রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

ভূমিকা অধ্যায়

হাদীস নং: ৬৭৭
শাসক, বিচারক প্রমুখ কর্তৃত্বশীলকে সৎ সহযোগী গ্রহণে উৎসাহদান এবং তাদেরকে মন্দ সহচর ও তাদের মতামত গ্রহণ সম্পর্কে সতর্কীকরণ

রাষ্ট্র ও সরকার পরিচালনায় মন্ত্রীবর্গই মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। জনগণের সার্বিক অবস্থা ও দেশের খুঁটিনাটি সম্পর্কে রাষ্ট্রপ্রধানের তুলনায় তাদেরই অবগতি থাকে বেশি। কাজেই রাষ্ট্র পরিচালনায় রাষ্ট্রপ্রধানকে তারাই ভালো সহযোগিতা করতে পারে। বরং তাদের সহযোগিতা ছাড়া সুচারুরূপে রাষ্ট্র পরিচালনা ও জনগণের নেতৃত্বদান সম্ভবই নয়। তাই আবহমানকাল থেকেই রাষ্ট্রনায়কগণ রাষ্ট্র পরিচালনার কাজে মন্ত্রী নিয়োগ করে আসছে এবং তাদের উপর নির্ভরশীল থেকেছে। হযরত মূসা আলাইহিস সালামের মতো শীর্ষস্থানীয় নবী পর্যন্ত আল্লাহ তা'আলার কাছে তাঁর ভাই হারুনকে তাঁর মন্ত্রী বানিয়ে দেওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
وَاجْعَلْ لِي وَزِيرًا مِنْ أَهْلِي (29) هَارُونَ أَخِي (30) اشْدُدْ بِهِ أَزْرِي (31) وَأَشْرِكْهُ فِي أَمْرِي (32) كَيْ نُسَبِّحَكَ كَثِيرًا (33) وَنَذْكُرَكَ كَثِيرًا (34)
‘আমার স্বজনদের মধ্য হতে একজনকে আমার সহযোগী বানিয়ে দিন। আমার ভাই হারুনকে। তার মাধ্যমে আমার শক্তি দৃঢ় করুন। এবং তাকে আমার কাজে শরীক বানিয়ে দিন। যাতে আমরা বেশি পরিমাণে আপনার তাসবীহ করতে পারি। এবং বেশি পরিমাণে আপনার যিকির করতে পারি।(সূরা তোয়াহা (২০), আয়াত ২৯-৩৪)
এর দ্বারা বোঝা যায় মন্ত্রী দ্বারা রাষ্ট্রপ্রধানের হাত শক্তিশালী হয় এবং তার পক্ষে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করা সহজ হয়। এর দ্বারা আরও বোঝা যায়, মন্ত্রীত্বের জন্য সুযোগ্য লোক নির্বাচন করা চাই। অর্থাৎ এমন লোক, যার মধ্যে আল্লাহভীতি আছে, দীনের বুঝ ও দীনের ইলম আছে এবং সেইসঙ্গে রাষ্ট্রীয় দায়-দায়িত্ব পালনের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান-বুদ্ধি ও বিচক্ষণতাও রয়েছে। সরকারের সহযোগী ও মন্ত্রীকে অবশ্যই সত্যনিষ্ঠ ও নীতিবান হতে হবে। তাকে হতে হবে উত্তম চরিত্রের অধিকারী ও জনগণের অবস্থাদি সম্পর্কে ওয়াকিফহাল। এমনিভাবে মন্ত্রীবর্গের যারা সচিব ও সহযোগী, তাদেরও বিচক্ষণ ও বিশ্বস্ত হওয়া একান্ত জরুরি। এমন উপযুক্ত মন্ত্রীপরিষদ থাকলে রাষ্ট্রপ্রধানের দীন-দুনিয়া উভয়েরই হেফাজত হয়। অন্যথায় হয়তো দুনিয়া রক্ষা পায়, কিন্তু তার দীনদারি বরবাদ হয়ে যায়। অথবা উভয় ক্ষেত্রেই তার সর্বনাশ ঘটে।
