রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
ভূমিকা অধ্যায়
হাদীস নং: ৬৬৯
অধ্যায় : ৮০ আল্লাহর অবাধ্যতা হয় না এমন কাজে শাসকের আনুগত্য করার আবশ্যিকতা এবং আল্লাহর অবাধ্যতা হয় এমন কাজে আনুগত্য করার নিষিদ্ধতা
অধিকারবঞ্চিতের কর্তব্য জালেম শাসকের আনুগত্য করা ও নিজ অধিকার আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা
হাদীছ নং: ৬৬৯
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মাস‘উদ রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই আমার পর দেখা দেবে একের উপর অন্যকে প্রাধান্যদান (পক্ষপাত) এবং এমনসব বিষয়, যা তোমাদের কাছে আপত্তিকর বোধ হবে। তারা বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের মধ্যে কেউ এরকম পরিস্থিতি পেলে তাকে কী হুকুম দেন? তিনি বললেন, তোমাদের কাছে তাদের যে প্রাপ্য আছে তা আদায় করবে আর তোমাদের যা প্রাপ্য তা আল্লাহর কাছে চাবে। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী : ৩৬০৩; সহীহ মুসলিম: ১৮৪৩; মুসনাদে আহমাদ: ৪১২৬; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা : ৩৭২৬৫; মুসানাদুল বাযযার: ১৭৬৮; মুসনাদে আবু ইয়া'লা মাওসিলী : ৫১৫৬)
হাদীছ নং: ৬৬৯
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মাস‘উদ রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই আমার পর দেখা দেবে একের উপর অন্যকে প্রাধান্যদান (পক্ষপাত) এবং এমনসব বিষয়, যা তোমাদের কাছে আপত্তিকর বোধ হবে। তারা বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের মধ্যে কেউ এরকম পরিস্থিতি পেলে তাকে কী হুকুম দেন? তিনি বললেন, তোমাদের কাছে তাদের যে প্রাপ্য আছে তা আদায় করবে আর তোমাদের যা প্রাপ্য তা আল্লাহর কাছে চাবে। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী : ৩৬০৩; সহীহ মুসলিম: ১৮৪৩; মুসনাদে আহমাদ: ৪১২৬; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা : ৩৭২৬৫; মুসানাদুল বাযযার: ১৭৬৮; মুসনাদে আবু ইয়া'লা মাওসিলী : ৫১৫৬)
80 - باب وجوب طاعة ولاة الأمر في غير معصية وتحريم طاعتهم في المعصية
669 - وعن عبد الله بن مسعود - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم: «إنَّهَا سَتَكُونُ بَعْدِي أثَرَةٌ (1) وَأُمُورٌ تُنْكِرُونَهَا!» قالوا: يَا رسول الله، كَيْفَ تَأمُرُ مَنْ أدْرَكَ مِنَّا ذَلِكَ؟ قَالَ: «تُؤَدُّونَ الحَقَّ الَّذِي عَلَيْكُمْ، وَتَسْأَلُونَ اللهَ الَّذِي لَكُمْ». متفقٌ عَلَيْهِ. (2)
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছটিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরবর্তীকালীন শাসকদের কার্যকলাপ সম্পর্কে একটা ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, যা সত্য প্রমাণিত হয়েছে। তিনি বলেন-
إِنَّهَا سَتَكُوْنُ بَعْدِي أَثَرَةٌ নিশ্চয়ই আমার পর দেখা দেবে একের উপর অন্যকে প্রাধান্যদান (পক্ষপাত)'। অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় কোনও সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে শাসকবর্গ প্রকৃত হকদারের উপর অন্যকে প্রাধান্য দেবে। হয়তো যোগ্য ব্যক্তিকে উপেক্ষা করে অযোগ্য ব্যক্তিকে রাষ্ট্রীয় কোনও পদে বসাবে। গরীবের প্রাপ্য অর্থ-সম্পদ তাদেরকে না দিয়ে নিজ পসন্দের লোকদেরকে দেবে। এমনিভাবে যে-কোনও সুযোগ-সুবিধা বণ্টনের বেলায় কে হকদার এবং কে হকদার নয় তা বিবেচনা করবে না। বিবেচনা করবে কেবল নিজ পক্ষের বা নিজ দলের লোক হওয়া না হওয়ার বিষয়টি।
