রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
ভূমিকা অধ্যায়
হাদীস নং: ৬৬০
অধ্যায়: ৭৯ ন্যায়পরায়ণ শাসক
উৎকৃষ্ট ও নিকৃষ্ট শাসকের পরিচয় এবং জালেম শাসকের ক্ষেত্রে জনগণের করণীয়
হাদীছ নং: ৬৬০
হযরত আওফ ইবন মালিক রাযি. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তোমাদের শ্রেষ্ঠ নেতৃবর্গ তারা, যাদেরকে তোমরা ভালোবাস এবং তারাও তোমাদের ভালোবাসে, তারা তোমাদের জন্য নেক দু'আ করে এবং তাদের জন্যও তোমরা নেক দু'আ কর। আর তোমাদের নিকৃষ্ট নেতৃবর্গ তারা, যাদেরকে তোমরা ঘৃণা কর এবং তারাও তোমাদের ঘৃণা করে, যাদের প্রতি তোমরা লা'নত কর এবং তারাও তোমাদের প্রতি লা'নত করে। আমরা বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা কি তরবারি দ্বারা তাদের বিরুদ্ধাচরণ করব না? তিনি বললেন, না, যতক্ষণ তারা তোমাদের মধ্যে নামায কায়েম করে। তোমরা যখন তোমাদের শাসকবর্গদের পক্ষ থেকে এমন কিছু দেখবে, যা তোমরা অপসন্দ কর, তখন তোমরা তাদের কাজ অপসন্দ করবে, কিন্তু আনুগত্য থেকে হাত সরিয়ে নেবে না। -মুসলিম
(মুসলিম : ১৮৫৫; মুসনাদুল বাযযার: ২৭৫২; সুনানে দারিমী: ২৮৩৫; মুসনাদে ইসহাক ইবন রাহুয়াহ: ১৮৯৫; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ১১৭; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ১৬৬২৩)
হাদীছ নং: ৬৬০
হযরত আওফ ইবন মালিক রাযি. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তোমাদের শ্রেষ্ঠ নেতৃবর্গ তারা, যাদেরকে তোমরা ভালোবাস এবং তারাও তোমাদের ভালোবাসে, তারা তোমাদের জন্য নেক দু'আ করে এবং তাদের জন্যও তোমরা নেক দু'আ কর। আর তোমাদের নিকৃষ্ট নেতৃবর্গ তারা, যাদেরকে তোমরা ঘৃণা কর এবং তারাও তোমাদের ঘৃণা করে, যাদের প্রতি তোমরা লা'নত কর এবং তারাও তোমাদের প্রতি লা'নত করে। আমরা বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা কি তরবারি দ্বারা তাদের বিরুদ্ধাচরণ করব না? তিনি বললেন, না, যতক্ষণ তারা তোমাদের মধ্যে নামায কায়েম করে। তোমরা যখন তোমাদের শাসকবর্গদের পক্ষ থেকে এমন কিছু দেখবে, যা তোমরা অপসন্দ কর, তখন তোমরা তাদের কাজ অপসন্দ করবে, কিন্তু আনুগত্য থেকে হাত সরিয়ে নেবে না। -মুসলিম
(মুসলিম : ১৮৫৫; মুসনাদুল বাযযার: ২৭৫২; সুনানে দারিমী: ২৮৩৫; মুসনাদে ইসহাক ইবন রাহুয়াহ: ১৮৯৫; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ১১৭; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ১৬৬২৩)
79 - باب الوالي العادل
660 - وعن عوفِ بن مَالِكٍ - رضي الله عنه - قَالَ: سَمِعْتُ رسولَ الله - صلى الله عليه وسلم - يقول: «خِيَارُ أئِمَّتِكُمُ الَّذِينَ تُحِبُّونَهُمْ وَيُحِبُّونَكُمْ، وَتُصَلُّونَ عَلَيْهِمْ وَيُصَلُّونَ عَلَيْكُمْ. وشِرَارُ أئِمَّتِكُم [ص:214] الَّذِينَ تُبْغِضُونَهُمْ وَيُبْغِضُونَكُمْ، وَتَلعَنُونَهُمْ وَيَلْعَنُونَكُمْ!»، قَالَ: قُلْنَا: يَا رسول اللهِ، أفَلاَ نُنَابِذُهُم؟ قَالَ: «لاَ، مَا أقَامُوا فِيْكُمُ الصَّلاَةَ. لاَ، مَا أقَامُوا فِيكُمُ الصَّلاَةَ». رواه مسلم. (1)
قَوْله: «تصلّون عَلَيْهِمْ»: تدعون لَهُمْ.
