রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
ভূমিকা অধ্যায়
হাদীস নং: ৬৫৪
অধ্যায়: ৭৮ শাসকবর্গকে জনগণের প্রতি নম্রতা দেখানো, তাদের প্রতি কল্যাণকামিতা ও মমত্ব প্রদর্শনের হুকুম এবং তাদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা, কঠোরতা আরোপ, তাদের কল্যাণকর বিষয়সমূহ উপেক্ষা করা, তাদের প্রতি অমনোযোগিতা ও তাদের প্রয়োজন পূরণে অবহেলা প্রদর্শনের উপর নিষেধাজ্ঞা
কোমল ও কঠোর শাসকের প্রতি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দু'আ ও বদদু'আ
হাদীছ নং: ৬৫৪
উন্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রাযি. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমার এ ঘরে বসে বলতে শুনেছি, হে আল্লাহ! যে ব্যক্তি আমার উম্মতের কোনও বিষয়ের কর্তৃত্ব লাভ করে, তারপর সে তাদের উপর কঠোরতা প্রদর্শন করে, তুমিও তার প্রতি কঠোরতা করো। আর যে ব্যক্তি আমার উম্মতের কোনও বিষয়ে কর্তৃত্ব লাভ করে, তারপর সে তাদের উপর কোমলতা প্রদর্শন করে, তুমি তার প্রতি কোমলতা প্রদর্শন করো। -মুসলিম
(সহীহ মুসলিম: ১৮২৮; সহীহ ইবনে হিব্বান: ৫৫৩; তাবারানী, আল মু'জামুল আওসাত : ৩৬০; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ১৭৯১৩; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ২৪৭২)
হাদীছ নং: ৬৫৪
উন্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রাযি. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমার এ ঘরে বসে বলতে শুনেছি, হে আল্লাহ! যে ব্যক্তি আমার উম্মতের কোনও বিষয়ের কর্তৃত্ব লাভ করে, তারপর সে তাদের উপর কঠোরতা প্রদর্শন করে, তুমিও তার প্রতি কঠোরতা করো। আর যে ব্যক্তি আমার উম্মতের কোনও বিষয়ে কর্তৃত্ব লাভ করে, তারপর সে তাদের উপর কোমলতা প্রদর্শন করে, তুমি তার প্রতি কোমলতা প্রদর্শন করো। -মুসলিম
(সহীহ মুসলিম: ১৮২৮; সহীহ ইবনে হিব্বান: ৫৫৩; তাবারানী, আল মু'জামুল আওসাত : ৩৬০; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ১৭৯১৩; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ২৪৭২)
78 - باب أمر وُلاة الأمور بالرفق برعاياهم ونصيحتهم والشفقة عليهم والنهي عن غشهم والتشديد عليهم وإهمال مصالحهم والغفلة عنهم وعن حوائجهم
654 - وعن عائشة رضي الله عنها، قالت: سَمِعْتُ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - يقول في بيتي هَذَا: «اللَّهُمَّ مَنْ وَلِيَ مِنْ أَمْرِ أُمَّتِي شَيْئًا فَشَقَّ عَلَيْهِمْ، فَاشْقُقْ عَلَيْهِ، وَمَنْ وَلِيَ مِنْ أَمْرِ أُمَّتِي شَيْئًا فَرَفَقَ بِهِمْ، فَارْفُقْ بِهِ». رواه مسلم. (1)