বস্তুত একজন রাষ্ট্রনায়কের যোগ্যতার প্রথম প্রকাশই ঘটে উপযুক্ত মন্ত্রীপরিষদ গঠনের দ্বারা। কেমনসব লোককে মন্ত্রী ও সহযোগীরূপে বেছে নিয়েছে, তা দ্বারাই বিচার করা যায় সে কোন প্রকৃতির লোক এবং তার বুদ্ধি-বিবেচনা, চিন্তা-ভাবনা কেমন। তাই বলা হয়, মন্ত্রীবর্গ হল রাজা-বাদশার ভূষণ।
নবী-রাসূলগণ তো বটেই, খুলাফায়ে রাশিদীনের ইতিহাসেও দেখা যায় তাঁদের কীর্তিময় দেশ পরিচালনায় তাঁদের সহযোগী ও মন্ত্রীবর্গ অবিস্মরণীয় ভূমিকা পালন করেছিলেন। তাঁদের পরেও যুগে যুগে যারা শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রনায়করূপে ইতিহাস রচনা করেছেন, তাদের গৌরবগাঁথায় তাদের সুযোগ্য মন্ত্রীবর্গকেও সমানভাবে স্মরণ করতে হয়। অপরদিকে ইতিহাসে যারা কুখ্যাত হয়ে আছে, সেরকম শাসকবর্গের পাশেও দেখতে পাওয়া যায় এমন এমন মন্ত্রী-সহযোগীদের, কুমন্ত্রণা দেওয়ায় যারা ছিল সিদ্ধহস্ত। তাদের কারসাজিতেই শাসকবর্গ ক্ষমতা হারিয়েছে, দেশ অধঃপাতে গেছে।
ওয়াহব ইবন মুনাব্বিহ বর্ণনা করেছেন, হযরত মূসা আলাইহিস সালাম ফিরআউনকে বলেছিলেন, ঈমান আনুন। তাতে আখিরাতে জান্নাত পাবেন, দুনিয়ায় আপনার রাজত্বও বহাল থাকবে। ফিরআউন তার মন্ত্রী হামানের সঙ্গে পরামর্শ করল। হামান বলল, এতদিন আপনার পূজা করা হত। এখন তো আপনি নিজেই পূজারী হয়ে যাবেন। কথাটি ফিরআউনের মনে ধরল। তার অহমিকায় আঘাত লাগল। এর পরিণাম যা হল, সকলেরই জানা।
উমায়্য বংশীয় একজনকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, তোমাদের ক্ষমতা হারানোর কারণ কী? সে বলেছিল, কারণ চারটি। (এক) আমাদের মন্ত্রীগণ আমাদের কাছে ওইসকল বিষয় গোপন রেখেছিল, যা প্রকাশ করা তাদের কর্তব্য ছিল। (দুই) আমাদের করবিভাগের লোকেরা মানুষের উপর জুলুম করেছিল। ফলে তারা ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যায় আর এতে করে আমাদের অর্থভাণ্ডার শূন্য হয়ে যায়। (তিন) শেষপর্যন্ত আমাদের সৈন্যগণ বেতন-ভাতা পাচ্ছিল না। ফলে তারা আমাদের আনুগত্য ছেড়ে দেয়। (চার) মানুষ আমাদের কাছে ন্যায়-ইনসাফ পাওয়ার আশা ছেড়ে দেয়। ফলে তারা অন্যদের মধ্যে স্বস্তি খোঁজে।
সারকথা, ক্ষমতার গুরুভার যথাযথভাবে আঞ্জাম দেওয়া এবং এ দায়িত্ব সুচারুরূপে পালন করার জন্য রাষ্ট্রপ্রধানকে অবশ্যই সুযোগ্য মন্ত্রী ও বিশ্বস্ত সহযোগী বেছে নিতে হবে। সর্বদা স্বার্থান্বেষী ও সুযোগসন্ধানী দুর্বৃত্তদের সম্পর্কে সাবধান থাকতে হবে, যাতে তারা কাছে ভিড়তে না পারে। কেননা এ শ্রেণির লোকই কুমন্ত্রণা দিয়ে সরকারকে বিপথগামী করে এবং দেশের সর্বনাশ ঘটানোর প্রয়াস পায়। কুরআন ও হাদীছেও বিভিন্নভাবে এর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। বর্তমান এ অধ্যায়টি সে সম্পর্কেই।