وَأَمُوْرٌ تُنْكِرُونَهَا (এবং এমনসব বিষয়, যা তোমাদের কাছে আপত্তিকর বোধ হবে)। অর্থাৎ নানারকম শরী'আতবিরোধী বিষয় প্রকাশ পাবে। মানুষ নিত্যনতুন বিদ'আতের সৃষ্টি করবে। দীনের নামে দীনবিরোধী কার্যকলাপ করবে। তখন দীনের প্রকৃত জ্ঞান যাদের থাকবে, তারা সেসব কাজে আপত্তি জানাবে। তারা তার প্রতিবাদ করবে। বোঝা গেল দীনের সত্যিকারের জ্ঞান চর্চাকারী মানুষ সবসময়ই কিছু না কিছু থাকবে। সেইসঙ্গে এটাও বোঝা গেল যে, দীনের প্রকৃত জ্ঞানীদের কর্তব্য শরী'আতবিরোধী কার্যকলাপের প্রতিবাদ করা এবং দীনের নামে বেদীনী কর্মকাণ্ড দেখতে পেলে মানুষকে সে সম্পর্কে সতর্ক করে দেওয়া যে, তা আদৌ দীন নয় এবং তা পালন করা কিছুতেই জায়েয নয়।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন এ ভবিষ্যদ্বাণী করলেন, তখন সাহাবায়ে কেরাম জানতে চাইলেন যে, এরকম কোনও সময় বা পরিস্থিতির সম্মুখীন তাঁরা হলে তখন তাঁরা কী করবেন? তখন তাঁদের কর্মপন্থা কী হবে? নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন-
تُؤَدُّوْنَ الْحَقَّ الَّذِي عَلَيْكُمْ (তোমাদের কাছে তাদের যে প্রাপ্য আছে তা আদায় করবে)। অর্থাৎ তোমরা তাদের আনুগত্য করো এবং তারা যা হুকুম করে তা মেনে চলো। তারা তোমাদের অধিকার আদায় না করার কারণে তোমাদের তাদের অধিকার আদায় থেকে নিষ্কৃতি পাবে না। তারা তা আদায় না করার কারণে অবশ্যই গুনাহগার হবে। সেজন্য আখিরাতে তাদেরকে জবাবদিহি করতে হবে। তারা তোমাদের সঙ্গে কেমন আচরণ করে, আল্লাহ তা'আলাই তাদের থেকে সে হিসাব গ্রহণ করবেন।
وَتَسْأَلُوْنَ اللَّهَ الَّذِي لَكُمْ (আর তোমাদের যা প্রাপ্য তা আল্লাহর কাছে চাবে)। অর্থাৎ তোমাদের অধিকার আদায়ের জন্য শাসকের সঙ্গে সংগ্রামে লিপ্ত হবে না এবং তাকে উৎখাতেরও চেষ্টা করবে না। বরং তোমরা আল্লাহ তা'আলার কাছে দু'আ করবে যেন তিনি তোমাদের যাবতীয় প্রয়োজন সমাধার ব্যবস্থা করে দেন এবং তোমাদের জন্য যা-কিছু কল্যাণকর তা তোমাদের প্রদান করেন। সে ক্ষেত্রে এমনও হতে পারে যে, আল্লাহ তা'আলা শাসকের চরিত্র বদলে দেবেন। তিনি তাকে সুমতি দান করবেন। ফলে জুলুম-নিপীড়ন পরিত্যাগ করে ইনসাফের আচরণ করবে এবং প্রত্যেককে তার অধিকার বুঝিয়ে দিতে সচেষ্ট হবে। আবার এমনও হতে পারে যে, আল্লাহ তা'আলা তার বদলে কোনও ন্যায়পরায়ণ শাসককে ক্ষমতায় আনবেন। ফলে বিনা গোলযোগ ও বিনা রক্তপাতেই তোমাদের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়ে যাবে। আর যদি দুনিয়ায় তা পূরণ নাও হয়, তবে আল্লাহ তা'আলার কাছে চাওয়াটা তো একটা ইবাদত। এ ইবাদতের সুফল আখিরাতে পাবেই।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. মু‘জিযা (অলৌকিক বিষয়) সত্য। নবীদের ভবিষ্যদ্বাণীও মু‘জিযা। তা সত্য হয়ে থাকে। এতে বিশ্বাস রাখা জরুরি।
খ. শাসক জালেম হলেও তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা ও তাকে উৎখাতের সংগ্রামে লিপ্ত হওয়া সমীচীন নয়।
গ. জালেম শাসক কাউকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করলে তার কর্তব্য আল্লাহ তা'আলার কাছেই তা প্রার্থনা করা।