قَوْله: «تصلّون عَلَيْهِمْ»: تدعون لَهُمْ.
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছটিতে কোন শাসক উৎকৃষ্ট এবং কোন শাসক নিকৃষ্ট তার পরিচয় দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে নিকৃষ্ট শাসকের ক্ষেত্রে জনগণের করণীয় কী, সেই নির্দেশনাও দিয়ে দেওয়া হয়েছে। উৎকষ্ট শাসকদের পরিচয় দিতে গিয়ে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু'টি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেছেন। প্রথমে বলেছেন-
تُحِبُّوْنَهُمْ وَيُحِبُّوْنَكُم (যাদেরকে তোমরা ভালোবাস এবং তারাও তোমাদের ভালোবাসে)। যারা সুচারুরূপে রাষ্ট্র পরিচালনা করে এবং জনগণের প্রতি নম্র-কোমল আচরণ করে, এককথায় যেসকল শাসক ন্যায়পরায়ণ, তারা উৎকৃষ্ট শাসক। তারা ন্যায়পরায়ণ বলেই তোমাদের প্রতি ভালোবাসার আচরণ করে আর তাদের ন্যায়পরায়ণতার কারণে তোমরাও তাদের ভালোবাস। বস্তুত উভয়পক্ষ থেকেই ভালোবাসার প্রকৃত কারণ শাসকবর্গের ন্যায়পরায়ণতা। বোঝা গেল, শাসকের কর্তব্য ন্যায়-ইনসাফের সঙ্গে শাসনকার্য পরিচালনা করা আর জনগণের কর্তব্য এরূপ শাসককে ভালোবাসা। সে ভালোবাসার একটা দাবি ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় তাদের সহযোগিতা করা।
দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য বলা হয়েছে- وَيُصَلُّوْنَ عَلَيْكُمْ وَتُصَلُّوْنَ عَلَيْهِمْ (তারা তোমাদের জন্য দু'আ করে এবং তাদের জন্যও তোমরা দু'আ কর)। অর্থাৎ তারা শাসনকার্যে ইনসাফের পরিচয় দিয়েই ক্ষান্ত হয় না; বরং আল্লাহ তা'আলার কাছে তোমাদের কল্যাণের জন্য দু'আও করে। সেইসঙ্গে তাদের ইনসাফভিত্তিক দেশ পরিচালনায় তোমরা যে উপকৃত হও, সে কারণে তোমরাও তাদের কল্যাণের জন্য আল্লাহ তা'আলার কাছে দু'আ করে থাক। বোঝা গেল শাসকের জন্য কেবল ইনসাফসম্মত শাসন করাই যথেষ্ট নয়। সেইসঙ্গে আল্লাহ তা'আলার অভিমুখী থাকা এবং মানুষের কল্যাণের জন্য আল্লাহ তা'আলার কাছে দু'আও করা উচিত। জনগণেরও উচিত শাসক ন্যায়পরায়ণ হলে যে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত থাকে, সেজন্য কৃতজ্ঞতার পরিচয় দেওয়া। সে কৃতজ্ঞতার এক দাবি শাসক যাতে নির্বিঘ্নে শাসনকার্য পরিচালনা করতে পারে এবং দোজাহানের ভরপুল কল্যাণ লাভ করতে পারে সেজন্য আল্লাহর কাছে দু'আ করা।
অথবা এর অর্থ হবে- তোমরা ও তারা যতদিন জীবিত থাক, ততোদিন একে অন্যকে ভালোবাস। তারপর যখন তাদের মৃত্যু হয়, তখন তোমরা তাদের পরকালীন সাফল্যের জন্য দু'আ কর। কিংবা তোমাদের মৃত্যু হয়ে গেলে তারা তোমাদের নাজাতের জন্য দু'আ করে।
তারপর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিকৃষ্ট শাসকবর্গের পরিচয় দিতে গিয়েও দু'টি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেছেন। প্রথমে বলেছেন-
تُبْغِضُوْنَهُمْ وَيُبْغِضُوْنَكُمْ (যাদেরকে তোমরা ঘৃণা কর এবং তারাও তোমাদের ঘৃণা করে)। অর্থাৎ তারা রাষ্ট্রপরিচালনায় ইনসাফ রক্ষা করে না; বরং স্বেচ্ছাচারিতার পরিচয় দেয়। জনগণের উপর তাদের কোনও মমত্ববোধের পরিচয় পাওয়া যায় না। বরং তাদের উপর কঠোর-কঠিন আইন চাপিয়ে দেয় ও জুলুম-নিপীড়ন চালায়। ফলে জনগন তাদের ভালোবাসতে পারে না। আর তাদের অন্তরে তো জনগণের প্রতি ভালোবাস নেই-ই, যদ্দরুন সহজে তাদের উপর অত্যাচার চালাতে পারে।