‘শাসক, বিচারক প্রমুখ কর্তৃত্বশীলকে সৎ সহযোগী গ্রহণে উৎসাহদান…’ সম্পর্কিত একটি আয়াত

এক নং আয়াত
الْأَخِلَّاءُ يَوْمَئِذٍ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ إِلَّا الْمُتَّقِينَ (67)
অর্থ: সেদিন বন্ধুবর্গ একে অন্যের শত্রু হয়ে যাবে, কেবল মুত্তাকীগণ ছাড়া।(সূরা যুখরুফ (৪৩), আয়াত ৬৭)

ব্যাখ্যা
বন্ধুত্ব দু'রকম। এক বন্ধুত্ব এমন, যা কেবল আল্লাহ তা'আলার জন্যই হয়ে থাকে। তা গড়ে ওঠে দীন ও দীনী কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে। যারা দীনের তা'লীম, তাবলীগ ও প্রতিষ্ঠার জন্য মেহনত করে, তাদের পরস্পরের মধ্যে এসব কাজের সূত্রে যে বন্ধুত্বমূলক সম্পর্ক স্থাপিত হয়, আল্লাহ তা'আলার কাছে তা পসন্দনীয়। আনসার বা মুহাজিরদের মধ্যকার বন্ধুত্ব এ জাতীয় সম্পর্কের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। বলাবাহুল্য, এ জাতীয় বন্ধুত্ব মুত্তাকী-পরহেযগারদের মধ্যেই হয়ে থাকে।
আরেক বন্ধুত্ব দীনবিরোধী কার্যক্রম বা এমনসব কাজকর্মকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে, যা মানুষকে পাপের পথে ধাবিত করে ও নানারকম পাপকর্মে লিপ্ত হওয়ার কারণ হয়ে যায়। যারা দীনের বিরোধিতা করে, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য এক হওয়ায় তারা একে অন্যকে বন্ধু মনে করে। বলাবাহুল্য, এ শ্রেণির লোক তো স্পষ্টতই বেঈমান। এমন অনেক লোকও আছে, যারা বেঈমান নয় বটে, কিন্তু এমন এমন কাজের সঙ্গে জড়িত হয়ে যায়, যদ্দরুন ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় বিভিন্ন পাপকর্ম হয়েই যায়। সেসব কাজকে কেন্দ্র করে তারাও পরস্পরে বন্ধু হয়ে যায়। যেমন কোনও রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক সংগঠন, নাইটক্লাব কিংবা এরকম অন্য কোনও দল বা সমিতির সদস্যবর্গ। একই কাজে জড়িত থাকায় ও একইসঙ্গে চলাফেরা করায় তাদের মধ্যেও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপিত হয়ে যায়। এ বন্ধুত্ব মুমিন ব্যক্তির জন্য মোটেই নিরাপদ নয়। বন্ধুত্ব রক্ষার খাতিরে অনেক সময়ই দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হয়। সিদ্ধান্ত যেহেতু দীনী দৃষ্টিকোণ থেকে স্থির করা হয় না, তাই অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা দীনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হয় না। বরং অনেক সিদ্ধান্ত সুস্পষ্টভাবে দীনের বিরুদ্ধেই যায়। অন্ততপক্ষে সিদ্ধান্তের বিষয়টি পাপকর্ম তো হয়ই। তথাকথিত সাংস্কৃতিক সংগঠন, ক্রীড়াচক্র, নাইটক্লাব ইত্যাদির সদস্যগণ সম্মিলিতভাবে যেসব কাজকর্ম করে থাকে, সেগুলোর চরিত্র আসলে কেমন? বন্ধুত্ব রক্ষার সুবাদে যারা এসব সমিতির সদস্যপদ ধরে রাখে, প্রতিনিয়ত তারা কোন পথে চলছে? বন্ধুত্ব তাদেরকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? নিশ্চয়ই কোনও মুত্তাকী-পরহেযগার ব্যক্তি কারও সঙ্গে এ জাতীয় বন্ধুত্ব করবে না। তাহলে যারা পরস্পরের মধ্যে এ জাতীয় বন্ধুত্ব রক্ষা করে চলছে, তাদের দীনী অবস্থান ঠিক কোনখানে? তাদেরকে অবশ্যই এ বিষয়টি ভাবতে হবে। ভাবতে হবে এ কারণে যে, ইহজীবন বড়ই ক্ষণস্থায়ী। ক্ষণস্থায়ী এর বন্ধুত্বও। মৃত্যুতে অবশ্যই এ বন্ধুত্বের পরিসমাপ্তি ঘটবে। তারপর কবরজীবন দিয়ে যে পরকালের সূচনা ঘটবে, সেখানে এ বন্ধুত্বের পরিণাম কী দাঁড়াবে? কবরের শাস্তি ও হাশর ময়দানের বিভীষিকা যখন সামনে এসে যাবে, তখন এ বন্ধুত্বের হাকীকত উন্মোচিত হয়ে যাবে। তখন এক বন্ধু আরেক বন্ধুকে এই বলে দোষারোপ করবে যে, তার কারণেই আজ আমার এই পরিণতি। তার সঙ্গে বন্ধুত্বের সুবাদে আমি হাজারও পাপকর্ম করেছি। সেই আমাকে নানারকম পাপকর্মের পথ দেখিয়েছে, উৎসাহ যুগিয়েছে। তাকে আমি বন্ধু মনে করেছিলাম। প্রকৃতপক্ষে সে আমার চরম শত্রু। এ আয়াতে আল্লাহ তা'আলা বলেছেন-
