজন সুখ-শান্তিকালে নিজেকে বেসামাল হওয়া থেকে সুরক্ষাদানের জন্যও। স্বামী, স্ত্রী, পিতা, মাতা, শিক্ষক, শাসক-প্রশাসক তথা প্রত্যেক দায়িত্বশীলের আপন আপন ক্ষেত্রে সুচারুরূপে দায়িত্ব-কর্তব্য পালনের জন্য এ গুণের চর্চা অপরিহার্য। অন্যথায় দায়িত্ব-কর্তব্য পালন সুষ্ঠু ও সুন্দর তো হবেই না, উল্টো অস্থিরমতিত্বের কারণে দেখা দেবে নানা বিপত্তি। ঘরে-বাইরে সর্বত্র যে নানা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে আমরা দেখি, তার একটা বড় কারণ আমাদের ধীরস্থিরতার অভাব। সুতরাং আমাদের মধ্যে যারা জন্মগতভাবে ধীরস্থির স্বভাবের নয়, চেষ্টা ও সাধনার মাধ্যমে এ গুণ অর্জন করে নেওয়া তাদের একান্ত কর্তব্য। সে লক্ষ্যেই এ গ্রন্থে বক্ষ্যমাণ পরিচ্ছেদটির অবতারণা।
‘গাম্ভীর্য ও ধীর-শান্ত অবস্থা’ সম্পর্কিত একটি আয়াত
وَعِبَادُ الرَّحْمَنِ الَّذِينَ يَمْشُونَ عَلَى الْأَرْضِ هَوْنًا وَإِذَا خَاطَبَهُمُ الْجَاهِلُونَ قَالُوا سَلَامًا (63)
অর্থ: রহমানের বান্দা তারা, যারা ভূমিতে শান্তভাবে চলাফেরা করে এবং অজ্ঞলোক যখন তাদেরকে লক্ষ্য করে (অজ্ঞতাসুলভ) কথা বলে, তখন তারা শান্তিপূর্ণ কথা বলে।’(সূরা ফুরকান (২৫), আয়াত ৬৩)
ব্যাখ্যা
এ আয়াতটিতে মুমিন ব্যক্তির বিশেষ দু'টি গুণ বর্ণিত হয়েছে। একটি গুণ হাঁটাচলা সম্পর্কিত এবং আরেকটি গুণ কথাবার্তা সম্পর্কিত। প্রথম গুণটি সম্পর্কে আয়াতটিতে বলা হয়েছে-
يَمْشُونَ عَلَى الْأَرْضِ هَوْنًا (যারা ভূমিতে শান্তভাবে চলাফেরা করে)। هون শব্দটির অর্থ নম্রতা, কোমলতা, ধীরস্থিরতা ও গাম্ভীর্য। আয়াতটিতে বোঝানো হচ্ছে, যারা আল্লাহ তা'আলার প্রকৃত বান্দা ও ইবাদত-বন্দেগীতে পরিপক্ক, তারা মাটির উপর দর্প ও অহংকারের সঙ্গে চলে না; বরং তারা চলে বিনয়ের সঙ্গে ও ধীরস্থিরভাবে।
দ্বিতীয় গুণটি হচ্ছে- وَإِذَا خَاطَبَهُمُ الْجَاهِلُونَ قَالُوا سَلَامًا ‘এবং অজ্ঞলোক যখন তাদেরকে লক্ষ্য করে (অজ্ঞতাসুলভ) কথা বলে, তখন তারা শান্তিপূর্ণ কথা বলে'। অর্থাৎ নির্বোধ লোকেরা যখন তাদের সঙ্গে এমন কথা বলে যা তারা পসন্দ করে না, হয়তো মানসম্মানে আঘাত করে কথা বলে, গালমন্দ করে, অহেতুক খোঁচা মারে কিংবা বেহুদা কথা বলে সময় নষ্ট করে, মোটকথা অনুচিত