তাদের দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হল- وَتَلْعَنُوْنَهُمْ وَيَلْعَنُونَكُمْ (যাদের প্রতি তোমরা লা'নত কর এবং তারাও তোমাদের প্রতি লা'নত করে)। অর্থাৎ তাদের জুলুম-নিপীড়নে অতিষ্ঠ হয়ে তোমরা তাদের থেকে মুক্তি চাও আর সেজন্যই তাদের প্রতি লা'নত কর, যেন আল্লাহ তাদের ধ্বংস করে তোমাদেরকে তাদের পরিবর্তে ন্যায়পরায়ণ শাসক প্রদান করেন। আর তারাও লা'নত করে তাদের প্রতি তোমাদের ভালোবাসা দেখতে না পাওয়ার কারণে। বলাবাহুল্য, সেটা তাদেরই কর্মফল। কিন্তু জালেম কখনও নিজ কর্ম বিচার করে না। সে ভালোবাসা না পাওয়াটাই দেখে। কী কারণে পাচ্ছে না তা চিন্তা করে না। ফলে ভালোবাসা না পাওয়ার দরুন একতরফা জনগণকে দোষারোপ করে।
যাহোক, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ হাদীছে উৎকৃষ্ট ও নিকৃষ্ট শাসকদের পরিচয় দিয়ে দিলেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কখনও যদি নিকৃষ্ট শাসক ক্ষমতায় থাকে, তখন জনগণের করণীয় কী? বাহ্যত তো এটাই মনে হয় যে, তারা এরূপ শাসকদের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করবে না। সে হিসেবে সাহাবায়ে কেরাম বললেন-
يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَفَلَا نُنابِذُهُمْ بِالسَّيْفِ؟ (ইয়া রাসূল্লাহ! আমরা কি তরবারি দ্বারা তাদের বিরুদ্ধাচরণ করব না)? অর্থাৎ আমরা তাদের আনুগত্য পরিত্যাগ করে তাদেরকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতের চেষ্টা করব না এবং সেজন্য যদি প্রয়োজন হয় তবে তাদের বিরুদ্ধে সসস্ত্র যুদ্ধ করব না? নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন-
لَا، مَا أَقَامُوا فِيْكُمُ الصَّلَاةَ (না, যতক্ষণ তারা তোমাদের মধ্যে নামায কায়েম করে)। অর্থাৎ তারা যতদিন তোমাদের মধ্যে নামায কায়েম করবে, ততোদিন তোমরা তাদের আনুগত্য করে যাবে। তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবে না। নামায কায়েম করার দ্বারা মূলত ইসলামের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা বোঝানো হয়েছে। অপর এক হাদীছ দ্বারা এটা প্রমাণিত হয়। হযরত উবাদা ইবনুস সামিত রাযি. বর্ণনা করেন-
دَعَانَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَبَايَعْنَاهُ ، فَكَانَ فِيْمَا أَخَذَ عَلَيْنَا: أَنْ بَايَعَنَا عَلَى السَّمْعِ وَالطَّاعَةِ فِي مَنْشَطِنَا وَمَكْرَهِنَا، وَعُسْرِنَا وَيُسْرِنَا، وَأَثَرَةٍ عَلَيْنَا ، وَأَنْ لَا ننَازِعَ الْأَمْرَ أَهْلَهُ ، قَالَ: إِلَّا أَنْ تَرَوْا كُفْرًا بَوَاحًا عِنْدَكُمْ مِنَ اللَّهِ فِيْهِ بُرْهَانٌ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে ডাকলেন। আমরা তাঁর নিকট বায়'আত গ্রহণ করলাম। তিনি সে বায়'আতে আমাদের থেকে যে প্রতিশ্রুতি নেন তাতে আমরা এই মর্মে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম যে, আমরা আনুগত্য রক্ষা করব আগ্রহের অবস্থায়, অনাগ্রহের অবস্থায়, সংকটে ও স্বাচ্ছন্দ্যে এবং আমাদের উপর অন্যদের প্রাধান্য দেওয়ার অবস্থায়ও। আমরা ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে ক্ষমতা নিয়ে কাড়াকাড়ি করব না। তিনি (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, তবে যদি এমন প্রকাশ্য কুফর দেখ, যে সম্পর্কে তোমাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রমাণ আছে। ( সহীহ বুখারী: ৭০৫৫; সহীহ মুসলিম: ১৭০৯; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা : ১৬৫৫৩; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ২৬৩৯; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা : ৩৭২৫৮)
অর্থাৎ শাসককে যদি এমন কুফরীকর্মে লিপ্ত দেখ, যা কুফর হওয়ার বিষয়টি পরিষ্কার এবং তা কুফর হওয়া সম্পর্কে সুস্পষ্ট দলীল-প্রমাণ আছে, কেবল তখনই তা পরিষ্কার আনুগত্য প্রত্যাহার করতে পারবে।
এ হাদীছ দ্বারা বোঝা যায়, শাসক যদি জালেমও হয়, তবুও তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা যাবে না। আমাদের ফকীহগণ এ বিষয়ে একমত যে, শাসক জালেম হলেও তার আনুগত্য করে যাওয়া অপরিহার্য এবং তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা অপেক্ষা আনুগত্য করাই শ্রেয়। কেননা বিদ্রোহ করার দ্বারা ব্যাপক রক্তপাতের আশঙ্কা তো থাকেই, সেইসঙ্গে পরিবেশ-পরিস্থিতি অধিকতর মন্দ হওয়াও অসম্ভব নয়। এমনও হতে পারে যে, তারচে' আরও বড় জালেম ও স্বৈরাচারী শাসক মসনদ দখল করে বসবে।
তবে হাঁ, শাসক যদি জালেম হয়, প্রকাশ্য পাপাচারে লিপ্ত থাকে, মানুষকে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে এবং শরী'আতবিরোধী কার্যকলাপের বিস্তারে ভূমিকা রাখে, তবে তার ক্ষমতায় থাকার কোনও অধিকার থাকে না। এ অবস্থায় তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার মতো শক্তি যদি জনগণের থাকে এবং তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার দ্বারা আরও বড় বিপর্যয়ের আশঙ্কাও না থাকে, সে ক্ষেত্রে সকলে একতাবদ্ধ হয়ে তাকে সরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। যদি তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার মতো প্রয়োজনীয় শক্তি-সামর্থ্য না থাকে আর এ অবস্থায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে গেলে ব্যাপক রক্তপাত ও বিপর্যয়ের আশঙ্কা থাকে, তবে সে ক্ষেত্রে ধৈর্যধারণ করাই শ্রেয়। যেমন হযরত হুযায়ফা রাযি. বর্ণিত এক হাদীছে আছে-
يَكُوْنُ بَعْدِي أَئِمَّةٌ لَا يَهْتَدُونَ بِهُدَايَ ، وَلَا يَسْتَنُّوْنَ بِسُنَّتِي، وَسَيَقُوْمُ فِيهِمْ رِجَالٌ قُلُوْبُهُمْ قُلُوْبُ الشَّيَاطِينِ فِي جُثْمَانِ إِنْسِ، قَالَ: قُلْتُ: كَيْفَ أَصْنَعُ يَا رَسُولَ اللَّهِ ، إِنْ أَدْرَكْتُ ذَلِكَ؟ قَالَ: تَسْمَعُ وَتُطِيعُ لِلْأَمِيرِ ، وَإِنْ ضُرِبَ ظَهْرُكَ، وَأُخِذَ مَالُكَ فَاسْمَعْ وَأَطِعْ
আমার পরে এমন এমন শাসক হবে, যারা আমার হিদায়াতমতো চলবে না এবং আমার আদর্শ অনুসরণ করবে না। তাদের মধ্যে এমনসব লোক তৎপর থাকবে, যাদে অন্তর হবে শয়তানের অন্তর, শরীর হবে মানুষের। হযরত হুযায়ফা রাখি, বলেন, আমি আবললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! সেরকম সময় পেলে আমি কী করব? তিনি বললেন, ইম শাসকের আনুগত্য করবে, যদিও তোমার পিঠে চাবুক মারা হয় এবং তোমার সম্পদ কেড়ে নেওয়া হয়। সর্বাবস্থায় আনুগত্য প্রদর্শন করবে। (সহীহ মুসলিম: ১৮৪৭; তাবারানী, আল মু'জামুল আওসাত: ২৮৯৩; হাকিম, আল মুস্তাদরাক: ৮৫৩৩; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ১৬৬১৭)