الْأَخِلَّاءُ يَوْمَئِذٍ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ (সেদিন বন্ধুবর্গ একে অন্যের শত্রু হয়ে যাবে)। যেহেতু তারা একে অন্যের শত্রু হয়ে যাবে, তাই একে অন্যের দুর্ভোগও কামনা করবে। সেদিন তারা একে অন্যকে লা'নত করবে। কুরআন মাজীদের এক আয়াতে ইরশাদ-
وَقَالَ إِنَّمَا اتَّخَذْتُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ أَوْثَانًا مَوَدَّةَ بَيْنِكُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ثُمَّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَكْفُرُ بَعْضُكُمْ بِبَعْضٍ وَيَلْعَنُ بَعْضُكُمْ بَعْضًا وَمَأْوَاكُمُ النَّارُ وَمَا لَكُمْ مِنْ نَاصِرِينَ
‘তোমরা তো আল্লাহকে ছেড়ে মূর্তিগুলোকেই (প্রভু) মেনেছ, পার্থিব জীবনে তোমাদের পারস্পরিক বন্ধুত্ব রক্ষার লক্ষ্যে। পরিশেষে কিয়ামতের দিন তোমরা একে অন্যকে অস্বীকার করবে এবং একে অন্যকে লানত করবে। তোমাদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম এবং তোমাদের কোনওরকম সাহায্যকারী লাভ হবে না।(সূরা আনকাবূত (২৯), আয়াত ২৫)
যে বন্ধুত্বের কারণে মানুষ পাপের পথে অগ্রসর হয়, কিয়ামতের দিন সেজন্য কী রকম আক্ষেপ হবে, সে সম্পর্কে এক আয়াতে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন-
وَيَوْمَ يَعَضُّ الظَّالِمُ عَلَى يَدَيْهِ يَقُولُ يَالَيْتَنِي اتَّخَذْتُ مَعَ الرَّسُولِ سَبِيلًا (27) يَاوَيْلَتَا لَيْتَنِي لَمْ أَتَّخِذْ فُلَانًا خَلِيلًا (28) لَقَدْ أَضَلَّنِي عَنِ الذِّكْرِ بَعْدَ إِذْ جَاءَنِي
‘এবং যেদিন জালেম ব্যক্তি (মনস্তাপে) নিজের হাত কামড়াবে এবং বলবে, হায়! আমি যদি রাসূলের সাথে পথ ধরতাম! হায় আমাদের দুর্ভোগ! আমি যদি অমুক ব্যক্তিকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম! আমার কাছে তো উপদেশ এসে গিয়েছিল, কিন্তু সে (ওই বন্ধু) আমাকে তা থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিল।(সূরা ফুরকান (২৫), আয়াত ২৭-২৯)
তবে যারা মুত্তাকী-পরহেযগার, তাদের মধ্যকার বন্ধুত্ব আখিরাতে আক্ষেপের কারণ হবে না। সেদিন তারা একে অন্যের শত্রুও হবে না। সেদিনও তাদের বন্ধুত্ব অটুট থাকবে। সুতরাং আয়াতের শেষে বলা হয়েছে- إِلَّا الْمُتَّقِيْنَ (কেবল মুত্তাকীগণ ছাড়া)। অর্থাৎ তারা একে অপরের শত্রু হবে না। কেননা তাদের বন্ধুত্ব স্থাপিত হয় তাকওয়া- পরহেযগারীর ভিত্তিতে। অন্তরে আল্লাহভীতি থাকায় তারা সর্বদা অসৎ বন্ধু এড়িয়ে চলে এবং এমন বন্ধু খুঁজে নেয়, যার দ্বারা দীনের পথে চলায় সহযোগিতা লাভ হবে। এককথায় তাদের বন্ধুত্ব হয় কেবলই আল্লাহ তা'আলার জন্য। তাদের বন্ধুত্ব যেহেতু আল্লাহ তা'আলার জন্যই হয়, তাই তাঁর কাছে তারা এ বন্ধুত্বের কারণে পুরস্কৃত হবে। হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত এক হাদীছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى يَقُوْلَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ : أين المتحابون بجلالي؟ اليوم أظلهم في ظلي يوم لا ظل إلا ظلي
‘আল্লাহ তা'আলা কিয়ামতের দিন বলবেন, কোথায় সেইসকল লোক, যারা আমার গৌরব-মহিমার কারণে একে অন্যকে ভালোবাসত? আজ আমি তাদেরকে আমার ছায়ায় স্থান দেব, যেদিন আমার ছায়া ছাড়া আর কোনও ছায়া নেই।(সহীহ মুসলিম: ২৫৬৬; মুসনাদে আহমাদ: ৭২৩১; সহীহ ইবনে হিব্বান: ৫৭৪; তবারানী, আল-মুজামুল কাবীর: ৬৪৪; বায়হাকী, আস্সুনানুল কুবরা: ২১০৬৭; শুআবুল ঈমান: ৮৫৭৭)