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছটি বর্ণনা করেছেন উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি.। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটি বলেছিলেন তাঁরই ঘরে। অর্থাৎ যে ঘরে হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি, থাকতেন এবং যে ঘরে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমাহিত আছেন। হাদীছটি বর্ণনা করতে গিয়ে হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাছি। এ বিষয়টি উল্লেখ করেছেন শ্রোতার বিশেষ মনোযোগ আকর্ষণ করার লক্ষ্যে। তিনি বুঝিয়েছেন যে, এ হাদীছটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি এটি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুখে শুনেছি আমার নিজ ঘরে। কাজেই এতে ভুলচুকের কোনও সম্ভাবনা নেই এবং এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তোমরা মনোযোগ দিয়ে শোনো।
হাদীছটিতে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি নেক দু'আ ও একটি বদদু'আর উল্লেখ করা হয়েছে। নেক দু'আটি করেছেন দয়ালু শাসকের জন্য। আর বদদু'আটি করেছেন কঠোর ও জালেম শাসকের জন্য। তিনি বলেন-
اَللَّهُمَّ مَنْ وَلِيَ مِنْ أَمْرِ أُمَّتِي شَيْئًا (হে আল্লাহ! যে ব্যক্তি আমার উম্মতের কোনও বিষয়ের কর্তৃত্ব লাভ করে)। ‘কোনও বিষয়ের কর্তৃত্ব’ বলে ক্ষুদ্র ও বৃহৎ যে-কোনও পরিসরের কর্তৃত্ব বোঝানো হয়েছে। সুতরাং উপরে রাষ্ট্রপ্রধান থেকে শুরু করে নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বর পর্যন্ত সকলেই এর অন্তর্ভুক্ত। এমনিভাবে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন শাখা-প্রশাখার দায়িত্বশীলদের জন্যও এটা প্রযোজ্য। এদের প্রত্যেকের সম্পর্কেই বলা হয়েছে-
فَشَقَّ عَلَيْهِمْ، فَاشْقُقْ عَلَيْهِ (তারপর সে তাদের উপর কঠোরতা প্রদর্শন করে, তুমিও তার প্রতি কঠোরতা করো)। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জনগণের উপর কঠোরতা প্রদর্শন হতে পারে বিভিন্নভাবে। যেমন বাড়তি করের বোঝা চাপানো, তুচ্ছ তুচ্ছ বিষয়ে ধরপাকড় করা, কঠোর-কঠিন আইন চাপিয়ে দেওয়া, তাদের অসম্মতি সত্ত্বেও বিশেষ কোনও কাজ করতে তাদেরকে বাধ্য করা, সত্যপ্রকাশে বাধা দেওয়া ও তাদের কোনওরকম সমালোচন সহ্য না করা ইত্যাদি। জনগণের উপর ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে এরূপ কঠোরতা আরোপ জায়েয নয়। তা সত্ত্বেও যারা এরূপ করবে, তাদের উপর নবী কারীম সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে বদদু'আ করা হয়েছে যে, আল্লাহ তা'আলা যেন তাদের উপরও কঠোরতা করেন। তাঁর বদদু'আ কবুল হওয়া অনিবার্য। সুতরাং এরূপ শাসকবর্গের শাসনকার্য পরিচালনা কঠিন হতে বাধ্য। তারা নানারকম প্রতিকূলতার সম্মুখীন হবে। তারা জনগণের ভালোবাসা হারাবে। জনগণ তাদের থেকে মুক্তি কামনা করবে। এমনকি তাদের শত্রুপক্ষও তাদের উপর চেপে বসতে পারে। ফলে ক্ষমতা হারিয়ে তারা নিজেরাই দুর্বিষহ জীবনের সম্মুখীন হয়ে পড়বে। বাস্তবে এমনই ঘটে থাকে। অতীতের ইতিহাস এর সত্যতার সাক্ষ্য বহন করে। পক্ষান্তরে যারা জনগণের উপর আন্তরিক ও মমতাশীল হয়, তাদের অবস্থা হয় এর বিপরীত। তাদের সম্পর্কে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু'আ করেন-