আলোচ্য হাদীছটিতেও বলা হয়েছে- وإذا رَأَيْتُمْ مِن وُلاتِكُمْ شيئًا تَكْرَهُونَهُ، فاكْرَهُوا عَمَلَهُ، ولا تَنْزِعُوا يَدًا مِن طاعَة (তোমরা যখন তোমাদের শাসকবর্গদের পক্ষ থেকে এমন কিছু দেখবে, যা তোমরা অপসন্দ কর, তখন তোমরা তাদের কাজ অপসন্দ করবে, কিন্তু আনুগত্য থেকে হাত সরিয়ে নেবে না)। অর্থাৎ তাদের শরী'আতবিরোধী কর্মকাণ্ডে তোমরা যদি বাধা দেওয়ার ক্ষমতা না রাখ, তবে অন্ততপক্ষে অন্তরে সেসব কাজের প্রতি ঘৃণা পোষণ করবে। কিন্তু আনুগত্য পরিত্যাগ করবে না। তারা জালেম ও ফাসেক হলেও তাদের প্রতি আনুগত্য বজায় রাখা তোমাদের কর্তব্য।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. শাসকদের কর্তব্য ইনসাফের সঙ্গে দেশ শাসন করা, জনগণকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসা এবং তাদের জন্য দু'আ করা।
খ. জনগণের উচিত ন্যায়পরায়ণ শাসককে ভালোবাসা এবং তার জন্য আল্লাহ তা'আলার কাছে দু'আ করা।
গ. যে শাসক ইনসাফ করে না, সে জনগণকে ঘৃণার চোখে দেখে ও তাদেরকে অভিশাপ দেয়।
ঘ. জালেম শাসক জনগণের ঘৃণা কুড়ায় ও তাদের লা'নতের পাত্র হয়।
ঙ. শাসক যতক্ষণ পর্যন্ত সুস্পষ্ট কুফরীতে লিপ্ত না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের প্রতি আনুগত্য বজায় রাখা জরুরি।
চ. শাসকের অবৈধ কাজকে সমর্থন করা যাবে না; বরং তার প্রতি মনে মনে ঘৃণা পোষণ করতে হবে।
ছ. অধিকতর মন্দ পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা থাকলে জালেম শাসককে অপসারণের চেষ্টা না করে ধৈর্যধারণ করাই উত্তম।
تُحِبُّوْنَهُمْ وَيُحِبُّوْنَكُم (যাদেরকে তোমরা ভালোবাস এবং তারাও তোমাদের ভালোবাসে)। যারা সুচারুরূপে রাষ্ট্র পরিচালনা করে এবং জনগণের প্রতি নম্র-কোমল আচরণ করে, এককথায় যেসকল শাসক ন্যায়পরায়ণ, তারা উৎকৃষ্ট শাসক। তারা ন্যায়পরায়ণ বলেই তোমাদের প্রতি ভালোবাসার আচরণ করে আর তাদের ন্যায়পরায়ণতার কারণে তোমরাও তাদের ভালোবাস। বস্তুত উভয়পক্ষ থেকেই ভালোবাসার প্রকৃত কারণ শাসকবর্গের ন্যায়পরায়ণতা। বোঝা গেল, শাসকের কর্তব্য ন্যায়-ইনসাফের সঙ্গে শাসনকার্য পরিচালনা করা আর জনগণের কর্তব্য এরূপ শাসককে ভালোবাসা। সে ভালোবাসার একটা দাবি ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় তাদের সহযোগিতা করা।
দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য বলা হয়েছে- وَيُصَلُّوْنَ عَلَيْكُمْ وَتُصَلُّوْنَ عَلَيْهِمْ (তারা তোমাদের জন্য দু'আ করে এবং তাদের জন্যও তোমরা দু'আ কর)। অর্থাৎ তারা শাসনকার্যে ইনসাফের পরিচয় দিয়েই ক্ষান্ত হয় না; বরং আল্লাহ তা'আলার কাছে তোমাদের কল্যাণের জন্য দু'আও করে। সেইসঙ্গে তাদের ইনসাফভিত্তিক দেশ পরিচালনায় তোমরা যে উপকৃত হও, সে কারণে তোমরাও তাদের কল্যাণের জন্য আল্লাহ তা'আলার কাছে দু'আ করে থাক। বোঝা গেল শাসকের জন্য কেবল ইনসাফসম্মত শাসন করাই যথেষ্ট নয়। সেইসঙ্গে আল্লাহ তা'আলার অভিমুখী থাকা এবং মানুষের কল্যাণের জন্য আল্লাহ তা'আলার কাছে দু'আও করা উচিত। জনগণেরও উচিত শাসক ন্যায়পরায়ণ হলে যে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত থাকে, সেজন্য কৃতজ্ঞতার পরিচয় দেওয়া। সে কৃতজ্ঞতার এক দাবি শাসক যাতে নির্বিঘ্নে শাসনকার্য পরিচালনা করতে পারে এবং দোজাহানের ভরপুল কল্যাণ লাভ করতে পারে সেজন্য আল্লাহর কাছে দু'আ করা।