ও অপ্রীতিকর যে কথাই তাদের সঙ্গে বলে, তাতে তারা সমানে সমান উত্তর দেয় না। অজ্ঞদের বিপরীতে তারা অজ্ঞতাসুলভ কথা বলে না। গালির উত্তর গালি দিয়ে দেয় না। বরং এমন কথা বলে, যা দ্বারা শান্তি রক্ষা হয়। নিজেরা তো উত্তেজিত হয়ই না; বরং তাদের শান্তিপূর্ণ কথার দ্বারা অপরপক্ষের উত্তেজনাও প্রশমিত হয়। অন্ততপক্ষে অধিকতর আগ্রাসী হওয়া থেকে ক্ষান্ত তো হয়ই।
বাক্যটির আরেক অর্থ হতে পারে, অজ্ঞলোকেরা যখন তাদেরকে লক্ষ্য করে অপ্রীতিকর কোনও কথা বলে, তখন তারা বলে দেয় 'সালাম'। অর্থাৎ তারা তাদের সঙ্গে কলহ-বিবাদে লিপ্ত হয় না; বরং সালাম বলে বিদায় নেয়। যেমন অপর এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-
وَإِذَا سَمِعُوا اللَّغْوَ أَعْرَضُوا عَنْهُ وَقَالُوا لَنَا أَعْمَالُنَا وَلَكُمْ أَعْمَالُكُمْ سَلَامٌ عَلَيْكُمْ لَا نَبْتَغِي الْجَاهِلِينَ (55)
‘তারা যখন কোনও বেহুদা কথা শোনে, তা এড়িয়ে যায় এবং বলে, আমাদের জন্য আমাদের কর্ম এবং তোমাদের জন্য তোমাদের কর্ম। তোমাদেরকে সালাম। আমরা অজ্ঞদের সাথে জড়িত হতে চাই না।’(সুরা কাসাস (২৮), আয়াত ৫৫)
লক্ষণীয়, যারা অন্যের সঙ্গে অপ্রীতিকর ও অবাঞ্ছনীয় কথা বলে, আয়াতে তাদেরকে অজ্ঞ সাব্যস্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ এরূপ কথা বলা কোনও জ্ঞানী ও শিক্ষিত লোকের কাজ হতে পারে না। যারা তা বলে, তারা শিক্ষিত হলেও প্রকৃত জ্ঞানী নয়। বাস্তবিকপক্ষে তারা অজ্ঞদেরই অন্তর্ভুক্ত। প্রত্যেক বিদ্বান ও শিক্ষিত লোকের এদিকে লক্ষ রাখা একান্ত কর্তব্য।
আরও লক্ষণীয়, আয়াতটিতে এরূপ গুণবিশিষ্ট ব্যক্তিদের 'রহমানের বান্দা' বিশেষণে বিশেষায়িত করা হয়েছে। এর মধ্যে ইঙ্গিত রয়েছে, যারা চলাফেরায় শান্ত হবে এবং কতাবার্তায় হবে শান্তিপূর্ণ, অর্থাৎ ঝগড়া-ফাসাদ এড়িয়ে চলবে, তারা আল্লাহ তা'আলার পক্ষ হতে রহমত ও দয়া লাভের উপযুক্ত হবে। দুনিয়া ও আখিরাতে আল্লাহ তা'আলা তাদের প্রতি তাঁর বিশেষ রহমত বর্ষণ করবেন।
আয়াতটির শিক্ষা
ক. দয়াময় আল্লাহর প্রকৃত বান্দা হতে হলে ধীর-শান্ত স্বভাব আয়ত্ত করতে হবে।
খ. হাঁটাচলায় অহমিকা পরিহার করে শান্ত ও বিনয়ী থাকা জরুরি।
গ. অপ্রীতিকর ও অবাঞ্ছিত কথা বলা অজ্ঞতার পরিচায়ক।