অপর এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
لَوْ أَنَّ عَبْدَيْنِ تَحَابَّا فِي اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ وَاحِدٌ فِي الْمَشْرِقِ وَآخَرُ فِي الْمَغْرِبِ لَجَمَعَ اللَّهُ بَيْنَهُمَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ. يَقُولُ: هَذَا الَّذِي كُنْتَ تُحِبُّهُ فِيَّ
‘যদি দুই বান্দা আল্লাহর জন্য একে অপরকে ভালোবাসে আর তাদের একজন থাকে দুনিয়ার পূর্ব প্রান্তে, অপরজন পশ্চিম প্রান্তে, তবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা'আলা তাদের দু'জনকে একত্র করে দেবেন এবং বলবেন, এই সেই ব্যক্তি, যাকে তুমি আমার জন্য ভালোবাসতে।(বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান : ৮৬০৬)

আয়াতটির শিক্ষা
ক. কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব করার সময় খুব সতর্ক থাকতে হবে যাতে সে বন্ধুত্ব পাপের পথে চলার কারণ না হয়।
খ. কোনও দল, সংগঠন বা সমিতির সদস্য হওয়ার দ্বারা যেহেতু অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে এবং সে বন্ধুত্ব বেশিরভাগ অন্যায় ও অবৈধ কাজকর্মে লিপ্ত হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তাই এ ক্ষেত্রেও সাবধানতা অবলম্বন জরুরি।
গ. তাকওয়া ও পরহেযগারীর ভিত্তিতে যে বন্ধুত্ব স্থাপিত হয়, তা দুনিয়া ও আখিরাতের পক্ষে কল্যাণকর।
শাসকশ্রেণির সৎ ও অসৎ সঙ্গী এবং তাদের বেলায় করণীয়
হাদীছ নং: ৬৭৭

হযরত আবূ সা‘ঈদ খুদরী রাযি. ও হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ তা'আলা যে-কোনও নবী পাঠিয়েছেন এবং যে-কোনও খলীফা নিযুক্ত করেছেন, তারই দুই সঙ্গী থেকেছে। এক সঙ্গী তাকে ভালো কাজের আদেশ করে ও তার প্রতি উৎসাহদান করে। আরেক সঙ্গী তাকে মন্দ কাজের আদেশ করে ও তাতে উৎসাহ দেয়। নিরাপদ থাকে কেবল সেই, যাকে আল্লাহ নিরাপদ রাখেন। -বুখারী
(সহীহ বুখারী: ৭১৯৮; সুনানে নাসাঈ: ৪২০২; মুসনাদে আবূ ইয়া'লা: ১২২৮; তহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার: ২১১৩; সহীহ ইবনে হিব্বান ৬১৯২; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ২০৩১৪)
82 - باب حث السلطان والقاضي وغيرهما من ولاة الأمور عَلَى اتخاذ وزير صالح وتحذيرهم من قرناء السوء والقبول منهم
قَالَ الله تَعَالَى: {الأَخِلاَّءُ يَوْمَئذٍ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ إِلاَّ المُتَّقِينَ} [الزخرف: 67].
677 - وعن أَبي سعيدٍ وأبي هريرة رضي الله عنهما: أنَّ رسولَ الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «مَا بَعَثَ اللهُ مِنْ نَبِيٍّ، وَلاَ اسْتَخْلَفَ مِنْ خَليفَةٍ إِلاَّ كَانَتْ لَهُ بِطَانَتَانِ: بِطَانَةٌ تَأمُرُهُ بالمَعْرُوفِ وتَحُضُّهُ عَلَيْهِ، وَبِطَانَةٌ تَأمُرُهُ بالشَّرِّ وَتَحُضُّهُ عَلَيْهِ، وَالمَعْصُومُ مَنْ عَصَمَ اللهُ». رواه البخاري. (1)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