وَمَنْ وَلِيَ مِنْ أَمْرِ أُمَّتِي شَيْئًا فَرَفَقَ بِهِمْ، فَارْفُقْ بِهِ (আর যে ব্যক্তি আমার উম্মতের কোনও বিষয়ে কর্তৃত্ব লাভ করে, তারপর সে তাদের উপর কোমলতা প্রদর্শন করে, তুমি তার প্রতি কোমলতা প্রদর্শন করো)। অর্থাৎ জনগণের উপর জুলুম-নিপীড়ন চালায় না, তাদের কল্যাণসাধনের চেষ্টা করে, দুঃস্থ ও অভাবগ্রস্তের সাহায্য করে, তারা যাতে সহজে তাদের মৌলিক প্রয়োজনসমূহ পূরণ করতে পারে সেই ব্যবস্থা করে, মোটকথা রাষ্ট্রক্ষমতাকে আল্লাহর আমানত মনে করে আল্লাহর বিধান মোতাবেক জনগণকে পরিচালনা করে এবং সার্বিকভাবে তাদের প্রতি কল্যাণকামিতার পরিচয় দেয়, হে আল্লাহ! তুমি এরূপ শাসকের প্রতি দয়ার আচরণ করো। সুতরাং এরূপ শাসক রাষ্ট্রপরিচালনায় আল্লাহ তা'আলার সাহায্য পেয়ে থাকে। জনগণ তাকে ভালোবাসে। যে-কোনও বিপদে তারা তার পাশে থাকে। তার জন্য প্রাণ দিতে প্রস্তুত হয়ে যায়। এরূপ শাসক দুনিয়ায়ও সুনাম-সুখ্যাতি অর্জন করে, আখিরাতেও সে আল্লাহর রহমত ও নাজাতের উপযুক্ত হয়ে যায়।
বলাবাহুল্য, এসব কথা সর্বস্তরের শাসকের জন্যই প্রযোজ্য, তা সে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদের অধিকারী হোক কিংবা হোক জনগণের ক্ষুদ্র পরিসরের কোনও নেতা। মন্ত্রী, এমপি, ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বর-চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসক, ইউ.এন.ও ইত্যাদি সকল পর্যায়ের শাসক-প্রশাসক এর অন্তর্ভুক্ত। তাদের প্রত্যেকের কর্তব্য কঠোরতা পরিহার করে মানুষের প্রতি নম্র-কোমল আচরণ করা।
জ্ঞাতব্য যে, এর অর্থ আদর্শ ও ন্যায়নিষ্ঠা বিসর্জন দিয়ে অন্যায়-অসত্যের সামনে নতিস্বীকার করা নয়। বস্তুত এর দ্বারা আল্লাহর বিধান তথা দীন ও শরী'আতের উপর অবিচল থেকে নিজ কথাবার্তা ও আচার-আচরণে নম্রতা প্রদর্শনেরই শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। কোনও অপরাধীকে শরী'আত মোতাবেক বিচার করার প্রয়োজন পড়লে তার বিচার অবশ্যই করতে হবে। সে ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া যাবে না। কিন্তু তার বিচার করতে গিয়ে তার প্রতি নিজ আচরণ খারাপ করা বা তার পক্ষের লোকজনকে হয়রানি করা কিংবা বিচার হয়ে যাওয়ার পরও তার প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন করা কোনওক্রমেই বাঞ্ছনীয় নয়। ব্যস সে যে অপরাধ করেছে, শাস্তির বিষয়টি কেবল সে ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকবে। অন্য কোনওকিছুকে তা স্পর্শ করবে না। বাকি সকল বিষয়ে সে ব্যক্তি বিচারক বা শাসকের আন্তরিকতা ও কোমলতার আওতাভুক্ত থাকবে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. গৃহকর্তা থেকে শুরু করে ছোট ও বড় প্রত্যেক শাসক ও প্রশাসককে অধীনস্থদের প্রতি অহেতুক কঠোরতা পরিহার করে নম্র-কোমল আচরণ করতে হবে।