ঘ. অজ্ঞ লোকেরা যতই অপ্রীতিকর কথা বলুক না কেন, দয়াময় আল্লাহর বান্দাদেরকে অবশ্যই তা উপেক্ষা করতে হবে। তাদের সঙ্গে কলহ-বিবাদে না জড়িয়ে সালাম জানিয়ে বিদায় নেওয়াই প্রকৃত বান্দার পরিচায়ক।
হাদীছ নং: ৭০২
উন্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রাযি. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কখনও পরিপূর্ণরূপে হাসতে দেখিনি, যাতে তাঁর আলজিব দেখা দেয়। তিনি কেবল মুচকি হাসতেন। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ৬০৯২; সহীহ মুসলিম: ৮৯৯; সুনানে আবূ দাউদ: ৫০৯৮; হাকিম, আল মুস্তাদরাক: ৩৭০০; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা ৬৪৬২; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ১১৫)
উন্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রাযি. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কখনও পরিপূর্ণরূপে হাসতে দেখিনি, যাতে তাঁর আলজিব দেখা দেয়। তিনি কেবল মুচকি হাসতেন। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ৬০৯২; সহীহ মুসলিম: ৮৯৯; সুনানে আবূ দাউদ: ৫০৯৮; হাকিম, আল মুস্তাদরাক: ৩৭০০; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা ৬৪৬২; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ১১৫)
كتاب الأدب
باب الوقار والسكينة
قَالَ الله تَعَالَى: {وَعِبَادُ الرَّحْمانِ الَّذِينَ يَمْشُونَ عَلَى الأرْضِ هَوْنًا وَإِذَا خَاطَبَهُمُ الْجَاهِلُونَ قَالُوا سَلاَمًا} [الفرقان: 63].
قَالَ الله تَعَالَى: {وَعِبَادُ الرَّحْمانِ الَّذِينَ يَمْشُونَ عَلَى الأرْضِ هَوْنًا وَإِذَا خَاطَبَهُمُ الْجَاهِلُونَ قَالُوا سَلاَمًا} [الفرقان: 63].
702 - وعن عائشة رضي الله عنها، قالت: مَا رَأيْتُ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - مُسْتَجْمِعًا قَطُّ ضَاحِكًا حَتَّى تُرَى مِنهُ لَهَوَاتُهُ، إنَّمَا كَانَ يَتَبَسَّمُ. متفقٌ عَلَيْهِ. (1)
«اللَّهْوَاتُ» جَمْعُ لَهَاةٍ: وَهِيَ اللَّحْمَةُ الَّتي في أقْصى سَقْفِ الْفَمِ.
«اللَّهْوَاتُ» جَمْعُ لَهَاةٍ: وَهِيَ اللَّحْمَةُ الَّتي في أقْصى سَقْفِ الْفَمِ.