بطَانةٌ এর অর্থ অন্তরঙ্গ বন্ধু; বিশেষ বন্ধু, যার সঙ্গে গোপন পরামর্শ করা হয়। রাজা-বাদশা ও শাসকদের বেলায় শব্দটি এমন ব্যক্তির জন্য ব্যবহার করা হয়, যে গোপনে বা নির্জনে শাসকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এবং গুপ্ত বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলে আর শাসকও তাকে বিশ্বাস করে এবং তার মতামত গ্রহণ করে। এ হিসেবে মন্ত্রী, ব্যক্তিগত উপদেষ্টা ও একান্ত সচিবদের জন্যও শব্দটি প্রযোজ্য হতে পারে। তাছাড়া এমন কিছু লোকও থাকে, যারা ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে জুটে যায়। তারা তাদের আশেপাশে ঘোরাফেরা করে। এক পর্যায়ে এমন আস্থাভাজন হয়ে যায়, যখন তারা তাদের সঙ্গে একাকী দেখা-সাক্ষাৎ করার সুযোগ পায়। তখন তারা যাই বলে, ক্ষমতাসীনগণ তাই বিশ্বাস করে। তারা যে পরামর্শই দেয়, তাই গ্রহণ করে। এদের জন্যও بطَانةٌ শব্দটি প্রযোজ্য।

এ হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানিয়েছেন যে, আল্লাহ তা'আলা যত নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন অথবা যে-কাউকে খলীফা বানিয়েছেন, তাদের প্রত্যেকেরই দু'জন بطَانةٌ (বিতানা) থেকেছে। অর্থাৎ এমন কেউ থেকেছে, যে একান্তভাবে তার সঙ্গে থেকে তাকে পরামর্শ দিয়েছে এবং বিশেষ বিশেষ কাজের প্রতি তাকে উৎসাহ দিয়েছে। হাদীছটিতে বলা হয়েছে, এরূপ উৎসাহদাতা সঙ্গী হয় দু'জন। দু'জন বলে নির্দিষ্ট দু'জন হওয়াই জরুরি নয়; তার বেশিও হতে পারে। বোঝানো উদ্দেশ্য নবী-রাসূল, রাজা-বাদশা ও ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে দু'শ্রেণির লোক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখে। কেন তারা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখে? তাদের কাজ কী? নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে সম্পর্কে বলেন-
بطانةٌ تَأْمُرُهُ بِالْمَعْرُوفِ وَتَحُضهُ عَلَيْهِ (এক সঙ্গী তাকে ভালো কাজের আদেশ করে ও তার প্রতি উৎসাহদান করে)। অর্থাৎ এক সঙ্গীর কাজ হল শরী'আত যে কাজ পসন্দ করে এবং যে কাজ উত্তম বলে স্বীকৃতি দেয় সে কাজের অনুপ্রেরণা দেওয়া। যেমন ন্যায়বিচার করা, শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা এবং জনগণকে শরী'আত মোতাবেক পরিচালনা করা। বলাবাহুল্য, এরা উত্তম সঙ্গী। মানুষের উচিত নিজের জন্য এরকম সঙ্গীই নির্বাচন করা এবং তাদের পরামর্শকে মূল্যায়ন করা।

وَبَطَانَةٌ تَأْمُرُهُ بِالشَّرِّ وَتَحُضهُ عَلَيْه (আরেক সঙ্গী তাকে মন্দ কাজের আদেশ করে ও তাতে উৎসাহ দেয়)। বলাবাহুল্য, এরূপ সঙ্গী নেহাৎ মন্দ। এদের ব্যাপারে সকলেরই সতর্ক থাকা উচিত। বেশিরভাগ এ শ্রেণির লোক যারা ক্ষমতায় থাকে তাদের পাশে ঘোরাঘুরি করে এবং তাদেরকে নানা কুপরামর্শ দেয়। তোষামুদে হওয়ায় ক্ষমতাসীন লোকেরা তাদের খুব পসন্দও করে। অসৎ ক্ষমতাধরেরা তাদের উস্কানিতে অধিকতর অসৎকর্মে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। অনেক সময় সরল প্রকৃতির সৎলোকও তাদের কুপরামর্শে বিপথগামী হয়ে যায়। খুব বেশি সতর্ক না থাকলে সেইসঙ্গে আল্লাহ তা'আলার পক্ষ হতে সাহায্যপ্রাপ্ত না হলে এদের থেকে নিজেকে রক্ষা করা সম্ভব হয় না। সুতরাং নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
وَالْمَعْصُوْمُ مَنْ عَصَمَ اللهُ (নিরাপদ থাকে কেবল সেই, যাকে আল্লাহ নিরাপদ রাখেন)। নবী-রাসূলগণ মা‘সূম ছিলেন। আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে সর্বপ্রকার অন্যায়-অনুচিত কাজ থেকে নিরাপদ রাখতেন। ফলে কোনও অসৎসঙ্গী তাদেরকে প্ররোচিত করতে সক্ষম হতো না। অন্যদের ক্ষেত্রে যেহেতু আল্লাহ তা'আলার তরফ থেকে বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেই, তাই তাদের আত্মরক্ষার জন্য বাড়তি সতর্কতার পাশাপাশি আল্লাহ তা'আলার শরণাপন্ন হওয়া খুব জরুরি। যে ব্যক্তি খাঁটিমনে আল্লাহর সাহায্য চায়, আল্লাহ তাকে অবশ্যই সাহায্য করেন এবং কুসঙ্গীর কুপরামর্শ থেকে তার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে দেন।