অথবা এর অর্থ হবে- তোমরা ও তারা যতদিন জীবিত থাক, ততোদিন একে অন্যকে ভালোবাস। তারপর যখন তাদের মৃত্যু হয়, তখন তোমরা তাদের পরকালীন সাফল্যের জন্য দু'আ কর। কিংবা তোমাদের মৃত্যু হয়ে গেলে তারা তোমাদের নাজাতের জন্য দু'আ করে।
তারপর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিকৃষ্ট শাসকবর্গের পরিচয় দিতে গিয়েও দু'টি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেছেন। প্রথমে বলেছেন-
تُبْغِضُوْنَهُمْ وَيُبْغِضُوْنَكُمْ (যাদেরকে তোমরা ঘৃণা কর এবং তারাও তোমাদের ঘৃণা করে)। অর্থাৎ তারা রাষ্ট্রপরিচালনায় ইনসাফ রক্ষা করে না; বরং স্বেচ্ছাচারিতার পরিচয় দেয়। জনগণের উপর তাদের কোনও মমত্ববোধের পরিচয় পাওয়া যায় না। বরং তাদের উপর কঠোর-কঠিন আইন চাপিয়ে দেয় ও জুলুম-নিপীড়ন চালায়। ফলে জনগন তাদের ভালোবাসতে পারে না। আর তাদের অন্তরে তো জনগণের প্রতি ভালোবাস নেই-ই, যদ্দরুন সহজে তাদের উপর অত্যাচার চালাতে পারে।
তাদের দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হল- وَتَلْعَنُوْنَهُمْ وَيَلْعَنُونَكُمْ (যাদের প্রতি তোমরা লা'নত কর এবং তারাও তোমাদের প্রতি লা'নত করে)। অর্থাৎ তাদের জুলুম-নিপীড়নে অতিষ্ঠ হয়ে তোমরা তাদের থেকে মুক্তি চাও আর সেজন্যই তাদের প্রতি লা'নত কর, যেন আল্লাহ তাদের ধ্বংস করে তোমাদেরকে তাদের পরিবর্তে ন্যায়পরায়ণ শাসক প্রদান করেন। আর তারাও লা'নত করে তাদের প্রতি তোমাদের ভালোবাসা দেখতে না পাওয়ার কারণে। বলাবাহুল্য, সেটা তাদেরই কর্মফল। কিন্তু জালেম কখনও নিজ কর্ম বিচার করে না। সে ভালোবাসা না পাওয়াটাই দেখে। কী কারণে পাচ্ছে না তা চিন্তা করে না। ফলে ভালোবাসা না পাওয়ার দরুন একতরফা জনগণকে দোষারোপ করে।
যাহোক, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ হাদীছে উৎকৃষ্ট ও নিকৃষ্ট শাসকদের পরিচয় দিয়ে দিলেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কখনও যদি নিকৃষ্ট শাসক ক্ষমতায় থাকে, তখন জনগণের করণীয় কী? বাহ্যত তো এটাই মনে হয় যে, তারা এরূপ শাসকদের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করবে না। সে হিসেবে সাহাবায়ে কেরাম বললেন-
يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَفَلَا نُنابِذُهُمْ بِالسَّيْفِ؟ (ইয়া রাসূল্লাহ! আমরা কি তরবারি দ্বারা তাদের বিরুদ্ধাচরণ করব না)? অর্থাৎ আমরা তাদের আনুগত্য পরিত্যাগ করে তাদেরকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতের চেষ্টা করব না এবং সেজন্য যদি প্রয়োজন হয় তবে তাদের বিরুদ্ধে সসস্ত্র যুদ্ধ করব না? নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন-