হাদীসের ব্যাখ্যা:
হাসি তিন রকম হয়ে থাকে। এক হল মুচকি হাসি। এ হাসিতে মুখ খোলে না ও দাঁত দেখা যায় না। কেবল ঠোঁট প্রসারিত হয় ও চেহারা উদ্ভাসিত হয়। আরবীতে একে تَبسم ও اِبتِسَامُ বলে। যে হাসিতে মুখ খুলে যায় ও দাঁত দেখা যায় কিন্তু শব্দ হয় না, তাকে ضحك বলে। আর যদি শব্দও হয়, তবে তাকে বলা হয় قهقهَةٌ অর্থাৎ অট্টহাসি।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনও অট্টহাসি দিতেন না। অধিকাংশ সময় তাঁর হাসি হতো মুচকি হাসি। যেমনটা এ হাদীছে বলা হয়েছে। কখনও কখনও তিনি মুখ খুলেও হাসি দিতেন। তখন তাঁর সামনের দাঁতসমূহ দেখা যেত।
مُسْتَجْمعًا শব্দটির উৎপত্তি اِسْتِجمَاعٌ থেকে। এর অর্থ একত্র করা, জড়ো করা, পরিপূর্ণরূপে সম্পাদন করা। এর দ্বারা বোঝানো উদ্দেশ্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাসিতে ঠোঁট, দাঁত, মুখগহ্বর ইত্যাদি হাসির অঙ্গসমূহের পরিপূর্ণ ব্যবহার করতেন না। অর্থাৎ সবগুলো অঙ্গের ব্যবহার দ্বারা পূর্ণাঙ্গ হাসি তিনি দিতেন না। অধিকাংশ সময় কেবল ঠোঁটের সাহায্যে মুচকি হাসি দিতেন।
এর দ্বারা বোঝানো উদ্দেশ্য হাসির ক্ষেত্রেও তিনি পরিমিত স্বভাবের ছিলেন। হাসির বিপুল বিস্তার ও অট্টহাসি দিয়ে তিনি নিজ ভাবগাম্ভীর্য নষ্ট করতেন না। যত বড় আনন্দের বিষয়ই হোক না কেন, তাতে তাঁর শান্ত সমাহিত ভাব ক্ষুণ্ণ হতে পারত না। সে আনন্দের প্রকাশে তিনি মুচকি হাসি দিয়েই ক্ষান্ত থাকতেন। বড়জোর সামনের দাঁত দেখা যেত। এর বেশি নয়। অর্থাৎ কখনওই শব্দ করে হাসতেন না।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
গাম্ভীর্য ও ধীর-শান্ত প্রকৃতি রক্ষা করা সর্বাবস্থায় কাম্য ও প্রশংসনীয়। এমনকি হাসি ও আনন্দ প্রকাশের ক্ষেত্রেও।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনও অট্টহাসি দিতেন না। অধিকাংশ সময় তাঁর হাসি হতো মুচকি হাসি। যেমনটা এ হাদীছে বলা হয়েছে। কখনও কখনও তিনি মুখ খুলেও হাসি দিতেন। তখন তাঁর সামনের দাঁতসমূহ দেখা যেত।
مُسْتَجْمعًا শব্দটির উৎপত্তি اِسْتِجمَاعٌ থেকে। এর অর্থ একত্র করা, জড়ো করা, পরিপূর্ণরূপে সম্পাদন করা। এর দ্বারা বোঝানো উদ্দেশ্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাসিতে ঠোঁট, দাঁত, মুখগহ্বর ইত্যাদি হাসির অঙ্গসমূহের পরিপূর্ণ ব্যবহার করতেন না। অর্থাৎ সবগুলো অঙ্গের ব্যবহার দ্বারা পূর্ণাঙ্গ হাসি তিনি দিতেন না। অধিকাংশ সময় কেবল ঠোঁটের সাহায্যে মুচকি হাসি দিতেন।
এর দ্বারা বোঝানো উদ্দেশ্য হাসির ক্ষেত্রেও তিনি পরিমিত স্বভাবের ছিলেন। হাসির বিপুল বিস্তার ও অট্টহাসি দিয়ে তিনি নিজ ভাবগাম্ভীর্য নষ্ট করতেন না। যত বড় আনন্দের বিষয়ই হোক না কেন, তাতে তাঁর শান্ত সমাহিত ভাব ক্ষুণ্ণ হতে পারত না। সে আনন্দের প্রকাশে তিনি মুচকি হাসি দিয়েই ক্ষান্ত থাকতেন। বড়জোর সামনের দাঁত দেখা যেত। এর বেশি নয়। অর্থাৎ কখনওই শব্দ করে হাসতেন না।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
গাম্ভীর্য ও ধীর-শান্ত প্রকৃতি রক্ষা করা সর্বাবস্থায় কাম্য ও প্রশংসনীয়। এমনকি হাসি ও আনন্দ প্রকাশের ক্ষেত্রেও।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)