খ. শাসন-প্রশাসনের বিষয়টিকে কেবল পার্থিব দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা উচিত নয়। এ সঙ্গে আল্লাহ তা'আলার রাজি-নারাজিরও সম্পর্ক আছে। কাজেই সেদিকে লক্ষ রেখেই এ কাজ আঞ্জাম দিতে হবে।
হাদীছটিতে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি নেক দু'আ ও একটি বদদু'আর উল্লেখ করা হয়েছে। নেক দু'আটি করেছেন দয়ালু শাসকের জন্য। আর বদদু'আটি করেছেন কঠোর ও জালেম শাসকের জন্য। তিনি বলেন-
اَللَّهُمَّ مَنْ وَلِيَ مِنْ أَمْرِ أُمَّتِي شَيْئًا (হে আল্লাহ! যে ব্যক্তি আমার উম্মতের কোনও বিষয়ের কর্তৃত্ব লাভ করে)। ‘কোনও বিষয়ের কর্তৃত্ব’ বলে ক্ষুদ্র ও বৃহৎ যে-কোনও পরিসরের কর্তৃত্ব বোঝানো হয়েছে। সুতরাং উপরে রাষ্ট্রপ্রধান থেকে শুরু করে নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বর পর্যন্ত সকলেই এর অন্তর্ভুক্ত। এমনিভাবে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন শাখা-প্রশাখার দায়িত্বশীলদের জন্যও এটা প্রযোজ্য। এদের প্রত্যেকের সম্পর্কেই বলা হয়েছে-
فَشَقَّ عَلَيْهِمْ، فَاشْقُقْ عَلَيْهِ (তারপর সে তাদের উপর কঠোরতা প্রদর্শন করে, তুমিও তার প্রতি কঠোরতা করো)। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জনগণের উপর কঠোরতা প্রদর্শন হতে পারে বিভিন্নভাবে। যেমন বাড়তি করের বোঝা চাপানো, তুচ্ছ তুচ্ছ বিষয়ে ধরপাকড় করা, কঠোর-কঠিন আইন চাপিয়ে দেওয়া, তাদের অসম্মতি সত্ত্বেও বিশেষ কোনও কাজ করতে তাদেরকে বাধ্য করা, সত্যপ্রকাশে বাধা দেওয়া ও তাদের কোনওরকম সমালোচন সহ্য না করা ইত্যাদি। জনগণের উপর ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে এরূপ কঠোরতা আরোপ জায়েয নয়। তা সত্ত্বেও যারা এরূপ করবে, তাদের উপর নবী কারীম সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে বদদু'আ করা হয়েছে যে, আল্লাহ তা'আলা যেন তাদের উপরও কঠোরতা করেন। তাঁর বদদু'আ কবুল হওয়া অনিবার্য। সুতরাং এরূপ শাসকবর্গের শাসনকার্য পরিচালনা কঠিন হতে বাধ্য। তারা নানারকম প্রতিকূলতার সম্মুখীন হবে। তারা জনগণের ভালোবাসা হারাবে। জনগণ তাদের থেকে মুক্তি কামনা করবে। এমনকি তাদের শত্রুপক্ষও তাদের উপর চেপে বসতে পারে। ফলে ক্ষমতা হারিয়ে তারা নিজেরাই দুর্বিষহ জীবনের সম্মুখীন হয়ে পড়বে। বাস্তবে এমনই ঘটে থাকে। অতীতের ইতিহাস এর সত্যতার সাক্ষ্য বহন করে। পক্ষান্তরে যারা জনগণের উপর আন্তরিক ও মমতাশীল হয়, তাদের অবস্থা হয় এর বিপরীত। তাদের সম্পর্কে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু'আ করেন-