لَا، مَا أَقَامُوا فِيْكُمُ الصَّلَاةَ (না, যতক্ষণ তারা তোমাদের মধ্যে নামায কায়েম করে)। অর্থাৎ তারা যতদিন তোমাদের মধ্যে নামায কায়েম করবে, ততোদিন তোমরা তাদের আনুগত্য করে যাবে। তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবে না। নামায কায়েম করার দ্বারা মূলত ইসলামের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা বোঝানো হয়েছে। অপর এক হাদীছ দ্বারা এটা প্রমাণিত হয়। হযরত উবাদা ইবনুস সামিত রাযি. বর্ণনা করেন-
دَعَانَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَبَايَعْنَاهُ ، فَكَانَ فِيْمَا أَخَذَ عَلَيْنَا: أَنْ بَايَعَنَا عَلَى السَّمْعِ وَالطَّاعَةِ فِي مَنْشَطِنَا وَمَكْرَهِنَا، وَعُسْرِنَا وَيُسْرِنَا، وَأَثَرَةٍ عَلَيْنَا ، وَأَنْ لَا ننَازِعَ الْأَمْرَ أَهْلَهُ ، قَالَ: إِلَّا أَنْ تَرَوْا كُفْرًا بَوَاحًا عِنْدَكُمْ مِنَ اللَّهِ فِيْهِ بُرْهَانٌ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে ডাকলেন। আমরা তাঁর নিকট বায়'আত গ্রহণ করলাম। তিনি সে বায়'আতে আমাদের থেকে যে প্রতিশ্রুতি নেন তাতে আমরা এই মর্মে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম যে, আমরা আনুগত্য রক্ষা করব আগ্রহের অবস্থায়, অনাগ্রহের অবস্থায়, সংকটে ও স্বাচ্ছন্দ্যে এবং আমাদের উপর অন্যদের প্রাধান্য দেওয়ার অবস্থায়ও। আমরা ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে ক্ষমতা নিয়ে কাড়াকাড়ি করব না। তিনি (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, তবে যদি এমন প্রকাশ্য কুফর দেখ, যে সম্পর্কে তোমাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রমাণ আছে। ( সহীহ বুখারী: ৭০৫৫; সহীহ মুসলিম: ১৭০৯; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা : ১৬৫৫৩; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ২৬৩৯; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা : ৩৭২৫৮)
অর্থাৎ শাসককে যদি এমন কুফরীকর্মে লিপ্ত দেখ, যা কুফর হওয়ার বিষয়টি পরিষ্কার এবং তা কুফর হওয়া সম্পর্কে সুস্পষ্ট দলীল-প্রমাণ আছে, কেবল তখনই তা পরিষ্কার আনুগত্য প্রত্যাহার করতে পারবে।
এ হাদীছ দ্বারা বোঝা যায়, শাসক যদি জালেমও হয়, তবুও তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা যাবে না। আমাদের ফকীহগণ এ বিষয়ে একমত যে, শাসক জালেম হলেও তার আনুগত্য করে যাওয়া অপরিহার্য এবং তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা অপেক্ষা আনুগত্য করাই শ্রেয়। কেননা বিদ্রোহ করার দ্বারা ব্যাপক রক্তপাতের আশঙ্কা তো থাকেই, সেইসঙ্গে পরিবেশ-পরিস্থিতি অধিকতর মন্দ হওয়াও অসম্ভব নয়। এমনও হতে পারে যে, তারচে' আরও বড় জালেম ও স্বৈরাচারী শাসক মসনদ দখল করে বসবে।