প্রকাশ থাকে যে, ভালো-মন্দ এ সঙ্গী যেমন মানুষ হতে পারে, তেমনি হতে পারে ফিরিশতা ও জিন্নও। এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানান-
مَا مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ إِلَّا وَقَدْ وُكِّلَ بِهِ قَرِينهُ مِنَ الْجِنِّ، وَقَرِينهُ مِنَ الْمَلَائِكَةِ، قَالُوْا: وَإِيَّاكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ ؟ قَالَ : وَإِيَّايَ ، وَلَكِنَّ اللهَ أَعَانَنِي عَلَيْهِ فَلَا يَأْمُرُنِي إِلَّا بِحَقِّ
তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যার সঙ্গে কোনও জিন্ন সঙ্গী ও কোনও ফিরিশতা সঙ্গী নিযুক্ত করে দেওয়া হয়নি। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার সঙ্গেও কি? তিনি বললেন, আমার সঙ্গেও। তবে আল্লাহ তা'আলা আমাকে তার (অর্থাৎ জিন্ন সঙ্গীর) বিরুদ্ধে সাহায্য করেছেন। ফলে সে আমাকে কেবল ন্যায় কাজেরই আদেশ করে থাকে। (মুসনাদে আহমাদ: ৩৬৪৮; সুনানে দারিমী ২৭৭৬; সহীহ মুসলিম: ২৮১৪; সহীহ ইবনে খুযায়মা : ৬৫৮; তহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার ১০৯; সহীহ ইবনে হিব্বান: ৬৪১৮; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ১০৫২২; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ৪২১১)

এখানে 'জিন্ন' দ্বারা দুষ্টু জিন্ন বোঝানো হয়েছে। সব দুষ্টু জিন্নকেই শয়তান বলে। শয়তানেরা ইবলীসের অনুচর। তাদের কাজ হল মানুষকে বিপথগামী করার চেষ্টা করা। কাজেই দুষ্টু জিন্ন বা শয়তান মানুষকে সর্বদা কুপরামর্শ দেয় ও মন্দ কাজের অনুপ্রেরণা যোগায়। অন্যদিকে ফিরিশতা মানুষকে সৎকর্মের অনুপ্রেরণা দেয়। যার আকল-বুদ্ধি সুস্থ ও দীনের আলোয় আলোকিত, সে তো শয়তানের অনুপ্রেরণা উপেক্ষা করে ফিরিশতার অনুপ্রেরণাই গ্রহণ করে। ফলে তার অন্তর সৎকাজের দিকে ধাবিত হয়। অপরদিকে যে ব্যক্তি মনের খেয়াল-খুশি ও ইন্দ্রিয় চাহিদার বশীভূত হয়ে নিজ আকল-বুদ্ধি নষ্ট করে ফেলেছে, সে ফিরিশতার পরিবর্তে শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে যায়। ফলে তার অন্তর অসৎকাজের দিকে ধাবিত হয়। সুতরাং মনের খেয়াল-খুশির অনুগামী হয়ে নিজের উপর শয়তানের আধিপত্য বিস্তারের সুযোগ দেওয়া কিছুতেই সুবুদ্ধির কাজ নয়। নিজেকে খেয়াল-খুশির অনুগমন থেকে রক্ষার জন্য দরকার নিরবচ্ছিন্ন সাধনা ও মুজাহাদা। এ সাধনায় লিপ্ত হলে নিশ্চিতভাবেই আল্লাহ তা'আলার সাহায্য পাওয়া যায়। তাঁর সাহায্য লাভ হলে শয়তানের সব প্ররোচনা ব্যর্থ হয়ে যায়। তখন খুব সহজেই তার থেকে আত্মরক্ষা করে সৎকর্মে লিপ্ত থাকা সম্ভব হয়।