وَمَنْ وَلِيَ مِنْ أَمْرِ أُمَّتِي شَيْئًا فَرَفَقَ بِهِمْ، فَارْفُقْ بِهِ (আর যে ব্যক্তি আমার উম্মতের কোনও বিষয়ে কর্তৃত্ব লাভ করে, তারপর সে তাদের উপর কোমলতা প্রদর্শন করে, তুমি তার প্রতি কোমলতা প্রদর্শন করো)। অর্থাৎ জনগণের উপর জুলুম-নিপীড়ন চালায় না, তাদের কল্যাণসাধনের চেষ্টা করে, দুঃস্থ ও অভাবগ্রস্তের সাহায্য করে, তারা যাতে সহজে তাদের মৌলিক প্রয়োজনসমূহ পূরণ করতে পারে সেই ব্যবস্থা করে, মোটকথা রাষ্ট্রক্ষমতাকে আল্লাহর আমানত মনে করে আল্লাহর বিধান মোতাবেক জনগণকে পরিচালনা করে এবং সার্বিকভাবে তাদের প্রতি কল্যাণকামিতার পরিচয় দেয়, হে আল্লাহ! তুমি এরূপ শাসকের প্রতি দয়ার আচরণ করো। সুতরাং এরূপ শাসক রাষ্ট্রপরিচালনায় আল্লাহ তা'আলার সাহায্য পেয়ে থাকে। জনগণ তাকে ভালোবাসে। যে-কোনও বিপদে তারা তার পাশে থাকে। তার জন্য প্রাণ দিতে প্রস্তুত হয়ে যায়। এরূপ শাসক দুনিয়ায়ও সুনাম-সুখ্যাতি অর্জন করে, আখিরাতেও সে আল্লাহর রহমত ও নাজাতের উপযুক্ত হয়ে যায়।
বলাবাহুল্য, এসব কথা সর্বস্তরের শাসকের জন্যই প্রযোজ্য, তা সে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদের অধিকারী হোক কিংবা হোক জনগণের ক্ষুদ্র পরিসরের কোনও নেতা। মন্ত্রী, এমপি, ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বর-চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসক, ইউ.এন.ও ইত্যাদি সকল পর্যায়ের শাসক-প্রশাসক এর অন্তর্ভুক্ত। তাদের প্রত্যেকের কর্তব্য কঠোরতা পরিহার করে মানুষের প্রতি নম্র-কোমল আচরণ করা।
জ্ঞাতব্য যে, এর অর্থ আদর্শ ও ন্যায়নিষ্ঠা বিসর্জন দিয়ে অন্যায়-অসত্যের সামনে নতিস্বীকার করা নয়। বস্তুত এর দ্বারা আল্লাহর বিধান তথা দীন ও শরী'আতের উপর অবিচল থেকে নিজ কথাবার্তা ও আচার-আচরণে নম্রতা প্রদর্শনেরই শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। কোনও অপরাধীকে শরী'আত মোতাবেক বিচার করার প্রয়োজন পড়লে তার বিচার অবশ্যই করতে হবে। সে ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া যাবে না। কিন্তু তার বিচার করতে গিয়ে তার প্রতি নিজ আচরণ খারাপ করা বা তার পক্ষের লোকজনকে হয়রানি করা কিংবা বিচার হয়ে যাওয়ার পরও তার প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন করা কোনওক্রমেই বাঞ্ছনীয় নয়। ব্যস সে যে অপরাধ করেছে, শাস্তির বিষয়টি কেবল সে ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকবে। অন্য কোনওকিছুকে তা স্পর্শ করবে না। বাকি সকল বিষয়ে সে ব্যক্তি বিচারক বা শাসকের আন্তরিকতা ও কোমলতার আওতাভুক্ত থাকবে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. গৃহকর্তা থেকে শুরু করে ছোট ও বড় প্রত্যেক শাসক ও প্রশাসককে অধীনস্থদের প্রতি অহেতুক কঠোরতা পরিহার করে নম্র-কোমল আচরণ করতে হবে।
খ. শাসন-প্রশাসনের বিষয়টিকে কেবল পার্থিব দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা উচিত নয়। এ সঙ্গে আল্লাহ তা'আলার রাজি-নারাজিরও সম্পর্ক আছে। কাজেই সেদিকে লক্ষ রেখেই এ কাজ আঞ্জাম দিতে হবে।