إِنَّهَا سَتَكُوْنُ بَعْدِي أَثَرَةٌ নিশ্চয়ই আমার পর দেখা দেবে একের উপর অন্যকে প্রাধান্যদান (পক্ষপাত)'। অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় কোনও সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে শাসকবর্গ প্রকৃত হকদারের উপর অন্যকে প্রাধান্য দেবে। হয়তো যোগ্য ব্যক্তিকে উপেক্ষা করে অযোগ্য ব্যক্তিকে রাষ্ট্রীয় কোনও পদে বসাবে। গরীবের প্রাপ্য অর্থ-সম্পদ তাদেরকে না দিয়ে নিজ পসন্দের লোকদেরকে দেবে। এমনিভাবে যে-কোনও সুযোগ-সুবিধা বণ্টনের বেলায় কে হকদার এবং কে হকদার নয় তা বিবেচনা করবে না। বিবেচনা করবে কেবল নিজ পক্ষের বা নিজ দলের লোক হওয়া না হওয়ার বিষয়টি।
وَأَمُوْرٌ تُنْكِرُونَهَا (এবং এমনসব বিষয়, যা তোমাদের কাছে আপত্তিকর বোধ হবে)। অর্থাৎ নানারকম শরী'আতবিরোধী বিষয় প্রকাশ পাবে। মানুষ নিত্যনতুন বিদ'আতের সৃষ্টি করবে। দীনের নামে দীনবিরোধী কার্যকলাপ করবে। তখন দীনের প্রকৃত জ্ঞান যাদের থাকবে, তারা সেসব কাজে আপত্তি জানাবে। তারা তার প্রতিবাদ করবে। বোঝা গেল দীনের সত্যিকারের জ্ঞান চর্চাকারী মানুষ সবসময়ই কিছু না কিছু থাকবে। সেইসঙ্গে এটাও বোঝা গেল যে, দীনের প্রকৃত জ্ঞানীদের কর্তব্য শরী'আতবিরোধী কার্যকলাপের প্রতিবাদ করা এবং দীনের নামে বেদীনী কর্মকাণ্ড দেখতে পেলে মানুষকে সে সম্পর্কে সতর্ক করে দেওয়া যে, তা আদৌ দীন নয় এবং তা পালন করা কিছুতেই জায়েয নয়।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন এ ভবিষ্যদ্বাণী করলেন, তখন সাহাবায়ে কেরাম জানতে চাইলেন যে, এরকম কোনও সময় বা পরিস্থিতির সম্মুখীন তাঁরা হলে তখন তাঁরা কী করবেন? তখন তাঁদের কর্মপন্থা কী হবে? নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন-
تُؤَدُّوْنَ الْحَقَّ الَّذِي عَلَيْكُمْ (তোমাদের কাছে তাদের যে প্রাপ্য আছে তা আদায় করবে)। অর্থাৎ তোমরা তাদের আনুগত্য করো এবং তারা যা হুকুম করে তা মেনে চলো। তারা তোমাদের অধিকার আদায় না করার কারণে তোমাদের তাদের অধিকার আদায় থেকে নিষ্কৃতি পাবে না। তারা তা আদায় না করার কারণে অবশ্যই গুনাহগার হবে। সেজন্য আখিরাতে তাদেরকে জবাবদিহি করতে হবে। তারা তোমাদের সঙ্গে কেমন আচরণ করে, আল্লাহ তা'আলাই তাদের থেকে সে হিসাব গ্রহণ করবেন।
وَتَسْأَلُوْنَ اللَّهَ الَّذِي لَكُمْ (আর তোমাদের যা প্রাপ্য তা আল্লাহর কাছে চাবে)। অর্থাৎ তোমাদের অধিকার আদায়ের জন্য শাসকের সঙ্গে সংগ্রামে লিপ্ত হবে না এবং তাকে উৎখাতেরও চেষ্টা করবে না। বরং তোমরা আল্লাহ তা'আলার কাছে দু'আ করবে যেন তিনি তোমাদের যাবতীয় প্রয়োজন সমাধার ব্যবস্থা করে দেন এবং তোমাদের জন্য যা-কিছু কল্যাণকর তা তোমাদের প্রদান করেন। সে ক্ষেত্রে এমনও হতে পারে যে, আল্লাহ তা'আলা শাসকের চরিত্র বদলে দেবেন। তিনি তাকে সুমতি দান করবেন। ফলে জুলুম-নিপীড়ন পরিত্যাগ করে ইনসাফের আচরণ করবে এবং প্রত্যেককে তার অধিকার বুঝিয়ে দিতে সচেষ্ট হবে। আবার এমনও হতে পারে যে, আল্লাহ তা'আলা তার বদলে কোনও ন্যায়পরায়ণ শাসককে ক্ষমতায় আনবেন। ফলে বিনা গোলযোগ ও বিনা রক্তপাতেই তোমাদের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়ে যাবে। আর যদি দুনিয়ায় তা পূরণ নাও হয়, তবে আল্লাহ তা'আলার কাছে চাওয়াটা তো একটা ইবাদত। এ ইবাদতের সুফল আখিরাতে পাবেই।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. মু‘জিযা (অলৌকিক বিষয়) সত্য। নবীদের ভবিষ্যদ্বাণীও মু‘জিযা। তা সত্য হয়ে থাকে। এতে বিশ্বাস রাখা জরুরি।
খ. শাসক জালেম হলেও তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা ও তাকে উৎখাতের সংগ্রামে লিপ্ত হওয়া সমীচীন নয়।
গ. জালেম শাসক কাউকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করলে তার কর্তব্য আল্লাহ তা'আলার কাছেই তা প্রার্থনা করা।