মানুষের মধ্যে যারা কুপরামর্শ দেয়, তারাও এক রকম শয়তান। কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে-
وَكَذَلِكَ جَعَلْنَا لِكُلِّ نَبِيٍّ عَدُوًّا شَيَاطِينَ الْإِنْسِ وَالْجِنِّ يُوحِي بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ زُخْرُفَ الْقَوْلِ غُرُورًا
এবং (তারা যেমন আমার নবীর সাথে শত্রুতা করছে) এভাবেই আমি (পূর্ববর্তী) প্রত্যেক নবীর জন্য কোনও না কোনও শত্রুর জন্ম দিয়েছি অর্থাৎ মানব ও জিন্নদের মধ্যকার শয়তানদেরকে, যারা ধোঁকা দেওয়ার উদ্দেশ্যে একে অন্যকে চমৎকার চমৎকার কথা শেখায়। (সূরা আন'আম (৬), আয়াত ১১২)

কাজেই মানুষের মধ্যে যারা শয়তান কিসিমের লোক, তাদের ব্যাপারে সকল ক্ষমতাসীনের সতর্ক থাকা একান্ত কর্তব্য। তার প্রথম কর্তব্য ক্ষমতাকে আল্লাহর আমানত মনে করে আল্লাহভীতির সঙ্গে তা পরিচালনা করা। তারপর মন্ত্রীসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বশীল নিয়োগের বেলায় লক্ষ রাখা যাতে তারা সৎ ও আল্লাহভীরু লোক হয়, কিছুতেই মন্দ সঙ্গী ও মন্দ পরামর্শক না হয়। তারপর এদিকেও লক্ষ রাখা জরুরি যাতে স্বার্থান্বেষী ব্যক্তিবর্গ তাদের ঘনিষ্ঠতা লাভ করতে না পারে। যারা তাদের আশেপাশে থাকে, তাদের বেলায়ও সচেতন থাকা উচিত যাতে কোনওক্রমেই মন্দ পরামর্শ দ্বারা তাকে দিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করানোর সুযোগ না পায়। কুরআন মাজীদের সর্বশেষ সূরা- সূরা নাসও আমাদেরকে এ শিক্ষাই দেয়। তাতে মানবমনে প্ররোচনা দানকারী সকল জিন্ন ও মানুষের অনিষ্ট হতে আল্লাহ তা'আলার আশ্রয় চাওয়ার হুকুম দেওয়া হয়েছে।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. নবীগণ আল্লাহ তা'আলার প্রেরিত পুরুষ। তাঁরা মা'সূম ও নিষ্পাপ। কেউ সাধনা করে নবী হতে পারে না।

খ. জিন্ন বা শয়তান মন্দ প্ররোচনা দিয়ে নবীদের কোনও ক্ষতি করতে পারত না।

গ. জনগণের শাসনক্ষমতা মূলত আল্লাহ তা'আলারই দান। তাই এটা আল্লাহর আমানত। তাঁর হুকুম অনুযায়ীই এটা পরিচালনা করা উচিত।

ঘ. শাসনকর্তার উচিত সৎ মন্ত্রী ও সৎ অনুচরের সুপরামর্শ গ্রহণ করা।

ঙ. প্রত্যেক ক্ষমতাসীনকে মনে রাখতে হবে যে, তার অনুচর ও ঘনিষ্ঠজনদের মধ্যে এক শ্রেণির স্বার্থান্বেষী লোকও থাকে। নিজেদের মতলব অনুযায়ী পরামর্শ ও মতামত দেওয়াই তাদের কাজ। সুতরাং তাদের প্রতিটি পরামর্শ ও মতামতে সর্বোচ্চ সতর্কতা দেখাতে হবে।

চ. আল্লাহ যাকে রক্ষা করেন, কেবল সেই কাছের লোকজনের দুরভিসন্ধি থেকে নিরাপদ থাকতে পারে। তাই এ বিষয়ে আল্লাহ তা'আলার শরণাপন্ন হওয়া ও তাঁর কাছে সাহায্য চাওয়া একান্ত কর্তব্য।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন
রিয়াযুস সালিহীন - হাদীস নং ৬৭৭ | মুসলিম বাংলা