তবে হাঁ, শাসক যদি জালেম হয়, প্রকাশ্য পাপাচারে লিপ্ত থাকে, মানুষকে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে এবং শরী'আতবিরোধী কার্যকলাপের বিস্তারে ভূমিকা রাখে, তবে তার ক্ষমতায় থাকার কোনও অধিকার থাকে না। এ অবস্থায় তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার মতো শক্তি যদি জনগণের থাকে এবং তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার দ্বারা আরও বড় বিপর্যয়ের আশঙ্কাও না থাকে, সে ক্ষেত্রে সকলে একতাবদ্ধ হয়ে তাকে সরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। যদি তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার মতো প্রয়োজনীয় শক্তি-সামর্থ্য না থাকে আর এ অবস্থায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে গেলে ব্যাপক রক্তপাত ও বিপর্যয়ের আশঙ্কা থাকে, তবে সে ক্ষেত্রে ধৈর্যধারণ করাই শ্রেয়। যেমন হযরত হুযায়ফা রাযি. বর্ণিত এক হাদীছে আছে-
يَكُوْنُ بَعْدِي أَئِمَّةٌ لَا يَهْتَدُونَ بِهُدَايَ ، وَلَا يَسْتَنُّوْنَ بِسُنَّتِي، وَسَيَقُوْمُ فِيهِمْ رِجَالٌ قُلُوْبُهُمْ قُلُوْبُ الشَّيَاطِينِ فِي جُثْمَانِ إِنْسِ، قَالَ: قُلْتُ: كَيْفَ أَصْنَعُ يَا رَسُولَ اللَّهِ ، إِنْ أَدْرَكْتُ ذَلِكَ؟ قَالَ: تَسْمَعُ وَتُطِيعُ لِلْأَمِيرِ ، وَإِنْ ضُرِبَ ظَهْرُكَ، وَأُخِذَ مَالُكَ فَاسْمَعْ وَأَطِعْ
আমার পরে এমন এমন শাসক হবে, যারা আমার হিদায়াতমতো চলবে না এবং আমার আদর্শ অনুসরণ করবে না। তাদের মধ্যে এমনসব লোক তৎপর থাকবে, যাদে অন্তর হবে শয়তানের অন্তর, শরীর হবে মানুষের। হযরত হুযায়ফা রাখি, বলেন, আমি আবললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! সেরকম সময় পেলে আমি কী করব? তিনি বললেন, ইম শাসকের আনুগত্য করবে, যদিও তোমার পিঠে চাবুক মারা হয় এবং তোমার সম্পদ কেড়ে নেওয়া হয়। সর্বাবস্থায় আনুগত্য প্রদর্শন করবে। (সহীহ মুসলিম: ১৮৪৭; তাবারানী, আল মু'জামুল আওসাত: ২৮৯৩; হাকিম, আল মুস্তাদরাক: ৮৫৩৩; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ১৬৬১৭)
আলোচ্য হাদীছটিতেও বলা হয়েছে- وإذا رَأَيْتُمْ مِن وُلاتِكُمْ شيئًا تَكْرَهُونَهُ، فاكْرَهُوا عَمَلَهُ، ولا تَنْزِعُوا يَدًا مِن طاعَة (তোমরা যখন তোমাদের শাসকবর্গদের পক্ষ থেকে এমন কিছু দেখবে, যা তোমরা অপসন্দ কর, তখন তোমরা তাদের কাজ অপসন্দ করবে, কিন্তু আনুগত্য থেকে হাত সরিয়ে নেবে না)। অর্থাৎ তাদের শরী'আতবিরোধী কর্মকাণ্ডে তোমরা যদি বাধা দেওয়ার ক্ষমতা না রাখ, তবে অন্ততপক্ষে অন্তরে সেসব কাজের প্রতি ঘৃণা পোষণ করবে। কিন্তু আনুগত্য পরিত্যাগ করবে না। তারা জালেম ও ফাসেক হলেও তাদের প্রতি আনুগত্য বজায় রাখা তোমাদের কর্তব্য।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. শাসকদের কর্তব্য ইনসাফের সঙ্গে দেশ শাসন করা, জনগণকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসা এবং তাদের জন্য দু'আ করা।
খ. জনগণের উচিত ন্যায়পরায়ণ শাসককে ভালোবাসা এবং তার জন্য আল্লাহ তা'আলার কাছে দু'আ করা।
গ. যে শাসক ইনসাফ করে না, সে জনগণকে ঘৃণার চোখে দেখে ও তাদেরকে অভিশাপ দেয়।
ঘ. জালেম শাসক জনগণের ঘৃণা কুড়ায় ও তাদের লা'নতের পাত্র হয়।
ঙ. শাসক যতক্ষণ পর্যন্ত সুস্পষ্ট কুফরীতে লিপ্ত না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের প্রতি আনুগত্য বজায় রাখা জরুরি।
চ. শাসকের অবৈধ কাজকে সমর্থন করা যাবে না; বরং তার প্রতি মনে মনে ঘৃণা পোষণ করতে হবে।
ছ. অধিকতর মন্দ পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা থাকলে জালেম শাসককে অপসারণের চেষ্টা না করে ধৈর্যধারণ করাই উত্তম।
